মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও দাবি করেছেন, তিনি গত ১০ মের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতিতে মধ্যস্থতা করেছেন। অবশ্য নয়াদিল্লি বারবার এই দাবি অস্বীকার করে বলেছে, যুদ্ধবিরতির অনুরোধ ইসলামাবাদই করেছিল।

এশিয়া সফরের শেষ ধাপে আজ বুধবার দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই মন্তব্য করেন। তিনি এও ইঙ্গিত দেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত অবশেষে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করতে চলেছে।

ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার দাবি করার সময় ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির প্রশংসা করেন এবং তাঁকে ‘দেখতে সবচেয়ে ভালো মানুষ’ বলে অভিহিত করেছেন।

পাঁচ মাস ধরে ট্রাম্প যেভাবে দাবি করে আসছিলেন, আজও তিনি সেভাবেই বলেছেন, তিনি দুই দেশের মধ্যে কেবল যুদ্ধবিরতিই ঘটাননি, বরং উভয় পক্ষের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি সই করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সম্ভাব্য ‘পারমাণবিক যুদ্ধ’ থামিয়ে দিয়েছেন।

ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘এরা দুটি পারমাণবিক রাষ্ট্র.

..এবং তারা সত্যিই একে অপরের বিরুদ্ধে লড়ছিল। তাই আমি প্রধানমন্ত্রী মোদিকে ফোন করে বলি, “আমরা আপনার সঙ্গে কোনো বাণিজ্য চুক্তি করতে পারব না...আমরা পারব না।” আপনারা পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ শুরু করছেন।’

ট্রাম্প বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী মোদি দেখতে সবচেয়ে ভালো মানুষ, তবে তিনি “কঠিন”। কিন্তু আক্ষরিক অর্থে দুই দিন পর তারা (ভারত ও পাকিস্তান) আমাকে ফোন করে বলে, “আমরা বুঝতে পেরেছি” এবং এরপর তারা যুদ্ধ থামিয়ে দেয়।’

ট্রাম্প বিভিন্ন যুদ্ধ বন্ধে নিজেরে ভূমিকার স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য অসংখ্যবার চেষ্টা করেছেন। একই সঙ্গে ভারত-পাকিস্তানসহ আরও সাতটি সামরিক সংঘাত থামানোর ক্ষেত্রে কৃতিত্বের জন্য নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়ার যৌক্তিকতা তুলে ধরেছিলেন। অবশ্য চলতি বছর শান্তি পুরস্কারটি পান ভেনেজুয়েলার রাজনীতিবিদ মারিয়া কোরিনা মাচাদো।

শুল্ক ও রাশিয়ান তেল নিয়ে অগ্রগতি

ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করার বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টের মন্তব্য থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, দুই দেশের মধ্যে চুক্তি কেবল সময়ের অপেক্ষা। রাশিয়ার ইউক্রেন যুদ্ধ, ভারতের রাশিয়া থেকে তেল কেনা এবং শুল্ক নিয়ে মতবিরোধের কারণে এই চুক্তির আলোচনা কয়েক মাস ধরে ঝুলে ছিল।

গত সপ্তাহের একটি খবরের পর ভারতের সঙ্গে চুক্তি নিয়ে ট্রাম্পের এই ইতিবাচক মন্তব্য এসেছে। ওই খবরে বলা হয়েছিল, চুক্তির তিনটি বড় বাধার মধ্যে দুটি ক্ষেত্রে অগ্রগতি হয়েছে। সেই বাধাগুলোর মধ্যে রয়েছে রাশিয়া থেকে ক্রমাগত ছাড়ে ভারতের তেল আমদানি এবং ভারতীয় পণ্যের আমদানির ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ৫০ শতাংশ শুল্ক। এই শুল্কের মধ্যে রুশ তেল কেনার জন্য ২৫ শতাংশ ‘জরিমানা’ শুল্কও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

এর আগে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা থমকে গিয়েছিল। কারণ, ভারত তার মূল্য সংবেদনশীল দুগ্ধ এবং কৃষিপণ্যের বাজারে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রবেশাধিকার দিতে রাজি হয়নি। এটি ভারতের যেকোনো সরকারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভোট ব্যাংক।

তবে গত সপ্তাহে খবর আসে, রাশিয়া থেকে তেল কেনা কমানোর ব্যাপারে ভারত সম্মত হয়েছে। এরপরই যুক্তরাষ্ট্র ভারতের শুল্ক কমাতে রাজি হয়েছে। ট্রাম্প ও মোদির মধ্যে ফোনে কথা হওয়ার পরই এই সমঝোতা হয়। অবশ্য কোনো পক্ষই শুল্ক কমানো ও তেল কেনার এই সমঝোতার বিষয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য প্রকাশ বা নিশ্চিত করেনি।

