৯ মাসে ১৩ কোটি টাকা মুনাফা বাটা শুর, শেষ প্রান্তিকে করেছে লোকসান
Published: 29th, October 2025 GMT
জুতা প্রস্তুত ও বাজারজাতকারী বহুজাতিক কোম্পানি বাটা শুর মুনাফা প্রায় অর্ধেক কমে গেছে। চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে (জানুয়ারি–সেপ্টেম্বর) কোম্পানিটির মুনাফা কমে দাঁড়িয়েছে ১২ কোটি ৭৪ লাখ টাকায়। গত বছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ২৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির মুনাফা কমেছে ১১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা বা প্রায় ৪৮ শতাংশ। কোম্পানিটির গত ৯ মাসের ব্যবসাসংক্রান্ত অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন থেকে মুনাফা কমে যাওয়ার এ তথ্য পাওয়া গেছে।
গতকাল মঙ্গলবার কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদের সভায় এ আর্থিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত করা হয়। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি হিসেবে আজ বুধবার আর্থিক প্রতিবেদনের এসব তথ্য স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের জানানো হয়েছে। একই সভায় ৯ মাসের আর্থিক প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে শেয়ারধারীদের জন্য ১৪৩ শতাংশ অন্তর্বর্তীকালীন নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়েছে। তাতে প্রতি শেয়ারের বিপরীতে একজন বিনিয়োগকারী ১৪ টাকা ৩০ পয়সা করে লভ্যাংশ পাবেন। আগামী ১৮ নভেম্বর রেকর্ড তারিখে যাঁদের হাতে কোম্পানিটির শেয়ার থাকবে, তাঁরাই শুধু পাবেন ঘোষিত এ লভ্যাংশ।
আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসের মধ্যে শেষ তিন মাসে (জুলাই–সেপ্টেম্বর) কোম্পানিটি প্রায় সাড়ে ১৪ কোটি টাকা লোকসান করেছে। গত বছরের একই সময়ে কোম্পানিটির লোকসান করেছিল ১৩ কোটি টাকা। গত বছরের জুলাই–সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ছাত্র–জনতার অভুত্থান ঘটে। তাতে দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হয়। এ কারণে ওই তিন মাসে দেশজুড়ে ব্যবসা–বাণিজ্য মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। ফলে গত বছরের জুলাই–সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে বাটা শু লোকসান করে।
আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে কোম্পানিটি ৭০০ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে। গত বছরের একই সময়ে কোম্পানিটি ব্যবসা করেছিল ৬৯৬ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির ব্যবসা বেড়েছে চার কোটি টাকার। কোম্পানির বিক্রি ৪ কোটি টাকা বাড়লেও উৎপাদন খরচ গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৯ কোটি টাকা বেড়েছে। এ কারণে বেশি ব্যবসা করেও কোম্পানির মুনাফা কমে গেছে। চলতি বছর ৭০০ কোটি টাকার পণ্য বিক্রির বিপরীতে কোম্পানির উৎপাদন খরচ হয়েছে ৩৯৫ কোটি টাকা। আর গত বছর ৬৯৬ কোটি টাকার পণ্য বিক্রির বিপরীতে কোম্পানির উৎপাদন খরচ ছিল ৩৭৬ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে উৎপাদন খরচ ৫ শতাংশ বেড়েছে। তার বিপরীতের ব্যবসা বেড়েছে আধা শতাংশের কম।
এদিকে বাটা শু ১৪৩ শতাংশ অন্তর্বর্তীকালীন যে লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে, তার জন্য কোম্পানিটিকে এ খাতে বিতরণ করতে হবে সাড়ে ১৯ কোটি টাকার বেশি। যার বড় অংশই পাবেন কোম্পানিটির বিদেশি উদ্যোক্তা–পরিচালকেরা। কারণ, কোম্পানিটির মোট শেয়ারের ৭০ শতাংশই রয়েছে তাঁদের মালিকানায়। বাকি ৩০ শতাংশ রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক, বিদেশি বিনিয়োগকারী ও এ দেশের ব্যক্তিশ্রেণির সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স প ট ম বর র ব পর ত র ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
এক মার্কিন প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় যেভাবে গোপনে ভেনেজুয়েলা ছাড়েন মাচাদো
