ক্রেডিট কার্ডে বিদেশে ইকবাল পরিবারের বড় অঙ্কের লেনদেনে অনিয়ম
Published: 21st, October 2025 GMT
প্রিমিয়ার ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান এইচ বি এম ইকবাল ও তাঁর পরিবারের চার সদস্য মিলে ব্যাংকটির ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে বিদেশে সীমার বেশি অর্থ খরচ করেছেন। ইকবালসহ তাঁর পরিবারের পাঁচ সদস্য মিলে তিন বছরে প্রিমিয়ার ব্যাংকের ২২টি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে সাড়ে ৩২ লাখ মার্কিন ডলার খরচ করেছেন। সেই হিসাবে প্রতিজন বছরে গড়ে খরচ করেছেন ২ লাখ ১৬ হাজার ডলার।
আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট বা বিএফআইইউর তদন্তে বিষয়টি উঠে এসেছে। সংস্থাটি বলছে, অর্থ পাচার করতেই মূলত এই লেনদেন করা হয়েছে।
এইচ বি এম ইকবাল ও তাঁর পরিবারের চার সদস্যের এসব অনিয়মের বিষয়ে প্রিমিয়ার ব্যাংককে লিখিতভাবে জানিয়েছে বিএফআইইউ। সেই সঙ্গে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যও প্রিমিয়ার ব্যাংককে নির্দেশ দিয়েছে বিএফআইইউ। ইকবাল ছাড়া তাঁর পরিবারের যে চার সদস্যের বিষয়ে ব্যাংকটির কার্ডে এই অনিয়ম পাওয়া গেছে, তাঁরা হলেন ইকবালের তিন সন্তান মোহাম্মদ ইমরান ইকবাল, মইন ইকবাল ও নওরীন ইকবাল এবং মইন ইকবালের স্ত্রী ইয়াসনা পূজা ইকবাল। বিএফআইইউ তদন্তে উঠে এসেছে এই পাঁচজনের নামে ব্যাংকটির ১৮টি আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ড এবং ৪টি প্রিপেইড কার্ড রয়েছে। এসব কার্ডের মাধ্যমে তাঁরা ২০২২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ৩২ লাখ ৫০ হাজার ৩১১ ডলার খরচ করেছেন। আর এ ক্ষেত্রে তাঁরা বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের সীমার বেশি অর্থ খরচ করেছেন।
বিএফআইইউর পক্ষ থেকে প্রিমিয়ার ব্যাংকের কাছে এই অনিয়মের বিষয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে প্রিমিয়ার ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ আবু জাফরের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।
জানা যায়, প্রিমিয়ার ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পর টানা প্রায় ৩০ বছর ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ছিলেন এইচ বি এম ইকবাল। গত বছরের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে তিনি দেশের বাইরে রয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংক এরই মধ্যে ব্যাংকটির পর্ষদ পুনর্গঠন করেছে। এরপর থেকে একে একে ব্যাংকটির নানা অনিয়মের তথ্য বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এইচ বি এম ইকবাল পরিবারসহ দুবাইয়ে রয়েছেন। তাঁর পরিবারের দুজন সদস্য থাকেন মালয়েশিয়ায়। দুবাইয়ের পাম জুমেইরাহতে অর্ধশতাধিক সম্পদের সঙ্গে ইকবাল পরিবারের সদস্যদের সম্পৃক্ততা রয়েছে। বিএফআইইউর তদন্তে বেরিয়ে এসেছে, ইকবালসহ তাঁর পরিবারের সদস্যরা উল্লিখিত সময়ে ক্রেডিট কার্ডে বিদেশি মুদ্রায় যে অর্থ খরচ করেছেন, তার বড় অংশ খরচ হয়েছে দুবাইয়ে।
বিএফআইইউ ব্যাংকটিকে জানিয়েছে, রেসিডেন্ট ফরেন কারেন্সি ডিপোজিট হিসাব এবং ট্রাভেল কোটার আওতায় ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করা হলেও হিসাব খোলা এবং অনুমোদন–সংক্রান্ত যথাযথ কাগজপত্র ব্যাংকটিতে পাওয়া যায়নি। এইচ বি এম ইকবাল ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা ঘোষণা ছাড়া বিপুল অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা তাঁদের হিসাবে নগদে জমা দিয়েছেন। ইকবালের আরএফসিডি হিসাবে এ প্রক্রিয়ায় ১১ লাখ ২১ হাজার ডলার নগদ জমার মাধ্যমে তাঁর ৫টি ক্রেডিট কার্ডের বিল পরিশোধ করা হয়েছে। বিদেশে খরচ করা দায় বাংলাদেশ থেকে ডলারে পরিশোধ করা হয়েছে।
