আকাশচুম্বী প্রত্যাশা ছিল, কিন্তু এখন মবের ভীতি: কামাল আহমেদ
Published: 29th, October 2025 GMT
গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ বলেছেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানের পর আকাশচুম্বী প্রত্যাশা ছিল। আশা ছিল, সাংবাদিকেরা কলম খুলে লিখবেন। কিন্তু এখন মবের ভীতি। গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন যে সুপারিশগুলো দিয়েছিল, সেগুলো বাস্তবায়নের কোনো আলামত দেখতে পাচ্ছি না।’
‘বাংলাদেশের গণমাধ্যমে সংস্কার: সুপারিশ, বাস্তবতা ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে কামাল আহমেদ এসব কথা বলেন। আজ বুধবার প্রথম আলো কার্যালয়ে এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়।
কামাল আহমেদ বলেন, ‘গণ–আন্দোলনের মাধ্যমে ১৫ বছরের স্বৈরশাসনের অবসান ঘটার পরে দেশ ও জাতির মধ্যে একটা বড় ধরনের প্রত্যাশা ছিল যে সত্যিই একটা বড় ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন হবে, গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরে পাব। গণমাধ্যমের ক্ষেত্রেও সে রকমই প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল। দেশে একটা অত্যন্ত ভাইব্রেন্ট মিডিয়া আমরা তৈরি করতে পারব, যা গণতন্ত্রকে সাহায্য ও সমৃদ্ধ করে।’
কমিশনের সুপারিশের বিষয়ে কামাল আহমেদ বলেন, ‘সংবাদমাধ্যম তখনই স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে, যখন তারা অন্যের ওপর নির্ভরশীল না হবে। যদি আর্থিক স্বাধীনতা না থাকে, তাহলে অন্যের ওপর নির্ভরশীল হতে হয়। সেই নির্ভরশীলতার কারণেই যতটুকু আমি নির্ভরশীল হব, ততটুকুই আমার স্বাধীনতা ছাড় দেব। কম্প্রমাইজ করব খর্বভাবে।’
সুপারিশ প্রতিবেদন গত মে মাসেই জমা দেওয়া হয়েছে জানিয়ে কামাল আহমেদ বলেন, ‘প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পরে আমাদের বলা হলো যে আশু করণীয় ঠিক করে দেন, যেগুলো খুব দ্রুত করা যায়। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই করে দিলাম সেটা। তারপর তো ডেফিনেটলি (নিশ্চিতভাবে) আমাদের প্রত্যাশা ছিল যে অন্তত আশু করণীয়গুলোর ক্ষেত্রে সরকার উদ্যোগী হবে এবং কিছু করবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলো যে এখন পর্যন্ত কোনো কিছু দৃশ্যমান হয়নি। আর দৃশ্যমান না হওয়াটা কমিশনের সদস্যদের জন্য খুব বিড়ম্বনার বিষয় হয়ে গেছে।’
সাংবাদিকতার সুরক্ষা আইনের বিষয়ে কামাল আহমেদ বলেন, ‘কমিশন থেকে সাংবাদিকতার সুরক্ষা আইন করার জন্য বলেছিলাম। যাতে আইনের কাজটা খুব দ্রুতগতিতে সরকার করতে পারে, সে জন্য একটা খসড়াও তৈরি করে দিয়েছিলাম। অধ্যাদেশটা সরকার যদি শুধু তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে দিত জনমত নেওয়ার জন্য, তাহলে এত দিনে সেই মে মাস থেকে আজকে অক্টোবর শেষ.
