থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া আজ রোববার শান্তিচুক্তির একটি যৌথ ঘোষণাপত্র স্বাক্ষর করেছে। এটিকে দুই দেশের বিরোধপূর্ণ সীমান্তে শত্রুতা বন্ধ এবং শান্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য আনুষ্ঠানিক পদক্ষেপ হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে।

চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী অনুতিন চার্নভিরাকুল ও কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত। মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে আজ শুরু হওয়া দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর জোটের (আসিয়ান) শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে তাঁরা এ চুক্তি সই করেন।

আসিয়ান সভাপতি হিসেবে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চুক্তি স্বাক্ষর প্রত্যক্ষ করেছেন।

ঘোষণাপত্রটি গত জুলাইয়ে থাইল্যান্ড–কম্বোডিয়ার মধ্যে আলোচনার পর অর্জিত যুদ্ধবিরতির বোঝাপড়াকে আরও দৃঢ় করেছে।

থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে ৮১৭ কিলোমিটার সীমান্ত নিয়ে বিরোধ শত বছরের পুরোনো। এ বিরোধকে কেন্দ্র করে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা গত ২৪ জুলাই সামরিক সংঘর্ষে রূপ নেয়।

২৮ জুলাই মালয়েশিয়ার পুত্রাজায়ায় হুন মানেত ও থাইল্যান্ডের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী ফুমথাম ওয়েচায়াচাইকে নিয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক আয়োজন করেন আনোয়ার ইব্রাহিম। বৈঠকে তিনি দুই দেশের সীমান্তে উত্তেজনা কমাতে সফল হন।

সবশেষ এ শান্তিচুক্তিকে আসিয়ানের জন্য একটি বড় অর্জন হিসেবে দেখা হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে আরও বড় কোনো সামরিক সংঘাতের আশঙ্কার অবসান ঘটল এবং হাজার হাজার মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত হলো।

আরও পড়ুনট্রাম্প গেলেন মালয়েশিয়ায়, আরেকটি ‘বড় শান্তিচুক্তি’ সইয়ের সাক্ষী হবেন৪ ঘণ্টা আগে

মালয়েশিয়া এ বছর ৪৭তম আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনের সভাপতিত্ব করছে। কুয়ালালামপুর কনভেনশন সেন্টারে আজ শুরু হওয়া এ সম্মেলন শেষ হবে ২৮ অক্টোবর।

এর আগে গতকাল শনিবার মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহামেদ হাসান বলেন, সীমান্ত এলাকা থেকে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার ভারী অস্ত্র প্রত্যাহার, বিস্ফোরক ও মাইন অপসারণ করে ধ্বংস করা শান্তিচুক্তির মূল ধারাগুলোর অন্যতম। তিনি আরও বলেন, চুক্তিতে আসিয়ান পর্যবেক্ষক দল প্রতিষ্ঠার কথাও আছে। তারা সংঘর্ষপ্রবণ সীমান্ত অঞ্চলের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে।

আরও পড়ুনথাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া সংঘাত কোন দিকে যাচ্ছে২৪ জুলাই ২০২৫

উল্লেখ্য, ১৯০৭ সালে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে সীমানা নির্ধারণ করে দেন ফরাসি ঔপনিবেশিক শাসকেরা। তবে ওই মানচিত্র নিয়ে থাইল্যান্ডের আপত্তি ছিল। বিষয়টি আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) গড়ালেও কোনো সুরাহা হয়নি।

সীমান্তবিরোধ নিয়ে দশকের পর দশক ধরে দুই দেশের মধ্যে সংঘাত হয়েছে। তবে সবশেষ সংঘাত ছিল ১৩ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড়।

আরও পড়ুনযুদ্ধবিরতির আলোচনায় সম্মত থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া: ট্রাম্প ২৬ জুলাই ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আস য় ন

এছাড়াও পড়ুন:

মেট্রোরেলের উত্তরা-আগারগাঁও অংশ চালু, মতিঝিল অংশে কত সময় লাগবে

রাজধানীর ফার্মগেটে মেট্রোরেলের পিলার থেকে বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে এক যুবকের মৃত্যুর পর আজ দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন মেট্রোরেলের যাত্রীরা।

সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান আজ বিকেল তিনটার কিছু পরে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রথম আলোকে বলেন, মেট্রোরেলের আগারগাঁও থেকে উত্তরা অংশে ট্রেন চলাচল শুরু হয়ে গেছে। বাকি অংশ চালু করতে একটু সময় লাগবে। কারণ ক্রেন আসতে হবে। আবার দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে, সে জন্য মেরামতের পর পরীক্ষা করতে হবে।

দুর্ঘটনায় নিহত আবুল কালামের মরদেহ শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।

আজ দুপুর ২টা ১০ মিনিটে মেট্রোরেল পরিচালনাকারী সংস্থা ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) তাদের ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে কারিগরি ত্রুটির কারণে মেট্রোরেল চলাচল সাময়িক বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছে।

এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের ধৈর্যধারণের অনুরোধ জানিয়েছে।

ডিএমটিসিএল সূত্র জানিয়েছে, কারিগরি ত্রুটি মেরামতের চেষ্টা চলছে।

২০২৪ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ফার্মগেটে মেট্রোরেলে একটি বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়েছিল। এ কারণে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ১১ ঘণ্টা বন্ধ থাকে মেট্রো ট্রেন চলাচল।

মেট্রোরেল পরিচালনায় যুক্ত একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আগের বার দুর্ঘটনার সময় প্রায় ১১ ঘণ্টা লেগেছিল মেট্রোরেল সচল করতে। এবার কত সময় লাগে, তা বলা যাচ্ছে না।

মেট্রোরেলের লাইনের নিচে উড়ালপথের পিলারের সঙ্গে রাবারের বিয়ারিং প্যাড থাকে। ডিএমটিসিএল সূত্র জানিয়েছে, এগুলোর প্রতিটির ওজন আনুমানিক ১৪০ বা ১৫০ কেজি। এসব বিয়ারিং প্যাড ছাড়া ট্রেন চালালে উড়ালপথ দেবে যাওয়া কিংবা স্থানচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ জন্যই মেট্রোরেলের চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।

ফিরে যাচ্ছেন যাত্রীরা

২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশে প্রথম মেট্রোরেল চালু হয়। উত্তরা থেকে মতিঝিল পথে মেট্রোরেল চলাচল করে। ডিএমটিসিএলের তথ্য বলছে, উদ্বোধনের পর থেকে গত জুন পর্যন্ত ১৫ কোটি ৭৫ লাখের মতো যাত্রী মেট্রোরেলে যাতায়াত করেছে।

মেট্রোরেল এখন রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ ও জনপ্রিয় গণপরিবহন। আজ দুপুরে মেট্রোরেল চলাচল বন্ধের পর স্টেশন থেকে যাত্রীদের চলে যেতে দেখা যায়।

কারওয়ান বাজারের মেট্রো স্টেশনে চারটি প্রবেশপথ রয়েছে। রোববার দুপুরে স্টেশনে গিয়ে দেখা যায় আনসার ও পুলিশ সদস্যরা ভেতরে অবস্থান নিয়ে সব প্রবেশপথ বন্ধ করে রেখেছেন।

কারওয়ান বাজার মোড়ের বিএসইসি ভবন সংলগ্ন প্রবেশপথের মুখে অর্ধশতাধিক যাত্রী ভিড় দেখা গেল। যাত্রীরা কখন মেট্রোরেল চালু হবে জানতে চাইলে আনসার ও পুলিশ সদস্যদের কেউ স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারেননি।

এ সময় তোরাব হাসান নামের এক যাত্রী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি কারওয়ান বাজার মেট্রো স্টেশন থেকে মতিঝিল যেতে এসেছিলাম। এসে দেখি প্রবেশপথ বন্ধ। শুনলাম দুর্ঘটনা হয়েছে। পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্যদের কাছে জানতে চেয়েছিলাম কখন মেট্রো চালু হবে। কেউ বলতে পারছেন না কবে চালু হবে।’

মেট্রো স্টেশনের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত আনসার সদস্য জুয়েল আহমদ যাত্রীদের উদ্দেশ্যে বলছিলেন, ‘আজকে মেট্রোরেল চালু হবে না। আপনারা অপেক্ষা না করে চলে যান।’

জুয়েল প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফার্মগেটে দুর্ঘটনার পর সাড়ে ১২টার দিকে গেট বন্ধ করেছি। কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা পেলেই আমরা গেট খুলব।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