বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক নিয়ে কোনো দেশের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। তিনি বলেন, সবার সঙ্গে সম্পর্ক রাখার ক্ষেত্রে একধরনের ভারসাম্য বজায় রেখে চলে বাংলাদেশ।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।

সম্প্রতি বাংলাদেশের জন্য মনোনীত যুক্তরাষ্ট্রের নতুন রাষ্ট্রদূত ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন মার্কিন সিনেটে শুনানিতে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান সম্পর্কের ঝুঁকির বিষয়ে মন্তব্য করেন।

চীনের দিকে ঝুঁকে পড়া নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা সবার সঙ্গে একধরনের ভারসাম্য বজায় রেখে চলি। আমাদের গভীর সম্পর্ক আছে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আর অর্থনৈতিক সম্পর্ক আছে চীনের সঙ্গে।’

তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘আমি নিশ্চিন্ত, বাংলাদেশ যে ভারসাম্য বজায় রেখে চলছে, এটা বহাল থাকবে, এখনো আছে। আমি বিশ্বাস করি, ভবিষ্যতে যে সরকার আসবে, তারাও সেটা বজায় রেখে চলবে। কারণ, প্রতিটি বৃহৎ দেশের সঙ্গে আমাদের স্বার্থ আছে। সে স্বার্থ আমাদের সমুন্নত রাখতে হবে।’

চীনের দিকে ঝুঁকে পড়া নিয়ে কোনো গবেষণা রয়েছে কি না, এমন প্রশ্নে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘এটা একটা আপেক্ষিক প্রশ্ন। আপনি যেকোনো সময় বলতে পারেন যে আমরা ওমুকের দিকে ঝুঁকে যাচ্ছি বা যাচ্ছি না। আসলে আমরা ভারসাম্য বজায় রেখে চলি।’

বৃহৎ প্রতিবেশীর কারণে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কম নজর বা কম গুরুত্ব পেয়েছে কি না, জানতে চাইলে তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘আমাদের থেকে যারা অনেক বড়, অনেক বেশি শক্তিশালী, তাদের দৃশ্যমানতা বেশি থাকবে—এটা তো স্বাভাবিক। আমাদের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে যে অবস্থান, তার তুলনায় আমরা কম দৃশ্যমান কি না। আমার কিন্তু সেটা মনে হয় না। আমরা কিন্তু বিভিন্ন ফোরামে যথেষ্ট সরব।’

আমার তো মনে হয় না। যেহেতু আমরা ভারসাম্য বজায় রেখে চলি। ফলে কারও উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।মো.

তৌহিদ হোসেন, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা একটা ভারসাম্য বজায় রেখে চলি; কিন্তু সবখানে আমাদের উপস্থিতি বজায় রেখে চলেছি। এমন না যে বাংলাদেশ কোথায় কী করে কেউই যানে না, সে রকম কিন্তু নয়। বাংলাদেশ কিন্তু আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যথেষ্টই তার আকারের (আয়তন) তুলনায়, তার শক্তির তুলনায় যথেষ্ট গুরুত্ব পায় বলে মনে করি।’

চীনের সঙ্গে যোগাযোগ নিয়ে তৃতীয় দেশের উদ্বেগের প্রশ্নে তৌহিদ হোসেন আরও বলেন, ‘আমার তো মনে হয় না। যেহেতু আমরা ভারসাম্য বজায় রেখে চলি। ফলে কারও উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।’

‘পর্যবেক্ষকের নামে দুর্নাম করার জন্য কেউ আসুক, তা চাই না’

কারা আগামী নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠাতে পারে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, পর্যবেক্ষক পাঠানোর জন্য প্রাথমিক সফর কিছু হয়েও গেছে। সর্বশেষ আইআরআইয়ের (যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট) প্রতিনিধিদল সফর করেছে।

তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশ একেবারে অবাধ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ একটা নির্বাচন করতে বদ্ধপরিকর। কাজেই যারা পর্যবেক্ষক হিসেবে আসতে চায়, আমরা অবশ্য তাদের উৎসাহ দেব। তবে আমরা চাই না যে পর্যবেক্ষকের আড়ালে কেউ শুধু উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে দুর্নাম করার জন্য আসুক। আমরা এ পর্যন্ত যা দেখছি, যারা আগ্রহ প্রকাশ করেছে—ইইউ (ইউরোপীয় ইউনিয়ন), যুক্তরাষ্ট্র—আমরা তো মনে করি, এটা একটা ভালো লক্ষণ।’

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘নির্বাচন কাছাকাছি এলে নিশ্চয় আরও পর্যেবক্ষক আসবেন এবং পর্যবেক্ষণ করবেন। আমরা চাই, পর্যবেক্ষণ হোক, যাতে করে নির্বাচন যে স্বচ্ছ, অবাধ ও সুষ্ঠু, সেটা সবার সম্মুখে প্রদর্শিত হোক।’