এই সমঝোতার ফলে অ-জিনগতভাবে পরিবর্তিত যুক্তরাষ্ট্রের ভুট্টা ও সয়াবিনের আমদানি বাড়তে পারে, যা ওয়াশিংটন ও নয়াদিল্লির মধ্যে এই বিশেষ বাণিজ্য আলোচনায় অচলাবস্থার কেন্দ্রে ছিল। চুক্তিতে পর্যায়ক্রমে শুল্ক ও বাজার প্রবেশাধিকারের বিষয়টি পর্যালোচনার প্রক্রিয়াও অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।

ভারত ইথানল উৎপাদন বাড়াতে ভুট্টার ওপর ক্রমেই নির্ভরশীল হচ্ছে। কিন্তু এর নিয়ম অনুযায়ী আমদানি করা শস্য থেকে তৈরি ইথানল নিষিদ্ধ এবং জিনগতভাবে পরিবর্তিত খাদ্যশস্যও নিষিদ্ধ। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের বেশির ভাগ ভুট্টাই জিনগতভাবে পরিবর্তিত। তবে কিছু কিছু কৃষক অ-জিনগতভাবে পরিবর্তিত জাতও উৎপাদন করেন।

যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে ভুট্টা আমদানির অনুমতি দেওয়ার চাপ দিচ্ছে। তারা যুক্তি দিচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের ভুট্টা থেকে তৈরি ইথানল কেবল পেট্রলের সঙ্গে মেশানোর জন্য ব্যবহার করা হবে, কৃষিবাজারে যাবে না।

অন্যদিকে, সয়াবিন নিয়ে চাপ দেওয়ার কারণ হলো চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কযুদ্ধের ফল। ফলে মার্কিন সয়াবিন চীনাদের জন্য খুব ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছে। তাই যুক্তরাষ্ট্র তাদের প্রোটিনসমৃদ্ধ পশুখাদ্য থাকা উদ্বৃত্ত সয়াবিন বিশ্বের সবচেয়ে বেশি গবাদিপশু থাকা ভারতে বিক্রি করতে চাইছে।

এই মাসের শুরুতে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যেকোনো চুক্তিকে ভারতের ‘রেড ফ্ল্যাগ’ (গুরুত্বপূর্ণ আপত্তি) অবশ্যই সম্মান করতে হবে। এই রেড ফ্ল্যাগ বলতে তিনি রাশিয়ার তেল কেনার জন্য ২৫ শতাংশ জরিমানার শুল্ককে বুঝিয়েছিলেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র র জন য কর ছ ন আমদ ন অবশ য

এছাড়াও পড়ুন:

আবারও ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতির কৃতিত্ব দাবি করলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও দাবি করেছেন, তিনি গত ১০ মের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতিতে মধ্যস্থতা করেছেন। অবশ্য নয়াদিল্লি বারবার এই দাবি অস্বীকার করে বলেছে, যুদ্ধবিরতির অনুরোধ ইসলামাবাদই করেছিল।

এশিয়া সফরের শেষ ধাপে আজ বুধবার দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই মন্তব্য করেন। তিনি এও ইঙ্গিত দেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত অবশেষে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করতে চলেছে।

ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার দাবি করার সময় ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির প্রশংসা করেন এবং তাঁকে ‘দেখতে সবচেয়ে ভালো মানুষ’ বলে অভিহিত করেছেন।

পাঁচ মাস ধরে ট্রাম্প যেভাবে দাবি করে আসছিলেন, আজও তিনি সেভাবেই বলেছেন, তিনি দুই দেশের মধ্যে কেবল যুদ্ধবিরতিই ঘটাননি, বরং উভয় পক্ষের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি সই করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সম্ভাব্য ‘পারমাণবিক যুদ্ধ’ থামিয়ে দিয়েছেন।

ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘এরা দুটি পারমাণবিক রাষ্ট্র...এবং তারা সত্যিই একে অপরের বিরুদ্ধে লড়ছিল। তাই আমি প্রধানমন্ত্রী মোদিকে ফোন করে বলি, “আমরা আপনার সঙ্গে কোনো বাণিজ্য চুক্তি করতে পারব না...আমরা পারব না।” আপনারা পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ শুরু করছেন।’

ট্রাম্প বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী মোদি দেখতে সবচেয়ে ভালো মানুষ, তবে তিনি “কঠিন”। কিন্তু আক্ষরিক অর্থে দুই দিন পর তারা (ভারত ও পাকিস্তান) আমাকে ফোন করে বলে, “আমরা বুঝতে পেরেছি” এবং এরপর তারা যুদ্ধ থামিয়ে দেয়।’

ট্রাম্প বিভিন্ন যুদ্ধ বন্ধে নিজেরে ভূমিকার স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য অসংখ্যবার চেষ্টা করেছেন। একই সঙ্গে ভারত-পাকিস্তানসহ আরও সাতটি সামরিক সংঘাত থামানোর ক্ষেত্রে কৃতিত্বের জন্য নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়ার যৌক্তিকতা তুলে ধরেছিলেন। অবশ্য চলতি বছর শান্তি পুরস্কারটি পান ভেনেজুয়েলার রাজনীতিবিদ মারিয়া কোরিনা মাচাদো।

