কারখানার ২০ জন শ্রমিকের সমর্থনে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের সুযোগ রেখে প্রস্তাবিত শ্রম আইন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ীরা। তাঁদের আশঙ্কা, এতে শিল্পে অন্তর্দ্বন্দ্ব বাড়বে, উৎপাদন ব্যাহত হবে এবং দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হবে।

রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএ ভবনে আজ মঙ্গলবার সাত ব্যবসায়ী সংগঠনের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এই উদ্বেগের কথা জানান সংগঠনগুলোর নেতারা। সংগঠনগুলো হলো পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ, নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ, গার্মেন্টস এক্সেসরিজ অ্যান্ড প্যাকেজিং প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএপিএমইএ, ঢাকা চেম্বার, বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই), লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (এলএফএমইএবি) এবং বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ (বাপি)।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন বিজিএমইএর সভাপতি মাহমুদ হাসান খান। তিনি বলেন, ত্রিপক্ষীয় সমন্বয় কমিটির আলোচনায় শ্রমিকসংখ্যার ভিত্তিতে ইউনিয়ন গঠনের বিষয়ে একটি ভারসাম্যপূর্ণ প্রস্তাব গৃহীত হয়েছিল। প্রথম ধাপে ৫০ থেকে ৫০০ শ্রমিকের কারখানায় ৫০ জন শ্রমিকের সম্মতিতে ইউনিয়ন গঠনের প্রস্তাব ছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে উপদেষ্টা পরিষদের সভায় তা পরিবর্তন করে ২০ থেকে ৩০০ শ্রমিক নির্ধারণ করা হয়েছে, যা বাস্তবতা বিবর্জিত।

বিজিএমইএর সভাপতি বলেন, ‘ভারতে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে ১০ শতাংশ বা ন্যূনতম ১০০ শ্রমিকের সম্মতি লাগে, পাকিস্তানে ২০ শতাংশ শ্রমিকের। অথচ আমাদের দেশে মাত্র ২০ জন শ্রমিকের সম্মতিতেই ট্রেড ইউনিয়ন করা যাবে—এটি দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে দুর্বল কাঠামো তৈরি করবে।’ এই সিদ্ধান্ত বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে নেতিবাচক বার্তা দেবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা আরও বলেন, শ্রম আইনে ভবিষ্যৎ তহবিল, শ্রমিকের সংজ্ঞা ও অন্যান্য ধারার অস্পষ্টতা শিল্পে বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে পারে। এতে প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় সমস্যা দেখা দেবে, রপ্তানি কমবে এবং অর্থনীতি দুর্বল হবে। তাঁরা অনুমোদিত শ্রম আইনের অধ্যাদেশটি পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানান। গত বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদ বাংলাদেশ শ্রম আইন (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫-এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়। সরকারের দাবি, আইনটি আধুনিক, আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন এবং শ্রমিক-উদ্যোক্তা উভয় পক্ষের জন্য ভারসাম্যপূর্ণ।

সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম বন্দরের সেবা মাশুল বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েও প্রশ্ন তোলেন ব্যবসায়ীরা। বিজিএমইএর সভাপতি বলেন, টাকার অবমূল্যায়নের কারণে উদ্যোক্তাদের প্রকৃত মাশুল ৩০০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। একটি সরকারি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান মুনাফার জন্য নয়, সেবা দেওয়ার জন্য কাজ করে। তবু কেন মাশুল বাড়ানো হলো, তা উদ্যোক্তাদের বোধগম্য নয়।

এলডিসি থেকে উত্তরণ প্রসঙ্গে মাহমুদ হাসান খান বলেন, উত্তরণের পথ মসৃণ রাখতে সরকারকে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। গ্যাস–সংকটের সমাধান, কাস্টমস প্রক্রিয়া সহজীকরণ, স্বল্প ব্যয়ে অর্থায়ন ও অবকাঠামো উন্নয়নের দাবি জানান তিনি। একই সঙ্গে এলডিসি উত্তরণের সময়সীমা অন্তত তিন বছর পিছিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান।

বিজিএমইএর সভাপতি অভিযোগ করেন, তাঁরা চার মাস ধরে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সাক্ষাতের চেষ্টা করেও সাক্ষাৎ পাননি। তিনি বলেন, ১০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করতে চাওয়া বিদেশি কোম্পানির প্রতিনিধির সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার দেখা হলেও ৪ হাজার কোটি ডলারের রপ্তানি খাতের প্রতিনিধিরা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করতে পারছেন না।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদ, বিসিআইয়ের সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী পারভেজ, বিজিএপিএমইএর সভাপতি মো.

শাহরিয়ার, এলএফএমইএবির সিনিয়র সহসভাপতি মোহাম্মদ নাজমুল হাসান, বাপির প্রধান নির্বাহী মেজর জেনারেল (অব.) মো. মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব জ এমইএ ব যবস য় উপদ ষ ট প রস ত স গঠন গঠন র

এছাড়াও পড়ুন:

বিমানবন্দরে অস্থায়ী গুদাম বানাবে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ

হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আমদানি কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে শেড মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় পোশাকশিল্পের আমদানি কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় অস্থায়ী গুদাম স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) এবং বাংলাদেশ নিট পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিকেএমইএ)। আজ সোমবার বিজিএমইএ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ১৮ অক্টোবর সংঘটিত ওই অগ্নিকাণ্ডে কার্গো ভিলেজের আমদানি শেড ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ফলে পোশাকশিল্পের জন্য আমদানি করা কাঁচামাল খালাস ও সংরক্ষণে বড় ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। রপ্তানি কার্যক্রম নির্বিঘ্ন রাখতে দ্রুত বিকল্প ব্যবস্থা নিতে দুই সংগঠন যৌথভাবে উদ্যোগ নিয়েছে।

যৌথ উদ্যোগের অংশ হিসেবে, নবনির্মিত টার্মিনাল-৩-এ অস্থায়ীভাবে একটি ‘রাব হল’ বা অস্থায়ী গুদাম স্থাপন করা হবে। এটি এখনো পণ্য সংরক্ষণের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত না হলেও জরুরি ভিত্তিতে সেখানে অস্থায়ী গুদাম নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিজিএমইএ ইতিমধ্যে গুদাম নির্মাণের জন্য একটি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দিয়েছে।

এ বিষয়ে ২০ অক্টোবর বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান ও বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেমের নেতৃত্বে দুই সংগঠনের নেতারা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে কার্গো ভিলেজের ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে এবং শিল্পের স্বার্থে আমদানি পণ্য সুরক্ষার জন্য যৌথ উদ্যোগ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিমানবন্দরে অস্থায়ী গুদাম বানাবে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