বেগম রোকেয়াকে নিয়ে রাবি শিক্ষকের মন্তব্য একাডেমিক নৈতিকতার লঙ্ঘন: আসক
Published: 11th, December 2025 GMT
বাঙালি মুসলমান নারীজাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনকে নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) এক শিক্ষকের ফেসবুক পোস্টের নিন্দা জানিয়েছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। সংস্থাটি বলছে, কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের এমন মন্তব্য একাডেমিক নৈতিকতার সরাসরি লঙ্ঘন।
আজ বৃহস্পতিবার আসকের সিনিয়র সমন্বয়কারী আবু আহমেদ ফয়জুল কবির স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ সূত্রে জানা যাচ্ছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাহমুদুল হাসান তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে সমাজসংস্কারক মহীয়সী নারী বেগম রোকেয়াকে ‘মুরতাদ কাফির’ আখ্যায়িত করে পোস্ট দিয়েছেন। এ ঘটনায় আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বাংলা ও বাঙালি নারীজাগরণের পথিকৃৎ বেগম রোকেয়া, যাঁর অবদান আমাদের শিক্ষা, সমাজচিন্তা ও মনন গঠনের ভিত্তি; তাঁকে নিয়ে এমন বিদ্বেষপূর্ণ ও উসকানিমূলক মন্তব্য কেবল নিন্দনীয়ই নয়, এটি নারীর মর্যাদার ওপর সরাসরি আক্রমণ। আমাদের মনে রাখতে হবে, বেগম রোকেয়ার শিক্ষা ও সামাজিক আন্দোলন ধর্ম, বর্ণ, জাতিনির্বিশেষে বাঙালি নারীদের পরাধীনতা ও কুসংস্কারের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করেছে।
বিবৃতিতে আসক বলেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক, যিনি নিজেদের পেশার নৈতিকতা, শালীনতা ও প্রগতিশীল চেতনার প্রতীক হওয়ার কথা, তাঁর কাছ থেকে এ ধরনের বক্তব্য একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক হিসেবে দায়িত্বজ্ঞানহীন, ঘৃণা প্রচারমূলক ও নারীবিদ্বেষী বক্তব্য পেশাগত নীতিবোধের চরম লঙ্ঘন।
আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) মনে করে, এ ধরনের মন্তব্য ব্যক্তিগত দায়িত্বহীনতার সীমা ছাড়িয়ে সমাজে বিভাজন, নারীবিদ্বেষী ও ঘৃণামূলক বক্তব্যকে উসকে দেয়, যা মানবাধিকার মানদণ্ড, রাষ্ট্রীয় আইন এবং একাডেমিক নৈতিকতার সরাসরি লঙ্ঘন।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) দৃঢ়ভাবে বলতে চায়, বেগম রোকেয়া শুধুই একজন ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব নন, তিনি বাঙালি নারীর মুক্তি আন্দোলনের ভিত্তি। তাঁকে অবমাননা করা মানে আমাদের সামষ্টিক অগ্রযাত্রাকে আঘাত করা।
আরও পড়ুনবেগম রোকেয়াকে ‘মুরতাদ কাফির’ বললেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক০৯ ডিসেম্বর ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আইন ও স ল শ ক ন দ র ব গম র ক য় ন ত কত
এছাড়াও পড়ুন:
প্রায় ৭ ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর পুলিশি সহায়তায় সচিবালয় ছাড়লেন অর্থ উপদেষ্টা
প্রায় ৭ ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ তাঁর কার্যালয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ থেকে বের হতে পেরেছেন। সচিবালয়ে কর্মরত সব কর্মচারীর জন্য ২০ শতাংশ ‘সচিবালয় ভাতা’র দাবিতে তাঁকে আজ বেলা আড়াইটা থেকে অবরুদ্ধ করে রেখেছিলেন নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। রাত সোয়া আটটায় অর্থ উপদেষ্টা সচিবালয় থেকে পুলিশি সহায়তায় বাসার উদ্দেশে বের হয়েছেন। অর্থ বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সচিবালয়ের ভেতরে অর্থ বিভাগের জন্য ১৮ তলা ভবন রয়েছে। এ ভবনের চারতলায় অর্থ উপদেষ্টার কার্যালয়। আজ বেলা দুইটার দিকে সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অর্থ উপদেষ্টার কার্যালয়ের সামনে গিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। এদিন সকালে ঢাকার আগারগাঁওয়ে রাজস্ব ভবনে জাতীয় ভ্যাট দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থ উপদেষ্টা। সেখান থেকে তখনো কার্যালয়ে ফেরেননি তিনি। তবে সচিবালয়ে উপদেষ্টার ফেরার খবর পেয়ে আবার তাঁর কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন কর্মচারীরা। এ সময় তাঁরা মিছিল নিয়ে অর্থ উপদেষ্টার দপ্তরের সামনে অবস্থান নেন।
কর্মচারীদের দাবির মধ্যে ছিল উপদেষ্টা, মন্ত্রী ও সচিবেরা রাতে যতক্ষণ অফিসে থাকেন, ততক্ষণ তাঁদেরও অফিস করতে হয়। বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিয়মিত বেতনকাঠামোর বাইরে নানা ধরনের ভাতা পেলেও সচিবালয়ের কর্মচারীদের তা দেওয়া হয় না। আন্দোলনকারীদের একজন আজ সন্ধ্যায় জানিয়েছিলেন, দীর্ঘদিন থেকেই তাঁদের ক্ষোভ রয়েছে। রেশনের দাবিতে এর আগেও তাঁরা অর্থ উপদেষ্টাকে অবরুদ্ধ করেছিলেন। তখন তিনি আশ্বাস দিয়েছিলেন, রেশনের দিকটি বিবেচনা করবেন; কিন্তু তিনি কথা রাখেননি।
সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য মহার্ঘ ভাতা চালুর আশ্বাস দিয়ে তা–ও কার্যকর করেনি সরকার। নতুন বেতন কমিশনের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। অর্থ উপদেষ্টা এরই মধ্যে কয়েকবার বলেছেন, বেতন কমিশন বাস্তবায়ন করবে নির্বাচিত সরকার। এর আগে গত ২২ জুন সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতেও অর্থ বিভাগের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেছিলেন কর্মচারীরা।
সূত্রগুলো জানায়, অবরুদ্ধ থাকার সময় অর্থসচিব মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদারের সঙ্গে বৈঠক করেন অর্থ উপদেষ্টা। এর পর অর্থ উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে আন্দোলনকারীদের জানানো হয়, তাঁদের দাবি পূরণে আগামী সোমবার পদক্ষেপ নেওয়া হবে। কিন্তু কর্মচারীদের চাওয়া, আজ বুধবারই পদক্ষেপ নিতে হবে।
অর্থ উপদেষ্টা সচিবালয় থেকে চলে যাওয়ার পর অর্থ বিভাগের শীর্ষ পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা জানান, দাবি যা-ই হোক না কেন, হুট করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কারণ, ভাতার সঙ্গে অনেক হিসাব-নিকাশের বিষয় রয়েছে।