গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সরকারটারি গ্রামের বাসিন্দা সাগর সরকার। তিন হাজার টাকায় ৩৪টি রঙিন মাছ কিনেছিলেন। বাড়ির আঙিনায় মাটিতে গর্ত করে পলিথিন দিয়ে সেই মাছের চাষ শুরু করেন। ছয় বছরের ব্যবধানে তিনি গড়ে তুলেছেন মাছের খামার। নাম দিয়েছেন ‘সাগর এগ্রো ফার্ম’।

সাগর সরকারের খামারে এখন ভেসে বেড়াচ্ছে নানা জাতের প্রায় দুই লাখ রঙিন মাছ। তিন হাজার টাকা দিয়ে শুরু, এখন তিনি ২০ লাখ টাকার রঙিন মাছের মালিক। খরচ বাদে মাসে আয় থাকে গড়ে ৭০ হাজার টাকা। এখন তিনি সফল উদ্যোক্তা। সফল মাছচাষি হিসেবে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে তিনি অর্জন করেছেন একাধিক পুরস্কার।

শুরুর কথা

কথায় কথায় সাগর জানালেন, রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তাঁরা তিন বন্ধু ইউটিউবে অ্যাকুয়ারিয়ামে রঙিন মাছ চাষের পদ্ধতি দেখেন। পরে তাঁরা মিলে রঙিন মাছ চাষের পরিকল্পনা করেন। ২০১৯ সালের নভেম্বরে তিন বন্ধু মাত্র তিন হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে যাত্রা শুরু করেন। এই টাকায় ৩৪টি অটো ব্রিডিং এবং গোল্ড ফিশ মাছ কেনেন। নিজের বাড়ির আঙিনায় মাটিতে গর্ত খুঁড়ে সেই গর্তে পলিথিন দিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে মাছের চাষ শুরু করেন।

তবে শীতের কারণে তাদের বেশির ভাগ মাছ মারা যায়। দুই বন্ধু আর সাগরের সঙ্গে থাকেননি। কিন্তু তিনি হাল ছাড়েননি। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি টিফিন ও হাত খরচের টাকা বাঁচিয়ে প্রতি মাসে সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়া থেকে অক্সিজেন দিয়ে বিশেষ ব্যবস্থায় মা মাছ আমদানি করতে থাকেন। সেই মা মাছের পোনা বড় করে বিক্রি করতেন তিনি।

প্রথম দেড় বছর সাগর লাভের মুখ দেখেননি। ২০২১ সালের মাঝামাঝি থেকে তাঁর লাভ আসা শুরু হয়। আস্তে আস্তে ব্যবসা বড় হতে থাকে। মাটির গর্তের পরিবর্তে তিনি ১৮টি পাকা চৌবাচ্চায় রঙিন মাছ চাষ শুরু করেন। এখন তাঁর বাড়িতে সারি সারি চৌবাচ্চা। সেখানে আছে নানা রঙের মাছ। এর পাশাপাশি নিজের ছয়টি পুকুরেও রঙিন মাছের চাষ করছেন। পুকুরের ওপরে জাল দিয়ে ছাউনি দেন। যাতে রোদ আর ছায়া দুটোই পাওয়া যায়। বর্তমানে তাঁর খামারে নানা জাতের দুই লাখ রঙিন মাছ আছে। এগুলোর মূল্য প্রায় ২০ লাখ টাকা বলে তিনি দাবি করেন।

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের সরকারটারি গ্রামের সাগর সরকারের খামারে নানা জাতের দুই লাখ রঙিন মাছ আছে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: রঙ ন ম ছ সরক র র সরক

এছাড়াও পড়ুন:

এক মার্কিন প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় যেভাবে গোপনে ভেনেজুয়েলা ছাড়েন মাচাদো

ভেনেজুয়েলার বিরোধী নেতা মারিয়া কোরিনা মাচাদো চলতি সপ্তাহে যেকোনো মূল্যে নরওয়ের রাজধানী অসলোতে পৌঁছাতে চেয়েছিলেন। নিজে উপস্থিত থেকে নোবেল শান্তি পুরস্কার গ্রহণ করাই ছিল তাঁর উদ্দেশ্য। কিন্তু আত্মগোপন অবস্থা থেকে নিরাপদে অসলো পৌঁছানো তাঁর জন্য সহজ ছিল না। কারণ, এ জন্য তাঁকে সামরিক তল্লাশিচৌকি এড়ানো, দীর্ঘ উত্তাল সমুদ্রপথ পাড়ি দেওয়া এবং সাগরে যে তাঁর নৌযান মার্কিন ড্রোন হামলার শিকার হবে না, সে অনিশ্চয়তায়ও ভরসা রাখতে হয়েছিল।

