বন্ধ থাকবে সরকারি গাড়ি কেনা, সরকারি খরচে বিদেশভ্রমণ
Published: 28th, October 2025 GMT
চলতি অর্থবছরে সরকারি পর্যায়ে সব ধরনের যানবাহন কেনা বন্ধ থাকবে। তবে সরকারি প্রতিষ্ঠানের যেসব গাড়ি ১০ বছরের বেশি পুরোনো হয়ে গেছে, যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে সেসব গাড়ি প্রতিস্থাপন বা রিপ্লেস করা যাবে। গাড়ির পাশাপাশি বন্ধ থাকবে সরকারি অর্থায়নে সব ধরনের বৈদেশিক সেমিনার, সিম্পোজিয়াম ও কর্মশালায় অংশগ্রহণও। তবে অত্যাবশ্যকীয় বিবেচনায় কিছু ক্ষেত্রে বিদেশভ্রমণ করার সুযোগ থাকবে। সে ক্ষেত্রে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে ২০২৪ সালের ৯ ডিসেম্বর যে পরিপত্র জারি করা হয়েছে, সেটি অনুসরণ করতে হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ গতকাল সোমবার এ–সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করেছে। সরকারের অগ্রাধিকার খাতগুলোর প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের মাধ্যমে সীমিত সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত ও সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ্রসাধনের লক্ষ্যে এ নির্দেশনা জারি করা হয়। নির্দেশনায় সরকারি অর্থে গাড়ি কেনা ও বিদেশভ্রমণের ক্ষেত্রে এসব বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট প্রাক্কলন অবশ্যই মূল বাজেটে প্রদর্শিত মোট ব্যয়সীমার (পরিচালন ও উন্নয়ন) মধ্যে রাখতে হবে। কোনোভাবেই প্রাক্কলিত বরাদ্দের অতিরিক্ত অর্থ দাবি করা যাবে না। এ ছাড়া ভূমি অধিগ্রহণ খাতে পরিচালন বাজেটে বরাদ্দ করা অর্থ ব্যয়ও বন্ধ থাকবে। তবে উন্নয়ন বাজেটের আওতায় অধিগ্রহণ কার্যক্রমের ক্ষেত্রে সব আনুষ্ঠানিকতা মেনে অর্থ বিভাগের অনুমতি সাপেক্ষে অর্থ ব্যয় করা যাবে। আর উন্নয়ন বাজেটের আওতায় পরিকল্পনা কমিশনের অনুকূলে ‘বিশেষ প্রয়োজনে উন্নয়ন সহায়তা’ খাতে সরকারের যে বরাদ্দ দেওয়া আছে, তা মন্ত্রণালয় বা বিভাগের অনুকূলে ‘থোক বরাদ্দ’ হিসেবে ব্যয় করা যাবে। সে ক্ষেত্রেও অর্থ বিভাগের অনুমতি নিতে হবে।
পরিপত্রে আরও বলা হয়, চলতি অর্থবছরের ‘অপ্রত্যাশিত ব্যয় ব্যবস্থাপনা’ খাত থেকে কোনো অর্থ বরাদ্দ করা হলে সংশোধিত বাজেটে তার প্রতিফলন নিশ্চিত করতে হবে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে অন্তর্ভুক্ত চলমান স্কিম এবং ইতিমধ্যে নতুন কোনো স্কিম অনুমোদিত হলে তার জন্য অর্থ বরাদ্দের প্রস্তাব প্রাক্কলনে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। অননুমোদিত কোনো স্কিমের জন্য অর্থ বরাদ্দের প্রস্তাব করা যাবে না।
এ ছাড়া সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বা এডিপিতে প্রকল্পের সংখ্যা সীমিত রাখতে বলা হয় নির্দেশনায়। পাশাপাশি সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করতে প্রয়োজনে কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাদ দেওয়ার কথাও বলা হয়। সংশোধিত এডিপির মূল অংশে বরাদ্দবিহীনভাবে কোনো প্রকল্প রাখা যাবে না বলে নির্দেশনায় বলা হয়েছে।
বৈদেশিক ঋণ বা অনুদানে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্প, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা ও পুনর্বাসন–সম্পর্কিত প্রকল্প এবং চলতি অর্থবছরে সমাপ্তির জন্য নির্ধারিত প্রকল্পকে অগ্রাধিকার দিতে বলে অর্থ বিভাগ। বৈদেশিক ঋণ বা অনুদান চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে এমন প্রকল্প সংশোধিত এডিপিতে অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়ারও কথা বলা হয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী, ধীরগতির প্রকল্প থেকে বরাদ্দ কমিয়ে দ্রুত বাস্তবায়নযোগ্য গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে প্রয়োজন অনুযায়ী বরাদ্দ দেওয়া যাবে। বরাদ্দের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবেশ ও জলবায়ু, কৃষি, কৃষিভিত্তিক শিল্প, বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং দুর্যোগ মোকাবিলা ও পুনর্বাসন–সংশ্লিষ্ট প্রকল্প।