জাপানে কর্মসংস্থানের জন্য বিপুলসংখ্যক প্রশিক্ষিত চালক নিয়োগ দেওয়ার লক্ষ্যে জাপানের বিশিষ্ট উদ্যোক্তা ও রাজনীতিবিদ মিকি ওয়াতানাবে বাংলাদেশে একটি ড্রাইভিং স্কুল স্থাপনের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন।

ওয়াতানাবে জাপানের শিল্পপ্রতিষ্ঠান ওয়াতামি গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি গত শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে এ ঘোষণা দেন।

ওয়াতানাবে বলেন, ‘আমরা এখন ড্রাইভিং স্কুলটি স্থাপন করতে ১২ হাজার বর্গমিটারের একটি জায়গা খুঁজছি।’ জাপানে দক্ষ চালকের চাহিদা অনেক বেশি উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ সে ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ জনশক্তির উৎস হতে পারে।

আরও পড়ুনচাকরির পাশাপাশি যে পাঁচটি কাজ আপনার আয় বাড়াবে২৬ অক্টোবর ২০২৫

প্রধান উপদেষ্টা তাৎক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ঢাকার উপকণ্ঠে উপযুক্ত জমি চিহ্নিত করার নির্দেশ দেন।

অধ্যাপক ইউনূসের গত মে মাসে জাপান সফরের ধারাবাহিকতায় এ বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। ওই সফরে জাপানি উদ্যোক্তারা আগামী পাঁচ বছরে বাংলাদেশ থেকে এক লাখ কর্মী নিয়োগের বিষয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন।

ওয়াতানাবে বৈঠকে জানান, তিনি ইতিমধ্যে নরসিংদী জেলার মনোহরদীতে একটি ভাষা প্রশিক্ষণ একাডেমি স্থাপন করেছেন, যেখানে অন্তত তিন হাজার বাংলাদেশিকে প্রশিক্ষণ প্রদান ও নিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘ইতিমধ্যে নির্মাণ ও কৃষি খাতে কাজের জন্য ৫২ জন কর্মী জাপান গেছেন।’ বর্তমানে একাডেমিতে প্রতি ব্যাচে ৪০ জন শিক্ষার্থী প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন উল্লেখ করে এটিকে ধীরে ধীরে বড় পরিসরে নিয়ে যাওয়া হবে বলে জানান তিনি।

প্রধান উপদেষ্টা প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে জাপানি সংস্কৃতি, শিষ্টাচার ও আচরণ শেখানোর ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, ‘শিষ্টাচার ও সংস্কৃতি শেখানো প্রশিক্ষণের অপরিহার্য অংশ হওয়া উচিত। এতে বাংলাদেশিরা জাপানকে ভালোভাবে বুঝতে পারবেন এবং দেশটিতে যাওয়ার আগে উপযুক্তভাবে প্রস্তুত হতে পারবেন।’

আরও পড়ুনকাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটে বড় নিয়োগ, পদসংখ্যা ৯৯২৫ অক্টোবর ২০২৫

অধ্যাপক ইউনূস ওয়াতামি গ্রুপের প্রধানকে সেবা, নার্সিং, নির্মাণ ও কৃষি খাতে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম সম্প্রসারণের আহ্বান জানান; কারণ, এসব খাতে দক্ষ কর্মীরা জাপানে ভালো আয় করতে পারেন।

ওয়াতানাবে এ প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে বলেন, ‘আমরাও এগুলো করতে চাই।’

প্রধান উপদেষ্টা প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের নবগঠিত জাপান সেলের প্রশংসা করেন, যা জাপানি বিনিয়োগকারী ও বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সহযোগিতা সহজ করছে। জাপানি কোম্পানিগুলোকে যেন নরসিংদীর মনোহরদী পর্যন্ত যেতে না হয়, সে জন্য তিনি ঢাকা বা এর আশপাশে আরেকটি প্রশিক্ষণকেন্দ্র স্থাপনে আগ্রহ প্রকাশ করেন।

প্রধান উপদেষ্টার একান্ত সচিব সজীব এম খায়রুল ইসলাম জানান, শিগগিরই জাপানি বিনিয়োগকারীদের জন্য ঢাকার আশপাশের সম্ভাব্য আইটি পার্কগুলো পরিদর্শনের ব্যবস্থা করা হবে।