এ ছাড়া ব্যাংকটির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মইন ইকবালের আরএফসিডি হিসাবে ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠান ‘সাবলাইম গ্রীনটেক্স লিমিটেড’-এর ইআরকিউ হিসাব থেকে ৫০ হাজার ডলার স্থানান্তর করা হয়েছে। এই অর্থ মইন ইকবালের ক্রেডিট কার্ডের দায় পরিশোধে ব্যবহার করা হয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: খরচ কর ছ ন র পর ব র র ব এফআইইউ ন ইকব ল র ইকব ল ও র সদস য ব ল পর এইচ ব
এছাড়াও পড়ুন:
‘জামায়াতের রাজনীতি শুরু হয় জিয়াউর রহমানের নীতির কারণে’
“শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হাত ধরেই বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়েছিল, আর জামায়াতের রাজনীতিও শুরু হয়েছিল জিয়াউর রহমানের নীতির কারণে,” এমনটিই মনে করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ড. মাহাদী আমিন।
শুক্রবার (৭ নভেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী অডিটোরিয়ামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) আয়োজনে ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের তাৎপর্য স্মরণে ‘জনতার নয়া রাজনীতির আকাঙ্ক্ষা: বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ শিরোনামে আলোচনা সভায় এ কথা বলেন মাহাদী আমিন।
আরো পড়ুন:
জিয়াউর রহমান স্থাপিত ইবির ভিত্তিপ্রস্তরে শ্রদ্ধাঞ্জলি
একটি দল দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে: মির্জা আব্বাস
তিনি বলেন, “শহীদ জিয়াউর রহমানের মাধ্যমে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, বাগ্স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। গার্মেন্টস শিল্পের প্রতিষ্ঠা, বিদেশে জনশক্তি রপ্তানি, বেসরকারিকরণ, বিদেশি বিনিয়োগ আনা- সবই হয়েছিল তার হাত ধরে।”
সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমের দেশে ইসলামি মূল্যবোধকে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন বলে মন্তব্য করে মাহাদী আমিন বলেন, “ধর্মভিত্তিক রাজনীতি না করলেও বিএনপি কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমের দেশে ইসলামের আলোকে ইসলাম ধর্মের খেদমতে সবসময় নিবেদিত প্রাণ ছিল। পররাষ্ট্রনীতির অংশ হিসেবে আমরা নতজানু পররাষ্ট্রনীতি থেকে বেরিয়ে ভারতীয় আধিপত্যবাদকে ভেঙে পশ্চিমা দেশগুলোর মতো ভাষা ব্যবহার শুরু করেছিলাম “
তিনি বলেন, “৭ই নভেম্বর সিপাহী-জনতা এক হয়ে দেশের বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ এক হয়ে স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করেছিলেন একটা আকাঙ্ক্ষা নিয়ে, এমন একটি বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করব যেখানে স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব থাকবে, গণতন্ত্র থাকবে, রাষ্ট্র পরিচালনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা থাকবে।”
মাহাদী আমিন বলেন, “আমাদের আদর্শই যদি হয় সবার আগে বাংলাদেশের স্বার্থ, সার্বভৌমত্ব- তাহলে আমরা সবাই এক। আমরা আগামীর বাংলাদেশে বাংলাদেশপন্থি রাজনীতি করতে চাই, যে রাজনীতি জিয়াউর রহমান করেছিলেন, যে রাজনীতি বেগম খালেদা জিয়া করেছিলেন, যে রাজনীতি তারেক রহমান করছেন।”
