ঢাকার আজ সকালে এ মাসের সর্বোচ্চ দূষণ, সুস্থ থাকতে যা করতেই হবে
Published: 28th, October 2025 GMT
আজ মঙ্গলবার সকালে বিশ্বের ১২৭টি নগরীর মধ্যে ঢাকার অবস্থান চতুর্থ। আজ সকাল সাড়ে আটটার দিকে আইকিউএয়ারের ঢাকার গড় বায়ুমান ১৯৩। এই মান অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচনা করা হয়। রাজধানীতে চলতি মাসে বায়ুর মান এতটা খারাপ হয়নি। বায়ুর মান ২০১ হলে তাকে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ বলা হয়। আজ অবশ্য নগরীর দু-একটি স্থান আছে যেখানে বায়ুর মান খুব অস্বাস্থ্যকর। মোট আটটি স্থানে বায়ু অনেক বেশি দূষিত।
বায়ুদূষণের এ পরিস্থিতি তুলে ধরেছে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার। প্রতিষ্ঠানটি বায়ুদূষণের অবস্থা নিয়মিত তুলে ধরে। বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা এই লাইভ বা তাৎক্ষণিক সূচক একটি নির্দিষ্ট শহরের বাতাস কতটা নির্মল বা দূষিত, সেই সম্পর্কে মানুষকে তথ্য দেয় ও সতর্ক করে।
বায়ুদূষণে আজ শীর্ষে আছে পাকিস্তানের লাহোর, স্কোর ৪২১।
নগরীর ৮ এলাকায় দূষণ বেশি
নগরীর আট এলাকায় দূষণ পরিস্থিতি বেশ খারাপ। এসব এলাকার মধ্যে শীর্ষে আছে পুরান ঢাকার বেচারাম দেউড়ি, স্কোর ২৫৫। এই মানকে খুব অস্বাস্থ্যকর বলে বিবেচনা করা হয়। বাকি ছয় এলাকা হলো বে’জ এজ ওয়াটার (১৯৩), কল্যাণপুর (১৯৩), দক্ষিণ পল্লবী (১৯৩), গোরান (১৯১), ইস্টার্ন হাউজিং (১৮৩), গ্রেস ইন্টারন্যাশনাল স্কুল (১৭১), শান্তা ফোরাম (১৬৮)।
নগরবাসীর জন্য পরামর্শ
আজ ঢাকা ও অন্য শহরগুলোর যে বায়ুমান, এর পরিপ্রেক্ষিতে নগরবাসীর জন্য কিছু পরামর্শ দিয়েছে আইকিউএয়ার। এর মধ্যে আছে ঘরের বাইরে গেলে অবশ্যই মাস্ক পরে যেতে হবে, জানালা বন্ধ রাখতে হবে, ঘরের বাইরে ব্যায়াম যতটুকু সম্ভব এড়িয়ে যেতে হবে। আর যেসব এলাকায় বায়ুর মান অস্বাস্থ্যকর, সেসব এলাকায় অবশ্যই বাড়ির বাইরে গেলে মাস্ক পরতে হবে।
বায়ুদূষণে যত ক্ষতি
বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশিত আয়ুর জন্য সবচেয়ে বড় বাহ্যিক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে বায়ুদূষণ। বায়ুদূষণের কারণে বাংলাদেশের মানুষের আয়ু গড়ে সাড়ে পাঁচ বছর কমছে। এয়ার কোয়ালিটি লাইফ ইনডেক্সে (একিউএলআই) ২০২৫ সালের হালনাগাদ বার্ষিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের এনার্জি পলিসি ইনস্টিটিউট (ইপিআইসি)। প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত দেশ।
বায়ুদূষণের কারণে ১৯৮০ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে বিশ্বে প্রায় সাড়ে ১৩ কোটি মানুষের অকালমৃত্যু হয়েছে। সিঙ্গাপুরের নানিয়াং প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (এনটিইউ) এক গবেষণায় এ চিত্র উঠে এসেছে।
বিশ্বব্যাংক গত বছরের মার্চে ‘দ্য বাংলাদেশ কান্ট্রি এনভায়রনমেন্ট অ্যানালিসিস (সিইএ)’ নামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে বলা হয়, বাংলাদেশে ২০১৯ সালে বায়ুদূষণসহ চার ধরনের পরিবেশদূষণে ২ লাখ ৭২ হাজারের বেশি মানুষের অকালমৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৫৫ শতাংশ মানুষের মৃত্যু হয়েছে বায়ুদূষণের কারণে। এ ছাড়া দূষণের কারণে ওই বছর দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১৭ দশমিক ৬ শতাংশের সমপরিমাণ অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
রাঙামাটিতে নিয়ম না মেনে রিসোর্ট, অবশেষে নোটিশ
রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদ ও কর্ণফুলী নদীকে কেন্দ্র করে নিয়ম না মেনে গড়ে ওঠা রিসোর্টগুলোর (অবকাশকেন্দ্র) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অবশেষে তৎপর হয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া এসব রিসোর্ট নির্মিত হয়েছিল। এখন রিসোর্টগুলোকে নোটিশ দিয়েছে অধিদপ্তর।
পরিবেশ অধিদপ্তরের রাঙামাটি জেলা কার্যালয় থেকে সম্প্রতি অন্তত ১২টি রিসোর্টকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। নোটিশে পাহাড় কেটে এসব রিসোর্ট নির্মাণ করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। নোটিশ দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন পরিবেশ অধিদপ্তরের রাঙামাটি জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. মুমিনুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদ ও কর্ণফুলী নদীর পাশে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া যেসব রিসোর্ট গড়ে উঠেছে, তাদের নোটিশ দেওয়া হচ্ছে। নোটিশের জবাব পাওয়ার পর রিসোর্টগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
