আল–আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের এমডিকে অপসারণ
Published: 28th, October 2025 GMT
আল–আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ফরমান আর চৌধুরীকে অপসারণ করা হয়েছে। এমডির অপসারণের বিষয়ে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্তে অনাপত্তি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর আগে তাকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠায় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ। ফলে তিনি আর এই পদে ফিরতে পারবেন না।
সোমবার (২৭ অক্টোবর) ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের কাছে অপসারণের অনাপত্তি দিয়ে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, “আল–আরাফাহ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্তে ব্যাংকের এমডিকে অপসারণের বিষয়ে অনাপত্তি দেওয়া হয়েছে। এখন আর তার এই পদে থাকার কোনো সুযোগ নেই।”
ফরমান আর চৌধুরীর বিরুদ্ধে খেলাপি ঋণের তথ্য গোপন, নিয়োগ ও পদোন্নতিসহ বিভিন্ন অনিয়মে সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গত ১৩ এপ্রিল ব্যাংক তাকে প্রথমে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠায়। পরে সম্পৃক্ততা পাওয়ায় অপসারণের সিদ্ধান্ত নেয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ।
ব্যাংকের খেলাপি ঋণের তথ্য গোপন, নিরাপত্তা সঞ্চিতি না রেখে মুনাফা দেখানো, নিয়োগ ও পদোন্নতিতে অনিয়ম, সিএসআর তহবিলের অপব্যবহার, বেতনের বাইরে অতিরিক্ত অর্থ নিয়ে ফেরত না দেওয়াসহ নানা অনিয়মের কারণে এমডিকে অপসারণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
দীর্ঘদিন আল–আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন ব্যবসায়ী এস আলমের ভাই আব্দুস সামাদ লাবু। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর ২০২৪ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ব্যাংকটির পর্ষদ ভেঙ্গে পুনর্গঠন করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন গঠিত পর্ষদ এমডির বিষয়ে নানা অনিয়ম পায়। এরপরই তাকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠায় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ।
ঢাকা/নাজমুল/ইভা
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
রাঙামাটিতে নিয়ম না মেনে রিসোর্ট, অবশেষে নোটিশ
রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদ ও কর্ণফুলী নদীকে কেন্দ্র করে নিয়ম না মেনে গড়ে ওঠা রিসোর্টগুলোর (অবকাশকেন্দ্র) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অবশেষে তৎপর হয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া এসব রিসোর্ট নির্মিত হয়েছিল। এখন রিসোর্টগুলোকে নোটিশ দিয়েছে অধিদপ্তর।
পরিবেশ অধিদপ্তরের রাঙামাটি জেলা কার্যালয় থেকে সম্প্রতি অন্তত ১২টি রিসোর্টকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। নোটিশে পাহাড় কেটে এসব রিসোর্ট নির্মাণ করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। নোটিশ দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন পরিবেশ অধিদপ্তরের রাঙামাটি জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. মুমিনুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদ ও কর্ণফুলী নদীর পাশে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া যেসব রিসোর্ট গড়ে উঠেছে, তাদের নোটিশ দেওয়া হচ্ছে। নোটিশের জবাব পাওয়ার পর রিসোর্টগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
