ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে পুলিশের মাদকবিরোধী অভিযানে কমপক্ষে ৬০ জন নিহত হয়েছেন। এই ঘটনায় চার পুলিশ সদস্যও প্রাণ হারিয়েছেন।

বুধবার (২৯ অক্টোবর) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

আরো পড়ুন:

৩৬ বছরে প্রথমবার ব্রাজিলকে হারাল জাপান

দক্ষিণ কোরিয়ার জালে ব্রাজিলের ৫ গোল

প্রতিবেদনে বলা হয়, মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) ব্রাজিলের রাজধানীর নিম্ন-আয়ের ফাভেলা কমপ্লেক্স আলেমাও এবং পেনহা এলাকা পরিণত হয় এক ভয়াবহ সংঘর্ষের ময়দানে। পুলিশের ব্যাপক অভিযানে অন্তত ৬০ জনের মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয়রা এ ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন ‘যুদ্ধের মতো পরিস্থিতি’ হিসেবে।

দেশটির প্রধান মাদক চক্রকে দমন করতে এই অভিযানে প্রায় ২ হাজার ৫০০ জন সশস্ত্র পুলিশ সদস্য অংশ নেন। তাঁদের সঙ্গে ছিল হেলিকপ্টার, ড্রোন, সাঁজোয়া যান ও ধ্বংসযন্ত্র। পুলিশ জানিয়েছে, দুইটি হেলিকপ্টার, ৩২টি সশস্ত্র গাড়ি এবং ১২টি ডেমোলিশন যন্ত্র ব্যবহার করে এলাকার মুখে থাকা ব্যারিকেডগুলো ভাঙা হয়।

রাজ্য গভর্নর ক্লাউডিও কাস্ত্রো এক বিবৃতিতে বলেন, “এটি রাজ্যের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অভিযান।” তিনি জানান, এ অভিযানে ৬০ জন সন্দেহভাজন গ্যাং সদস্য ও চারজন পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত অভিযান চলেছে।

রাজ্য গভর্নর আরো উল্লেখ করেন, “অভিযানের সময় ৮১ জনকে আটক করা হয়েছে এবং অস্ত্র জব্দ করা হয়েছে। অভিযানের লক্ষ্য ছিল রিও ডি জেনিরো এবং ব্রাজিলকে অপরাধমুক্ত করা। আমরা পিছু হটবো না, কারণ জননিরাপত্তা আমাদের মূল অগ্রাধিকার।”

এই অভিযানে রেড কমান্ডো নামের মাদকচক্রকে লক্ষ্য করা হয়। রিও ডি জেনিরোর অনেক এলাকায় এই চক্রের প্রভাব রয়েছে। 

মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলি এই বড় আকারের পুলিশ অভিযান এবং মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষুব্ধ হয়েছেন এবং নিহতদের দাফনের সমস্যায় পড়েছেন।

গত বছর রিওতে পুলিশের অভিযানে প্রায় ৭০০ জন নিহত হয়েছিলেন। রিও রাজ্য আইনসভা মানবাধিকার কমিশনের প্রধান দানি মন্টেইরো বলেন, “রিওর ফাভেলাগুলো আবারও যুদ্ধের মঞ্চে পরিণত হয়েছে।”

আগামী সপ্তাহে রিও ডি জেনিরোতে আন্তর্জাতিক সম্মেলন এবং নভেম্বর থেকে আমাজনের বেলেমে জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলন-৩০ অনুষ্ঠিত হবে। এই সম্মেলনে বিশ্বনেতারা অংশ নেবেন। পুলিশি অভিযানকে এই বৈশ্বিক ইভেন্টের প্রেক্ষাপটেও দেখা হচ্ছে।

ঢাকা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

৯ মাস পর খুলছে সেন্টমার্টিন, মানতে হবে ১২ নির্দেশনা

দীর্ঘ নয় মাস পর আগামী সপ্তাহে খুলছে দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন। প্রতিদিন দুই হাজার পর্যটক সেখানে যেতে পারবেন। তবে, এবারো সেখানে রাত্রিযাপনে থাকছে নিষেধাজ্ঞা। শুধু তাই নয়, পর্যটকদের মানতে হবে ১২ নির্দেশনা। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, দ্বীপে রাত্রিযাপন বন্ধ থাকলে পর্যটক কমবে, ফলে হোটেল-রেস্তোরাঁ, নৌযান ও দোকানপাটের আয় মারাত্মকভাবে কমে যাবে।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় গত ২২ অক্টোবর সেন্টমার্টিনে পর্যটন নিয়ন্ত্রণে ১২ দফা নির্দেশনা জারি করে। এতে নভেম্বরে শুধু দিনের বেলায় ভ্রমণের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে রাতযাপনের সুযোগ থাকবে। ফেব্রুয়ারিতে দ্বীপটি আবারো বন্ধ থাকবে।