সরকার আন্তর্জাতিক কোনো পর্যবেক্ষককে আমন্ত্রণ জানাবেন কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘এই পুরো ব্যাপারটাই কিন্তু নির্বাচন কমিশনের। তারাই পর্যবেক্ষকদের নিয়ে কাজ করবে। কাজেই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সরাসরি এতে জড়িত নয়। তবে তাদের ভিসা দেওয়ার ব্যাপার থাকবে, সেটা তো আমরা দিয়ে দেব; কোনো সমস্যা নেই। বাকিটুকু কী হবে না হবে, সেটা কিন্তু আপনাদের জেনে নিতে হবে নির্বাচন কমিশন থেকে।’

ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক অংশীদারদের আশঙ্কা নিয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘এ বিষয়ে কেউ কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করেনি। কারণ, আমরা বলছি, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে। সবাই সেভাবেই দেখছেন এটাকে। দেখুন, দেশের ভেতরে উদ্বেগের কথা যেটা বলছেন, যতক্ষণ পর্যন্ত ঘটনা শেষ না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের উদ্বেগ প্রকাশিত হতে থাকবে। আমি মনে করি না, সেটার খুব বেশি গুরুত্ব আছে।’

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে কোনো ধরনের চাপ রয়েছে কি না, জানতে চাইলে তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘আমার মনে হয়, আপনি সঠিক জায়গায় প্রশ্নটি করেননি। অন্তত আমার কাছে এ রকম কিছু নেই।’

জাতিসংঘের নতুন আবাসিক সমন্বয়কারীর বাংলাদেশে কাজ করার ছাড়পত্র নিয়ে জানতে চাইলে তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘সমস্যা সৃষ্টি হয়, এ রকম কেউ আসবেন না।’ তাহলে কি নতুন কাউকে চাইছে বাংলাদেশ, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমি এর চেয়ে বেশি আর কিছু বলতে চাই না।’

আরও পড়ুনচীন সংযোগে ঝুঁকি আছে, তা বাংলাদেশকে বোঝাব : ক্রিস্টেনসেন২৪ অক্টোবর ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পরর ষ ট র উপদ ষ ট ত হ দ হ স ন বল ন য ক তর ষ ট র র উদ ব গ র জন য আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া যুদ্ধবিরতিতে ফিরতে রাজি হয়েছে, জানালেন ট্রাম্প

থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া সীমান্ত এলাকায় সব ধরনের গোলাবর্ষণ বন্ধ করতে রাজি হয়েছে। শুক্রবার থেকেই এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ কথা জানিয়েছেন। 

ট্রাম্প একে একে থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী অনুতিন চার্নভিরাকুল ও কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেতের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন। শুক্রবার এসব ফোনালাপের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেশ দুটির অবস্থান জানান ট্রাম্প। 

আরও পড়ুননিজেদের ভূখণ্ড থেকে কম্বোডিয়ার বাহিনীকে সরিয়ে দিতে ব্যবস্থা নিচ্ছে থাইল্যান্ড০৯ ডিসেম্বর ২০২৫

নিজের ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প লিখেন, ‘তাঁরা (থাইল্যান্ড আর কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী) আজ সন্ধ্যা থেকেই সব ধরনের গোলাবর্ষণ বন্ধ করতে রাজি হয়েছেন। মালয়েশিয়ার দুর্দান্ত প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের সহায়তায় প্রস্তুত করা যে শান্তি চুক্তিতে আমার এবং তাঁদের দুজনের সই রয়েছে, সেটায় ফিরে যাচ্ছেন তাঁরা।’ 

সপ্তাহজুড়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে চলা সংঘর্ষে কমপক্ষে ২০ জন নিহত হয়েছেন। দেশ দুটির বিরোধপূর্ণ সীমান্তের দুপাশে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ ঘরছাড়া হয়েছেন। 

থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে গত জুলাইয়ে প্রাথমিক যুদ্ধবিরতি হয়। ডোনাল্ড ট্রাম্পের চাপ ও মালয়েশিয়ার প্রত্যক্ষ উদ্যোগে দেশ দুটির মধ্যে যুদ্ধবিরতি সম্ভব হয়। থাইল্যান্ড–কম্বোডিয়া যুদ্ধবিরতিতে রাজি না হলে তাদের বাণিজ্য সুবিধা স্থগিত করার হুমকি দিয়েছিলেন ট্রাম্প। 

আরও পড়ুনকম্বোডিয়া সীমান্তে নতুন করে সংঘাতে থাই সেনা নিহত, পাল্টা বিমান হামলা থাইল্যান্ডের০৮ ডিসেম্বর ২০২৫

অক্টোবরে আঞ্চলিক জোট আসিয়ানের সম্মেলনে অংশ নিতে ট্রাম্প মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে যান। তখন থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার যুদ্ধবিরতি চুক্তি আনুষ্ঠানিকভাবে সই হয়। চুক্তিতে সই করেন দেশ দুটির প্রধানমন্ত্রীরা। সই করেন ট্রাম্পও। 

থাইল্যান্ড গত নভেম্বরে যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্থগিত করে। সীমান্তে ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে কয়েকজন থাই সেনা আহত হওয়ার পর ব্যাংককের পক্ষ থেকে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর থেকে থেমে থেমে সংঘর্ষ চলছে। 

আরও পড়ুনথাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া কেন সীমান্ত সংঘাতে জড়িয়েছে, সমাধান কোন পথে ২৬ জুলাই ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