বিদেশে শিক্ষাজীবন কেবল ডিগ্রি অর্জন নয়, বরং ভবিষ্যতের কর্মক্ষেত্রের সম্ভাবনাও বৃদ্ধি করে। আন্তর্জাতিক মানের ডিগ্রি, গবেষণা অভিজ্ঞতা ও বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এটি চাকরি ও ক্যারিয়ার বিকাশের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের সুবিধাজনক অবস্থান প্রদানের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগও বাড়িয়ে দেয়।

সেনজেন এডুকেশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মনিরুল হক বলেন, অনেক শিক্ষার্থী পড়াশোনার পাশাপাশি খণ্ডকালীন কাজ করে জীবিকা নির্বাহ, অভিজ্ঞতা অর্জন এবং ভবিষ্যতের ক্যারিয়ারের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করেন। তবে সব দেশে এই সুযোগ এক রকম নয়। কোথাও ঘণ্টাভিত্তিক পারিশ্রমিক বেশি, কোথাও আবার কাজের সময় সীমাবদ্ধ। বর্তমানে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা ও কাজের সুযোগের দিক থেকে সেরা কয়েকটি দেশ হলো ইউকে (যুক্তরাজ্য), জার্মানি, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স ও নিউজিল্যান্ড।

ইউকে (যুক্তরাজ্য): পড়াশোনার পাশাপাশি আয়

যুক্তরাজ্যে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার পাশাপাশি খণ্ডকালীন চাকরির মাধ্যমে নিজের খরচের একটি বড় অংশ মেটাতে পারেন। স্টুডেন্ট ভিসাধারী শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেশনের সময় প্রতি সপ্তাহে সর্বোচ্চ ২০ ঘণ্টা কাজ করার অনুমতি পান। এতে তাঁরা পড়াশোনার পাশাপাশি বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন ও আর্থিক সহায়তা দুটোই পেয়ে থাকেন।

যুক্তরাজ্যে গড় মজুরি প্রতি ঘণ্টায় সাধারণত ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে, যা বয়স, দক্ষতা ও কাজের ধরন অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়। যদি কোনো শিক্ষার্থী প্রতি সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা কাজ করেন এবং ঘণ্টাপ্রতি গড়ে ১ হাজার ৩০০ টাকা আয় করেন, তাহলে তিনি মাসে কর বাদে প্রায় ৬৫ থেকে ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত উপার্জন করতে পারেন। এই অর্থ বাসা ভাড়া, খাবার ও দৈনন্দিন খরচের বড় অংশ মেটাতে সহায়ক ভূমিকা রাখে।

এ ছাড়া যুক্তরাজ্যে পড়াশোনার খরচ মেটাতে বিভিন্ন বৃত্তি (স্কলারশিপ), গ্রান্ট ও স্টুডেন্ট লোন পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য টিউশন ফি ছাড় এবং জীবনযাত্রার ব্যয়ের সহায়তা দেয়। ফলে যোগ্যতা ও পরিশ্রম থাকলে যুক্তরাজ্যে উচ্চশিক্ষার পাশাপাশি আর্থিকভাবে স্বনির্ভর হওয়াও সম্ভব।

আরও পড়ুনবিদেশে উচ্চশিক্ষা: মাস্টার্স থেকে পিএইচডি ও রিসার্চের সাতসতেরো২৭ অক্টোবর ২০২৫

অস্ট্রেলিয়া: বাড়তি কর্মঘণ্টা ও দীর্ঘমেয়াদি ভিসা

অস্ট্রেলিয়া সব সময়ই দক্ষিণ এশিয়ার শিক্ষার্থীদের জনপ্রিয় গন্তব্য। দেশটির মেলবোর্ন, সিডনি বা ব্রিসবেনে রয়েছে বিশ্বের শীর্ষ অনেক বিশ্ববিদ্যালয়। অস্ট্রেলিয়ায় শিক্ষার্থীরা সেমিস্টারের সময় প্রতি ২ সপ্তাহে ৪০ ঘণ্টা (সপ্তাহে গড়ে ২০ ঘণ্টা) কাজ করতে পারেন। ছুটির সময় কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। ঘণ্টাপ্রতি আয় দুই থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে।

নিউজিল্যান্ড: পড়াশোনা, কাজ ও স্থায়ী বসবাস

নিউজিল্যান্ডে পড়াশোনার পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা একাডেমিক বছরে প্রতি সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা এবং ছুটির সময় পূর্ণকালীন কাজ করতে পারেন। ঘণ্টাপ্রতি আয় দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা। স্নাতক শেষে শিক্ষার্থীরা ১ থেকে ৩ বছরের ‘পোস্ট-স্টাডি ওয়ার্ক ভিসা’পান। এই সময়ের মধ্যে চাকরি পেলে স্থায়ীভাবে থাকার সুযোগও তৈরি হয়।

