বঙ্গোপসাগরের দক্ষিণ-পূর্ব অংশে সৃষ্ট নিম্নচাপটি পশ্চিম-উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে। আজ সোমবার এ তথ্য জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এটি উত্তর-পশ্চিমমুখী হয়ে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। এই ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাব্য আঘাতস্থল ভারতের অন্ধ্র প্রদেশের উপকূলে। এবারের এই ঘূর্ণিঝড়ের নাম ‘মোন্থা’। নামটি থাইল্যান্ডের দেওয়া।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো.

বজলুর রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, ঘূর্ণিঝড়টির সম্ভাব্য আঘাতস্থল হতে পারে ভারতের অন্ধ্র প্রদেশের উপকূল। আগামীকাল এটি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। আগামীকাল মঙ্গলবার এটি তামিলনাড়ু উপকূলে আঘাত হানতে পারে।

প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের নাম ‘মোন্থা’। থাইল্যান্ডের দেওয়া এই নামের অর্থ ‘সুগন্ধি ফুল’। বছরের বিভিন্ন সময়ে বিশ্বজুড়ে যে ঝড়, ঘূর্ণিঝড় ঘনীভূত হওয়ার পূর্বাভাস পেয়ে থাকে আবহাওয়া দপ্তর, পালা করে বিভিন্ন দেশ তার নামকরণ করে। আর এটি করে আন্তর্জাতিক আবহাওয়া সংস্থা ওয়ার্ল্ড মেটিওরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশন (ডব্লিউএমও)। ডব্লিউএমও সে জন্য পাঁচটি বিশেষ আঞ্চলিক আবহাওয়া সংস্থার (আরএসএমসি) সঙ্গে সমন্বয় করে ২০০৪ সাল থেকে ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ শুরু করেছে।

ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ কেন

একটা সময় ছিল, যখন ঘূর্ণিঝড়ের কোনো নাম থাকত না। আমাদের দেশে ১৯৭০ সালে কিংবা ১৯৯১ সালে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় হয়ে গেছে। কিন্তু সেগুলোর কোনো নাম নেই। শুধু আমাদের দেশের নয়, অন্যান্য দেশে আঘাতহানা ঘূর্ণিঝড়েরও কোনো নাম থাকত না। তাই এসব ঝড়ের নাম রাখার একটি চল শুরু হয় একপর্যায়ে। কারণ, নামবিহীন থাকলে আঘাতহানা ঘূর্ণিঝড়ের শক্তি, ধরন সম্পর্কে তথ্য দ্রুত জানা যায় না। এর আঘাতহানার সময় বা তারিখ বের করে পরবর্তী সময়ে সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়ের গতিপ্রকৃতি নির্ণয় করতে হয় আবহাওয়াবিদদের। এটি বেশ সময়সাপেক্ষ। তাই নাম রাখার চল শুরু। আর এটি করে আন্তর্জাতিক আবহাওয়া সংস্থা ওয়ার্ল্ড মেটিওরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশন (ডব্লিউএমও)। ডব্লিউএমও সে জন্য পাঁচটি বিশেষ আঞ্চলিক আবহাওয়া সংস্থার (আরএসএমসি) সঙ্গে সমন্বয় করে ২০০৪ সাল থেকে ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ শুরু করেছে।

আরএসএমসি তার সদস্যদেশগুলোর কাছ থেকে নামের তালিকা চেয়ে থাকে। তালিকা পেলে দীর্ঘ সময় যাচাই-বাছাই করে সংক্ষিপ্ত তালিকা করে ডব্লিউএমওর কাছে পাঠায়।

বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ের নামের তালিকা অনুমোদন করে আঞ্চলিক কমিটির একটি প্যানেল। তার নাম ডব্লিউএমও/এসকাপ প্যানেল অন ট্রপিক্যাল সাইক্লোনস। এর মধ্যে আছে ভারত, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, ওমান, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, ইরান, কাতার, সৌদি আরব, ইয়েমেন ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। ২০১৮ সালের আরএমএসসি নতুন করে ঘূর্ণিঝড়ের নামের তালিকা করে। এ সময় ১৩টি দেশ ১৩টি করে নাম দেয়। নামকরণের ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় মেনে চলা হয়। যেমন রাজনীতি বা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, ধর্মীয় বিশ্বাস, সংস্কৃতি বা লিঙ্গ নিরপেক্ষ হতে হবে নামগুলোকে। বিশ্বের কোনো অঞ্চলের কোনো মানুষের অনুভূতিতে আঘাত করে, এমন নাম দেওয়া যাবে না। নাম রূঢ় হতে পারবে না। এটি সংক্ষিপ্ত ও সহজে উচ্চারণ করা যায়, এমন হতে হবে। সর্বোচ্চ আটটি বর্ণ থাকতে হবে ওই নামে। নাম দেওয়ার পাশাপাশি এখানে উচ্চারণও দিয়ে দিতে হবে।

