আমার মেয়েই আমাকে এখানে ঢুকেই কিছুক্ষণ পরেই বলছিলো, ‘‘দেখেছো এখানে কোনো মেয়ে বাচ্চা নেই।’’ আমি তখন অবাক হয়ে মেয়ে শিশু খুঁজতে লাগলাম। মেয়েদের মতন জামা পরা এক বাচ্চা দেখে আমি ভেবেছিলার এটিতে ছেলে মেয়ে উভয়ই আছে। ফাউন্ডার এলে ওনাকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘‘মেয়েরা কি এতিম হয় না, শুধু যে ছেলে বাচ্চা আপনার এখানে।’’ ওনার থেকে জানা গেলো মেয়েদের এতিমখানা খুব কম বাংলাদেশে। এটি আমার জানা ছিল না। 

সমাজসেবা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রায় আট হাজার সরকারি তালিকাভুক্ত এতিমখানা আছে। বাংলাদেশে মোট এতিম শিশুর সংখ্যা কত তার কোনো সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান নেই।

আরো পড়ুন:

পাঁচটি উপকরণ দিয়ে তৈরি করা যায় ‘দোসা’

গর্ভবতী নারীদের জন্য যে কারণে বিড়াল  বিপদজনক

একটি পরিসংখ্যানে দেখলাম, দেশে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত এতিমখানার সংখ্যা ৩ হাজার ৩৬৪টি। তবে এতিম বিষয়য়ক অধিকাংশ সংখ্যা উপাত্ত তথ্যগুলো আমার কাছে বিভ্রান্তিকর মনে হলো।তথ্য তত্ত্ব তদারকি ব্যবস্থাপনাও যেন এতিম।

আমরা বেরিয়ে যাচ্ছি, তখন অযথাই এক বাচ্চা আমার ওড়না টেনে ধরলো।কিছুই বললো না, শুধু ওড়না টেনে ধরলো। আমি জানি আমার হয়তোবা আর কখনো যাওয়া হবে না ওদের কাছে। আমেরিকাতে ফিরে গিয়ে আমি মহা ব্যস্ত হয়ে যাবো বহুবিধ কাজে, তবে এটা ঠিক ওই মুহূর্তে আমার খুব ইচ্ছে হচ্ছিলো বাচ্চাটিকে কোলে তুলে নিতে। কিন্তু জীবনের বাস্তবতা আমাদের অনেক আবেগকে সংবরণশীল করে তুলতে শিখিয়ে দিয়েছে। আমি একটু হেসে ওড়না ছাড়িয়ে নিয়ে দ্রুত গাড়ির দিকে গেলাম। আমাদের ড্রাইভার এসে মাল তুলতে তুলতে বললো, ‘‘ওই দিকে দাঁড়িয়ে থাকা খাদেম টাইপের লোকদের একজন নাকি বাচ্চাটিকে শিখিয়ে দিয়েছে ওড়না ধরে  বলতে, আমাকেও সাথে নিয়ে যান।’’

৪/৫ বছরের বাচ্চাটি অবশ্য অতটা তোতাপাখির বুলি আওড়াতে পারেনি। এবার এতে আমার মন খারাপ হলো, বাচ্ছাটি কেন যে নিজের থেকে আমাকে এসে ওড়না ধরে টেনে থামালো না ভেবে আমার মন খারাপ হতে লাগলো। মানুষের মন অবশ্যই বড় বিচিত্র। একটু আগেই যে ওড়না আমি কঠিন হাতে ছাড়িয়ে নিয়েছিলাম তাই কেন সেই বাচ্চাটি নিজের ইচ্ছাতে ধরেনি তাই ভেবে ব্যথিত হলাম। এজ ইফ সে তা করলে আমিও তাকে ছেড়ে আসতাম না।শিশুদের আপন হওয়া এতো সহজ না। সময় লাগে, সময় দিতে হয়।এবং আমাদের সবারই সময়েরই বড় অভাব।

আগেই জানিয়েছি মসজিদের পাশেই লাগোয়া এই এতিমখানাটি। আসরের আজান ভেসে আসছে। ভাবলাম এতিম শিশু ছুটে ছুটে ঢুকবে এতিমখানায়, কিন্তু কেও এলো না। দেখলাম ঢোকার মুখেই দেয়ালে একটি রেকের ওপর লেখা ‘‘আপনার অপ্রয়োজনীয় জিনিস রেখে যান।’’ পরের রেখে থাকা কিছু জিনিসের দেয়ালে লেখা ‘‘যার প্রয়োজন নিয়ে যান।’’ 

