গুমের বিচার শুরু হয়েছে, নিপীড়িতরা ন্যায়বিচার পাবেন: আদিলুর রহমান
Published: 25th, October 2025 GMT
আওয়ামী লীগ আমলের গুম ও বিচারবহির্ভূত সব হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার নিশ্চিতের আশ্বাস দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।
তিনি বলেছেন, দেশ এখন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও দমন–নিপীড়নের অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসছে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য অপরাধীদের বিচারের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণ ও নিপীড়িতরা বিচার পাবে বলে আশা করা যায়।
আজ শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ মুজিবুর রহমান হলের অডিটরিয়ামে ‘গুম ফ্যাসিবাদী শাসনের নিকৃষ্ট হাতিয়ার’ শীর্ষক সেমিনারে এ কথা বলেন আদিলুর রহমান। অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ আমলে গুমের শিকার মীর আহমাদ বিন কাসেম আরমানের লেখা ‘আয়নাঘরের সাক্ষী: গুম জীবনের ৮ বছর’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। আয়োজক ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও প্রচ্ছদ প্রকাশন।
আওয়ামী লীগ আমলে গুমের ঘটনাগুলোর তদন্তে অন্তর্বর্তী সরকার একটি কমিশন গঠন করে। কমিশনের প্রতিবেদন আসার পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এরই মধ্যে বিচার শুরু হয়েছে। সেই বিচারে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বেশ কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান সামরিক কর্মকর্তা এখন আসামি আসামি।
সেমিনারে বক্তব্যে ‘ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে’ সবাইকে এক থাকার আহ্বান জানিয়ে শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান বলেন, জুলাই সনদের ভিত্তিতে বাংলাদেশ নতুন বাংলাদেশে রূপান্তরিত হবে। এই লড়াই আগামী দিনের ভবিষ্যতের জন্য। ফ্যাসিবাদ পরাজিত হলেও মাঝে মাঝে ফিরে আসার চেষ্টা করে। তাদের ঠেকাতে মতপার্থক্য থাকলেও সবাইকে এক থাকতে হবে।
এই সেমিনারে অংশ নেন জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ মানবাধিকারবিষয়ক উপদেষ্টা হুমা খান। গুম কমিশনে দায়ের করা অনেক অভিযোগ কেন তদন্ত হচ্ছে না, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি।
হুমা খান বলেন, নিঃসন্দেহে গুম কমিশন ভালো কাজ করছে। গুম কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ৩১ ডিসেম্বর। যদিও এখন পর্যন্ত তাদের কাছে জমা হওয়া গুমসংক্রান্ত অভিযোগগুলোর সমাধান হয়নি। সে জন্য প্রশ্ন উঠছে, গুম কমিশনে জমা হওয়া ১ হাজার ৯০০টি মামলার সমাধান কীভাবে হবে? এই মামলাগুলো কীভাবে সমাধান করা হবে—গণমাধ্যমেরও উচিত সেই প্রশ্ন তোলা। এ ছাড়া যাঁরা কাউকে তুলে নিয়েছিলেন বা আটক করেছিলেন, শুধু তাঁদের নয়, যাঁরা পরিকল্পনা করেছিলেন, নির্দেশনা দিয়েছিলেন, তাঁদেরও যেকোনো আইনে অপরাধী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান বলেন, অবশ্যই আওয়ামী সরকারের অধীনে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ ঘটনাগুলোর মধ্যে একটি হলো গুম। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে দমনমূলক রাষ্ট্রের মূলে রয়েছে নির্বিচার আটক। গুম ঘটে এবং তা ভয়াবহ, কিন্তু সংখ্যায় তুলনামূলকভাবে কম ছিল। শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে নির্বিচার আটকের ঘটনাগুলো হাজার হাজার, লাখ লাখ মানুষকে অনেক বেশি প্রভাবিত করেছিল।
গুমের সঙ্গে জড়িতদের বিচারকে একটি দীর্ঘ বিচার উল্লেখ করে ডেভিড বার্গম্যান বলেন, সেই বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আগে সংঘটিত বিচারের চেয়ে অনেক বেশি ন্যায্য হবে বলে আশা করা যায়। কারণ, যে প্রমাণগুলো এখন ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপিত হয়েছে, তা বাস্তবসম্মত এবং বিশ্বাসযোগ্য।
