পুলিশে পদোন্নতি আর বদলির তদবির এই পর্যায়ে পৌঁছেছে যে তা আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের সভায়ও উঠল।

আজ রোববার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় তা উঠলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী তদবিরকারী কর্মকর্তার বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিতে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলমকে নির্দেশ দেন বলে বৈঠক সূত্র জানিয়েছে।

একটি সূত্র প্রথম আলোকে বলেছে, বৈঠকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নিজেই পুলিশের বিভিন্ন পদে পদোন্নতি ও বদলির জন্য অনেকের তদবির পাওয়ার কথা বলেন। এ সময় আইজিপি বাহারুল আলমও বলেন, তাঁর কাছেও এমন তদবির আসে। তখন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আইজিপিকে নির্দেশ দেন, যে কর্মকর্তা তদবির করবেন, তাঁকে পদোন্নতি বা বদলি না করে ধরতে হবে। কারণ, এই কর্মকর্তারাই আবার রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের কাছে গিয়ে ধরনা দেন।

সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নে পুলিশে তদবির নিয়ে আলোচনার কথা অস্বীকার করেননি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি বলেন, পদোন্নতি বা বদলির বিষয়ে অনেকে অনুরোধ করেন। কিন্তু এগুলো সম্পূর্ণ পুলিশের নিজস্ব বিষয়। যাঁরা তদবিরের অনুরোধ পান, তিনি বলেছেন তাঁরা যেন বলেন যে এটা পুলিশের কাজ, তাঁরা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নেবে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ২১ অক্টোবর পুলিশের পরিদর্শক পদমর্যাদার ৮০ জন কর্মকর্তাকে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। পৃথক তিনটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এই পদোন্নতি কার্যকর করা হয়। এই পদোন্নতির মধ্যে ছিলেন পরিদর্শক (নিরস্ত্র) ৩৩ জন, পরিদর্শক (শহর ও যানবাহন) ১৮ জন এবং পরিদর্শক (সশস্ত্র) ২৯ জন। এ ছাড়া পুলিশের কনস্টেবল থেকে এএসআই পদেও পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে। শূন্য পদে এসব নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। কনস্টেবল থেকে এএসআই ও পরিদর্শক থেকে এএসপি পদে পদোন্নতি ও বদলি নিয়ে মূলত এ তদবিরের অভিযোগ।

পদোন্নতি-বদলিতে অনিয়ম থাকলে তা নিয়ে লিখতে সাংবাদিকদের অনুরোধ জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। তাঁর ভাষায়, যদি কেউ টাকা খেয়ে বদলি করান, গণমাধ্যম যেন তা নির্দ্বিধায় লেখে। বদলি-বাণিজ্য বন্ধ করতে পারলে নির্বাচনে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

নির্বাচনে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকেই এ বিষয়ে আপত্তি আসেনি। ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ আগেও ছিল, এখনো আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে।

চট্টগ্রামের রাউজান ও রাঙ্গুনিয়ায় রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ওই এলাকায় আগে থেকেই সমস্যা ছিল। এখনো কিছু ঘটনা ঘটছে, তবে আগের তুলনায় অনেক কমেছে।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে বুলেটপ্রুফ গাড়ির অনুমোদন দেওয়া প্রসঙ্গে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনি চাইলে আপনাকেও দেওয়া হবে।’

উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভায় গ্রাহকপ্রতি মোবাইল সিমের ব্যবহার কমিয়ে আনার বিষয়েও আলোচনা হয়। বর্তমানে গ্রাহকপ্রতি সিম নিবন্ধন করা যায় ১০টি। সেটি কমিয়ে ৫টিতে নামিয়ে আনা হচ্ছে। আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের আগেই এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।

এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচনের আগে গ্রাহকপ্রতি সিমের সংখ্যা কমিয়ে আনা হবে। কারণ, একজনের সিম কার্ড ব্যবহার করে আরেকজন অপরাধ করেন, তাতে প্রকৃত দোষী ব্যক্তি অনেক সময় ধরা–ছোঁয়ার বাইরে থাকেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব নাসিমুল গনি, পুলিশ মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম, বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠকে অংশ নেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর মকর ত বদল র তদব র

এছাড়াও পড়ুন:

জুলাই–পরবর্তী সময়েও ছাত্রদলের নেতা–কর্মীদের প্রাণ দিতে হয়েছে: ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক

জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন বলেছেন, জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে ছাত্রদলের ১৪২ জন শহীদ হয়েছেন। কিন্তু জুলাই–পরবর্তী সময়েও ছাত্রদলের নেতা–কর্মীদের প্রাণ দিতে হয়েছে।

আজ রোববার বিকেলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের মাঠে শাখা ছাত্রদলের আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে নাছির এ কথা বলেন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা হাসিবুল ইসলামের অকালমৃত্যু এবং জোবায়েদ হোসেনের ওপর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে এ আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।

আলোচনা সভায় নাছির উদ্দীন বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্যকে (শাহরিয়ার আলম সাম্য) ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে। কয়েক দিন আগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জোবায়েদকেও একই কায়দায় হত্যা করা হয়। পারভেজ (জাহিদুল ইসলাম পারভেজ) হত্যার পর প্রশাসন খুনিদের গ্রেপ্তার করতে গড়িমসি করেছিল। সাম্য হত্যার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাজনীতি হয়েছে। যে পরিমাণ প্রতিবাদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকে হওয়ার কথা ছিল, সেটা দেখা যায়নি।

নাছির আরও বলেন, ‘জোবায়েদ হোসেন হত্যার পর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় অসাধারণ ভূমিকা রেখেছে, এখনো রেখে যাচ্ছে। হাসিবের মৃত্যুর পর এবং জোবায়েদ হত্যার পর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যে ভূমিকা রাখা হয়েছে, তার জন্য ছাত্রদলের পক্ষ থেকে আমরা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’

আলোচনা সভায় জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম বলেছেন, ‘আমাদের দলে কিছু বিপথগামী সদস্য আছে, সেটা স্বীকার করেই আমরা রাজনীতি করি। কিছু বিপথগামী ছাড়া ছাত্রদলের সবাই নৈতিক চরিত্রের অধিকারী।’

রাকিব বলেন, ‘স্বল্প সময়ে ছাত্রদলের পদধারী তিন নেতা—ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্য, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের পারভেজ এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জোবায়েদকে হত্যা করা হয়েছে। ছাত্রদলের নেতা–কর্মীদের এমন মৃত্যুতে আমরা শোকাহত।’

আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রেজাউল করিম, কোষাধ্যক্ষ সাবিনা শরমীন, রেজিস্ট্রার শেখ গিয়াসউদ্দিন, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রইছ্ উদদীন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান হিমেল, সদস্যসচিব শামসুল আরেফিনসহ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের বর্তমান ও সাবেক নেতা–কর্মীরা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