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অর থ ব ভ গ বর দ দ র প রকল প সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
ভূমি সেবা পৌঁছে দিতে নাগরিক সেবা কেন্দ্র চালু হবে: ভূমি সচিব
জনগণের দোরগোড়ায় সহজে ভূমি সেবা পৌঁছে দিতে দেশের প্রতিটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নাগরিক সেবা কেন্দ্র চালু করা হবে বলে জানিয়েছেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এ এস এম সালেহ আহমেদ।
তিনি বলেন, ‘‘ভূমি সেবায় নাগরিকের চাওয়া-পাওয়ার অনেকটাই পূরণ হয়েছে। আমরা অনেক কাজ করেছি, তবে এখনো অনেক দূর যেতে হবে। দেশের প্রতিটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নাগরিক সেবা কেন্দ্র চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যাতে জনগণ সহজে ভূমি সেবা পেতে পারেন।’’
এ সময় দেশে ৮১৭টি ভূমি সেবা সহায়তা কেন্দ্র চালু রয়েছে বলেও জানান তিনি।
রবিবার (২৬ অক্টোবর) সচিবালয়ে গণমাধ্যম কেন্দ্রে ‘জনবান্ধব ভূমিসেবায় গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন।
বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরামের (বিএসআরএফ) উদ্যোগে এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের অটোমেটেড ল্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের (ALAMS) আয়োজনে সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয়।
বিএসআরএফ সভাপতি মাসউদুল হকের সভাপতিত্বে সেমিনার সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক উবায়দুল্লাহ বাদল। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. এমদাদুল হক চৌধুরী।
সিনিয়র সচিব বলেন, ‘‘ভূমি অফিসে মানুষের অনেক হয়রানি। এ জন্য আমরা ভূমি সেবা অনলাইনে করে মানুষের দোরগোড়ায় নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছি। গত ডিসেম্বর থেকে ৫টি অনলাইনভিত্তিক সেবা চালু করা হয়েছে। এ ছাড়া সৎ, স্বচ্ছ ভূমি ব্যবস্থাপনা ভূমি মন্ত্রণালয় একা পারবে না। গণমাধ্যমসহ অন্যান্য অংশীদারদের সহায়তা প্রয়োজন।’’
‘‘আমরা ইতিমধ্যে কাজ করেছি। আরও অনেক কাজ বাকি। বড় কাজ হচ্ছে জরিপ। ভূমি সংক্রান্ত মামলার প্রায় ৮০ শতাংশই জরিপকেন্দ্রিক। অভিযোগের তীর আমাদের দিকেই আসে। মানুষ ভূমি অফিসে হয়রানির শিকার হয়—এটা স্বীকার করছি। তাই আমরা ভেবেছি, কীভাবে ঘরে বসে সেবা নিশ্চিত করা যায়।’’ তাহলে অফিসভিত্তিক হয়রানি কমবে বলে আশা করেন সিনিয়র সচিব।
ভূমি সচিব বলেন, ‘‘সিএস জরিপ করতে ৫২ বছর লেগেছিল। এখন জরিপ করতে এত সময় লাগবে না। জোনিং করা হয়েছে। বালু মহলের জন্য আলাদা ইউনিট করা হয়েছে। মনিটরিং করা হচ্ছে। বালু মহল নিয়ে সব অপরাধ বন্ধ না হলেও কমে এসেছে।’’
ভূমি মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে প্রায় সব অভিযোগ আসে মন্তব্য করে সিনিয়র সচিব বলেন, ‘‘ভূমি সেবার বিভিন্ন পর্যায়ে দালাল রয়েছে। কিন্তু ভূমির সব কাজ ভূমি মন্ত্রণালয় করে না, আইন মন্ত্রণালয়ও করে। বিশেষ করে দলিল, ভূমি সংক্রান্ত প্রায় ১০ লাখ মামলা রয়েছে সারাদেশে। প্রতিদিন কয়েক হাজার মামলা হয়।’’
