গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড় ‘মোন্থায়’ পরিণত, আঘাত হানার সময় ও স্থান জানাল আবহাওয়া অফিস
Published: 27th, October 2025 GMT
দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগরে থাকা গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘মোন্থা’। আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্র আজ সোমবার সকালে এ তথ্য জানিয়েছেন।
অধিদপ্তরের বিশেষ বার্তায় বলা হয়েছে, গতকাল দিবাগত রাত ৩টায় এই ঘূর্ণিঝড়টি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৩৬০ কিলোমিটার, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৩০০ কিলোমিটার, মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ১ হাজার ২৮০ এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ২৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছিল।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো.
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার। এটি দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ঘণ্টায় ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছাকাছি এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হওয়ার পর চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেতের পরিবর্তে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে তাদের গভীর সাগরে না যেতে বলা হয়েছে।
তরিফুল নেওয়াজ কবীর বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে আগামীকাল থেকে বৃষ্টি হতে পারে দেশের কিছু অঞ্চলে। তবে বুধবার থেকে বৃষ্টির পরিমাণ বাড়তে পারে।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সাহায্যের ছলে অসহায় নারীদের ওপর যৌন নিপীড়নের অভিযোগ, তুরস্কে দাতব্য সংস্থার মালিক গ্রেপ্তার
যৌন নির্যাতনের অভিযোগে তুরস্কের একটি দাতব্য সংস্থার মালিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিবিসির এক অনুসন্ধানে তাঁর বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ প্রকাশ পেয়েছিল।
বিবিসি নিউজ টার্কিশের খবরে বলা হয়েছে, সাদেত্তিন কারাগোজ নামের ওই ব্যক্তি অসহায় নারীদের সাহায্য দেওয়ার নাম করে তাঁদের ওপর যৌন নিপীড়ন চালিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে কারাগোজ এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
২০১৪ সালে তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় নিজের দাতব্য সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন কারাগোজ। সহায়তার জন্য মরিয়া সিরীয় শরণার্থীরা বলেন, শুরুতে তাঁকে ‘ফেরেশতার মতো’ মনে হয়েছিল।
তিন সন্তানকে একা লালন–পালন করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছিলেন মাদিনা। তিনি অসহায় অবস্থায় সাহায্য চাইতে সাদেত্তিন কারাগোজের মালিকানাধীন দাতব্য সংস্থাটিতে যান। দাতব্য সংস্থাটির নাম হোপ চ্যারিটি স্টোর। সংস্থাটি শরণার্থীদের জন্য ডায়াপার, পাস্তা, দুধ ও পোশাকের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস সংগ্রহ করত।তেমনই একজন শরণার্থী মাদিনা (ছদ্মনাম)। তিনি ২০১৬ সালে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ থেকে পালিয়ে তুরস্কে আশ্রয় নেন। দুই বছর পর তাঁর এক সন্তান মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়ে। আর তাঁর স্বামী তাঁকে ছেড়ে চলে যান। তাঁর পরিচয় গোপন রাখার জন্য ‘মাদিনা’ ছদ্মনামটি ব্যবহার করা হয়েছে।
তিন সন্তানকে একা লালন–পালন করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছিলেন মাদিনা। তিনি অসহায় অবস্থায় সাহায্য চাইতে সাদেত্তিন কারাগোজের মালিকানাধীন দাতব্য সংস্থাটিতে যান। দাতব্য সংস্থাটির নাম হোপ চ্যারিটি স্টোর। সংস্থাটি শরণার্থীদের জন্য ডায়াপার, পাস্তা, দুধ ও পোশাকের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস সংগ্রহ করত।