সেমিনারে বক্তব্যে গুমের ঘটনায় সেনা কর্মকর্তাদের বিচারের প্রসঙ্গ ধরে ডাকসু ভিপি সাদিক কায়েম বলেন, ‘খুনি জেনারেলদের এসি প্রিজন ভ্যানে করে আনা–নেওয়া হচ্ছে। তাঁদের যেখানে রাখা হচ্ছে, সেখানে এসির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এটা পুরো জাতির জন্য লজ্জার। দেশের যে কারাগার আছে, সেখানে তাঁদের রাখতে হবে। দেশের আইন অনুযায়ী তাঁদের বিচার করতে হবে।’
মায়ের ডাকের সংগঠক সানজিদা ইসলাম তুলি বলেন, প্রতিটা গুমের, চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। স্বচ্ছ ন্যায়বিচারের মাধ্যমে বিশ্ববাসীকে জানাতে হবে, ‘ফ্যাসিস্ট’ শেখ হাসিনার সময়ে শুধু বিনা ভোটে ক্ষমতায় থাকার জন্য ভিন্নমতের মানুষদের কীভাবে হত্যা করা হয়েছে, চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে।
সেমিনারে গুমের শিকার পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়াতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান মীর আহমাদ বিন কাসেম আরমান। তিনি বলেন, সব ভেদাভেদ ভুলে বাংলাদেশকে বসবাসযোগ্য হিসেবে তৈরি করতে হবে। সংবিধান অনুযায়ী মানুষের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রচ্ছদ প্রকাশনের মালিক রাজিবুল হাসান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ মুজিবুর রহমান হল সংসদের সাহিত্য সম্পাদক আবিদ হাসানের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন ভিয়েতনামে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত এম মারুফ জামান, সাবেক সেনা কর্মকর্তা আবদুল্লাহিল আমান আযমী, আইনজীবী চৌধুরী তানজিম করিম, আইনজীবী ইমরান সিদ্দিকী, জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর মানবাধিকারবিষয়ক জুনিয়র উপদেষ্টা তাজরিয়ান আকরাম খান।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশ মিশনের ডেপুটি হেড অব ডেলিগেশন বাইবা জারিনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকলেও বক্তব্য দেননি।
মীর আহমাদ বিন কাসেম আরমানের মা খোন্দকার আয়েশা খাতুন, স্ত্রী ফারহানা ফাখরুবা, ডাকসুর পরিবহনবিষয়ক সম্পাদক আসিফ আব্দুল্লাহ, সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক মোসাদ্দেক আলী ইবনে মুহাম্মদ, জুলাই যোদ্ধা তাহমিদ হুজাইফার বাবা আবুল খায়ের, শেখ মুজিবুর রহমান হল সংসদের ভিপি মুসলিমুর রহমানও সেমিনারে বক্তব্য দেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম নব ধ ক র উপদ ষ ট সরক র র র জন য ব শ বব ন বল ন অপর ধ
এছাড়াও পড়ুন:
ভেনেজুয়েলা নিয়ে ট্রাম্প কী লক্ষ্য অর্জন করতে চান
দুই মাস ধরে যুক্তরাষ্ট্র ক্যারিবীয় সাগরে কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক সমাবেশ ঘটাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র বলছে, মাদকের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য এ আয়োজন। কিন্তু ওয়াশিংটনের প্রকৃত উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র শক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে কারাকাসকে বার্তা দিতে চায়।
যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে ছোট ছোট নৌযানে হামলা চালিয়ে কয়েকজনকে হত্যা করেছে। এই হামলাগুলোকে ঘিরে লাতিন আমেরিকা অঞ্চলজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে। বিশেষজ্ঞরা প্রশ্ন তুলেছেন এর বৈধতা নিয়ে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকাণ্ড আসলে ইঙ্গিত দিচ্ছে—ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরোকে ভয় দেখাতে অভিযান চালানো হচ্ছে।
লন্ডনভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান চ্যাথাম হাউসের লাতিন আমেরিকা-বিষয়ক সিনিয়র ফেলো ক্রিস্টোফার সাবাতিনি বলেন, এটি মূলত সরকার পরিবর্তনের প্রচেষ্টা। তারা হয়তো সরাসরি আগ্রাসনে যাবে না, বরং শক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে বার্তা দিতে চায়।
সাবাতিনির মতে, এই সামরিক আয়োজন আসলে শক্তি প্রদর্শন। এর উদ্দেশ্য ভেনেজুয়েলার সেনাবাহিনী ও মাদুরোর ঘনিষ্ঠ মহলে ভয় সৃষ্টি করা, যাতে তারা তাঁর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প