পঞ্চগড়ে গ্রামবাসীর পিটুনিতে আহত মহাবিপন্ন বনরুই উদ্ধার
Published: 28th, October 2025 GMT
রাতের আঁধারে বিদ্যালয়ের মাঠে ছুটোছুটি করছিল কালো রঙের একটি প্রাণী। এটিকে দেখে ভয় পেয়ে স্থানীয় কয়েকজন লাঠি নিয়ে তাড়া করেন; দেন বেদম পিটুনি। মারা গেছে ভেবে সেখানে ফেলে রাখা হয় প্রাণীটিকে।
ওই ঘটনার খবর পেয়ে ওয়াইল্ডলাইফ অ্যান্ড স্নেক রেসকিউ টিমের প্রতিষ্ঠাতা সহিদুল ইসলাম সেখানে গিয়ে প্রাণীটি বনরুই বলে শনাক্ত করেন। পরে তিনি বনরুইটিকে উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন।
গতকাল সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার ঝলই শালশিরি ইউনিয়নের কালিয়াগঞ্জ নজিরতন উচ্চবিদ্যালয় মাঠে এ ঘটনা ঘটে। আহত বনরুইটি সাহিদুল ইসলামের পরিচর্যায় এখন সুস্থ আছে বলে জানা গেছে।
আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘের (আইইউসিএন) মহাবিপন্ন প্রাণী হিসেবে ঘোষিত এই প্রাণীকে বন বিভাগের মাধ্যমে বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। উদ্ধার হওয়া কালো রঙের বনরুইটির দৈর্ঘ্য প্রায় আড়াই ফুট আর ওজন ৬ কেজি।
কালিয়াগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা আতাউর রহমান বলেন, ‘গতকাল সোমবার রাত ১০টার দিকে কালিয়াগঞ্জ নজিরতন উচ্চবিদ্যালয় মাঠে বসে কয়েকজন গল্প করছিলেন। এ সময় পাশের পুরোনো গোরস্তানের দিক থেকে মাঠে আসা একটি কালো রঙের অচেনা প্রাণী দেখে তাঁরা প্রথমে কিছুটা ভয় পান। এতে তাঁরা লাঠি এনে প্রাণীটিকে মারধর করছিলেন। পরে আমি তাঁদের বাধা দিয়ে বন্য প্রাণী উদ্ধারকারী সহিদুল ইসলামকে মুঠোফোনে খবর দিই। পরে আমরা গুগলে সার্চ দিয়ে দেখি, এটি বনরুই। পরে সহিদুল ইসলাম প্রাণীটিকে নিয়ে গেছেন।’
ওয়াইল্ডলাইফ অ্যান্ড স্নেক রেসকিউ টিম বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সহিদুল ইসলাম বলেন, ‘খবর পেয়ে আমি মুঠোফোনেই তাঁদের মারধর না করতে অনুরোধ করি। পরে গিয়ে দেখি বনরুইটি রক্তাক্ত হয়ে পড়ে আছে। স্থানীয় লোকজন ভেবেছিল, প্রাণীটি মারা গেছে। প্রাণীটিকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এটি এখন সুস্থ আছে। এরই মধ্যে আমি বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁরা এসে আজ (মঙ্গলবার) প্রাণীটিকে নিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন।’
সহিদুল ইসলাম আরও বলেন, মহাবিপন্ন প্রাণী হিসেবে ঘোষিত বনরুই সাধারণত বিভিন্ন গোরস্তান ও বাঁশঝাড়ের মাটির গর্তে বসবাস করে। বনরুই পিঁপড়া ও পিঁপড়ার ডিম, উইপোকার ডিম খেতে পছন্দ করে। স্থানীয় লোকজন এর আগে এই এলাকায় এ ধরনের প্রাণী দেখেছেন বলে জানিয়েছেন। তবে পঞ্চগড়ের লোকালয়ে বনরুই ধরা পড়ার ঘটনা এটাই প্রথম বলে তিনি জানান।
দিনাজপুর বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ফাহিম মাসউদ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, আহত অবস্থায় উদ্ধার হওয়া বনরুইটিকে বন বিভাগের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে ঢাকায় বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সহ দ ল ইসল ম হ দ ল ইসল ম বন য প র ণ উদ ধ র বনর ই
এছাড়াও পড়ুন:
তফসিলের পরদিন ‘প্রার্থী’ গুলিবিদ্ধ
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন ঢাকায় দিনের বেলায় গুলি করা হলো ভোটে সম্ভাব্য প্রার্থী শরিফ ওসমান বিন হাদিকে (৩৩)। তিনি ঢাকা-৮ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন এবং বেশ কিছুদিন ধরে প্রচার চালাচ্ছিলেন। হাদি ইনকিলাব মঞ্চ নামের একটি সংগঠনের আহ্বায়ক।
গুলি করার পর আহত হাদিকে রিকশায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গুলি তাঁর মাথায় লেগেছে। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক। রাতে তাঁকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিনই সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থীর ওপর হামলার ঘটনায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এই ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে। উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি। তবে নির্বাচন ঘিরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে।
দুর্বৃত্তদের গুলিতে ওসমান হাদির গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দ্রুত ও ব্যাপক তদন্ত চালিয়ে হামলায় জড়িত সবাইকে শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন বলে গতকাল জানায় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।
হাদির বাড়ি ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পড়াশোনা শেষ করার পর বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছিলেন তিনি। পাশাপাশি সক্রিয় ছিলেন বিভিন্ন আন্দোলনে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ভূমিকা রাখার পর ইনকিলাব মঞ্চ গঠন করে আলোচনায় আসেন হাদি। সাংস্কৃতিক এই প্ল্যাটফর্ম তাদের লক্ষ্য ঠিক করে, ‘সমস্ত আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও ইনসাফভিত্তিক একটি রাষ্ট্র বিনির্মাণ’। এই প্ল্যাটফর্ম থেকে বিভিন্ন কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ ও ভারতবিরোধী বক্তব্য হাদিকে আলোচনায় আনে। ঢাকার ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়ি ভাঙার সময় হাদি সক্রিয় ছিলেন। তিনি গোপালগঞ্জ জেলা ভেঙে দিতে বলেছিলেন।
ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার প্রতিষ্ঠা, নির্বাচনী তহবিলের হিসাব প্রকাশ এবং তাঁর ওপর ময়লা পানি নিক্ষেপের ঘটনায় ‘অসুবিধা নেই’ উল্লেখ করে ফেসবুক পোস্ট দিয়েও আলোচনায় আসেন হাদি।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্র জানায়, গতকাল জুমার নামাজের পর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে একটি ব্যাটারির রিকশায় ছিলেন হাদি ও তাঁর সঙ্গী এক ব্যক্তি। তাঁদের পেছনে পেছনে আসে একটি মোটরসাইকেল। বেলা ২টা ২৪ মিনিটে চলন্ত অবস্থায় সেই মোটরসাইকেল থেকেই একাধিক গুলি করা হয় হাদিকে।
ব্যাটারিচালিত রিকশায় বসা ওসমান হাদিকে গুলি করেন মোটরসাইকেলের পেছনে বসা ব্যক্তি। দ্রুত ঘটনা ঘটিয়ে তাঁরা ওই মোটরসাইকেলে সেখান থেকে চলে যান