নড়াইলে শ্রেণিকক্ষে শিশু শিক্ষার্থীকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে শিক্ষক বরখাস্ত
Published: 27th, October 2025 GMT
নড়াইল সদর উপজেলায় শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে এক শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়েছে। গতকাল রোববার রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম।
তবে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর পরিবারের দায়ের করা মামলার পাঁচ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো অভিযুক্ত শিক্ষককে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
অভিযুক্ত শিক্ষকের নাম তরিকুল ইসলাম। তিনি নড়াইল সদর উপজেলার বাসিন্দা ও একই উপজেলার একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার স্বাক্ষরিত বরখাস্তের চিঠিতে বলা হয়েছে, তরিকুল ইসলাম অর্থের বিনিময়ে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে কোচিং করাতেন। চলতি মাসের ১৫ অক্টোবর কোচিং শেষে পঞ্চম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হয়। এ কারণে ‘সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮’-এর আলোকে ২২ অক্টোবর থেকে তাঁকে সরকারি চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, অভিযুক্ত শিক্ষক তরিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ে ছাত্রী শ্লীলতাহানির অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাও করা হয়েছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ১৫ অক্টোবর বিকেলে স্কুল ছুটির পর চার শিক্ষার্থীকে শ্রেণিকক্ষে প্রাইভেট পড়াচ্ছিলেন তরিকুল ইসলাম। এ সময় কৌশলে তিন শিক্ষার্থীকে বাইরে পাঠিয়ে দিয়ে এক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণচেষ্টা চালান। পরিবার জানায়, সম্মানহানির ভয়ে তারা প্রথমে বিষয়টি চেপে যায়। পরে ২১ অক্টোবর নড়াইল সদর থানায় মামলা করে।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর পরিবারের এক সদস্য বলেন, ‘সবকিছু উপেক্ষা করে, সামাজিক সম্মানহানিকে তুচ্ছ করে মামলা করেছি। কিন্তু পাঁচ দিনেও অভিযুক্ত শিক্ষককে গ্রেপ্তার করা হয়নি।’
এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নড়াইল সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মাসুদ রানা বলেন, ‘অভিযুক্ত শিক্ষক তরিকুলকে এখনো গ্রেপ্তার করা যায়নি। তবে তাঁকে ধরতে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সাহায্যের ছলে অসহায় নারীদের ওপর যৌন নিপীড়নের অভিযোগ, তুরস্কে দাতব্য সংস্থার মালিক গ্রেপ্তার
যৌন নির্যাতনের অভিযোগে তুরস্কের একটি দাতব্য সংস্থার মালিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিবিসির এক অনুসন্ধানে তাঁর বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ প্রকাশ পেয়েছিল।
বিবিসি নিউজ টার্কিশের খবরে বলা হয়েছে, সাদেত্তিন কারাগোজ নামের ওই ব্যক্তি অসহায় নারীদের সাহায্য দেওয়ার নাম করে তাঁদের ওপর যৌন নিপীড়ন চালিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে কারাগোজ এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
২০১৪ সালে তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় নিজের দাতব্য সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন কারাগোজ। সহায়তার জন্য মরিয়া সিরীয় শরণার্থীরা বলেন, শুরুতে তাঁকে ‘ফেরেশতার মতো’ মনে হয়েছিল।
তিন সন্তানকে একা লালন–পালন করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছিলেন মাদিনা। তিনি অসহায় অবস্থায় সাহায্য চাইতে সাদেত্তিন কারাগোজের মালিকানাধীন দাতব্য সংস্থাটিতে যান। দাতব্য সংস্থাটির নাম হোপ চ্যারিটি স্টোর। সংস্থাটি শরণার্থীদের জন্য ডায়াপার, পাস্তা, দুধ ও পোশাকের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস সংগ্রহ করত।তেমনই একজন শরণার্থী মাদিনা (ছদ্মনাম)। তিনি ২০১৬ সালে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ থেকে পালিয়ে তুরস্কে আশ্রয় নেন। দুই বছর পর তাঁর এক সন্তান মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়ে। আর তাঁর স্বামী তাঁকে ছেড়ে চলে যান। তাঁর পরিচয় গোপন রাখার জন্য ‘মাদিনা’ ছদ্মনামটি ব্যবহার করা হয়েছে।