কিন্তু সেটা মন্ত্রণালয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখা হয় জানিয়ে কামাল আহমেদ বলেন, তথ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা তাঁদের নিজেদের মধ্যে ওটার মূল্যায়ন করার একটা উদ্যোগ নিয়েছেন, মূল্যায়ন করেছেন। মূল্যায়ন করে তাঁরা যে পরিবর্তন প্রস্তাব করেছেন, তাতে আর ওই আইন না করাই ভালো। কারণ, ওই আইন করার যে উদ্দেশ্য ছিল, সেই উদ্দেশ্য পুরোপুরি খর্ব করে ওনারা এই নাম অপব্যবহার করে একটা আইন করতে চাইছেন।
কামাল আহমেদ আরও বলেন, ‘গতকালই ঢাকার জেলা আদালতে তিনজন সাংবাদিক লাঞ্ছিত হয়েছেন। এই আইন যদি হতো, তাহলে এই সাংবাদিকদের রক্ষা করার দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নিতে হতো। তাঁদের হয়তো এই হয়রানি, এই দুর্ভাগ্য হতো না। এখন আসলে যেটা হওয়ার কথা, সেটা হচ্ছে না, তার উল্টোটা হচ্ছে। আমরা সাংবাদিকেরা মনখুলে, কলমখুলে লিখব—এমন আশা ছিল, প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু এখন কী হচ্ছে, একটা মবের ভীতি। এই মবের ভীতি কেন থাকবে? কারণটা হচ্ছে, সরকারের দিক থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়নি যেমন, ঠিক তেমনি এটা ঠেকানোরও চেষ্টা নেই।’
সংস্কারের সুপারিশের বিষয়ে কামাল আহমেদ বলেন, ‘যতগুলো বিষয়ের পরামর্শ দিলাম, সেগুলোর কোনোটার ক্ষেত্রেই কোনো অগ্রাধিকার আমরা দিচ্ছি না। এর মধ্যে অনেকবার আমরা সরকারের তরফ থেকে বক্তব্য শুনেছি। বিশেষ করে তথ্য উপদেষ্টা একাধিকবার বলেছেন যে তাঁরা এই সুপারিশমালা বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেবেন। তিনি স্পষ্ট করে এই সাংবাদিকতা সুরক্ষা আইন সম্পর্কেই বলেছেন যে আর কিছু না হোক এটা তাঁরা করবেন।’
‘বাংলাদেশের গণমাধ্যমে সংস্কার: সুপারিশ, বাস্তবতা ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে অংশগ্রহণকারীরাউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন র ভরশ ল মব র ভ ত উদ য গ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিকের রিমান্ড চায় পুলিশ
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদিকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক মো. আবদুল হান্নানের সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেছে পুলিশ।
আজ রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীর পল্টন থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শামীম হাসান এ আবেদন করেন। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দিদারুল আলমের আদালতে আবেদনের শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) শামসুদ্দোহা সুমন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আবদুল হান্নানকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর পল্টন থানার এসআই শামীম হাসান আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের চারটি কারণে দেখিয়ে সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন।
আবেদনে বলা হয়েছে, মোটরসাইকেলে হেলমেট পরা অজ্ঞাতনামা দুজন সন্ত্রাসী ওসমান হাদিকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করে। গুলিতে ওসমান হাদি গুরুতর জখম হন। র্যাব-২ ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ যাচাই করে মোটরসাইকেলের মালিক মো. আবদুল হান্নানের বিষয়ে জানতে পারে। ওই ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মোটরসাইকেলের বিষয়ে কোনো সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেননি আসামি। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আসামিকে ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আবেদনে আরও বলা হয়, আসামিদের ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র ও মোটরসাইকেল উদ্ধার, জড়িত অজ্ঞাতনামা পলাতক আসামিদের নাম–ঠিকানা সংগ্রহসহ অবস্থান জানা, মূল রহস্য উদ্ঘাটন ও তথ্য-অর্থের সম্পর্ক সংগ্রহ এবং কোন স্থান থেকে অবৈধ অস্ত্র সংগ্রহ করা হয়েছে, তার উৎস জানার জন্য পুলিশের নিজ হেফাজতে রেখে আবদুল হান্নানকে সাত দিন জিজ্ঞাসাবাদ করা একান্ত প্রয়োজন।
এর আগে ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটির নম্বর প্লেটের (রেজিস্ট্রেশন নম্বর) সূত্র ধরে গতকাল শনিবার আবদুল হান্নানকে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে আটক করে র্যাব-২। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি মোটরসাইকেলটি নিজের বলে স্বীকার করেছেন। পরে তাঁকে পল্টন মডেল থানায় সোপর্দ করা হয়।
গত শুক্রবার বেলা ২টা ২৪ মিনিটে রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট এলাকায় ওসমান হাদিকে গুলি করা হয়। পেছন থেকে অনুসরণ করে আসা একটি মোটরসাইকেল থেকে এক ব্যক্তি ব্যাটারিচালিত রিকশায় থাকা ওসমান হাদির মাথায় গুলি করেন। তিনি বর্তমানে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর অবস্থা সংকটাপন্ন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।
আরও পড়ুনওসমান হাদির ওপর হামলায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের নম্বর ধরে মালিককে আটক৫ ঘণ্টা আগে