সদস্যদেশগুলোর দেওয়া প্রস্তাবিত নাম সময়ে সময়ে সংশোধন করা যাবে।

সদস্যরাষ্ট্রগুলোর ইংরেজি নামের আদ্যক্ষর অনুযায়ী নামের তালিকা হয়। যেমন ইংরেজি বর্ণমালা অনুযায়ী এই ১৩ দেশের মধ্যে সবচেয়ে আগে থাকে বাংলাদেশের নাম। আর শেষে থাকে ইয়েমেনের নাম।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ঘ র ণ ঝড় র ন ম র ন মকরণ

এছাড়াও পড়ুন:

ভারতীয় সেনাবাহিনীর হিন্দুধর্মের প্রতি আনুগত্য আর গোপন নেই, কেমন এমন সমালোচনা হচ্ছে

ভারতের সেনাবাহিনী থেকে ২০২১ সালে লেফটেন্যান্ট স্যামুয়েল কমলেসানকে বরখাস্ত করা হয়। কারণ, খ্রিষ্টধর্মাবলম্বী এই সেনা কর্মকর্তা তাঁর রেজিমেন্টের মন্দির ও গুরুদুয়ারার পবিত্র স্থানে প্রবেশ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। বহিষ্কারাদেশের বিরুদ্ধে তিনি আইনের আশ্রয় নেন। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট তাঁকে পুনর্বহাল করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। এতে ধর্মের দিক থেকে বৈচিত্র্যময় ভারতীয় সেনাবাহিনীর ভেতরকার সবচেয়ে স্পর্শকাতর বিভাজনরেখাটি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

ভারতীয় সেনাবাহিনীর ধর্ম নিয়ে বিভাজন পুরোনো। কিন্তু এত দিন তা কখনো প্রকাশ্যে আসেনি। এতকাল তা নিয়ে কেবল ব্যক্তিগত পর্যায়ে আলোচনা হতো। সংবেদনশীলতা ও প্রাতিষ্ঠানিকতার দোহাই দিয়ে তা চেপে রাখা হতো।

কমলেসানকে বরখাস্তের আদেশের মধ্য দিয়ে ভারতীয় সেনাবাহিনীর এত বছরের স্পর্শকাতর বিষয়টি প্রকাশ্যে চলে এসেছে। এটি কেবল কোনো একজন সেনা কর্মকর্তাকে ধর্মীয় কারণে বরখাস্তের ঘটনা নয়, বরং সেনাবাহিনীর একটি গভীর সমস্যার উন্মোচন। এটা পুরো বাহিনীকে অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছে এবং অবসরপ্রাপ্ত জেনারেলদের সাবধানী পর্যবেক্ষণ দিতে বাধ্য করেছে।

বিষয়টি নিয়ে অবসরপ্রাপ্ত জেনারেলরা সম্প্রতি সংবাদপত্রে মতামত লিখেছেন। এসব লেখালেখিতে তাঁরা বলতে চেষ্টা করেছেন, ভারতীয় সেনাবাহিনীতে ধীরে ধীরে ‘নতুন স্বাভাবিকতা’ গড়ে উঠছে। বাহিনীতে দেশপ্রেম, বিশ্বাসযোগ্যতা ও জাতীয় সংহতিকে দেশের প্রধান ধর্মের দৃশ্যমান অনুসরণের সঙ্গে যুক্ত করা হচ্ছে। এ পরিবর্তন ভারতীয় সেনাবাহিনীর রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ থাকার প্রধান যে নীতি, সেটার একেবারে উল্টো।