তিন সন্তানকে একা লালন–পালন করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছিলেন মাদিনা। তিনি অসহায় অবস্থায় সাহায্য চাইতে সাদেত্তিন কারাগোজের মালিকানাধীন দাতব্য সংস্থাটিতে যান। দাতব্য সংস্থাটির নাম হোপ চ্যারিটি স্টোর। সংস্থাটি শরণার্থীদের জন্য ডায়াপার, পাস্তা, দুধ ও পোশাকের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস সংগ্রহ করত।
দাতব্য সংস্থার ভবনটি দোতলা। এর দেয়াল লাল, সাদা ও সবুজ রঙে রাঙানো। দেয়ালে হাঁস ও শিশুদের ছবি আঁকা। মানুষকে বেশি বেশি দুধ পান ও ফলমূল-সবজি খেতে উদ্বুদ্ধ করতে সেখানে কিছু স্লোগান লেখা আছে।
কারাগোজের সঙ্গে কথোপকথনের প্রসঙ্গ টেনে মাদিনা বলেন, ‘তিনি (কারাগোজ) বলেছিলেন, যদি কোথাও যাওয়ার জায়গা না থাকে, আমার কাছে এসো। আমি তোমার দেখভাল করব।’
কিন্তু পরে কারাগোজের কাছে যাওয়ার পর তাঁর ভিন্নরূপ দেখতে পান মাদিনা।
মাদিনা বলেন, ‘তিনি আমাকে অফিসের পেছনে পর্দা দেওয়া এক জায়গায় যেতে বলেন। তিনি বলেছিলেন সেখান থেকে কিছু জিনিস দেবেন। তিনি আমাকে আঁকড়ে ধরেন এবং চুমু খেতে শুরু করেন...আমি তাঁকে দূরে যেতে বলি। যদি আমি চিৎকার না করতাম, তিনি হয়তো আমাকে ধর্ষণের চেষ্টা করতেন।’
মাদিনা জানান, তিনি কোনোরকমে সেই ভবন থেকে পালিয়ে আসেন। কিন্তু পরে কারাগোজ নিজেই তাঁর বাড়িতে হাজির হন। মাদিনা বলেছেন, তিনি দরজা খোলেননি। কারাগোজ তাঁকে সিরিয়ায় ফেরত পাঠানোর হুমকি দিয়েছিলেন।
মাদিনা বলেছেন, ভয়ের কারণে তিনি কখনো পুলিশের কাছে যাননি। ঘটনাটি তিনি কাউকে জানাননি।
অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মী সাদেত্তিন কারাগোজ অবশ্য সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বিবিসিকে বলেন, তাঁর সংস্থা এখন পর্যন্ত ৩৭ হাজারের বেশি মানুষকে সাহায্য করেছে। তাঁর দাবি, সংস্থার ত্রাণ বিতরণ এলাকা ছোট, জনাকীর্ণ এবং সেখানে সারাক্ষণ সিসিটিভি ক্যামেরায় নজরদারি চলে। তাই কোনো নারীর সঙ্গে একা থাকার প্রশ্নই ওঠে না।
বছরের পর বছর ধরে কারাগোজের সংস্থাটি ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছে এবং ২০২০ সালে স্থানীয় একটি পত্রিকার পুরস্কারও জিতেছে। জাতীয় টেলিভিশনে সংস্থাটি নিয়ে খবরও প্রচার হয়েছে। তিনি বলেন, সংস্থাটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সমর্থন পেয়েছে। চলতি বছরের মার্চে তিনি সংস্থার তুর্কি নাম পরিবর্তন করে রেখেছেন ‘মাই হোম মিল অ্যাসোসিয়েশন’।বছরের পর বছর ধরে কারাগোজের সংস্থাটি ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছে এবং ২০২০ সালে স্থানীয় একটি পত্রিকার পুরস্কারও জিতেছে। জাতীয় টেলিভিশনে সংস্থাটি নিয়ে খবরও প্রচারিত হয়েছে। তিনি বলেন, সংস্থাটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সমর্থন পেয়েছে। চলতি বছরের মার্চে তিনি সংস্থার তুর্কি নাম পরিবর্তন করে রেখেছেন ‘মাই হোম মিল অ্যাসোসিয়েশন’।
মাদিনাসহ তিন নারী বিবিসিকে বলেছেন, কারাগোজ তাঁদের ওপর যৌন নিপীড়ন চালিয়েছেন।
আর সংস্থার দুই সাবেক কর্মীসহ সাত ব্যক্তি বলেছেন, তাঁরা ২০১৬ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে কারাগোজকে নিপীড়ন চালাতে দেখেছেন কিংবা তাৎক্ষণিকভাবে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে অভিযোগ শুনেছেন।
২৭ বছর বয়সী সিরীয় শরণার্থী নাদা (ছদ্মনাম) বলেন, কারাগোজ তাঁকে বলেছিলেন, সাহায্য পেতে হলে তাঁকে ফাঁকা একটি ফ্ল্যাটে যেতে হবে। সেখানে না গেলে সাহায্য দেওয়া হবে না।
নাদা বলেন, একবার কারাগোজ তাঁর ছেলের জন্য ডায়াপার দেওয়ার কথা বলে পর্দার পেছনে নিয়ে যৌন নিপীড়নের চেষ্টা চালিয়েছিলেন।
বিবিসির কাছে কারাগোজের বিরুদ্ধে যে তৃতীয় নারী অভিযোগ করেছিলেন, তাঁর নাম বাতুল। তিনি পরে জার্মানিতে চলে গেছেন। তিনি একজন একা মা (সিঙ্গেল মাদার)। তিনিও অভিযোগ করেছিলেন, কারাগাজের কাছে সাহায্য চাইতে গিয়ে তিনি যৌন হয়রানির শিকার হয়েছিলেন।
কারাগোজের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ এবারই প্রথম নয়; এর আগে ২০১৯ সালেও তাঁর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছিল। কিন্তু তখন তদন্তকারী কর্মকর্তারা বলেছিলেন, মামলা করার জন্য পর্যাপ্ত প্রমাণ নেই।
পুলিশ বলেছে, ভুক্তভোগী বা সাক্ষীরাও আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করার জন্য এগিয়ে আসতে ইচ্ছুক ছিলেন না।