শুল্ক ও রাশিয়ান তেল নিয়ে অগ্রগতি

ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করার বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টের মন্তব্য থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, দুই দেশের মধ্যে চুক্তি কেবল সময়ের অপেক্ষা। রাশিয়ার ইউক্রেন যুদ্ধ, ভারতের রাশিয়া থেকে তেল কেনা এবং শুল্ক নিয়ে মতবিরোধের কারণে এই চুক্তির আলোচনা কয়েক মাস ধরে ঝুলে ছিল।

গত সপ্তাহের একটি খবরের পর ভারতের সঙ্গে চুক্তি নিয়ে ট্রাম্পের এই ইতিবাচক মন্তব্য এসেছে। ওই খবরে বলা হয়েছিল, চুক্তির তিনটি বড় বাধার মধ্যে দুটি ক্ষেত্রে অগ্রগতি হয়েছে। সেই বাধাগুলোর মধ্যে রয়েছে রাশিয়া থেকে ক্রমাগত ছাড়ে ভারতের তেল আমদানি এবং ভারতীয় পণ্যের আমদানির ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ৫০ শতাংশ শুল্ক। এই শুল্কের মধ্যে রুশ তেল কেনার জন্য ২৫ শতাংশ ‘জরিমানা’ শুল্কও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

এর আগে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা থমকে গিয়েছিল। কারণ, ভারত তার মূল্য সংবেদনশীল দুগ্ধ এবং কৃষিপণ্যের বাজারে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রবেশাধিকার দিতে রাজি হয়নি। এটি ভারতের যেকোনো সরকারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভোট ব্যাংক।

তবে গত সপ্তাহে খবর আসে, রাশিয়া থেকে তেল কেনা কমানোর ব্যাপারে ভারত সম্মত হয়েছে। এরপরই যুক্তরাষ্ট্র ভারতের শুল্ক কমাতে রাজি হয়েছে। ট্রাম্প ও মোদির মধ্যে ফোনে কথা হওয়ার পরই এই সমঝোতা হয়। অবশ্য কোনো পক্ষই শুল্ক কমানো ও তেল কেনার এই সমঝোতার বিষয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য প্রকাশ বা নিশ্চিত করেনি।

এই সমঝোতার ফলে অ-জিনগতভাবে পরিবর্তিত যুক্তরাষ্ট্রের ভুট্টা ও সয়াবিনের আমদানি বাড়তে পারে, যা ওয়াশিংটন ও নয়াদিল্লির মধ্যে এই বিশেষ বাণিজ্য আলোচনায় অচলাবস্থার কেন্দ্রে ছিল। চুক্তিতে পর্যায়ক্রমে শুল্ক ও বাজার প্রবেশাধিকারের বিষয়টি পর্যালোচনার প্রক্রিয়াও অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।

ভারত ইথানল উৎপাদন বাড়াতে ভুট্টার ওপর ক্রমেই নির্ভরশীল হচ্ছে। কিন্তু এর নিয়ম অনুযায়ী আমদানি করা শস্য থেকে তৈরি ইথানল নিষিদ্ধ এবং জিনগতভাবে পরিবর্তিত খাদ্যশস্যও নিষিদ্ধ। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের বেশির ভাগ ভুট্টাই জিনগতভাবে পরিবর্তিত। তবে কিছু কিছু কৃষক অ-জিনগতভাবে পরিবর্তিত জাতও উৎপাদন করেন।

যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে ভুট্টা আমদানির অনুমতি দেওয়ার চাপ দিচ্ছে। তারা যুক্তি দিচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের ভুট্টা থেকে তৈরি ইথানল কেবল পেট্রলের সঙ্গে মেশানোর জন্য ব্যবহার করা হবে, কৃষিবাজারে যাবে না।

অন্যদিকে, সয়াবিন নিয়ে চাপ দেওয়ার কারণ হলো চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কযুদ্ধের ফল। ফলে মার্কিন সয়াবিন চীনাদের জন্য খুব ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছে। তাই যুক্তরাষ্ট্র তাদের প্রোটিনসমৃদ্ধ পশুখাদ্য থাকা উদ্বৃত্ত সয়াবিন বিশ্বের সবচেয়ে বেশি গবাদিপশু থাকা ভারতে বিক্রি করতে চাইছে।

এই মাসের শুরুতে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যেকোনো চুক্তিকে ভারতের ‘রেড ফ্ল্যাগ’ (গুরুত্বপূর্ণ আপত্তি) অবশ্যই সম্মান করতে হবে। এই রেড ফ্ল্যাগ বলতে তিনি রাশিয়ার তেল কেনার জন্য ২৫ শতাংশ জরিমানার শুল্ককে বুঝিয়েছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