মাচাদো কয়েকটি নৌযানের একটি বহরে গোপনে ভেনেজুয়েলা ছেড়েছিলেন। ক্যারিবীয় অঞ্চলের একটি দ্বীপে পৌঁছানো ছিল তাঁর লক্ষ্য। সেখানে তাঁর জন্য একটি উড়োজাহাজ অপেক্ষা করছিল। কিন্তু এমন এক সময়ে তিনি এ বিপৎসংকুল সফর শুরু করেছিলেন, যখন ভেনেজুয়েলার আশপাশের সাগরে মাদক চোরাচালানের অভিযোগে নৌযানে হামলা চালাচ্ছিল যুক্তরাষ্ট্র। এসব হামলায় অনেকে নিহত হয়েছেন।

মাচাদো অসলোতে পৌঁছেছিলেন ঠিকই। কিন্তু অনেক দেরিতে। ততক্ষণে পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান হয়ে গেছে। বুধবার রাতে তিনি অসলো পৌঁছান। তবে এসব প্রতিকূল পরিবেশ এড়িয়ে অসলোতে পৌঁছানোতে তাঁর সমর্থকেরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন।

ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরো সরকারের চোখে ধুলা দিয়ে মাচাদোর অসলো পৌঁছাতে পারা বড় অর্জন। এর মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়, তিনি এখনো লাতিন আমেরিকার দেশটির রাজনীতিতে একজন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। গত এক বছর মাদুরো সরকারের নজর এড়িয়ে চলেছিলেন দেশটির বিরোধীদলীয় নেত্রী।

মাচাদোকে নিরাপদে ভেনেজুয়েলা ছাড়তে যুক্তরাষ্ট্রের অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তাদের একটি প্রতিষ্ঠান কাজ করেছে। বিশেষ অভিযান এবং গোয়েন্দা প্রশিক্ষণ আছে—যুক্তরাষ্ট্রের অবসরপ্রাপ্ত এমন কর্মকর্তারা প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করেন। তাদের সমন্বিত সহায়তা ছাড়া মাচাদোর পক্ষে ভেনেজুয়েলা ছাড়া প্রায় অসম্ভব ছিল। কারণ, মাদুরো প্রশাসন তাঁকে হন্যে হয়ে খুঁজছিল।

সংস্থাটির নাম ‘গ্রে বুল রেসকিউ’। এর নেতা ব্রায়ান স্টার্ন। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘এই চেষ্টা যাঁরা করেছেন, তাঁদের মধ্যে আমরাই প্রথম নই।’

আরও পড়ুনআত্মগোপনে থাকা মাচাদো ১১ মাস পর প্রকাশ্যে, পৌঁছেছেন অসলোতে১১ ডিসেম্বর ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের ট্যাম্প শহরভিত্তিক সংস্থাটি মাচাদোসহ এ নিয়ে তাদের ৮০০তম অভিযানটি পরিচালনা করেছে। ২০২১ সালে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনাদের প্রত্যাহারের সময়ে সৃষ্ট বিশৃঙ্খলার অভিজ্ঞতা থেকে প্রতিষ্ঠানটি গঠন করা হয়েছিল। ব্রায়ান স্টার্ন যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে ইরাক ও আফগানিস্তান যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন।

স্টার্ন বলেন, মাচাদোকে ভেনেজুয়েলা থেকে বের করাটা বেশ কঠিন ছিল। দীর্ঘদিন ধরে যাঁরা ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশ থেকে মক্কেলদের উদ্ধার করেন, তাঁদের জন্যও এটা বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল।

আরও পড়ুনভেনেজুয়েলা ছাড়তে যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা করেছে: মাচাদো১২ ডিসেম্বর ২০২৫

এ বিষয়ে স্টার্ন বলেন, ‘আমাদের পুরো প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো সাধারণত কম পরিচিত ব্যক্তিদের কথা মাথায় রেখে তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু মাচাদো ছিলেন একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তিনি নিজেই ছিলেন এ অভিযানের মূল চ্যালেঞ্জ।’

‘গ্রে বুল রেসকিউ’ মাচাদোকে উদ্ধার করেছে—এ কথা তাঁর একজন প্রতিনিধি নিশ্চিত করেছেন। কিন্তু স্টার্নের সব বক্তব্য আলাদা করে যাচাই করা যায়নি। দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল মাচাদোর ভেনেজুয়েলা ছাড়ার বিষয়ে প্রথম বিস্তারিত প্রতিবেদন করেছিল।

আরও পড়ুনস্বৈরশাসন শেষ করতে দেশে ফিরবেন মারিয়া মাচাদো ১১ ডিসেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