দেশের শীর্ষস্থানীয় পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান প্যাসিফিক জিনস গ্রুপের সাতটি কারখানা আজ বৃহস্পতিবার থেকে আবার চালু হয়েছে। কারখানায় হামলা ও কর্মপরিবেশের অবনতির কারণে ১৬ অক্টোবর এসব কারখানা বন্ধ ঘোষণা করেছিল কর্তৃপক্ষ। প্রশাসনের আশ্বাস ও শ্রমিকদের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনার পর আজ থেকে এসব কারখানা খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ।

সাত দিন বন্ধ থাকার পর আজ কারখানাগুলো চালু হওয়ায় এসব কারখানার আশপাশের এলাকায় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। সাময়িক বন্ধের পর আজ বৃহস্পতিবার থেকে প্যাসিফিক গ্রুপের যে সাত কারখানায় আবারও উৎপাদন শুরু হয়েছে, সেগুলো হলো প্যাসিফিক জিনস, জিনস ২০০০, ইউনিভার্সেল জিনস, এনএইচটি ফ্যাশন, প্যাসিফিক অ্যাকসেসরিজ, প্যাসিফিক ওয়ার্কওয়্যার ও প্যাসিফিক অ্যাটায়ার্স। এর মধ্যে প্যাসিফিক জিনসের কারখানা দুটি ও ইউনিভার্সেল জিনসের ইউনিট চারটি। এসব কারখানায় প্রায় ৩৫ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। আজ থেকে তাঁরা কাজে ফিরেছেন।

১৪ অক্টোবর থেকে প্যাসিফিক গ্রুপের কয়েকটি ইউনিটের শ্রমিকেরা কর্মবিরতি শুরু করেন। পরদিন তাঁরা বেপজা কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেন। ১৬ অক্টোবর বিক্ষোভ চলাকালে সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও কর্মকর্তাদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এ অবস্থায় সেদিন রাতেই অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানা বন্ধ ঘোষণা করে প্যাসিফিক গ্রুপ।

গত এক বছরে এই কারখানায় অন্তত তিনবার শ্রমিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশের পক্ষ থেকে শ্রমিক বিক্ষোভের ঘটনা নিয়ে তদন্ত চলছে। দেশের অন্যতম রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক প্রতিষ্ঠানটিতে বহিরাগতদের কোনো ইন্ধন আছে কি না, সেটি খতিয়ে দেখছে পুলিশ। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সেখানে আরও কিছুদিন পুলিশের সতর্ক অবস্থান থাকবে বলে জানা গেছে।

চট্টগ্রাম শিল্প পুলিশের পুলিশ সুপার (এসপি) আবদুল্লাহ আল মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, যত দিন পর্যন্ত কারখানার পরিবেশ শঙ্কামুক্ত মনে না হবে, তত দিন সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ থাকবে। এরপর নিয়মিত টহল কার্যক্রম থাকবে। আর অতিরিক্ত পুলিশ তুলে নেওয়া হবে। প্রথম দিন কারখানায় আনন্দের সঙ্গে কাজ করেছেন শ্রমিকেরা।

বাংলাদেশ থেকে প্রথম জিনস রপ্তানির নেপথ্যের কারিগর ছিলেন চট্টগ্রামের উদ্যোক্তা প্রয়াত এম নাসির উদ্দিন। তিনি প্যাসিফিক জিনস প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে জিনসের পাশাপাশি নিট ও কাজের পোশাক (ওয়ার্কওয়্যার) রপ্তানি করছে প্রতিষ্ঠানটি। গ্রুপটির রপ্তানি পণ্যের মধ্যে ৯১ শতাংশই জিনস প্যান্ট। বিশ্বের ৪৪টি দেশে তাদের পোশাক রপ্তানি হয়।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

তফসিলের পরদিন ‘প্রার্থী’ গুলিবিদ্ধ

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন ঢাকায় দিনের বেলায় গুলি করা হলো ভোটে সম্ভাব্য প্রার্থী শরিফ ওসমান বিন হাদিকে (৩৩)। তিনি ঢাকা-৮ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন এবং বেশ কিছুদিন ধরে প্রচার চালাচ্ছিলেন। হাদি ইনকিলাব মঞ্চ নামের একটি সংগঠনের আহ্বায়ক।

গুলি করার পর আহত হাদিকে রিকশায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গুলি তাঁর মাথায় লেগেছে। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক। রাতে তাঁকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়।

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিনই সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থীর ওপর হামলার ঘটনায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এই ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে। উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি। তবে নির্বাচন ঘিরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে।

দুর্বৃত্তদের গুলিতে ওসমান হাদির গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দ্রুত ও ব্যাপক তদন্ত চালিয়ে হামলায় জড়িত সবাইকে শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন বলে গতকাল জানায় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।

হাদির বাড়ি ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পড়াশোনা শেষ করার পর বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছিলেন তিনি। পাশাপাশি সক্রিয় ছিলেন বিভিন্ন আন্দোলনে।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ভূমিকা রাখার পর ইনকিলাব মঞ্চ গঠন করে আলোচনায় আসেন হাদি। সাংস্কৃতিক এই প্ল্যাটফর্ম তাদের লক্ষ্য ঠিক করে, ‘সমস্ত আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও ইনসাফভিত্তিক একটি রাষ্ট্র বিনির্মাণ’। এই প্ল্যাটফর্ম থেকে বিভিন্ন কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ ও ভারতবিরোধী বক্তব্য হাদিকে আলোচনায় আনে। ঢাকার ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়ি ভাঙার সময় হাদি সক্রিয় ছিলেন। তিনি গোপালগঞ্জ জেলা ভেঙে দিতে বলেছিলেন।

ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার প্রতিষ্ঠা, নির্বাচনী তহবিলের হিসাব প্রকাশ এবং তাঁর ওপর ময়লা পানি নিক্ষেপের ঘটনায় ‘অসুবিধা নেই’ উল্লেখ করে ফেসবুক পোস্ট দিয়েও আলোচনায় আসেন হাদি।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্র জানায়, গতকাল জুমার নামাজের পর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে একটি ব্যাটারির রিকশায় ছিলেন হাদি ও তাঁর সঙ্গী এক ব্যক্তি। তাঁদের পেছনে পেছনে আসে একটি মোটরসাইকেল। বেলা ২টা ২৪ মিনিটে চলন্ত অবস্থায় সেই মোটরসাইকেল থেকেই একাধিক গুলি করা হয় হাদিকে।

ব্যাটারিচালিত রিকশায় বসা ওসমান হাদিকে গুলি করেন মোটরসাইকেলের পেছনে বসা ব্যক্তি। দ্রুত ঘটনা ঘটিয়ে তাঁরা ওই মোটরসাইকেলে সেখান থেকে চলে যান

সম্পর্কিত নিবন্ধ