সিদ্ধিরগঞ্জের মিতালি মার্কেট আবার দখল করার পাঁয়তারা করছে আওয়ামী লীগ নেতা জামান মিয়া ও কলার ফারুক।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনের ঘটনায় করা একাধিক হত্যা মামলার আসামি ফারুক ও জামান জেলা পুলিশ সুপার জসিম উদ্দিনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করার পর থেকে মিতালি মার্কেট দখলের শলাপারমর্শ ও মহড়া দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে তাদের ভয়ে মার্কেটের দোকানদার ও ব্যবসায়ীরা চরম আতঙ্কবোধ করছেন। 

জানা গেছে, মিতালি মার্কেটের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রফিকুল ইসলাম সভাপতি থাকাকালে মার্কেটের দোকান মালিক সমিতির যুগ্ন সম্পাদক ছিলেন ফতুল্লার কুতুবপুর ইউনিয়ের শান্তিধারা ইউনিট আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি জামান মিয়া ও দোকানদার সদস্য ছিলেন কলার ফারুক।

সে সময় অনিয়ম দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে তাদেরকে সমিতির পদ থেকে বাদ দিয়ে মার্কেট থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল।

 এর পর থেকেই তারা দুজন তাদের কিছু অনুগত দোকান মালিক ও সন্ত্রাসীদের হাত করে মার্কেটটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা চালায়। এনিয়ে একাধিকবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটায় তারা। ২০১৮ সালের মার্চ মাসে মিতালী মার্কেট দোকানদার সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত নির্বাচনে হাজী ইয়াছিন মিয়া সভাপতি নির্বাচিত হন।

কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হলেও করোনা ভাইরাসের মহামারী, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও আওয়ামী লীগ নেতা জামান মিয়ার দায়েরকৃত শ্রম আদালতের মামলার কারণে শ্রম অধিদপ্তর কোনো নির্বাচনের উদ্যোগ নিতে পারে নি। 

বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ বারবার নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন করার পরেও তারা(শ্রম অধিদপ্তর) এখনো  তালবাহানা করছে। জনশ্রুতি আছে তারা অনৈতিক ভাবে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে নির্বাচন হীন অবৈধ ভাবে একটি কাগজে কমিটি অনুমোদনের পায়তারা করছে।

যার ফলে বহু চেষ্টা করেও জামান ও ফারুক আর মার্কেটে প্রবেশ করতে পারেনি। ইয়াছিন মিয়া তার  লোকজন নিয়ে একটানা  বহু বছর মার্কেটটি নিয়ন্ত্রণ করে আসছিলেন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ঘটনায় করা একাধিক হত্যা মামলার আসামি হওয়ায় জামান মিয়া ও কলার ফারুকও গা ঢাকা দিয়েছিলেন। 

সম্প্রতি তারা এলাকায় এসে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিনের সাথে সৌজন্য সাক্ষাত করেন। এসময় পুলিশ সুপারকে দেওয়া ফুলের তোরণে লেখা হয় সৌজন্যে মিতালি মার্কেট। এতে মার্কেটের দোকান মালিক সমিতির লোকজনের মধ্যে শুরু হয়েছে সমালোচনা ও চরম ক্ষোভ।  

মিতালি মার্কেট দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সমিতির কোন পদে না থেকেও জামান মিয়া ও ফারুক মিতালি মার্কেটের সৌজন্যে জেলা পুলিশ সুপারের সঙ্গে সাক্ষাত করে এবং তাদের দলবল নিয়ে পরামর্শ সভা করার ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করছে।

পাশাপাশি পুলিশ সুপারের আস্তাভাজন লোক পরিচয় দিয়ে আবার তরা মার্কেট দখল করে আগের মত চাঁদাবাজি ও লুটপাট চালাতে দলবল ও সন্ত্রাসীদের নিয়ে মার্কেটে মহড়া দিচ্ছে। তাদের অনুগত দোকানে দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র মজুদ করছে। হত্যা মামলার আসামিরা পুলিশ সুপারের সাথে সাক্ষাত করা নিয়েও প্রশ্ন তুলেন তিনি। 

