পাখি তাড়াতে কত কী করা হলো, তবু তারা এলাকা ছাড়েনি
Published: 29th, October 2025 GMT
পাখিদের তাড়ানোর জন্য গাছ কেটে ফেলা হয়েছিল। হত্যা করা হয়েছিল প্রায় ৮০টি পাখি। বন বিভাগ এই ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করেছিল। তার মধ্যে পাখির আবাসস্থল ধ্বংসের আনুমানিক ক্ষতি এক কোটি টাকা ও পরিবেশের আনুমানিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় দুই কোটি টাকা। এই ক্ষতির জন্য আদালতে মামলাও করা হয়েছিল।
চার বছর আগে এ ঘটনা ঘটেছিল রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চত্বরে। তারপরও পাখিরা হাসপাতাল ছাড়েনি। প্রজনন মৌসুমে শামুকখোল পাখিরা আসে। আরও থাকে পানকৌড়ি ও নিশিবক।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চত্বরে দীর্ঘদিন ধরে শামুকখোল পাখিরা প্রজনন মৌসুমে বাসা বাঁধে। বাচ্চা ফুটিয়ে তারা আবার চলে যায়। নিশিবক ও পানকৌড়ি প্রায় সারা বছরই থাকে। ২০২০ সালে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পাখির বিষ্ঠায় পরিবেশ নষ্টের অজুহাতে কিছু গাছের ডালপালা কেটে দিয়েছিল।
এ ঘটনার পর পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো প্রতিবাদ করে। এরপর হাসপাতালের তৎকালীন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেছিলেন, হাসপাতালের পরিবেশ ও পাখি নিয়ে মানুষের আবেগ, এই দুটি বিষয়কে সমন্বয় করেই তিনি কাজ করবেন। পাখির যাতে কোনো ক্ষতি না হয়, সে বিষয়ে খেয়াল রাখবেন।
২০২১ সালের ৪ সেপ্টেম্বর হাসপাতালের প্রশাসনিক ভবনের সামনে ড্রেন নির্মাণের জন্য একটি অর্জুনগাছ কাটা হলে উড়তে না শেখা শতাধিক পাখির ছানা মাটিতে পড়ে যায়। কিছু পাখি মারা যায়। আর কিছু পাখির ছানা জবাই করে নিয়ে যান শ্রমিক ও রোগীর স্বজনেরা। এর প্রতিবাদ জানিয়ে রাজশাহী, নাটোর ও নওগাঁয় পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠন মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে।
এত অত্যাচারের পরও পাখিরা হাসপাতাল ছাড়েনি। এ বিষয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক আমিনুজ্জামান মো.
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার মোশাররফ হোসেন ২০০৪ সাল থেকে এই হাসপাতালে কর্মরত। তিনি বলেন, আগে শামুকখোল পাখিগুলো রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের গাছগুলোয় থাকত। ২০১৮ সালে সেসব গাছ কাটা হলে তারা হাসপাতাল এলাকায় চলে আসে। এর আগে হাসপাতল এলাকায় অনেক কাক থাকত। পাখির বিষ্ঠার কারণে রোগীদের ভোগান্তি হতো। এ কারণে হাসপাতাল এলাকার গাছের ডালপালা ছেঁটে দেওয়া হয়েছিল। তারপরও পাখিরা হাসপাতাল এলাকা ছেড়ে যায়নি।
গাছ কাটা ও পাখি হত্যার ক্ষতির পরিমাণ উল্লেখ করে রাজশাহী বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের পক্ষ থেকে আদালতে মামলা করা হয়েছিল। বন্য প্রাণী পরিদর্শক জাহাঙ্গীর কবির ২০২১ সালের ৭ সেপ্টেম্বর রাজশাহী চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন। সেই মামলায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বিবাদী করা হয়েছিল।
এ বিষয়ে বন্য প্রাণী পরিদর্শক জাহাঙ্গীর কবির প্রথম আলোকে বলেন, মামলাটির এখনো নিষ্পত্তি হয়নি।
কয়েক দিন আগে হাসপাতাল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতাল চত্বরের ন্যাড়া জারুলগাছগুলোতেও পাখিরা একেবারে গাদাগাদি করে বাসা তৈরি করেছে। পাখিগুলো গায়ে গা লাগিয়ে বসে আছে। হাসপাতালের সামনের সড়ক বিভাজকের ছোট ছোট গাছেও পাখিরা ভিড় করে আছে। গাছগুলো এত ছোট, যে কেউ চাইলেই পাখিদের ছুঁতে পারবে, কিন্তু সেদিকে পাখিদের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।