দাতা ও গ্রহীতা উভয়ের জন্যই অতি উত্তম ব্যবস্থাপনা। আমি তাই দেখে খুব খুশি হয়ে বললাম, অলিতে গলিতে মোড়ে এই ধরনের কর্নার থাকা বেশ উপকারী। 

যেখানে সেখানেই ভিড়ভাট্টা, চারদিকেই মানুষ, তাদেরই কেউ একজন বললো, ‘‘বিদেশ থেকে আসলেই অনেক কিছু বদলে দিতে ইচ্ছে হয়, দুই দিন দেশে থাকলেই সবাই লাইনে চলে আসে।’’ সম্ভবত আমাকে ভাবছে বেলাইনের একজন। কি আর করা। তবে আমি খুব চাইলাম শুমা যেন এতো কিছু মন্তব্য না বুঝে। ওর কাছে আমি খুব সুন্দর একটা বাংলাদেশ তুলে ধরতে চাই।ও দেশে এসেছে ১৩ বছর পর, ওর এই অভিজ্ঞতা আনন্দময় হোক।

পেছন ফিরে বাচ্চাগুলোকে দেখলাম, ওদের মা নেই, এই দেশের ধুলা বালিতে গড়িয়ে গড়িয়ে ওরা বড় হয়ে যাবে, কোনো মা ওদের হৃদয়ের কাছে বাংলাদেশের সৌন্দর্য তুলে ধরবে না। 

ওদের কাছে বাংলাদেশ বুভুক্ষের দেশ, অনাহারের দেশ, এ কেমন জীবন ওদের! একজন জানালো, সরকারিভাবে শিশু সদস্যদের জন্য মাথাপিছু বরাদ্দ দৈনিক ৬৬ টাকা। বেসরকারি এতিমখানায় বসবাসরত শিশুদের খাওয়া পরার জন্য দৈনিক মাথাপিছু সরকারি মঞ্জুরি মাত্র ৩৩ টাকা।  হায় এতো কম ! 

আমরা এরপর গেলাম স্বজনদের কবরস্থানে। আমার আব্বুর কবরের পাশে দাঁড়িয়ে আমারও মনে হলো আমিও একজন এতিম। তবে আমি একজন বয়স্ক এতিম, শিশু এতিম নই, তারপরও এতিমই তো, এতো বড় হয়ে গেছি তারপরও পরাণ পোড়ে পিতার জন্য, হারানো জনদের জন্য। মনে এলো, আমি মরে গেলে আমার মেয়েটিও এতিম হয়ে যাবে। মনের কথা আমি কি একটু জোরেই বলে ফেলেছি! না হলে পাশে থেকেইবা অচেনা এক পীর ফকির টাইপের একজন বলবেন কেন, বাবা মরলে এতিম হয়, মা মরলে এতিম বলা হয় না। 

আমি শুমের সামনে আমার অবস্থান নেমে যাচ্ছে দেখে তাড়াতাড়ি বললাম, আমরা সবাই জীবনের বিভিন্ন সময়ে এতিম হয়ে যাই। তারপরও নিঃসন্দেহে শিশু বয়সে এতিম হয়ে যাওয়াটা বেশি কষ্টের।

এবার আমার বর বললেন, ‘‘প্রাপ্ত বযস্ক মানুষ এতিম হয় না।’’ আমি নাকি চাইলেও এখন আর এতিম হিসেবে গণ্য হবো না। মৃত পিতার কবরের পাশে দাঁড়িয়ে বলি-আমি তো নিজেকে এতিম ছাড়া আর কিছু ভাবছি না। আমার চারদিকে যদিওবা প্রচুর এতিম বাচ্চা এতিমখানা থেকে বের হয়ে এসে দাঁড়িয়ে রয়েছে কিন্তু বুঝতে পারছি নিয়মানুযায়ী আমি ওদের দলভুক্ত নই। আমাকে এতিম হিসেবে গণ্য করা হবে না। এতে কি আমার খুশি হওয়া উচিত? কই হচ্ছি তো না। বরঞ্চ মনে মনে যে শিশু থাকে সবার মাঝে, আমার মাঝেও, তাই যেন আমাকে আজ আমার বাবার কবরের পাশে দাঁড়িয়ে কেঁদে উঠে বলতে ইচ্ছে করালো, আমিও একজন এতিম। যার বাবা নেই সেই জানে জীবনের সকল বয়সেই সে এতিম। বাবা না থাকাটা এই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় না থাকা, আমার কেন জানি ওখানে দাঁড়িয়ে তাই মনে হতে লাগলো।

ঢাকা/লিপি

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আম র ম এত ম হ র জন য সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

‘রূপবানে নাচে কোমর দুলাইয়া’—ভাইরাল যুগেও প্রাসঙ্গিক মিলা

‘ফেরা’ শব্দটা মিলার পছন্দ নয়। ‘এসব বলে আমারে বুড়া বানাইয়া দিয়েন না,’ হেসে বললেন মিলা। নিজেকে ‘তরুণ’ ভাবতে চান। তবু প্রসঙ্গটা এসে যায়। কেননা এই দুই দশকের পথে সব সময় যে আলোতে ছিলেন, তা নয়। ব্যক্তিগত নানা কারণে কিছু সময়ের জন্য সংগীতাঙ্গনে তাঁর উপস্থিতি কমে যায়। নতুন গান প্রকাশ পাচ্ছিল না, মঞ্চেও তাঁর দেখা মিলত না। বরং খবরের শিরোনামে উঠে আসত বিয়ে, সংসার, বিচ্ছেদ, আদালতের নানা ঘটনা। কিন্তু সেই কঠিন অধ্যায় এখন অতীত। ভুলে যেতে চান। এখন মিলার ধ্যানজ্ঞান শুধুই গান। জীবনের সব ঝামেলা পেরিয়ে আবারও আলোচনায় ফিরেছেন তিনি—এবার কেবল গান নিয়েই।
‘আহা, একসময় এফএম রেডিওতে কত শুনতাম, কিন্তু জানতাম না এই শিল্পী মিলা। ধন্যবাদ মিলা, আমাদের শৈশবকে রাঙিয়ে তোলার জন্য’—মিলার ইউটিউব চ্যানেলে ‘তুমি কি সাড়া দেবে’ গানটির মন্তব্যের ঘরে এমনটাই লিখেছেন একজন শ্রোতা। ইউটিউবে মিলার গাওয়া ও অভিনীত ‘রূপবানে নাচে কোমর দুলাইয়া’ গানের মিউজিক ভিডিওর ভিউ তিন কোটির বেশি।

প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জি সিরিজের ইউটিউব চ্যানেলে ‘বাপুরাম সাপুড়ে’ গানটির ভিউ প্রায় দুই কোটি। এ গানের মন্তব্যের ঘরে একজন লিখেছেন, ‘মিলার মধ্যে খুবই স্বতঃস্ফূর্ত একধরনের চপলতা রয়েছে, যা বিখ্যাত পপ গানেওয়ালদের এক গুরুত্বপূর্ণ গুণ। কৈশোরে তাঁর গান যেমন আনন্দ নিয়ে শুনেছি, আজও তা–ই।’ ভারত থেকে দেবশ্রী নামের এক শ্রোতা লিখেছেন, ‘ইন্ডিয়া থেকে শুনছি। কলেজে পড়ার সময় শুনেছিলাম। আজ হঠৎ করে ইউটিউবে পেয়ে গিয়ে শুনলাম। অনেক দিন ধরে খুঁজছিলাম। বাংলাদেশের গান বলে জানতাম না। কিন্তু দুর্দান্ত গানটা তৈরি করেছিল। জাভা ফোনে শুনতাম। এখন তো অ্যান্ড্রয়েডের যুগ।’ এসব মন্তব্যে মিলাকে পাওয়া যায়।

মিলা নতুন গানে ও কনসার্টে গত বছর থেকেই নিয়মিত। ‘ছেঁড়া পাল’ গানটি নতুন সংগীতায়োজনে গেয়ে নিজের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশ করেছেন। ২০২৪ সালের জুনে জি সিরিজের ব্যানারে আসা ‘টোনা টুনি’ গানের ভিডিওতে মিলার প্রাণবন্ত উপস্থিতি ‘রূপবান’ গানের স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়।

মিলা ইসলাম

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর পূর্ণ মন্ত্রীর মর্যাদা চান
  • পাখি তাড়াতে কত কী করা হলো, তবু তারা এলাকা ছাড়েনি
  • গাজা যুদ্ধের সংবাদে ‘পক্ষপাতিত্বের’ অভিযোগে ১৫০ লেখক নিউইয়র্ক টাইমস বর্জন করছেন
  • হিজাব নিযে মন্তব্য: রাবি অধ্যাপকের শাস্তির দাবিতে স্মারকলিপি
  • মোটরবাইকে কেউক্রাডং, এক রোমাঞ্চকর যাত্রা
  • পেয়ালায় ডুবে মরলেন দেবদূত
  • চট্টগ্রামের শিশির ভাবনায় বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ
  • একজন ব‌্যাটসম‌্যান থাকলেই হতো…
  • ‘রূপবানে নাচে কোমর দুলাইয়া’—ভাইরাল যুগেও প্রাসঙ্গিক মিলা