এ বিষয়ে জানতে জামান মিয়া ও কলার ফারুকের সাথে যোগাযোগ করতে তাদের ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বারে একাধিকবার ফোন করলে রিং হলেও তারা রিসিভ করেন নি। ফলে তাদের সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি। স্থানীয়রা জানায়, হত্যা মামলা থাকায় জামান ও ফারুক দলবল নিয়ে হঠাৎ মার্কেটে এসে মহড়া দিয়ে আবার গা ঢাকা দেয়। 

জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, মিতালি মার্কেটের সভাপতি পরিচয় দিয়ে জামান মিয়া কয়েকজন লোক নিয়ে আমার সাথে দেখা করে ছবিটি তুলেছে। আমার নাম ভাঙ্গিয়ে কোন অন্যায় করার অভিযোগ পেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

.

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: স দ ধ রগঞ জ ন র য়ণগঞ জ আওয় ম ল গ কল র ফ র ক স ক ষ ত কর এক ধ ক স জন য

এছাড়াও পড়ুন:

তফসিলের পরদিন ‘প্রার্থী’ গুলিবিদ্ধ

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন ঢাকায় দিনের বেলায় গুলি করা হলো ভোটে সম্ভাব্য প্রার্থী শরিফ ওসমান বিন হাদিকে (৩৩)। তিনি ঢাকা-৮ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন এবং বেশ কিছুদিন ধরে প্রচার চালাচ্ছিলেন। হাদি ইনকিলাব মঞ্চ নামের একটি সংগঠনের আহ্বায়ক।

গুলি করার পর আহত হাদিকে রিকশায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গুলি তাঁর মাথায় লেগেছে। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক। রাতে তাঁকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়।

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিনই সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থীর ওপর হামলার ঘটনায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এই ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে। উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি। তবে নির্বাচন ঘিরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে।

দুর্বৃত্তদের গুলিতে ওসমান হাদির গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দ্রুত ও ব্যাপক তদন্ত চালিয়ে হামলায় জড়িত সবাইকে শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন বলে গতকাল জানায় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।

হাদির বাড়ি ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পড়াশোনা শেষ করার পর বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছিলেন তিনি। পাশাপাশি সক্রিয় ছিলেন বিভিন্ন আন্দোলনে।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ভূমিকা রাখার পর ইনকিলাব মঞ্চ গঠন করে আলোচনায় আসেন হাদি। সাংস্কৃতিক এই প্ল্যাটফর্ম তাদের লক্ষ্য ঠিক করে, ‘সমস্ত আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও ইনসাফভিত্তিক একটি রাষ্ট্র বিনির্মাণ’। এই প্ল্যাটফর্ম থেকে বিভিন্ন কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ ও ভারতবিরোধী বক্তব্য হাদিকে আলোচনায় আনে। ঢাকার ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়ি ভাঙার সময় হাদি সক্রিয় ছিলেন। তিনি গোপালগঞ্জ জেলা ভেঙে দিতে বলেছিলেন।

ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার প্রতিষ্ঠা, নির্বাচনী তহবিলের হিসাব প্রকাশ এবং তাঁর ওপর ময়লা পানি নিক্ষেপের ঘটনায় ‘অসুবিধা নেই’ উল্লেখ করে ফেসবুক পোস্ট দিয়েও আলোচনায় আসেন হাদি।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্র জানায়, গতকাল জুমার নামাজের পর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে একটি ব্যাটারির রিকশায় ছিলেন হাদি ও তাঁর সঙ্গী এক ব্যক্তি। তাঁদের পেছনে পেছনে আসে একটি মোটরসাইকেল। বেলা ২টা ২৪ মিনিটে চলন্ত অবস্থায় সেই মোটরসাইকেল থেকেই একাধিক গুলি করা হয় হাদিকে।

ব্যাটারিচালিত রিকশায় বসা ওসমান হাদিকে গুলি করেন মোটরসাইকেলের পেছনে বসা ব্যক্তি। দ্রুত ঘটনা ঘটিয়ে তাঁরা ওই মোটরসাইকেলে সেখান থেকে চলে যান

সম্পর্কিত নিবন্ধ