পাখির বাসার নিচেই আছে একাধিক খাবারের দোকান। স্থানীয় এক দোকানি বলেন, হাসাপাতাল এলাকায় যাঁরা থাকেন বা আসেন, তাঁদের অন্যদিকে তাকানোর সময় থাকে না। কেউ ব্যস্ত ব্যবসা নিয়ে, কেউ আসেন রোগী নিয়ে। পাখি দেখতে কেউ আসেন না। পাখির বাসা ভাঙার সময় কারও নেই।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প ত ল এল ক ল এল ক য় হয় ছ ল পর ব শ
এছাড়াও পড়ুন:
বিয়ে-তালাকের তথ্য ডিজিটাল পদ্ধতিতে নিবন্ধন বাধ্যতামূলক: হাইকোর্ট
বিয়ে ও তালাকের সব তথ্য ডিজিটাল পদ্ধতিতে নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করার নির্দেশ দিয়ে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। এক রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি মো. আসিফ হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বৃহস্পতিবার এ রায় দেন।
আদালত বলেছেন, ডিজিটাল পদ্ধতিতে বাধ্যতামূলকভাবে নিবন্ধন করতে হবে, যাতে প্রতিটি তথ্য সরকারি ব্যবস্থায় সুরক্ষিত থাকে; ডেটাবেজ সম্পূর্ণ কার্যকর ও ব্যবহারযোগ্য হয় এবং নাগরিকেরা বিশেষ করে নারীরা সহজেই তথ্য যাচাই করতে ও ডিজিটাল কপি সংগ্রহ করতে পারেন।
বিবাহ ও তালাকের ক্ষেত্রে ডিজিটালাইজ রেজিস্ট্রেশনে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা চেয়ে এইড ফর ম্যান ফাউন্ডেশন নামের একটি সংগঠন এবং তিন ব্যক্তি ২০২১ সালের ৪ মার্চ রিট করেন।
রিট আবেদনের ভাষ্য, বিয়ে ও তালাকের ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর তথা ডিজিটালাইজ রেজিস্ট্রেশন না হওয়ায় প্রতারণার ঘটনা ঘটছে। স্বামী বা স্ত্রী বিয়ের তথ্য গোপন করে অনেক ক্ষেত্রে আবার বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ডিজিটাল আর্কাইভের অনুপস্থিতিতে অনেক সময় সন্তানের পিতৃপরিচয় নিয়ে অনিশ্চয়তা ও জটিলতা দেখা যায়।
রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০২১ সালের ২৩ মার্চ হাইকোর্ট রুল দেন। রুলে পারিবারিক জীবনের বৃহত্তর সুরক্ষায় বিয়ে ও তালাকের ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশন ডিজিটালাইজেশনের জন্য কেন্দ্রীয় একটি ওয়েবসাইট প্রতিষ্ঠা করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। রুলের ওপর শুনানি শেষে আজ রায় দেওয়া হয়।
রায়ের পর ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মুহাম্মদ শফিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, হাইকোর্ট বিয়ে ও তালাকের সব তথ্য পুরোপুরি ডিজিটাল পদ্ধতিতে নিবন্ধন করতে নির্দেশ দিয়েছেন। রুল নিষ্পত্তি করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সহ বিবাদীদের প্রতি এ নির্দেশ দিয়ে রায় দেওয়া হয়েছে।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ইশরাত হাসান, তাঁকে সহযোগিতা করেন আইনজীবী তানজিলা রহমান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মুহাম্মদ শফিকুর রহমান ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ইকরামুল কবির।
রায়ের পর প্রতিক্রিয়ায় আইনজীবী ইশরাত হাসান বলেন, আদালতের এই সিদ্ধান্ত দেশে পরিবারের নিরাপত্তা, নারীর সুরক্ষা, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ, আইনগত স্বচ্ছতা এবং সবচেয়ে বড় বিষয় বিয়ে–তালাকসংক্রান্ত প্রতারণা বন্ধে ঐতিহাসিক এক পদক্ষেপ হিসেবে কাজ করবে। ডিজিটাল নিবন্ধন চালু হলে গোপন বিয়ে, একাধিক বিয়ে লুকানো, পূর্ববর্তী তথ্য গোপন, তালাক প্রমাণের জটিলতা—এসব সমস্যা ব্যাপকভাবে কমবে।