রাউজানে ১৮ দিনের মাথায় আরও এক যুবদল কর্মীকে গুলি করে হত্যা
Published: 25th, October 2025 GMT
চট্টগ্রামের রাউজানে ১৮ দিনের মাথায় আবারও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এবার দুর্বৃত্তদের গুলিতে খুন হয়েছেন মুহাম্মদ আলমগীর আলম (৪৫) নামের যুবদলের এক কর্মী। আজ শনিবার বিকেল পাঁচটার দিকে পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম রাউজানের চারাবটতল বাজারসংলগ্ন কায়কোবাদ জামে মসজিদের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
যুবদল কর্মী আলমগীর আলম মোটরসাইকেলে পাশের গ্রামের এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে দাওয়াত খেয়ে নিজ বাড়িতে ফিরছিলেন। তাঁর স্ত্রী ও সন্তান মোটরসাইকেলের পেছনে একটি অটোরিকশায় ছিলেন। এ ঘটনায় আলমগীর আলমের আত্মীয় মুহাম্মদ রিয়াদও (২৫) গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, কায়কোবাদ জামে মসজিদের কবরস্থানে লুকিয়ে থাকা আটজন অস্ত্রধারী আলমগীরকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। অস্ত্রধারীরা তাঁকে হত্যার পর রাঙামাটি সড়ক দিয়ে অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলে পালিয়ে যান। পুলিশ তাঁদের পরিচয় জানাতে পারেনি। নিহত আলমগীরের শরীরে ৫ টি গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এর আগে ৭ অক্টোবর উপজেলার বিএনপি কর্মী মুহাম্মদ আবদুল হাকিমকে (৫২) রাউজানের খামার বাড়ি থেকে ফেরার পথে হাটহাজারীর মদুনাঘাটে চলন্ত গাড়িতে গুলি করে হত্যা করে অস্ত্রধারীরা। এ ঘটনার রেশ না কাটতেই উপজেলায় আরও একটি হত্যার ঘটনা ঘটল।
নিহত আলমগীর আলমের বাড়ি ঢালার মুখ এলাকায়। তিনি আবদুস সত্তারের ছেলে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকার আমলে তিনি একাধিক মামলায় দীর্ঘদিন কারাগারে ছিলেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর তিনি জেল থেকে ছাড়া পান।
পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আজ বিকেল পাঁচটার দিকে মুহাম্মদ আলমগীর আলম পাশের গ্রাম রশিদার পাড়া থেকে দাওয়াত খেয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। এ সময় একদল অস্ত্রধারী চারাবটতলের মসজিদের পাশের কবরস্থান থেকে বের হয়ে তাঁর মোটরসাইকেল লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি করে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনি পড়ে যান। পরে পুলিশ এসে তাঁর লাশ উদ্ধার করে। সন্ধ্যায় পুলিশ ময়নাতদন্তের জন্য তাঁর লাশ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। পুলিশের ধারণা, পূর্বশত্রুতা ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।
রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘আলমগীর আগে অপরাধজগতে থাকলেও এবার জেল থেকে এসে স্বাভাবিক জীবন যাপন করছিলেন। পূর্বশত্রুতা কিংবা আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এ হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে। আমরা সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছি।’
রাউজান পৌরসভা বিএনপির সাবেক সভাপতি সৈয়দ মনজুরুল হক নিহত আলমগীর বিএনপি বা সহযোগী কোনো সংগঠনের কর্মী নন বলে দাবি করেন। প্রথম আলোকে বলেন, নিহত ব্যক্তি বিএনপির কেউ নন। তিনি দলের কোনো পদ–পদবিতে আগেও ছিলেন না, এখনো নেই।
তবে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির বিলুপ্ত কমিটির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খোন্দকার এক বিবৃতিতে আলমগীরকে যুবদল কর্মী দাবি করে তাঁর হত্যার নিন্দা জানিয়েছেন। হত্যাকাণ্ডের পর গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, নিহত আলমগীর আওয়ামী শাসনামলে দীর্ঘ ১২ বছর কারাভোগের পর সম্প্রতি কারামুক্ত হয়েছিলেন। রাউজানের বিরাজমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নির্মমভাবে খুন হলেন তিনি। বিবৃতিতে তিনি অবিলম্বে এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের এবং খুনের নির্দেশদাতাদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান।
উল্লেখ্য, রাউজানে গত ৫ আগস্টের পর রাজনৈতিক সহিংসতায় মোট ১৭টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ১২টি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড। বিএনপির দুই পক্ষে সংঘর্ষ হয় অন্তত শতাধিকবার। ৩৫০ জনের বেশি মানুষ এসব ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আলমগ র আলম হত য ক ণ ড র ম হ ম মদ ব এনপ র য বদল র ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
বিদেশি ঋণে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির বিধি শিথিল
মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির বিধি শিথিল করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন থেকে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) অনুমোদন ছাড়াই সরাসরি তিন বছরের জন্য বিদেশি ঋণ নিয়ে প্রয়োজনীয় মূলধনী যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম আমদানি করা যাবে।
বুধবার (১০ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা ও নীতি বিভাগ থেকে এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। নতুন এই নিয়মে শিল্প খাতের আমদানি প্রক্রিয়া বেশ সহজ হবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
নির্দেশনা অনুযায়ী, বিডার বৈদেশিক ঋণ কমিটির এক সভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতেই এই শিল্পবান্ধব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এতদিন শিল্প উদ্যোক্তারা শুধু নতুন যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য এই দীর্ঘমেয়াদি ক্রেডিট সুবিধা পেতেন। নতুন নিয়মে জাহাজ, সরঞ্জাম, যন্ত্রপাতিসহ বিভিন্ন ধরনের মূলধনী পন্য তিন বছর মেয়াদে কিস্তিতে আমদানি করা যাবে। বিদেশি সরবরাহকারী বা ব্যাংক থেকেই এই ঋণ সুবিধা নেওয়া যাবে।
শিল্প উদ্যোক্তারা এই সিদ্ধান্তকে অত্যন্ত ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। তাদের মতে, এতে আমদানির জটিল প্রক্রিয়া অনেক কমে যাবে। ব্যবসায়ীরা সহজেই তাদের প্রয়োজনীয় মূলধনী পণ্য সময়মতো সংগ্রহ করতে পারবেন, যা উৎপাদন বাড়াতে সহায়ক হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই সিদ্ধান্ত দেশের শিল্প ও উৎপাদন খাতের গতিশীলতা বাড়াবে এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও নতুন বিনিয়োগকে উৎসাহিত করবে।
ঢাকা/নাজমুল/রফিক