আরও পড়ুনবিদেশে উচ্চশিক্ষা: কোন দেশে কেন পড়বেন২৭ অক্টোবর ২০২৫

জার্মানি: ফ্রি টিউশন ও উচ্চ আয়ের ক্ষেত্র

শিক্ষার মান ও কাজের সুযোগের জন্য আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের প্রথম পছন্দগুলোর একটি দেশ হলো জার্মানি। এখানকার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর টিউশন ফি নেই বললেই চলে। শিক্ষার্থীরা বছরে ১২০ দিন পূর্ণকালীন বা ২৪০ দিন অর্ধকালীন কাজ করতে পারেন, যার মাধ্যমে মাসে গড়ে এক থেকে দেড় লাখ টাকা উপার্জন সম্ভব।

স্নাতক শেষে শিক্ষার্থীরা ১৮ মাসের পোস্ট-স্টাডি ওয়ার্ক পারমিট পান, যার মধ্যে জার্মান প্রতিষ্ঠানে কাজ করে স্থায়ীভাবে ক্যারিয়ার শুরু করা যায়।

কানাডা: পড়াশোনা ও স্থায়ী বসবাসের উপযুক্ত

সহজ অভিবাসননীতি, নিরাপদ পরিবেশ আর আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষাব্যবস্থার কারণে কানাডা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের অন্যতম প্রিয় গন্তব্য। শিক্ষার্থীরা একাডেমিক সময়ে প্রতি সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা ও ছুটির সময় পূর্ণকালীন কাজ করতে পারেন। ঘণ্টাপ্রতি আয় সাধারণত ১ হাজার ৪০০ থেকে ২ হাজার টাকা।

স্নাতক শেষে ‘পোস্ট গ্রাজুয়েশন ওয়ার্ক পার্মিটে’র আওতায় সর্বোচ্চ ৩ বছর পর্যন্ত কাজের সুযোগ থাকে, যা পরবর্তী সময়ে ‘পারমানেন্ট রেসিডেন্সি’পাওয়ার সুযোগ তৈরি করে।

ফ্রান্স: সাশ্রয়ী টিউশন ও কাজের স্বাধীনতা

ফ্রান্সে পড়াশোনার খরচ তুলনামূলক কম এবং শিক্ষার্থীরা বছরে ৯৬৪ ঘণ্টা (প্রতি সপ্তাহে প্রায় ২০ ঘণ্টা) কাজ করতে পারেন। ঘণ্টাপ্রতি আয় সাধারণত ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা।

ফ্রান্সে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় টিউশন ফি মূলত নির্ভর করে শিক্ষার্থীর জাতীয়তা (ইইউ বা নন-ইইউ) এবং অধ্যয়নের স্তরের ওপর। কিছু ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য বার্ষিক টিউশন ফি ২ হাজার ৭০০ ইউরো থেকে ৩ হাজার ৭০০ ইউরো পর্যন্ত হতে পারে। এ ছাড়া সরকার ও বিভিন্ন ফাউন্ডেশন থেকে শিক্ষার্থীদের জন্য আইফেল এক্সিলেন্স স্কলারশিপের মতো বৃত্তিও পাওয়া যায়, যা পড়াশোনা ও জীবনযাত্রার ব্যয় বহনে বড় সহায়ক।

ইউরোপের তুলনামূলক চিত্র

ইউরোপের প্রায় ৩০টি দেশে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার পাশাপাশি কাজ করতে পারেন। এর মধ্যে যুক্তরাজ্য, আয়ারল্যান্ড, ফ্রান্স, সুইডেন, ফিনল্যান্ড ও পর্তুগালের মতো ১৪টি দেশে ওয়ার্ক পারমিটের প্রয়োজন নেই।

ঘণ্টাপ্রতি আয়ের দিক থেকে শীর্ষ দেশগুলো হলো লুক্সেমবার্গ, আইসল্যান্ড, নরওয়ে, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস, যুক্তরাজ্য। তথ্যসূত্র: ইউরোনিউজ

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ ক ষ র থ দ র জন য য ক তর জ য শ বব দ য ল ল ন ক জ কর ব শ বব দ য র সময় প র ট উশন ফ ক জ করত সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

এক মার্কিন প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় যেভাবে গোপনে ভেনেজুয়েলা ছাড়েন মাচাদো

ভেনেজুয়েলার বিরোধী নেতা মারিয়া কোরিনা মাচাদো চলতি সপ্তাহে যেকোনো মূল্যে নরওয়ের রাজধানী অসলোতে পৌঁছাতে চেয়েছিলেন। নিজে উপস্থিত থেকে নোবেল শান্তি পুরস্কার গ্রহণ করাই ছিল তাঁর উদ্দেশ্য। কিন্তু আত্মগোপন অবস্থা থেকে নিরাপদে অসলো পৌঁছানো তাঁর জন্য সহজ ছিল না। কারণ, এ জন্য তাঁকে সামরিক তল্লাশিচৌকি এড়ানো, দীর্ঘ উত্তাল সমুদ্রপথ পাড়ি দেওয়া এবং সাগরে যে তাঁর নৌযান মার্কিন ড্রোন হামলার শিকার হবে না, সে অনিশ্চয়তায়ও ভরসা রাখতে হয়েছিল।