দাতব্য সংস্থার ভবনটি দোতলা। এর দেয়াল লাল, সাদা ও সবুজ রঙে রাঙানো। দেয়ালে হাঁস ও শিশুদের ছবি আঁকা। মানুষকে বেশি বেশি দুধ পান ও ফলমূল-সবজি খেতে উদ্বুদ্ধ করতে সেখানে কিছু স্লোগান লেখা আছে।
কারাগোজের সঙ্গে কথোপকথনের প্রসঙ্গ টেনে মাদিনা বলেন, ‘তিনি (কারাগোজ) বলেছিলেন, যদি কোথাও যাওয়ার জায়গা না থাকে, আমার কাছে এসো। আমি তোমার দেখভাল করব।’
কিন্তু পরে কারাগোজের কাছে যাওয়ার পর তাঁর ভিন্নরূপ দেখতে পান মাদিনা।
মাদিনা বলেন, ‘তিনি আমাকে অফিসের পেছনে পর্দা দেওয়া এক জায়গায় যেতে বলেন। তিনি বলেছিলেন সেখান থেকে কিছু জিনিস দেবেন। তিনি আমাকে আঁকড়ে ধরেন এবং চুমু খেতে শুরু করেন...আমি তাঁকে দূরে যেতে বলি। যদি আমি চিৎকার না করতাম, তিনি হয়তো আমাকে ধর্ষণের চেষ্টা করতেন।’
মাদিনা জানান, তিনি কোনোরকমে সেই ভবন থেকে পালিয়ে আসেন। কিন্তু পরে কারাগোজ নিজেই তাঁর বাড়িতে হাজির হন। মাদিনা বলেছেন, তিনি দরজা খোলেননি। কারাগোজ তাঁকে সিরিয়ায় ফেরত পাঠানোর হুমকি দিয়েছিলেন।
মাদিনা বলেছেন, ভয়ের কারণে তিনি কখনো পুলিশের কাছে যাননি। ঘটনাটি তিনি কাউকে জানাননি।
অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মী সাদেত্তিন কারাগোজ অবশ্য সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বিবিসিকে বলেন, তাঁর সংস্থা এখন পর্যন্ত ৩৭ হাজারের বেশি মানুষকে সাহায্য করেছে। তাঁর দাবি, সংস্থার ত্রাণ বিতরণ এলাকা ছোট, জনাকীর্ণ এবং সেখানে সারাক্ষণ সিসিটিভি ক্যামেরায় নজরদারি চলে। তাই কোনো নারীর সঙ্গে একা থাকার প্রশ্নই ওঠে না।
বছরের পর বছর ধরে কারাগোজের সংস্থাটি ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছে এবং ২০২০ সালে স্থানীয় একটি পত্রিকার পুরস্কারও জিতেছে। জাতীয় টেলিভিশনে সংস্থাটি নিয়ে খবরও প্রচার হয়েছে। তিনি বলেন, সংস্থাটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সমর্থন পেয়েছে। চলতি বছরের মার্চে তিনি সংস্থার তুর্কি নাম পরিবর্তন করে রেখেছেন ‘মাই হোম মিল অ্যাসোসিয়েশন’।বছরের পর বছর ধরে কারাগোজের সংস্থাটি ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছে এবং ২০২০ সালে স্থানীয় একটি পত্রিকার পুরস্কারও জিতেছে। জাতীয় টেলিভিশনে সংস্থাটি নিয়ে খবরও প্রচারিত হয়েছে। তিনি বলেন, সংস্থাটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সমর্থন পেয়েছে। চলতি বছরের মার্চে তিনি সংস্থার তুর্কি নাম পরিবর্তন করে রেখেছেন ‘মাই হোম মিল অ্যাসোসিয়েশন’।
মাদিনাসহ তিন নারী বিবিসিকে বলেছেন, কারাগোজ তাঁদের ওপর যৌন নিপীড়ন চালিয়েছেন।
আর সংস্থার দুই সাবেক কর্মীসহ সাত ব্যক্তি বলেছেন, তাঁরা ২০১৬ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে কারাগোজকে নিপীড়ন চালাতে দেখেছেন কিংবা তাৎক্ষণিকভাবে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে অভিযোগ শুনেছেন।
২৭ বছর বয়সী সিরীয় শরণার্থী নাদা (ছদ্মনাম) বলেন, কারাগোজ তাঁকে বলেছিলেন, সাহায্য পেতে হলে তাঁকে ফাঁকা একটি ফ্ল্যাটে যেতে হবে। সেখানে না গেলে সাহায্য দেওয়া হবে না।
নাদা বলেন, একবার কারাগোজ তাঁর ছেলের জন্য ডায়াপার দেওয়ার কথা বলে পর্দার পেছনে নিয়ে যৌন নিপীড়নের চেষ্টা চালিয়েছিলেন।
বিবিসির কাছে কারাগোজের বিরুদ্ধে যে তৃতীয় নারী অভিযোগ করেছিলেন, তাঁর নাম বাতুল। তিনি পরে জার্মানিতে চলে গেছেন। তিনি একজন একা মা (সিঙ্গেল মাদার)। তিনিও অভিযোগ করেছিলেন, কারাগাজের কাছে সাহায্য চাইতে গিয়ে তিনি যৌন হয়রানির শিকার হয়েছিলেন।
কারাগোজের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ এবারই প্রথম নয়; এর আগে ২০১৯ সালেও তাঁর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছিল। কিন্তু তখন তদন্তকারী কর্মকর্তারা বলেছিলেন, মামলা করার জন্য পর্যাপ্ত প্রমাণ নেই।
পুলিশ বলেছে, ভুক্তভোগী বা সাক্ষীরাও আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করার জন্য এগিয়ে আসতে ইচ্ছুক ছিলেন না।