এক অ্যাপে ভূমি সেবা নিশ্চিত করা হয়েছে জানিয়ে সালেহ আহমদ বলেন, ‘‘আমরা অ্যাপ চালু করেছি, যার মাধ্যমে পর্চা সংগ্রহ, নকশা পাওয়া, ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ—সবই ঘরে বসে করা যায়। একসময় বালু মহাল নিয়ে বিশৃঙ্খলা ছিল, এখন একটি শাখার মাধ্যমে তা নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। পুরোপুরি শৃঙ্খলা ফিরেছে তা না হলেও, অনেকটাই কমেছে।’’
সেমিনারে ডিজিটাল সেবার অগ্রগতি ও চ্যালেঞ্জ তুলে ধরে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এমদাদুল হক চৌধুরী বলেন, ‘‘অটোমেটেড ভূমি সেবার সুফল ইতোমধ্যে দেখা যাচ্ছে। মানুষ এখন ঘরে বসে ভূমি উন্নয়ন কর দিতে পারছেন। ফলে রাজস্ব আদায় বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে ৩৭৩ কোটি টাকা আদায় হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ২৮৬ কোটি টাকা।’’
তিনি বলেন, ‘‘ভূমি খাতের সবচেয়ে বড় সমস্যা দুর্নীতি কমিয়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও নাগরিক সেবা সহজ করা। এ ছাড়া ভেন্ডার নির্ভরশীলতা কমানো, ডিজিটাইজ জরিপ করে নির্ভুল তথ্য নিশ্চিত করা ও সাইবার সিকিউরিটি নিশ্চিত করা বড় চ্যালেঞ্জ। একইসঙ্গে দুর্নীতি কমিয়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও নাগরিক সেবা সহজ করা।’’
অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘‘১৬১২২ নম্বর কল সেন্টারের মাধ্যমে ২৪ ঘণ্টা সেবা দেওয়া হচ্ছে—দৈনিক প্রায় আড়াই হাজার কল গ্রহণ করা হয়। গত অর্থবছরের তুলনায় ভূমি উন্নয়ন কর আদায় বেড়েছে ২২ কোটি টাকা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১১৫৪ কোটি টাকা ভূমি উন্নয়ন কর আদায় হয়েছে। চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ১ অক্টোবর পর্যন্ত ৩৭৩ কেটি টাকা ভূমি উন্নয়ন কর আদায় হয়েছে। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ২৮৬ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে নাগরিকরা ২৭ লাখ দাখিলা নিয়েছিলেন। গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৩৮ লাখ দাখিলা নিয়েছেন।’’
চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে মিউটেশন আবেদন জমা পড়েছে ১৭.৭৬ লাখ। গত অর্থবছর একইসময়ে ছিল ১৩ লাখ। খতিয়ান নেওয়ার আবেদন বেড়েছে। তবে সকল খতিয়ান অনলাইন সিস্টেমে দেওয়া সম্ভব হয়নি। ৬ কোটি খতিয়ান আছে দেশে। হোল্ডিংও সব দেওয়া হয়নি। ভুলভ্রান্তি রয়েছে। এগুলো সমাধানের কাজ চলছে বলেও জানান তিনি।
অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘‘প্রজেক্টের মাধ্যমে সিস্টেম তৈরি করা হয়েছে। এখন স্থায়ী কাঠামো তৈরি করা হচ্ছে। আবেদনগুলো জটিল প্রক্রিয়া। অনেক দলিল ও অন্যান্য কাগজপত্র দিতে হয়, নামজারির আবেদন করতে। ভূমিসেবা সহায়তা কেন্দ্রের মাধ্যমে নাগরিকদের সহায়তা করা হচ্ছে। উপজেলা পর্যায়ে ভূমিসেবা সহায়তা কেন্দ্রের আবেদন ফি ২৭০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সারাদেশে ৬১ জেলায় ৮২০টি ভূমিসেবা সহায়তা কেন্দ্র চালু করা হয়েছে।’’
সেমিনারে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাঠ প্রশাসন অনুবিভাগের মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান, যুগ্ম সচিব ডিকেএমপি মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম, উপসচিব সেলিম আহমদ, আমজাদ হোসেন, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিস্টেম এনালিস্ট মোহাম্মদ নূর হোসেন, উপদেষ্টা ও সিনিয়র সচিবের পিএস, এপিএসসহ বিএসআরএফ-এর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন