বাংলাদেশ–পাকিস্তান বাণিজ্য সহযোগিতার আহ্বান উপদেষ্টার
Published: 27th, October 2025 GMT
বাণিজ্য, বস্ত্র ও পাট এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, “বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক বন্ধন রয়েছে। এখন সময় এসেছে এই সম্পর্ককে অর্থনৈতিক পর্যায়ে আরো মজবুত করার।”
সোমবার (২৭ অক্টোবর) বিকেলে সচিবালয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টার দপ্তরে সফররত পাকিস্তানের পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী আলী পারভেজ মালিকের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন।
বৈঠকে দুই দেশের মধ্যকার বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা আরো জোরদার করার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়। এছাড়া বিদ্যমান বাণিজ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি এবং বিনিয়োগের নতুন ক্ষেত্র চিহ্নিত করার প্রয়োজনীয়তা নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়।
শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, “পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা বাড়াতে দেড় দশক ধরে অকার্যকর থাকা বাংলাদেশ–পাকিস্তান জয়েন্ট ইকোনমিক কমিশন কার্যকর করা হয়েছে।”
এ সময় তিনি দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের সীমাবদ্ধতা দূর করে বাণিজ্যিক সুবিধা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
পাকিস্তানের পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী আলী পারভেজ মালিক বলেন, “বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের বাণিজ্য ও বিনিয়োগের অপার সম্ভাবনা রয়েছে, কিন্তু তা পুরোপুরি কাজে লাগানো হয়নি।”
তিনি বাণিজ্য সুবিধা বৃদ্ধি করে এই সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
বৈঠকে বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার ইমরান হায়দার এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/এএএম/এসবি
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
সুইমিংপুলে মৃত্যু: কুষ্টিয়ায় রাবি ছাত্রীর দাফন, কাঁদছেন স্বজন-সহপাঠীরা
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী সোমবার (২৭ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ৩টার দিকে কুষ্টিয়া পৌরসভার ঢাকা এলাকা দিয়ে মহাসড়কের দিকে হেঁটে যাচ্ছিলেন। সবার চোখে পানি, শোকে মুহ্যমান তারা।
তাদের মধ্যে কয়েকজন গেলেন ডান পাশের গোরস্থানে। একটি কবরের বেড়া ধরে কাঁদলেন। বলছিলেন, তারা তাদের সহপাঠীকে এখানে রেখে যাচ্ছেন চিরদিনের মতো। এই সহপাঠী রোববার (২৬ অক্টোবর) সকালেও ক্যাম্পাসে তাদের সঙ্গে ছিলেন।
আরো পড়ুন:
যবিপ্রবি প্রক্টর ওঠা মিথ্যা অভিযোগের প্রতিবাদে মানববন্ধন
ড্যাফোডিল-সিটি ইউনিভার্সিটি সংঘাত, ক্ষতিপূরণ পাবে সিটি
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সুইমিংপুলে সাঁতার কাটতে গিয়ে পানিতে ডুবে রোববার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে কু্ষ্টিয়ার ঢাকা এলাকার মেয়ে সায়মা হোসেনের মৃত্যু হয়।
সোমবার দুপুরে জানাজা শেষে এলাকার সামাজিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। এ সময় আত্মীয়স্বজনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও তার সহপাঠীরা উপস্থিত ছিলেন। তিনি রাবির সমাজবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।
সহপাঠী আহসান হাবীব বলছিলেন, “সায়মা খুবই মেধাবী ছিল। পড়াশোনার পাশপাশি বিএনসিসি করত, সাঁতার জানত। খেলাধুলা পারদর্শী ও সাংস্কৃতিমনা ছিল। এক কথায় বহুগুণ ছিল তার। তাকে এভাবে রেখে যেতে হবে, ভাবতেই পারছি না।”
কবরের বেড়া ধরে কাঁদছিলেন সায়মার চাচাতো বোন সৌহরিয়া আফরিন। তাকে সান্তনা দিতে গিয়ে কেঁদে ফেললেন সায়মার এক বান্ধবী। সৌহরিয়া বলছিলেন, “অন্ধকার কবরে তুই কী করে থাকবি।”
বাইপাস সড়কে দাঁড়িয়ে থাকা সায়মার অন্তত ৮০ জন সহপাঠী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি বাসে করে চলে যান তাদের শিক্ষকদের সঙ্গে। যাওয়ার সময় সায়মার ছোট বোন ফারজানা হোসেনকে সান্তনা দেন তারা।
সায়মার বাবার নাম আবুল হোসেন। মায়ের নাম শিরীনা খাতুন। এক ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সায়মা ছিলেন দ্বিতীয়। সবার ছোট বোন এবার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হয়েছেন। বড় ছেলে স্থানীয় একটি কারখানায় কাজ করেন। দুই মেয়েকে পড়াশোনা করাতে খুবই কষ্ট করেছেন আবুল হোসেন।
সোমবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, আধাপাকা ঘরের ভেতর চৌকিতে শুয়ে আছেন সায়মার মা শিরীনা খাতুন। তার পাশে স্বজনেরা বসে ছিলেন।
শিরীনা বললেন, “মেয়েদের কীভাবে পড়ালেখা করাচ্ছি, তা শুধু আল্লাহ জানে। আমার মেয়ের (সায়মা) প্রাথমিকে, মাধ্যমিকে কখনো রোল নম্বর এক থেকে দুইয়ে যায়নি। এলাকাতেই প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পড়েছে। মাধ্যমিকে জিপিএ-৫ ও কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ থেকে মানবিকে জিপিএ-৫ পেয়েছিল। এত মেধা সব চলে গেল।”
বাবা আবুল হোসেন বলছিলেন, “মেয়েকে প্রতিদিন সকালে ফোন করে খোঁজখবর নিই। কিন্তু রবিবার সকালে মেয়ে ফোন করে বলে, ‘বাবা কেমন আছ।’ আমি তো চমকে উঠি। আজ কেন সে ফোন দিল। কোনো সমস্যা নেই বলে জানায়। এরপর আর কথা হয়নি। পরে জানতে পারি, সে পানিতে ডুবে মারা গেছে।”
তিনি বলেন, “আমার মেয়েকে পড়াশোনা করানোর সামর্থ্য ছিল না। মেয়ের মেধা ছিল। আত্মীয়-স্বজন সহায়তা করত। ভরা খেতে আগুন লেগে গেল। সব শেষ হয়ে গেল। মেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরি করার কথা বলত। সব শেষ, এসব বলে আর কী হবে!”
সায়মার চাচা মোহাম্মদ সুলতান বলেন, “কয়েক সপ্তাহ আগে ১২ হাজার টাকা দিয়ে একটি স্মার্টফোন কিনে দিলাম। মেয়ে বলেছিল, ‘আর মাত্র ৬ মাস পরেই বের হব। চাকরি করে তোমাদের দেব। কিন্তু সেই চলে গেল।”
বাড়ির বাইরে চেয়ারে বসে কাঁদছিলেন সায়মার ভাই ইসরাইল হোসেন। তিনি বলেন, “কিছুই বলার নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা বলেছেন, তদন্ত করবেন। তারা যা ভালো মনে করেন, করুক।”
ঢাকা/মেহেদী