আরও পড়ুনপাহাড়ে ‘খেয়ালখুশি’মতো রিসোর্ট১৯ জুলাই ২০২৫কাপ্তাই হ্রদ ও কর্ণফুলী নদীর পাশে গড়ে ওঠা রিসোর্টগুলো নিয়ে গত ১৯ জুলাই প্রথম আলোতে ‘পাহাড়ে “খেয়ালখুশি’’ মতো রিসোর্ট’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। একের পর এক রিসোর্টগুলো গড়ে উঠলেও রাঙামাটির জেলা প্রশাসন, জেলা পরিষদ, পরিবেশ অধিদপ্তর ও ফায়ার সার্ভিসের কাছ থেকে অনুমোদন নেওয়া হয়নি। এতে হ্রদ ও নদীর পরিবেশ ক্ষতির মুখে পড়েছে। পাহাড়ধসের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। রয়েছে অগ্নিকাণ্ডের মতো দুর্ঘটনার ঝুঁকিও।
কর্মকর্তারা পরিদর্শনের সময় দেখেছেন অপরিকল্পিতভাবে পাহাড় কেটে রিসোর্ট নির্মাণ করা হয়েছে। এই ক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো অনুমোদন নেওয়া হয়নি। এ ছাড়া রিসোর্টগুলোতে সিঙ্গেল ইউজড প্লাস্টিক ব্যবহার করা হচ্ছে। কঠিন ও তরল বর্জ্যও ফেলা হচ্ছে হ্রদে। এতে হ্রদের পানি দূষিত হচ্ছে। এসব কারণে হ্রদের পরিবেশ ও প্রতিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে।সরকারি সংস্থার স্থানীয় কার্যালয়ের কর্মকর্তারা জানান, গত ৫ থেকে ১০ বছরে অন্তত ২০টি রিসোর্ট গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে কাপ্তাই হ্রদের পাশে রয়েছে অন্তত ১৫টি রিসোর্ট। আর কাপ্তাইয়ের কর্ণফুলী নদীর পাশে রয়েছে ৫টি।
সম্প্রতি যেসব রিসোর্টকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে রাঙামাটির মগবান ইউনিয়নের বড়দাম বাজারের বড়গাং রিসোর্ট, একই এলাকার বেড়াইন্ন্যে রিসোর্ট ও ইজর রিসোর্ট, বার্গী লেক ভ্যালি, প্যাগোডা সড়কের গাং সাবরাং রিসোর্ট, জীবতলীর তিমুর সড়কের জুম কিং ইকো রিসোর্ট, মোরঘোনা এলাকার রেঙ লেক বিচ রিসোর্ট, কাটাছড়ির মৈত্রী নগরের রাঙাদ্বীপ রিসোর্ট, দীঘলিবাগ এলাকার ওয়াইল্ড উড আইসল্যান্ড রিসোর্ট, একই এলাকার মায়াবী আইসল্যান্ড রিসোর্ট, নীলাঞ্জনা বোট ক্লাব ও রিসোর্ট এবং বাগান বিলাস ইকো রিসোর্ট।
একটি রিসোর্টকে দেওয়া পরিবেশ অধিদপ্তরের নোটিশের কপি প্রথম আলোর কাছে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা সদর উপজেলার কাপ্তাই হ্রদসংলগ্ন এলাকা পরিদর্শন করেছেন। কর্মকর্তারা পরিদর্শনের সময় দেখেছেন অপরিকল্পিতভাবে পাহাড় কেটে রিসোর্ট নির্মাণ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো অনুমোদন নেওয়া হয়নি। এ ছাড়া রিসোর্টগুলোতে সিঙ্গেল ইউজড প্লাস্টিক ব্যবহার করা হচ্ছে। কঠিন ও তরল বর্জ্যও ফেলা হচ্ছে হ্রদে। এতে হ্রদের পানি দূষিত হচ্ছে। এসব কারণে হ্রদের পরিবেশ ও প্রতিবেশ মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে।
সাধারণত পরিবেশগত ছাড়পত্র দেওয়ার ক্ষেত্রে শর্ত থাকে, প্রতিষ্ঠানের কর্মকাণ্ডে কোনোভাবে পরিবেশদূষণ (বায়ু, মাটি, পানি ও শব্দ) করা যাবে না। সিঙ্গেল ইউজড প্লাস্টিক (যেমন প্লেট, গ্লাস, কাপ, খাবারের প্যাকেট, প্লাস্টিক ব্যাগ ইত্যাদি) ব্যবহার করা যাবে না।
বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কর্ণফুলী নদীতে বাঁধ দেওয়া হলে কাপ্তাই হ্রদের সৃষ্টি হয়। ১৯৫৬ সালে শুরু হয়ে ১৯৬২ সালে শেষ হয় বাঁধের নির্মাণকাজ। বর্তমানে হ্রদের আয়তন ৬৮ হাজার ৮০০ হেক্টর। বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রের পাশাপাশি এই হ্রদ এখন মৎস্য ও পর্যটনশিল্পের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম অঞ্চলের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদ ও কর্ণফুলী নদীর পাশে গড়ে ওঠা রিসোর্টগুলো পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র তো নেয়ইনি, যথাযথ বর্জ্য ব্যবস্থাপনাও নেই। এ জন্য রিসোর্টগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রাথমিকভাবে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। নোটিশের জবাব পাওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।