চীনের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে কারও উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
Published: 28th, October 2025 GMT
বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক নিয়ে কোনো দেশের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। তিনি বলেন, সবার সঙ্গে সম্পর্ক রাখার ক্ষেত্রে একধরনের ভারসাম্য বজায় রেখে চলে বাংলাদেশ।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
সম্প্রতি বাংলাদেশের জন্য মনোনীত যুক্তরাষ্ট্রের নতুন রাষ্ট্রদূত ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন মার্কিন সিনেটে শুনানিতে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান সম্পর্কের ঝুঁকির বিষয়ে মন্তব্য করেন।
চীনের দিকে ঝুঁকে পড়া নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা সবার সঙ্গে একধরনের ভারসাম্য বজায় রেখে চলি। আমাদের গভীর সম্পর্ক আছে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আর অর্থনৈতিক সম্পর্ক আছে চীনের সঙ্গে।’
তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘আমি নিশ্চিন্ত, বাংলাদেশ যে ভারসাম্য বজায় রেখে চলছে, এটা বহাল থাকবে, এখনো আছে। আমি বিশ্বাস করি, ভবিষ্যতে যে সরকার আসবে, তারাও সেটা বজায় রেখে চলবে। কারণ, প্রতিটি বৃহৎ দেশের সঙ্গে আমাদের স্বার্থ আছে। সে স্বার্থ আমাদের সমুন্নত রাখতে হবে।’
চীনের দিকে ঝুঁকে পড়া নিয়ে কোনো গবেষণা রয়েছে কি না, এমন প্রশ্নে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘এটা একটা আপেক্ষিক প্রশ্ন। আপনি যেকোনো সময় বলতে পারেন যে আমরা ওমুকের দিকে ঝুঁকে যাচ্ছি বা যাচ্ছি না। আসলে আমরা ভারসাম্য বজায় রেখে চলি।’
বৃহৎ প্রতিবেশীর কারণে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কম নজর বা কম গুরুত্ব পেয়েছে কি না, জানতে চাইলে তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘আমাদের থেকে যারা অনেক বড়, অনেক বেশি শক্তিশালী, তাদের দৃশ্যমানতা বেশি থাকবে—এটা তো স্বাভাবিক। আমাদের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে যে অবস্থান, তার তুলনায় আমরা কম দৃশ্যমান কি না। আমার কিন্তু সেটা মনে হয় না। আমরা কিন্তু বিভিন্ন ফোরামে যথেষ্ট সরব।’
আমার তো মনে হয় না। যেহেতু আমরা ভারসাম্য বজায় রেখে চলি। ফলে কারও উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।মো.তৌহিদ হোসেন, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা একটা ভারসাম্য বজায় রেখে চলি; কিন্তু সবখানে আমাদের উপস্থিতি বজায় রেখে চলেছি। এমন না যে বাংলাদেশ কোথায় কী করে কেউই যানে না, সে রকম কিন্তু নয়। বাংলাদেশ কিন্তু আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যথেষ্টই তার আকারের (আয়তন) তুলনায়, তার শক্তির তুলনায় যথেষ্ট গুরুত্ব পায় বলে মনে করি।’
চীনের সঙ্গে যোগাযোগ নিয়ে তৃতীয় দেশের উদ্বেগের প্রশ্নে তৌহিদ হোসেন আরও বলেন, ‘আমার তো মনে হয় না। যেহেতু আমরা ভারসাম্য বজায় রেখে চলি। ফলে কারও উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।’
‘পর্যবেক্ষকের নামে দুর্নাম করার জন্য কেউ আসুক, তা চাই না’
কারা আগামী নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠাতে পারে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, পর্যবেক্ষক পাঠানোর জন্য প্রাথমিক সফর কিছু হয়েও গেছে। সর্বশেষ আইআরআইয়ের (যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট) প্রতিনিধিদল সফর করেছে।
তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশ একেবারে অবাধ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ একটা নির্বাচন করতে বদ্ধপরিকর। কাজেই যারা পর্যবেক্ষক হিসেবে আসতে চায়, আমরা অবশ্য তাদের উৎসাহ দেব। তবে আমরা চাই না যে পর্যবেক্ষকের আড়ালে কেউ শুধু উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে দুর্নাম করার জন্য আসুক। আমরা এ পর্যন্ত যা দেখছি, যারা আগ্রহ প্রকাশ করেছে—ইইউ (ইউরোপীয় ইউনিয়ন), যুক্তরাষ্ট্র—আমরা তো মনে করি, এটা একটা ভালো লক্ষণ।’
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘নির্বাচন কাছাকাছি এলে নিশ্চয় আরও পর্যেবক্ষক আসবেন এবং পর্যবেক্ষণ করবেন। আমরা চাই, পর্যবেক্ষণ হোক, যাতে করে নির্বাচন যে স্বচ্ছ, অবাধ ও সুষ্ঠু, সেটা সবার সম্মুখে প্রদর্শিত হোক।’
সরকার আন্তর্জাতিক কোনো পর্যবেক্ষককে আমন্ত্রণ জানাবেন কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘এই পুরো ব্যাপারটাই কিন্তু নির্বাচন কমিশনের। তারাই পর্যবেক্ষকদের নিয়ে কাজ করবে। কাজেই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সরাসরি এতে জড়িত নয়। তবে তাদের ভিসা দেওয়ার ব্যাপার থাকবে, সেটা তো আমরা দিয়ে দেব; কোনো সমস্যা নেই। বাকিটুকু কী হবে না হবে, সেটা কিন্তু আপনাদের জেনে নিতে হবে নির্বাচন কমিশন থেকে।’
ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক অংশীদারদের আশঙ্কা নিয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘এ বিষয়ে কেউ কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করেনি। কারণ, আমরা বলছি, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে। সবাই সেভাবেই দেখছেন এটাকে। দেখুন, দেশের ভেতরে উদ্বেগের কথা যেটা বলছেন, যতক্ষণ পর্যন্ত ঘটনা শেষ না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের উদ্বেগ প্রকাশিত হতে থাকবে। আমি মনে করি না, সেটার খুব বেশি গুরুত্ব আছে।’
নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে কোনো ধরনের চাপ রয়েছে কি না, জানতে চাইলে তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘আমার মনে হয়, আপনি সঠিক জায়গায় প্রশ্নটি করেননি। অন্তত আমার কাছে এ রকম কিছু নেই।’
জাতিসংঘের নতুন আবাসিক সমন্বয়কারীর বাংলাদেশে কাজ করার ছাড়পত্র নিয়ে জানতে চাইলে তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘সমস্যা সৃষ্টি হয়, এ রকম কেউ আসবেন না।’ তাহলে কি নতুন কাউকে চাইছে বাংলাদেশ, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমি এর চেয়ে বেশি আর কিছু বলতে চাই না।’
আরও পড়ুনচীন সংযোগে ঝুঁকি আছে, তা বাংলাদেশকে বোঝাব : ক্রিস্টেনসেন২৪ অক্টোবর ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পরর ষ ট র উপদ ষ ট ত হ দ হ স ন বল ন য ক তর ষ ট র র উদ ব গ র জন য আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
চরাঞ্চলে মাষকলাই চাষ
২ / ৮বাড়ন্ত মাষকলাইয়ের গাছ