ভেনেজুয়েলার বিরোধী নেতা মারিয়া কোরিনা মাচাদো চলতি সপ্তাহে যেকোনো মূল্যে নরওয়ের রাজধানী অসলোতে পৌঁছাতে চেয়েছিলেন। নিজে উপস্থিত থেকে নোবেল শান্তি পুরস্কার গ্রহণ করাই ছিল তাঁর উদ্দেশ্য। কিন্তু আত্মগোপন অবস্থা থেকে নিরাপদে অসলো পৌঁছানো তাঁর জন্য সহজ ছিল না। কারণ, এ জন্য তাঁকে সামরিক তল্লাশিচৌকি এড়ানো, দীর্ঘ উত্তাল সমুদ্রপথ পাড়ি দেওয়া এবং সাগরে যে তাঁর নৌযান মার্কিন ড্রোন হামলার শিকার হবে না, সে অনিশ্চয়তায়ও ভরসা রাখতে হয়েছিল।
মাচাদো কয়েকটি নৌযানের একটি বহরে গোপনে ভেনেজুয়েলা ছেড়েছিলেন। ক্যারিবীয় অঞ্চলের একটি দ্বীপে পৌঁছানো ছিল তাঁর লক্ষ্য। সেখানে তাঁর জন্য একটি উড়োজাহাজ অপেক্ষা করছিল। কিন্তু এমন এক সময়ে তিনি এ বিপৎসংকুল সফর শুরু করেছিলেন, যখন ভেনেজুয়েলার আশপাশের সাগরে মাদক চোরাচালানের অভিযোগে নৌযানে হামলা চালাচ্ছিল যুক্তরাষ্ট্র। এসব হামলায় অনেকে নিহত হয়েছেন।
মাচাদো অসলোতে পৌঁছেছিলেন ঠিকই। কিন্তু অনেক দেরিতে। ততক্ষণে পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান হয়ে গেছে। বুধবার রাতে তিনি অসলো পৌঁছান। তবে এসব প্রতিকূল পরিবেশ এড়িয়ে অসলোতে পৌঁছানোতে তাঁর সমর্থকেরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন।
ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরো সরকারের চোখে ধুলা দিয়ে মাচাদোর অসলো পৌঁছাতে পারা বড় অর্জন। এর মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়, তিনি এখনো লাতিন আমেরিকার দেশটির রাজনীতিতে একজন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। গত এক বছর মাদুরো সরকারের নজর এড়িয়ে চলেছিলেন দেশটির বিরোধীদলীয় নেত্রী।
মাচাদোকে নিরাপদে ভেনেজুয়েলা ছাড়তে যুক্তরাষ্ট্রের অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তাদের একটি প্রতিষ্ঠান কাজ করেছে। বিশেষ অভিযান এবং গোয়েন্দা প্রশিক্ষণ আছে—যুক্তরাষ্ট্রের অবসরপ্রাপ্ত এমন কর্মকর্তারা প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করেন। তাদের সমন্বিত সহায়তা ছাড়া মাচাদোর পক্ষে ভেনেজুয়েলা ছাড়া প্রায় অসম্ভব ছিল। কারণ, মাদুরো প্রশাসন তাঁকে হন্যে হয়ে খুঁজছিল।
সংস্থাটির নাম ‘গ্রে বুল রেসকিউ’। এর নেতা ব্রায়ান স্টার্ন। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘এই চেষ্টা যাঁরা করেছেন, তাঁদের মধ্যে আমরাই প্রথম নই।’
আরও পড়ুনআত্মগোপনে থাকা মাচাদো ১১ মাস পর প্রকাশ্যে, পৌঁছেছেন অসলোতে১১ ডিসেম্বর ২০২৫যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের ট্যাম্প শহরভিত্তিক সংস্থাটি মাচাদোসহ এ নিয়ে তাদের ৮০০তম অভিযানটি পরিচালনা করেছে। ২০২১ সালে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনাদের প্রত্যাহারের সময়ে সৃষ্ট বিশৃঙ্খলার অভিজ্ঞতা থেকে প্রতিষ্ঠানটি গঠন করা হয়েছিল। ব্রায়ান স্টার্ন যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে ইরাক ও আফগানিস্তান যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন।
স্টার্ন বলেন, মাচাদোকে ভেনেজুয়েলা থেকে বের করাটা বেশ কঠিন ছিল। দীর্ঘদিন ধরে যাঁরা ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশ থেকে মক্কেলদের উদ্ধার করেন, তাঁদের জন্যও এটা বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল।
আরও পড়ুনভেনেজুয়েলা ছাড়তে যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা করেছে: মাচাদো১২ ডিসেম্বর ২০২৫এ বিষয়ে স্টার্ন বলেন, ‘আমাদের পুরো প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো সাধারণত কম পরিচিত ব্যক্তিদের কথা মাথায় রেখে তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু মাচাদো ছিলেন একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তিনি নিজেই ছিলেন এ অভিযানের মূল চ্যালেঞ্জ।’
‘গ্রে বুল রেসকিউ’ মাচাদোকে উদ্ধার করেছে—এ কথা তাঁর একজন প্রতিনিধি নিশ্চিত করেছেন। কিন্তু স্টার্নের সব বক্তব্য আলাদা করে যাচাই করা যায়নি। দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল মাচাদোর ভেনেজুয়েলা ছাড়ার বিষয়ে প্রথম বিস্তারিত প্রতিবেদন করেছিল।
আরও পড়ুনস্বৈরশাসন শেষ করতে দেশে ফিরবেন মারিয়া মাচাদো ১১ ডিসেম্বর ২০২৫