শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক মন্তব্যের অভিযোগ, ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি রাকসুর নেতাদের
Published: 28th, October 2025 GMT
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আ-আল মামুনের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অবমাননাকর, বিদ্বেষমূলক ও অনুচিত মন্তব্যের অভিযোগ এনে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (রাকসু) প্রতিনিধিরা।
আজ মঙ্গলবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সভাপতি বরাবর দেওয়া স্মারকলিপিতে তাঁরা এ দাবি জানান।
ওই স্মারকলিপিতে অভিযোগ করা হয়েছে, আ-আল মামুন তাঁর ফেসবুক পোস্টে রাকসু নির্বাচনে হল সংসদে বিজয়ী নারী প্রতিনিধিদের ব্যক্তিগত পোশাক, ধর্মীয় পরিচয় ও ব্যক্তিগত স্বাধীনতা নিয়ে অবমাননাকর ও বিদ্বেষপ্রবণ মন্তব্য করেছেন। এ ছাড়া তিনি আগের বেশ কিছু পোস্টে তিনি ‘বোরকা’, ‘কাঠমোল্লা’, ‘মদ’, ‘সেক্সুয়াল রেভল্যুশন’ ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করে উসকানিমূলক মন্তব্য করেছেন এবং এক পোস্টে টু-কোয়াটার প্যান ও মদের বোতল হাতে ক্লাসে আসার এবং একটি ছাত্রসংগঠন ও সাংবাদিকদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, যা স্পষ্টতই শিক্ষাঙ্গনের নৈতিক মান ও পেশাগত দায়িত্ববোধের গুরুতর লঙ্ঘন।
স্মারকলিপিতে তাঁরা পাঁচটি দাবি উত্থাপন করেন। দাবিগুলো হলো আ-আল মামুনকে তাঁর অবমাননাকর ও বিদ্বেষমূলক মন্তব্যের জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে। ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রশাসনকে বিদ্বেষপূর্ণ ও উসকানিমূলক মন্তব্যের বিরুদ্ধে স্পষ্ট ও দৃঢ় অবস্থান ঘোষণা করতে হবে। ভবিষ্যতে কোনো শিক্ষক বা কর্মকর্তা যাতে শিক্ষার্থীর ধর্মীয় বিশ্বাস বা পোশাক নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করতে না পারেন, সে জন্য দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ নিতে হবে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সহিষ্ণুতা, সাম্য ও ধর্মীয় স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ জোরদার করতে সেমিনার বা ওরিয়েন্টেশন আয়োজন করতে হবে।
অধ্যাপক আ-আল মামুন গতকাল সোমবার তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে হল সংসদ নির্বাচনে প্রতিনিধিদের শপথ অনুষ্ঠানের বোরখা পরা ছবি নিয়ে কিছু লেখা সংযুক্ত করে একটি স্ট্যাটাস দেন। ওই পোস্ট দেওয়ার পরপরই তিনি তা ডিলিট করে দেন। তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই পোস্টের স্ক্রিনশট বিভিন্ন গ্রুপে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা ও বিতর্ক শুরু হয়। পরে রাতে অবমাননাকর ও বিদ্বেষমূলক মন্তব্যের অভিযোগের প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা।
অধ্যাপক আ-আল মামুনের যে পোস্টকে ঘিরে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে, তাতে লেখা লেখা ছিল, ‘এই ব্যক্তিগত স্বাধীনতা আমি এন্ডর্স করছি। কাল আমি এ রকম ব্যক্তিগত স্বাধীনতা পরে ও হাতে নিয়ে ক্লাসে যাব। পরব টু-কোয়াটার আর হাতে থাকবে মদের বোতল। মদ তো ড্রাগ না! মদ পান করার লাইসেন্সও আমার আছে! শিবির আইসেন, সাংবাদিকেরাও আইসেন!’ পোস্টের নিচে হল সংসদের নির্বাচিত নারী প্রতিনিধিদের দুটি ছবি যুক্ত করেন তিনি।
পরে আ-আল মামুন আরেকটি ফেসবুক পোস্টে আগের দেওয়া স্ট্যাটাসের ব্যাখ্যা দিয়ে লিখেছেন, ‘এই পোস্টে কি কিছু রিয়েকশন আছে? নাই। এই পোস্ট কতক্ষণ ছিল, ছিল ৩ সেকেন্ড হয়তো। হিজাবের বিরুদ্ধে কথা ছিল? না। পোশাকের স্বাধীনতার কথা ছিল! আমি একজন একাডেমিশিয়ান, আমি বিচিত্র উপায়ে নোট নেই ও ভাবি। পরে বিস্তারিত লিখি। পোশাক নিয়ে আমার ভাবনা পোস্ট করেই পারসোনালাইজ করে রাখলাম। কিন্তু উন্মত্ত শাবকরা জাল পেতে বসে থাকে আপনাকে বিপদে ফেলার জন্য! কিন্তু তাদের মনে রাখা দরকার, অপরের বিপদ তৈরি করা মানে, বিপদের এক অসীম বাস্তবতা জারি রাখা হয়!’ এ ছাড়া আজ সকালে আরেকটি ফেসবুক পোস্টে তিনি জানান, তিনি উপহাস বা তাচ্ছিল্য করেননি। তারপরও কেউ আঘাত পেয়ে থাকলে তিনি দুঃখিত।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আ আল ম ম ন স ব ধ নত ফ সব ক
এছাড়াও পড়ুন:
এক মার্কিন প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় যেভাবে গোপনে ভেনেজুয়েলা ছাড়েন মাচাদো
ভেনেজুয়েলার বিরোধী নেতা মারিয়া কোরিনা মাচাদো চলতি সপ্তাহে যেকোনো মূল্যে নরওয়ের রাজধানী অসলোতে পৌঁছাতে চেয়েছিলেন। নিজে উপস্থিত থেকে নোবেল শান্তি পুরস্কার গ্রহণ করাই ছিল তাঁর উদ্দেশ্য। কিন্তু আত্মগোপন অবস্থা থেকে নিরাপদে অসলো পৌঁছানো তাঁর জন্য সহজ ছিল না। কারণ, এ জন্য তাঁকে সামরিক তল্লাশিচৌকি এড়ানো, দীর্ঘ উত্তাল সমুদ্রপথ পাড়ি দেওয়া এবং সাগরে যে তাঁর নৌযান মার্কিন ড্রোন হামলার শিকার হবে না, সে অনিশ্চয়তায়ও ভরসা রাখতে হয়েছিল।
মাচাদো কয়েকটি নৌযানের একটি বহরে গোপনে ভেনেজুয়েলা ছেড়েছিলেন। ক্যারিবীয় অঞ্চলের একটি দ্বীপে পৌঁছানো ছিল তাঁর লক্ষ্য। সেখানে তাঁর জন্য একটি উড়োজাহাজ অপেক্ষা করছিল। কিন্তু এমন এক সময়ে তিনি এ বিপৎসংকুল সফর শুরু করেছিলেন, যখন ভেনেজুয়েলার আশপাশের সাগরে মাদক চোরাচালানের অভিযোগে নৌযানে হামলা চালাচ্ছিল যুক্তরাষ্ট্র। এসব হামলায় অনেকে নিহত হয়েছেন।
মাচাদো অসলোতে পৌঁছেছিলেন ঠিকই। কিন্তু অনেক দেরিতে। ততক্ষণে পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান হয়ে গেছে। বুধবার রাতে তিনি অসলো পৌঁছান। তবে এসব প্রতিকূল পরিবেশ এড়িয়ে অসলোতে পৌঁছানোতে তাঁর সমর্থকেরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন।
ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরো সরকারের চোখে ধুলা দিয়ে মাচাদোর অসলো পৌঁছাতে পারা বড় অর্জন। এর মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়, তিনি এখনো লাতিন আমেরিকার দেশটির রাজনীতিতে একজন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। গত এক বছর মাদুরো সরকারের নজর এড়িয়ে চলেছিলেন দেশটির বিরোধীদলীয় নেত্রী।
মাচাদোকে নিরাপদে ভেনেজুয়েলা ছাড়তে যুক্তরাষ্ট্রের অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তাদের একটি প্রতিষ্ঠান কাজ করেছে। বিশেষ অভিযান এবং গোয়েন্দা প্রশিক্ষণ আছে—যুক্তরাষ্ট্রের অবসরপ্রাপ্ত এমন কর্মকর্তারা প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করেন। তাদের সমন্বিত সহায়তা ছাড়া মাচাদোর পক্ষে ভেনেজুয়েলা ছাড়া প্রায় অসম্ভব ছিল। কারণ, মাদুরো প্রশাসন তাঁকে হন্যে হয়ে খুঁজছিল।
সংস্থাটির নাম ‘গ্রে বুল রেসকিউ’। এর নেতা ব্রায়ান স্টার্ন। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘এই চেষ্টা যাঁরা করেছেন, তাঁদের মধ্যে আমরাই প্রথম নই।’
আরও পড়ুনআত্মগোপনে থাকা মাচাদো ১১ মাস পর প্রকাশ্যে, পৌঁছেছেন অসলোতে১১ ডিসেম্বর ২০২৫যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের ট্যাম্প শহরভিত্তিক সংস্থাটি মাচাদোসহ এ নিয়ে তাদের ৮০০তম অভিযানটি পরিচালনা করেছে। ২০২১ সালে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনাদের প্রত্যাহারের সময়ে সৃষ্ট বিশৃঙ্খলার অভিজ্ঞতা থেকে প্রতিষ্ঠানটি গঠন করা হয়েছিল। ব্রায়ান স্টার্ন যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে ইরাক ও আফগানিস্তান যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন।
স্টার্ন বলেন, মাচাদোকে ভেনেজুয়েলা থেকে বের করাটা বেশ কঠিন ছিল। দীর্ঘদিন ধরে যাঁরা ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশ থেকে মক্কেলদের উদ্ধার করেন, তাঁদের জন্যও এটা বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল।
আরও পড়ুনভেনেজুয়েলা ছাড়তে যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা করেছে: মাচাদো১২ ডিসেম্বর ২০২৫এ বিষয়ে স্টার্ন বলেন, ‘আমাদের পুরো প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো সাধারণত কম পরিচিত ব্যক্তিদের কথা মাথায় রেখে তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু মাচাদো ছিলেন একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তিনি নিজেই ছিলেন এ অভিযানের মূল চ্যালেঞ্জ।’
‘গ্রে বুল রেসকিউ’ মাচাদোকে উদ্ধার করেছে—এ কথা তাঁর একজন প্রতিনিধি নিশ্চিত করেছেন। কিন্তু স্টার্নের সব বক্তব্য আলাদা করে যাচাই করা যায়নি। দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল মাচাদোর ভেনেজুয়েলা ছাড়ার বিষয়ে প্রথম বিস্তারিত প্রতিবেদন করেছিল।
আরও পড়ুনস্বৈরশাসন শেষ করতে দেশে ফিরবেন মারিয়া মাচাদো ১১ ডিসেম্বর ২০২৫