আরও পড়ুনপাহাড়ে ‘খেয়ালখুশি’মতো রিসোর্ট১৯ জুলাই ২০২৫কাপ্তাই হ্রদ ও কর্ণফুলী নদীর পাশে গড়ে ওঠা রিসোর্টগুলো নিয়ে গত ১৯ জুলাই প্রথম আলোতে ‘পাহাড়ে “খেয়ালখুশি’’ মতো রিসোর্ট’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। একের পর এক রিসোর্টগুলো গড়ে উঠলেও রাঙামাটির জেলা প্রশাসন, জেলা পরিষদ, পরিবেশ অধিদপ্তর ও ফায়ার সার্ভিসের কাছ থেকে অনুমোদন নেওয়া হয়নি। এতে হ্রদ ও নদীর পরিবেশ ক্ষতির মুখে পড়েছে। পাহাড়ধসের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। রয়েছে অগ্নিকাণ্ডের মতো দুর্ঘটনার ঝুঁকিও।
কর্মকর্তারা পরিদর্শনের সময় দেখেছেন অপরিকল্পিতভাবে পাহাড় কেটে রিসোর্ট নির্মাণ করা হয়েছে। এই ক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো অনুমোদন নেওয়া হয়নি। এ ছাড়া রিসোর্টগুলোতে সিঙ্গেল ইউজড প্লাস্টিক ব্যবহার করা হচ্ছে। কঠিন ও তরল বর্জ্যও ফেলা হচ্ছে হ্রদে। এতে হ্রদের পানি দূষিত হচ্ছে। এসব কারণে হ্রদের পরিবেশ ও প্রতিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে।সরকারি সংস্থার স্থানীয় কার্যালয়ের কর্মকর্তারা জানান, গত ৫ থেকে ১০ বছরে অন্তত ২০টি রিসোর্ট গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে কাপ্তাই হ্রদের পাশে রয়েছে অন্তত ১৫টি রিসোর্ট। আর কাপ্তাইয়ের কর্ণফুলী নদীর পাশে রয়েছে ৫টি।
সম্প্রতি যেসব রিসোর্টকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে রাঙামাটির মগবান ইউনিয়নের বড়দাম বাজারের বড়গাং রিসোর্ট, একই এলাকার বেড়াইন্ন্যে রিসোর্ট ও ইজর রিসোর্ট, বার্গী লেক ভ্যালি, প্যাগোডা সড়কের গাং সাবরাং রিসোর্ট, জীবতলীর তিমুর সড়কের জুম কিং ইকো রিসোর্ট, মোরঘোনা এলাকার রেঙ লেক বিচ রিসোর্ট, কাটাছড়ির মৈত্রী নগরের রাঙাদ্বীপ রিসোর্ট, দীঘলিবাগ এলাকার ওয়াইল্ড উড আইসল্যান্ড রিসোর্ট, একই এলাকার মায়াবী আইসল্যান্ড রিসোর্ট, নীলাঞ্জনা বোট ক্লাব ও রিসোর্ট এবং বাগান বিলাস ইকো রিসোর্ট।
একটি রিসোর্টকে দেওয়া পরিবেশ অধিদপ্তরের নোটিশের কপি প্রথম আলোর কাছে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা সদর উপজেলার কাপ্তাই হ্রদসংলগ্ন এলাকা পরিদর্শন করেছেন। কর্মকর্তারা পরিদর্শনের সময় দেখেছেন অপরিকল্পিতভাবে পাহাড় কেটে রিসোর্ট নির্মাণ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো অনুমোদন নেওয়া হয়নি। এ ছাড়া রিসোর্টগুলোতে সিঙ্গেল ইউজড প্লাস্টিক ব্যবহার করা হচ্ছে। কঠিন ও তরল বর্জ্যও ফেলা হচ্ছে হ্রদে। এতে হ্রদের পানি দূষিত হচ্ছে। এসব কারণে হ্রদের পরিবেশ ও প্রতিবেশ মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে।
সাধারণত পরিবেশগত ছাড়পত্র দেওয়ার ক্ষেত্রে শর্ত থাকে, প্রতিষ্ঠানের কর্মকাণ্ডে কোনোভাবে পরিবেশদূষণ (বায়ু, মাটি, পানি ও শব্দ) করা যাবে না। সিঙ্গেল ইউজড প্লাস্টিক (যেমন প্লেট, গ্লাস, কাপ, খাবারের প্যাকেট, প্লাস্টিক ব্যাগ ইত্যাদি) ব্যবহার করা যাবে না।
বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কর্ণফুলী নদীতে বাঁধ দেওয়া হলে কাপ্তাই হ্রদের সৃষ্টি হয়। ১৯৫৬ সালে শুরু হয়ে ১৯৬২ সালে শেষ হয় বাঁধের নির্মাণকাজ। বর্তমানে হ্রদের আয়তন ৬৮ হাজার ৮০০ হেক্টর। বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রের পাশাপাশি এই হ্রদ এখন মৎস্য ও পর্যটনশিল্পের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম অঞ্চলের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদ ও কর্ণফুলী নদীর পাশে গড়ে ওঠা রিসোর্টগুলো পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র তো নেয়ইনি, যথাযথ বর্জ্য ব্যবস্থাপনাও নেই। এ জন্য রিসোর্টগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রাথমিকভাবে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। নোটিশের জবাব পাওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।