ভারতীয় সেনাবাহিনীর নিয়োগব্যবস্থা কয়েক শতাব্দীর ঐতিহ্য থেকে গড়ে উঠেছে। সেনাবাহিনীকে দেশটির সবচেয়ে বড়, সবচেয়ে দৃশ্যমান ও সমাজের সঙ্গে সবচেয়ে গভীরভাবে যুক্ত বাহিনী হিসেবে ধরা হয়। কিন্তু সেই সেনাবাহিনীই গত এক দশকে বিমানবাহিনী বা নৌবাহিনীর তুলনায় রাজনৈতিক প্রভাবের বিষয়ে অনেক বেশি স্পর্শকাতর হয়ে উঠেছে।

বিস্তৃত সামাজিক ভিত্তিতে ফাটল

ভারতের বিমান ও নৌবাহিনীর নিয়োগব্যবস্থা মূলত প্রযুক্তি ও দক্ষতাভিত্তিক। এই দুই বাহিনীতে প্রযুক্তিতে দক্ষ লোকদের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু সেনাবাহিনীতে নিয়োগের সামাজিক ভিত্তি অনেক বেশি বিস্তৃত। অঞ্চল, জাতি ও সম্প্রদায়গত সম্পর্ক এই বাহিনীর গভীরে প্রোথিত। এ প্রথা উনিশ শতকের মাঝামাঝি ব্রিটিশ আমল থেকে চলে আসছে। এই বিস্তৃতি সেনাবাহিনীকে সমাজ বা রাজনৈতিক প্রভাবের প্রতি অধিকতর সংবেদনশীল করে তুলেছে।

এর সঙ্গে যোগ হয়েছে আরেকটি বিষয়, তা হলো জনসম্পৃক্ততা। সরকারের সরাসরি তত্ত্বাবধানে সেনাবাহিনী অন্য দুই বাহিনীর তুলনায় বেশি কাজ করে। এটা দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। বিদ্রোহ দমন, দুর্যোগে ত্রাণ ও উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা এবং অশান্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীকে প্রতিনিয়ত সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করতে হয়।

এসব কিছুর কারণে সেনাবাহিনী রাজনৈতিক যোগাযোগ ও সামাজিক চাপের প্রতি বিশেষভাবে সংবেদনশীল হয়ে উঠেছে। কিন্তু তুলনামূলকভাবে বিচ্ছিন্ন ও প্রযুক্তিনির্ভর বিমান ও নৌবাহিনীর ওপর এমন কোনো চাপ নেই।

ভারতের সেনাবাহিনীতে নিয়োগের সামাজিক ভিত্তি অনেক বেশি বিস্তৃত। অঞ্চল, জাতি ও সম্প্রদায়গত সম্পর্ক এই বাহিনীর গভীরে প্রোথিত। এ প্রথা উনিশ শতকের মাঝামাঝি ব্রিটিশ আমল থেকে চলে আসছে।

জনসম্মুখে ব্যাপক উপস্থিতি সেনাবাহিনীকে আরও বেশি রাজনৈতিক প্রভাব–বলয়ের কাছাকাছি নিয়ে এসেছে। বিজেপির নেতৃত্বাধীন তিনটি সরকারের টানা শাসন এ বাহিনীকে রাজনৈতিকভাবে আরও বেশি নাজুক করে তুলেছে। ফলে ভারতীয় সেনাবাহিনীর যুদ্ধক্ষেত্রের বিন্যাস (ফরমেশন), সামরিক অভিযান, মহড়া ও অন্যান্য প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগের নামকরণে ধর্মীয় প্রতীক ও হিন্দুপুরাণ যুক্ত হতে শুরু করেছে।

দেব–দেবী, পৌরাণিক মহাকাব্য ও প্রতীকী যোদ্ধাদের আলোচনা একসময় রেজিমেন্টের অনানুষ্ঠানিক কাহিনি ও ইউনিটের লঙ্গরখানার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু এখন এসব বিষয়কে সেনাবাহিনীর দাপ্তরিক নামকরণ ও নীতিমালায় আনুষ্ঠানিকভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা ইতিহাসে আর কখনো দেখা যায়নি।

ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রতীক ও আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম দীর্ঘদিন ধরে ধর্মনিরপেক্ষ মূল্যবোধের ভিত্তিতে পরিচালিত হয়ে এলেও এখন তা বদলে যেতে শুরু করেছে। ক্রমশ তা সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মের প্রতীককে আলিঙ্গন করতে শুরু করেছে, যা একসময় কল্পনাও করা যেত না।

ভারতের সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভারতীয় সেনাবাহিনীর হিন্দুধর্মের প্রতি আনুগত্য আর গোপন নেই, কেমন এমন সমালোচনা হচ্ছে