আরও পড়ুনকানাডায় টিউশন ফি ছাড়াই স্কলারশিপ, ৭০০টির বেশি প্রোগ্রাম৪ ঘণ্টা আগে

অধ্যাপক ইউনূস জাপানি ভাষা দক্ষতা পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানোর আহ্বান জানান। বর্তমানে বছরে মাত্র দু’বার পরীক্ষা হয়, যা ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণে যথেষ্ট নয় বলে উল্লেখ করেন তিনি।

বৈঠকে ওয়াতানাবে এক দশকের বেশি আগে গাজীপুরের নারায়ণকূলে প্রতিষ্ঠিত একটি বিদ্যালয়ের কথা স্মরণ করেন, যা অধ্যাপক ইউনূসের দারিদ্র্যমুক্ত বিশ্বের স্বপ্নে অনুপ্রাণিত হয়ে গড়ে তোলা হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘বিদ্যালয়টিতে এখন ১,৫০০ শিক্ষার্থী রয়েছে। এটি একটি অসাধারণ প্রতিষ্ঠান। এখানকার শিক্ষার্থীরা খুব ভালো করছে।’

বৈঠকে সিনিয়র সচিব ও এসডিজি সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুনবিমানবাহিনীতে বেসামরিক পদে বিশাল নিয়োগ, পদ ৩০৮২০ অক্টোবর ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ল খ কর

এছাড়াও পড়ুন:

থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া যুদ্ধবিরতিতে ফিরতে রাজি হয়েছে, জানালেন ট্রাম্প

থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া সীমান্ত এলাকায় সব ধরনের গোলাবর্ষণ বন্ধ করতে রাজি হয়েছে। শুক্রবার থেকেই এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ কথা জানিয়েছেন। 

ট্রাম্প একে একে থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী অনুতিন চার্নভিরাকুল ও কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেতের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন। শুক্রবার এসব ফোনালাপের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেশ দুটির অবস্থান জানান ট্রাম্প। 

আরও পড়ুননিজেদের ভূখণ্ড থেকে কম্বোডিয়ার বাহিনীকে সরিয়ে দিতে ব্যবস্থা নিচ্ছে থাইল্যান্ড০৯ ডিসেম্বর ২০২৫

নিজের ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প লিখেন, ‘তাঁরা (থাইল্যান্ড আর কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী) আজ সন্ধ্যা থেকেই সব ধরনের গোলাবর্ষণ বন্ধ করতে রাজি হয়েছেন। মালয়েশিয়ার দুর্দান্ত প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের সহায়তায় প্রস্তুত করা যে শান্তি চুক্তিতে আমার এবং তাঁদের দুজনের সই রয়েছে, সেটায় ফিরে যাচ্ছেন তাঁরা।’ 

সপ্তাহজুড়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে চলা সংঘর্ষে কমপক্ষে ২০ জন নিহত হয়েছেন। দেশ দুটির বিরোধপূর্ণ সীমান্তের দুপাশে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ ঘরছাড়া হয়েছেন। 

থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে গত জুলাইয়ে প্রাথমিক যুদ্ধবিরতি হয়। ডোনাল্ড ট্রাম্পের চাপ ও মালয়েশিয়ার প্রত্যক্ষ উদ্যোগে দেশ দুটির মধ্যে যুদ্ধবিরতি সম্ভব হয়। থাইল্যান্ড–কম্বোডিয়া যুদ্ধবিরতিতে রাজি না হলে তাদের বাণিজ্য সুবিধা স্থগিত করার হুমকি দিয়েছিলেন ট্রাম্প। 

আরও পড়ুনকম্বোডিয়া সীমান্তে নতুন করে সংঘাতে থাই সেনা নিহত, পাল্টা বিমান হামলা থাইল্যান্ডের০৮ ডিসেম্বর ২০২৫

অক্টোবরে আঞ্চলিক জোট আসিয়ানের সম্মেলনে অংশ নিতে ট্রাম্প মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে যান। তখন থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার যুদ্ধবিরতি চুক্তি আনুষ্ঠানিকভাবে সই হয়। চুক্তিতে সই করেন দেশ দুটির প্রধানমন্ত্রীরা। সই করেন ট্রাম্পও। 

থাইল্যান্ড গত নভেম্বরে যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্থগিত করে। সীমান্তে ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে কয়েকজন থাই সেনা আহত হওয়ার পর ব্যাংককের পক্ষ থেকে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর থেকে থেমে থেমে সংঘর্ষ চলছে। 

আরও পড়ুনথাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া কেন সীমান্ত সংঘাতে জড়িয়েছে, সমাধান কোন পথে ২৬ জুলাই ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