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল হক জুবায়ের বলেন, “জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নেই ৭ নভেম্বর এসেছিল। শেখ মুজিব স্বাধীনতার পরে সবচেয়ে ঘৃণিত মানুষে পরিণত হয়েছিলেন। যার ফলে ৭৫ এসেছিল, ৭৭ এসেছিল।”
“শেখ মুজিব ঘৃণার পাত্রে পরিণত হলেন আর যিনি ক্যান্টনমেন্টে ছিলেন তিনি রাজনীতিতে জনপ্রিয় হয়ে উঠলেন। তিনি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। জিয়াউর রহমান জনগণের আকাঙ্ক্ষা বুঝতে পেরেছিলেন,” মন্তব্য করেন জুবায়ের।
বিএনপি চেয়ারপারসনের নিরাপত্তা উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল ফজলে এলাহী আকবর বলেন, “অনেকেই বলে যে জেনারেল জিয়া ক্ষমতা দখল করেছিলেন। কিন্তু না, জনগণ তাকে সিংহাসনে বসিয়েছিলেন।”
“মুক্তিযুদ্ধে যারা আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব দিয়েছিল তারা কেউই যুদ্ধে ফ্রন্ট লাইনে ছিল না। তারা সব সময় আমোদ-প্রমোদে ব্যস্ত ছিল,” বলেন ফজলে এলাহী।
তিনি বলেন, “আমাদের ওপর একটি মিথ চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, আমরা একটি ছোট রাষ্ট্র। কিন্তু আমরা জনগণের দিক থেকে অষ্টম বৃহত্তম রাষ্ট্র। পাকিস্তানের অর্থনীতি এত ছোট কিন্তু তারা সামরিকভাবে কত শক্তিশালী। কিন্তু আমাদেরকে শক্তিশালী হতে দেয়নি।”
আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, “বাংলাদেশে যদি শীর্ষ দুটি অভ্যুত্থানকে ধরা হয়, তাহলে তা হচ্ছে ৭ নভেম্বর ও চব্বিশের আন্দোলন। আমাদের শত শত বছরের আজাদির যে লড়াই, তা এই দুই আন্দোলনে খুঁজে পাওয়া সম্ভব।”
“ইতিহাসের পরম্পরা বারবার প্রমাণ করেছে যে, আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক দলের সংজ্ঞায় পড়ে না। তারা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। আওয়ামী লীগের জন্ম আজন্ম পাপ এবং আমাদের নিরাপত্তার হুমকি। কারণ সে ২৩শে জুন পলাশি দিবসে দলটি জন্ম নিয়েছে,” অভিযোগ তোলেন তিনি।
ব্যারিস্টার ফুয়াদের অভিযোগ, “শেখ মুজিব ১৩-১৪ বছর ধরে যে জেল খেটেছেন, আজাদির লড়াই করেছেন, তারপর তিনি স্বাধীন বাংলাদেশকে ভারতের নিকট বিক্রি করে দিয়েছেন পরতে পরতে। আর এটাই তার জীবনের ট্রাজেডি। তিনি জিন্নাহ কিংবা গান্ধী হতে পারতেন কিন্তু তিনি মীর জাফর হয়ে গেছেন।”
ঢাবির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কাজী মোঃ মাহবুবুর রহমান বলেন, “গত ৫৪ বছর ৭ই নভেম্বর যেভাবে পাঠ হয়েছে, তাতে কিছু ভুল রয়েছে, সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। ৭ই নভেম্বর শুধু সার্বভৌমত্ব রক্ষায় নয়, বরং নাগরিকরা যে রাষ্ট্রের মালিকানা পাচ্ছে না, তা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্যই সিপাহী-জনতা এক হয়ে বিপ্লব করেছিল।”
সভাপতির বক্তব্যে ডাকসু ভিপি সাদিক কায়েম বলেন, “আজকের বাংলাদেশ জিয়াউর রহমানের বাংলাদেশ। জিয়াউর রহমানকে যারা দানব আকারে হাজির করেছিল, সেই কালচারাল ফ্যাসিস্টরা আজ বিএনপির বড় বন্ধু সাজার চেষ্টা করছে।”
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ থেকে ফ্যাসিবাদের শিকড় সমূলে উৎপাটন করতে হবে। বিএনপি-জামায়াতসহ সকল দল মিলে ঐক্য গঠন করতে হবে, না হলে ৫৪ বছর পর যে সুযোগ এসেছে, তা হাতছাড়া হয়ে যাবে।”
ডাকসুর মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনবিষয়ক সম্পাদক জুমার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন ইসলামী ব্যাংকের সাবেক এমডি আব্দুল মান্নান ও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার জসিম উদ্দিন হল ছাত্রদলের আহ্বায়ক শেখ তানভীর বারী হামিম।
ঢাকা/সৌরভ/রাসেল