যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে আমদানি করা পণ্যবাহী ট্রাকের সংখ্যা বেড়েছে। ১৯ অক্টোবর ভারত থেকে আমদানি করা পণ্যবাহী ২৫৪টি ট্রাক বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে দেশে এসেছিল। এক সপ্তাহ পর গতকাল মঙ্গলবার স্থলবন্দরটি হয়ে ভারত থেকে দেশে এসেছে ৩৮১টি ট্রাক। এক সপ্তাহের ব্যবধানে আমদানি করা ১২৭টি ট্রাকে বেশি পণ্য দেশে এসেছে।

বেনাপোল স্থলবন্দর ব্যবহারকারীদের অনেকে অভিযোগ করছিলেন, কিছুদিন ধরে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ প্রায় সন্ধ্যা ছয়টা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দিচ্ছে। এতে ভারত থেকে আমদানি করা পণ্য বিশেষ করে পচনশীল পণ্য নিয়ে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। অন্যান্য পণ্য বিলম্বে খালাসের জন্য তাঁদের ক্ষতিপূরণ দিতে হচ্ছে। বিষয়টি সমাধানের জন্য বেনাপোল ল্যান্ডপোর্ট ইমপোর্টার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বেনাপোল কাস্টম হাউসের কমিশনারকে চিঠিও দেওয়া হয়।

এই অবস্থায় গত রোববার বেনাপোল কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দেয়, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম সপ্তাহের সাত দিন ২৪ ঘণ্টা খোলা রয়েছে। তবে পচনশীল পণ্যবাহী ট্রাক সন্ধ্যার আগে বেনাপোল স্থলবন্দরে প্রবেশ করতে হবে।

এই ঘোষণা দেওয়ার পর পরই বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে আমদানি করা পণ্যবাহী ট্রাকের সংখ্যা বাড়তে থাকে।

দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, বাণিজ্য সম্প্রসারণ তথা আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম সহজ ও উন্নত করার লক্ষ্যে ২০১৭ সালের ১ আগস্ট থেকে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর সপ্তাহের ৭ দিন ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্র জানায়, ১৯ অক্টোবর বাংলাদেশ থেকে ভারতে ৪২ ট্রাক পণ্য রপ্তানি এবং ভারত থেকে বাংলাদেশে ২৫৪ ট্রাক পণ্য আমদানি করা হয়। ২০ অক্টোবর ৬৩ ট্রাক পণ্য রপ্তানি ও ২৫৩ ট্রাক পণ্য আমদানি, ২২ অক্টোবর ১১৫ ট্রাক পণ্য রপ্তানি ও ২৪১ ট্রাক পণ্য আমদানি, ২৩ অক্টোবর ৫১ ট্রাক পণ্য রপ্তানি ও ২৮৭ ট্রাক পণ্য আমদানি, ২৫ অক্টোবর ৫০ ট্রাক পণ্য রপ্তানি ও ২৭২ ট্রাক পণ্য আমদানি, ২৬ অক্টোবর ২৬ ট্রাক পণ্য রপ্তানি ও ৩৮৮ ট্রাক পণ্য আমদানি, ২৭ অক্টোবর ৭৩ ট্রাক পণ্য রপ্তানি ও ৩৫৭ ট্রাক পণ্য আমদানি হয়। ২১ অক্টোবর শ্যামা পূজা এবং ২৪ অক্টোবর শুক্রবার বাংলাদেশে সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ ছিল।

সূত্র জানায়, আমদানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন মেশিনারিজ পার্টস, গাড়ির চেসিস, স্পঞ্জ আয়রন, কর্ন ডিডিজিএস, কাপড়, ব্লিচিং পাউডার, কোয়ার্টাইজ পাউডার, অ্যালার্ম, মাছ, সবজি, ফলসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য। এ ছাড়া রপ্তানি পণ্যের মধ্যে আছে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড, তুলা, কস্টিক সোডা, সুতা, ওয়ালটন ফ্রিজ, গার্মেন্টস, সুপারি, নকশিকাঁথা, পাবদা মাছ, পিভিসি ডোর, ইলিশ, প্লাস্টিক দানা, ব্যাগ, লাগেজ, পলিথিন, জুট, পিভিসি রেজিন, পাটের চট, টিস্যু পেপার, কার্পেট, ফয়েল পেপার, বস্তা, পেপার, সিরামিক, প্রিন্টেড বই, ক্রোকারিজ, হ্যাঙ্গার, চামড়া, ফার্নিচার, জুতা, খেলনা, জুতার রোল, ব্যবহৃত ব্যাটারি, খালি গ্যাস সিলিন্ডার, জুতার সোল, ভাঙারি, জুতার গাম, লোহার রোল, কাপড়, পাউডার, ফেব্রিকস (কাপড়), পাথর পাটাসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য।

কেন আমদানি কমেছিল

আমদানিকারকদের সূত্রে জানা গেছে, গত প্রায় এক মাস ধরে মাঝেমধ্যে কাস্টসম কোনো লিখিত নির্দেশ ছাড়া সন্ধ্যা ছয়টায় বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ করে দিচ্ছে। এতে করে আমদানিকারকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে ১৬ অক্টোবর বেনাপোল ল্যান্ডপোর্ট ইমপোর্টার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বেনাপোল কাস্টম হাউসের কমিশনারকে চিঠি দেওয়া হয়।

অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান স্বাক্ষরিত চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, বর্তমানে বেনাপোল স্থলবন্দরে দুটি ওয়েব্রিজ স্কেল সচল থাকা সত্ত্বেও পর্যাপ্ত দক্ষ জনবল না থাকায় গাড়ি আমদানিতে বিলম্ব হচ্ছে। ভারত থেকে বাংলাদেশে আমদানি করা বিভিন্ন পণ্যের মধ্যে ফল, মাছ ও সবজি প্রকৃত অর্থে অতিপচনশীল পণ্য। দীর্ঘ সময় ট্রাক ও বন্দর এলাকায় রোদ-বৃষ্টি বা প্রতিকূল আবহাওয়ায় অবস্থান করলে এবং বিলম্বে প্রবেশের ফলে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ খালাস না দিতে পারলে পণ্য নষ্ট হয়। এতে অর্থনৈতিক ক্ষতি ও আমদানিকারকদের আর্থিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি করে। চিঠিতে বাংলাদেশের বেনাপোল স্থলবন্দর ও সংশ্লিষ্ট কাস্টমস কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে শুধু ফল, মাছ, সবজি এবং অক্সিজেন পণ্যকে উচ্চ পচনশীল ক্যাটাগরি হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে দ্রুত প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার জন্য জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করা হয়।

ব্যবসায়ীরা কী বলেন

বেনাপোল ল্যান্ডপোর্ট ইমপোর্টার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান বলেন, ‘পচনশীল পণ্য খালাসে বিলম্ব হলে খুব ক্ষতি হয়। অন্য পণ্য খালাসে বিলম্ব হলে আমদানিকারকদের ক্ষতিপূরণ দিতে হয়।’

বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিচালক শামীম হোসেন বলেন, ‘চলতি অক্টোবর মাসের প্রথম দিক থেকে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ প্রায়ই সন্ধ্যার পর লিখিত নির্দেশনা ছাড়াই তাদের কার্যক্রম হঠাৎ করে করে বন্ধ করে দিচ্ছিল। এতে করে ভারত থেকে আমদানি করা পণ্য বিশেষ করে পচনশীল পণ্য নিয়ে সমস্যায় পড়তে হচ্ছিল। গতকাল রোববার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এখন থেকে সকাল সাতটা হতে রাত ১১টা পর্যন্ত পচনশীল পণ্য ছাড়া সব পণ্য নিয়ে ট্রাক বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করবে। আর অন্যান্য পণ্য সকাল সাতটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে বন্দরে প্রবেশ করবে। এরপর থেকে বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি করা ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাকের সংখ্যা বেড়েছে।’

বেনাপোল কাস্টম হাউসের কমিশনার খালেদ মোহাম্মাদ আবু হোসেন বলেন, ‘ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম সপ্তাহের সাত দিন ২৪ ঘণ্টা খোলা রয়েছে। নিয়মের কোনো পরিবর্তন হয়নি। তবে রাতে পচনশীল পণ্যের ট্রাক স্থলবন্দরে প্রবেশ করলে পণ্য পরীক্ষণ করতে সমস্যা হয়। এ জন্য পচনশীল পণ্যবাহী ট্রাক সন্ধ্যার আগে বেনাপোল বন্দরে প্রবেশের বিষয়টি নিশ্চিত করতে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের বলা হয়েছে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রব শ সন ধ য

এছাড়াও পড়ুন:

বেনাপোল স্থলবন্দর সন্ধ্যা পর বন্ধে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে: ঢাকা চেম্বার

দেশের সর্ববৃহৎ যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের পণ্য আমাদানি-রপ্তানির কার্যক্রমের বেশিরভাগ সম্পন্ন হয়ে থাকে। পূর্ব ঘোষণা বা প্রস্ততি ছাড়াই অবৈধ পণ্যের অনুপ্রবেশ ও চোরাচালান রোধে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে সন্ধ্যা ৬টার পর সব ধরনের আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রাখার উদ্যোগ সামগ্রিক বাণিজ্যিক কার্যক্রমে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

রবিবার (২৬ অক্টোবর) পাঠানো এক বার্তায় এসব কথা জানিয়েছে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)।

আরো পড়ুন:

রপ্তানিতে দেশীয় বিমা কাভারেজের অনুমতি দিল বাংলাদেশ ব্যাংক

ছুটি শেষে সচল সোনামসজিদ স্থলবন্দর

বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে ঢাকা চেম্বার জানিয়েছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এ স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানির পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ২০ লাখ ১১ হাজার ২৬৮ এবং ৪ লাখ ২১ হাজার ৭১৩ মেট্রিকটন পণ্য। তাই এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত সিদ্ধান্তের ফলে ব্যবসায়ীরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবে। পাশাপাশি স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ রাজস্ব হারাবে।

এছাড়াও আমাদানি-রপ্তানির সময়সীমা সংক্ষিপ্ত হওয়ায় বন্দরের দুইপাশে অপেক্ষমান অসংখ্য পণ্যবাহী ট্রাকে, বিশেষ করে পঁচনশীল পণ্য নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত সার্বিকভাবে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের ক্ষতিগ্রস্ত করবে এবং আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ে লিড টাইম বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে।     

অবৈধ পণ্যের অনুপ্রবেশ ও চোরাচালান রোধে বন্দর কর্তৃপক্ষ ও দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সমন্বয়ে প্রয়োজনীয় কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। তবে এর ভিত্তিতে সর্ববৃহৎ এ বন্দরের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ রাখার উদ্যোগ কোনোভাবেই সমীচীন নয় বলে মনে করে, ডিসিসিআই। কারণ স্বাভাবিক ব্যবসায়ীদের কার্যক্রম চলমান থাকলে চোরাচালান হ্রাস পাবে বলে বিশ্বাস করে ঢাকা চেম্বার। 

ব্যবসায়িক কার্যক্রমের বিদ্যমান অচলাবস্থার উত্তরণে আরোপিত এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারে অনতিবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানিয়েছে ঢাকা চেম্বার।

ঢাকা/নাজমুল/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বেনাপোল স্থলবন্দর সন্ধ্যা পর বন্ধে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে: ঢাকা চেম্বার