মাচাদো কয়েকটি নৌযানের একটি বহরে গোপনে ভেনেজুয়েলা ছেড়েছিলেন। ক্যারিবীয় অঞ্চলের একটি দ্বীপে পৌঁছানো ছিল তাঁর লক্ষ্য। সেখানে তাঁর জন্য একটি উড়োজাহাজ অপেক্ষা করছিল। কিন্তু এমন এক সময়ে তিনি এ বিপৎসংকুল সফর শুরু করেছিলেন, যখন ভেনেজুয়েলার আশপাশের সাগরে মাদক চোরাচালানের অভিযোগে নৌযানে হামলা চালাচ্ছিল যুক্তরাষ্ট্র। এসব হামলায় অনেকে নিহত হয়েছেন।

মাচাদো অসলোতে পৌঁছেছিলেন ঠিকই। কিন্তু অনেক দেরিতে। ততক্ষণে পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান হয়ে গেছে। বুধবার রাতে তিনি অসলো পৌঁছান। তবে এসব প্রতিকূল পরিবেশ এড়িয়ে অসলোতে পৌঁছানোতে তাঁর সমর্থকেরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন।

ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরো সরকারের চোখে ধুলা দিয়ে মাচাদোর অসলো পৌঁছাতে পারা বড় অর্জন। এর মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়, তিনি এখনো লাতিন আমেরিকার দেশটির রাজনীতিতে একজন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। গত এক বছর মাদুরো সরকারের নজর এড়িয়ে চলেছিলেন দেশটির বিরোধীদলীয় নেত্রী।

মাচাদোকে নিরাপদে ভেনেজুয়েলা ছাড়তে যুক্তরাষ্ট্রের অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তাদের একটি প্রতিষ্ঠান কাজ করেছে। বিশেষ অভিযান এবং গোয়েন্দা প্রশিক্ষণ আছে—যুক্তরাষ্ট্রের অবসরপ্রাপ্ত এমন কর্মকর্তারা প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করেন। তাদের সমন্বিত সহায়তা ছাড়া মাচাদোর পক্ষে ভেনেজুয়েলা ছাড়া প্রায় অসম্ভব ছিল। কারণ, মাদুরো প্রশাসন তাঁকে হন্যে হয়ে খুঁজছিল।

সংস্থাটির নাম ‘গ্রে বুল রেসকিউ’। এর নেতা ব্রায়ান স্টার্ন। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘এই চেষ্টা যাঁরা করেছেন, তাঁদের মধ্যে আমরাই প্রথম নই।’

আরও পড়ুনআত্মগোপনে থাকা মাচাদো ১১ মাস পর প্রকাশ্যে, পৌঁছেছেন অসলোতে১১ ডিসেম্বর ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের ট্যাম্প শহরভিত্তিক সংস্থাটি মাচাদোসহ এ নিয়ে তাদের ৮০০তম অভিযানটি পরিচালনা করেছে। ২০২১ সালে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনাদের প্রত্যাহারের সময়ে সৃষ্ট বিশৃঙ্খলার অভিজ্ঞতা থেকে প্রতিষ্ঠানটি গঠন করা হয়েছিল। ব্রায়ান স্টার্ন যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে ইরাক ও আফগানিস্তান যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন।

স্টার্ন বলেন, মাচাদোকে ভেনেজুয়েলা থেকে বের করাটা বেশ কঠিন ছিল। দীর্ঘদিন ধরে যাঁরা ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশ থেকে মক্কেলদের উদ্ধার করেন, তাঁদের জন্যও এটা বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল।

আরও পড়ুনভেনেজুয়েলা ছাড়তে যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা করেছে: মাচাদো১২ ডিসেম্বর ২০২৫

এ বিষয়ে স্টার্ন বলেন, ‘আমাদের পুরো প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো সাধারণত কম পরিচিত ব্যক্তিদের কথা মাথায় রেখে তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু মাচাদো ছিলেন একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তিনি নিজেই ছিলেন এ অভিযানের মূল চ্যালেঞ্জ।’

‘গ্রে বুল রেসকিউ’ মাচাদোকে উদ্ধার করেছে—এ কথা তাঁর একজন প্রতিনিধি নিশ্চিত করেছেন। কিন্তু স্টার্নের সব বক্তব্য আলাদা করে যাচাই করা যায়নি। দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল মাচাদোর ভেনেজুয়েলা ছাড়ার বিষয়ে প্রথম বিস্তারিত প্রতিবেদন করেছিল।

আরও পড়ুনস্বৈরশাসন শেষ করতে দেশে ফিরবেন মারিয়া মাচাদো ১১ ডিসেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