গৃহকর নির্ধারণে অনিয়মের ঘটনা তদন্তে দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলামকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন মেয়র শাহাদাত হোসেন। আজ সোমবার এ নোটিশ দেওয়া হয়। ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে।

সিটি করপোরেশনের মেয়র শাহাদাত হোসেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

সিটি করপোরেশনে বর্তমানে কর্মরত ও অবসরে যাওয়া তিন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, সিটি করপোরেশনের কোনো মেয়র সংস্থার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন—এমন নজির নেই। এ ধরনের ঘটনা এটাই প্রথম বলে জানিয়েছেন তাঁরা।

কারণ দর্শানোর নোটিশের অনুলিপি প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব; বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার একান্ত সচিব এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের চট্টগ্রামের পরিচালককে দেওয়া হয়।

এর আগে গত ২২ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম এক অনুষ্ঠানে সিটি করপোরেশনের মেয়র শাহাদাত হোসেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা প্রকল্পের ফাইল (নথি) বাসায় নিয়ে যান বলে। কোনো প্রকল্পের ফাইল সিটি করপোরেশন থেকে মন্ত্রণালয়ে গেলে তা আর অনুমোদন হয় না।

সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম গত ৬ সেপ্টেম্বর উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য ছুটিতে যান। এ সময় ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্ব পান সচিব মোহাম্মদ আশরাফুল আমিন। তবে প্রশিক্ষণ শেষে গত বুধবার (২২ অক্টোবর) সিটি করপোরেশনের মেয়র বরারব যোগদানপত্র জমা দেন শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম। সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তা গ্রহণ করা হয়নি বলে জানা গেছে।

সিটি করপোরেশনের মেয়র শাহাদাত হোসেন স্বাক্ষরিত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে দেওয়া কারণ দর্শানোর নোটিশে বলা হয়, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দুটি প্রতিষ্ঠানের গৃহকর নির্ধারণের জন্য বার্ষিক মূল্যায়ন ধার্য করা হয়েছিল যথাক্রমে ২৫ কোটি ৬৭ লাখ টাকা এবং ২৬ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। কিন্তু ঘষা মাজা করে ‘২’ মুছে দিয়ে যথাক্রমে ৫ কোটি ৬৭ লাখ টাকা এবং ৬ কোটি ৩৮ লাখ টাকা দেখানো হয়। এই ঘষামাজার কারণে সিটি করপোরেশন বিপুল অঙ্কের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে।

নোটিশে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বের কথা উল্লেখ করে বলা হয়, গৃহকর নির্ধারণে এই অনিয়ম কর্তৃপক্ষের কাছে উত্থাপন করা হয় ২০২৩ সালের ২৮ মে। ওই সময় থেকে চলতি বছরের ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দায়িত্ব পালনের সময় এই অভিযোগের বিষয়ে দ্রুত তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়াসহ দোষী ব্যক্তিদের শনাক্ত করা এবং ওই দুটি প্রতিষ্ঠানের গৃহকর বাতিলের পর নতুন করে নির্ধারণে কোনো পদক্ষেপ নেননি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা।

নোটিশে বলা হয়েছে, গত ৬ সেপ্টেম্বর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম প্রশিক্ষণের জন্য কর্মস্থল ত্যাগ করলে যথাযথ তদারকির মাধ্যমে দ্রুত প্রতিবেদন জমা এবং দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় কর্তৃপক্ষ। প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা দীর্ঘ সময়ে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় সিটি করপোরেশন বড় অঙ্কের রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হয়েছে। যা দায়িত্ব অবহেলার সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান।

সিটি করপোরেশনের মেয়র শাহাদাত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম তিন বছর ধরে দায়িত্ব পালন করলেও গৃহকর নিয়ে অনিয়ম– দুর্নীতির তদন্ত ঝুলিয়ে রেখেছিলেন। ওই সময় কমিটি করা হলেও প্রতিবেদন দেওয়া হয়নি। প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দিতে চাপও দেননি।

মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্ব পেয়ে সচিব এক মাসের মধ্যে তদন্ত কার্যক্রম শেষ করেন। তাহলে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কেন তিন বছরেও পারেননি? এতে প্রতীয়মান হয়েছে যে এই দুর্নীতি তদন্তে এবং দোষী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে তাঁর গাফিলতি ছিল। এ জন্য কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রথমত এ ঘটনা যখন ঘটে তখন আমি দায়িত্বে ছিলাম না। আর যখন বিষয়টি নজরে আসে তখন করপোরেশনের সবচেয়ে অতিরিক্ত জেলা জজ পদমর্যাদার আইন কর্মকর্তাকে প্রধান করে কমিটি গঠন করে দিয়েছিলেন। কমিটি যাতে দ্রুত প্রতিবেদন জমা দেয়, এ জন্য বারবার তাগাদা দিয়েছেন। এটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সবাই জানেন। তদন্ত প্রতিবেদন জমা না দেওয়ার কারণে যদি কাউকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিতে হয়, প্রথমে কমিটির প্রধানকে দিতে হবে। আমাকে কেন দেওয়া হলো তা বোধগম্য নয়।’

সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম নগরের মধ্যম হালিশহরে অবস্থিত এছাক ব্রাদার্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড এবং পতেঙ্গার লালদিয়ার চরে অবস্থিত ইনকনট্রেড লিমিটেডের গৃহকর নির্ধারণে অনিয়ম হয়েছে। এই অনিয়মে জড়িত থাকার দায়ে রাজস্ব বিভাগের দুই কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর মকর ত র কর মকর ত ক স প ট ম বর উপদ ষ ট তদন ত প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

বর্ণিল আয়োজনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদ্‌যাপন

‘ঐক্যবদ্ধ জবিয়ান, স্বপ্ন জয়ে অটল প্রাণ’ স্লোগান নিয়ে সোমবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্‌যাপন করা হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে ক্যাম্পাসে র‍্যালি, চারুকলা ও আলোকচিত্র প্রদর্শনী, আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। সোমবার সকালে শহীদ মিনার চত্বরে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে জাতীয় পতাকা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে দিনের কর্মসূচি শুরু হয়। উপাচার্য মো. রেজাউল করিম বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে দিবসের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর উপাচার্যের নেতৃত্বে একটি শোভাযাত্রা ক্যাম্পাস থেকে শুরু হয়ে রায়সাহেব বাজার মোড় ও ভিক্টোরিয়া পার্ক ঘুরে আবার ক্যাম্পাসে ফিরে আসে। এরপর শহীদ সাজিদ একাডেমিক ভবনে চারুকলা অনুষদের আয়োজনে ‘বার্ষিক শিল্পকর্ম ২০২৫’ শীর্ষক একটি চারুকলা ও আলোকচিত্র প্রদর্শনী হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদ প্রাঙ্গণে আয়োজিত আলোচনা সভায় উপাচার্য মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘২০০৫ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তাঁর সেই পদক্ষেপের ফলেই আজ আমরা এখানে শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারছি। গত এক বছরে আমাদের অর্জন সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাই সবচেয়ে ভালো জানেন। আমরা যখন দায়িত্ব নিই, তখন শিক্ষার্থীসংশ্লিষ্ট বাজেট ছিল খুবই সীমিত। এখন আমরা সেই বাজেট উল্লেখযোগ্য হারে বাড়াতে পেরেছি।’

উপাচার্য আরও বলেন, ‘ভবিষ্যতে আমরা একাডেমিক মানোন্নয়ন ও অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে কাজ করে যাব। নিয়মিত ক্লাস মনিটরিং–ব্যবস্থা চালু থাকবে ও ফলাফল প্রকাশে যেন কোনো বিলম্ব না হয়, সে জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি শিক্ষকদের গবেষণায় শিক্ষার্থীদের গবেষণা সহকারী হিসেবে যুক্ত করা হচ্ছে, যাতে তারা হাতে-কলমে গবেষণার অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারে।’

‘ঐক্যবদ্ধ জবিয়ান, স্বপ্ন জয়ে অটল প্রাণ’ স্লোগান নিয়ে সোমবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্‌যাপন করা হয়

সম্পর্কিত নিবন্ধ