নতুন বিধিনিষেধ অনুযায়ী, প্রতিদিন সর্বোচ্চ দুই হাজার পর্যটক যেতে পারবেন। টিকিট নিতে হবে ট্যুরিজম বোর্ডের অনলাইন পোর্টাল থেকে, যেখানে কিউআর কোড ও ট্রাভেল পাস বাধ্যতামূলক। কেয়াবনে প্রবেশ, সৈকতে বারবিকিউ, আলো-শব্দ সৃষ্টি ও মোটরযান চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

দ্বীপের ব্যবসায়ীরা বলছেন, এত সীমাবদ্ধতায় পর্যটন নির্ভর জীবিকা টিকিয়ে রাখা কঠিন হবে। 

সেন্টমার্টিন বাজার সমিতির সভাপতি আব্দুর রহমান বলেন, “সেন্টমার্টিন কক্সবাজার শহর থেকে দূরের পথ। আসতে এবং যেতে দিনের পুরো সময়টা চলে যায়। রাত্রিযাপন ছাড়া পর্যটক আসবে না এখানে। বর্তমানে আমরা ক্ষতির মুখে জীবন অতিবাহিত করছি।”

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নুর আহমদ বলেন, “দ্বীপের অর্থনীতি পঙ্গু হয়ে গেছে। হোটেল, রেস্টুরেন্ট, ট্রলার, দোকান সবখানেই নেমে এসেছে অচলাবস্থা। স্থানীয় মানুষ পর্যটন নির্ভর জীবিকা চালায়। এখন তারা অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। আমরা দ্বীপের পরিবেশ রক্ষার পক্ষে, তবে জীবিকার দিকটাও যেন সরকার বিবেচনায় নেয় এটাই আমাদের মিনতি।”

কক্সবাজার থেকে জাহাজ যাবে সেন্টমার্টিন:
প্রতি বছর পর্যটন মৌসুমে কক্সবাজার ও সেন্টমার্টিন দ্বীপের মধ্যে আট থেকে দশটি জাহাজ চলাচল করে। এবার কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়ায় অবস্থিত অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) ঘাট থেকে সরাসরি সেন্টমার্টিনগামী পর্যটকবাহী জাহাজ চলবে। আইনগত সীমাবদ্ধতার কারণে উখিয়ার ইনানী জেটিঘাট থেকে সেন্টমার্টিনগামী পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের অনুমতি মেলেনি। 

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় থেকে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, বিআইডব্লিউটিএ ও নৌপরিবহন অধিদপ্তরকে নীতিগত সম্মতি দিয়ে পাঠানো এক চিঠিতে বিষয়টি জানানো হয়।

পর্যটকবাহী জাহাজগুলোর মধ্যে এমভি কর্ণফুলি এক্সপ্রেস জাহাজ দুইটি বেশিরভাগ সময় কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন রুটে পরিচালনা করে।

জাহাজের পরিচালক হোসাইনুল ইসলাম বাহাদুর বলেন, “নভেম্বরের কার্যক্রম এখনো চূড়ান্ত হয়নি। যদি কোনো জাহাজ সকাল ৭টায় কক্সবাজার থেকে ছেড়ে যায়, তা দুপুর ২টার দিকে সেন্টমার্টিনে পৌঁছায়। আমাদের জাহাজের সময় লাগে প্রায় ৭ ঘণ্টা, অন্যগুলোর আরো বেশি সময় লাগে। ফলে একদিনে গিয়ে ফিরে আসা সম্ভব নয়। রাত্রিযাপনের ব্যবস্থা না থাকায় পর্যটকরাও আগ্রহ দেখান না।”

তিনি আরো বলেন, “পর্যটন বোর্ডের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে টিকিট বিক্রির ব্যবস্থা এখনো চালু হয়নি, যার ফলে কিছুটা অনিশ্চয়তা রয়েছে। ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে মূল মৌসুম শুরু হলে রাত্রিযাপনের সুযোগ তৈরি হবে এবং তখন নিয়মিত ভ্রমণ কার্যক্রম শুরু হতে‌ পারে।”

টেকনাফের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, “দ্বীপে মোটরযান নিষিদ্ধ ও পর্যটক নিয়ন্ত্রণে কড়া নজরদারি থাকবে। দ্বীপে পর্যটক পরিবহনের জন্য নৌযানগুলোকে অনুমতি নিতে হবে। স্থানীয়দের জন্য অনুমতির দরকার নেই। পরিবেশ রক্ষায় এ পদক্ষেপ জরুরি।”

ঢাকা/তারেকুর/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