অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আগামী জাতীয় নির্বাচন বানচালে ভেতরের বা বাইরের যে কোনো ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন।

বুধবার (২৯ অক্টোবর) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি সংক্রান্ত এক উচ্চ পর্যায়ের সভায় তিনি এই কথা বলেন।

আরো পড়ুন:

১৫ নভেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি শেষ করার নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

সংসদ ২৭০ দিনে ব্যর্থ হলে প্রস্তাবগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে যুক্ত হবে

বৈঠক শেষে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

প্রেস সচিব জানান, বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ‘আগামী নির্বাচন সুন্দর ও উৎসবমুখর করতে হলে মানুষের কাছে পৌঁছতে হবে, নির্বাচনী নীতিমালা, ভোটকেন্দ্রের নিয়ম, কীভাবে ভোট প্রদান করতে হবে, কোথাও বিশৃঙ্খলা হলে কী করতে হবে এসব বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে হবে।’

তিনি বলেন, “নির্বাচন বানচালের জন্য ভেতর থেকে, বাইরে থেকে অনেক শক্তি কাজ করবে। ছোটখাট না, বড় শক্তি নিয়ে বানচালের চেষ্টা করবে। হঠাৎ করে আক্রমণ চলে আসতে পারে। এই নির্বাচন চ্যালেঞ্জিং হবে। যত ঝড়ঝঞ্ঝাই আসুক আমাদের সেটা অতিক্রম করতে হবে।”

প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে মূলত চারটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়—নির্বাচনকালীন পদায়ন, ট্রেনিং, নিরাপত্তা ইস্যু এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় ডিসইনফরমেশন মনিটরিং।

প্রেস সচিব জানান, নির্বাচনী দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের বদলি ও পদায়নের বিষয়ে এলাকার গুরুত্ব বিবেচনায় কর্মকর্তাদের দক্ষতা বিবেচনা করে বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় বদলি ও পদায়নের বিষয়ে ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্র ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কাজ শুরু করেছে। এর পাশাপাশি নির্বাচন কমিশন নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করবে এমন কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ প্রদানও শুরু করেছে।

কর্মকর্তাদের নিজ জেলা ও নিকটবর্তী জেলা এবং আত্মীয় পরিজনের কেউ প্রার্থী হলে সেসব নির্বাচনী এলাকায় দায়িত্ব পালন থেকে বিরত রাখা হবে। আগের তিনটি নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করেছেন এমন কর্মকর্তাদের বিরত রাখা হবে। যত দ্রুত সম্ভব পোস্টিং দিয়ে দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে যাতে করে তারা পর্যাপ্ত সময় পায় প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য এবং প্রয়োজনীয় ট্রেনিং শুরু করা যায়।

শফিকুল আলম জানান, আজকের বৈঠকে নির্বাচন নিয়ে সরকার, নির্বাচন কমিশন ও বিভিন্ন বাহিনীর মধ্যে সমন্বয়ের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। মিটিংয়ে এআই, ডিসইনফরমেশন, মিসইনফরমেশন নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে আলোচনা হয়েছে।

তিনি বলেন, “বৈঠকের একটা বড় কনসার্ন ছিল, সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনো অপপ্রচার ছড়িয়ে পড়লে সেটা কীভাবে দ্রুত ডিবাঙ্ক করা যাবে তা নিয়ে। অনেক সময় দেখা যায়, কোনো অপতথ্যকে আইডেন্টিফাই করে সেটা যে ‘অপতথ্য’ এটা প্রচার করতে গিয়ে অনেক সময় লেগে যায়। সেই সময়ের মধ্যে অনেক ক্ষতিও হয়ে যায়। এজন্য একটি সেন্ট্রাল ডিসইনফরমেশন মনিটরিং সেল ও একটি সেন্ট্রাল কমিউকেশন সেল তৈরির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।”

শুধু শহর অঞ্চল বা জেলা পর্যায়ে না, গ্রাম পর্যায়েও মানুষের কাছে যেন ফ্যাক্টচেকিং তথ্যগুলো পৌঁছাতে পারে সে বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা গুরুত্ব দিয়েছেন।

অধ্যাপক ইউনূসের বরাত দিয়ে প্রেস সচিব জানান, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ‘সোশ্যাল মিডিয়ায় অপপ্রচার আসবে। নির্বাচনকে বানচাল করার জন্য দেশের ভেতর থেকে বাইরে থেকে খুবই পরিকল্পিতভাবে নানারকম অপপ্রচার চালানো হবে। এআই দিয়ে ছবি-ভিডিও তৈরি করে ছেড়ে দেওয়া হবে। এটাকে সামাল দিতেই হবে। একটা অপপ্রচারের সূচনা হওয়া মাত্রই সেটা ঠেকাতে হবে যেন ছড়াতে না পারে।’

নির্বাচন-কেন্দ্রিক প্রচার-প্রচারণার জন্য তথ্য মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য মন্ত্রণালয় কাজ শুরু করেছে বলে জানান তিনি।

বৈঠকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.

) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান, সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, প্রতিরক্ষা ও জাতীয় সংহতি বিষয়ক প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আব্দুল হাফিজ, আইসিটি বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব, মুখ্য সচিব মো. সিরাজ উদ্দিন মিয়া, নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার আহমেদ, স্বরাষ্ট্র সচিব নাসিমুল গণি, মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশিদ, পিএসও লে. জে. কামরুল হাসান, পুলিশের মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম, ডিজি র‌্যাব এ কে এম শহিদুর রহমান, ডিজি কোস্টগার্ড রিয়ার এডমিরাল জিয়াউল হক, ডিজি আনসার মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ এবং গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই, ডিজিএফআই ও এসবির প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। খবর বাসসের।

ঢাকা/সাইফ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ড ম হ ম মদ ইউন স কর মকর ত দ র প রস ত ত মন ত র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

নারায়ণগঞ্জ আদালত প্রাঙ্গণে বাদীর ওপর হামলার ঘটনায় বিএনপি নেতা সাখাওয়াতের বিরুদ্ধে মামলা

নারায়ণগঞ্জে আদালত প্রাঙ্গণে মামলার বাদীর পরিবারকে মারধরের ঘটনায় মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ও আইনজীবী সাখাওয়াত হোসেন খানের বিরুদ্ধে অবশেষে মামলা নিয়েছে পুলিশ। আজ বুধবার দুপুরে ফতুল্লা মডেল থানার পুলিশ মামলাটি নেয়। বাদী রাজিয়া সুলতানা মামলায় সাখাওয়াত হোসেন ছাড়াও ৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।

মামলার অপর আসামিরা হলেন ইসমাঈল হোসেন (৪৬), হিরণ (৩৮), শাহ্ আলম (৪৮), টিটু (৫০), রাসেল ব্যাপারী (৩৫), খোরশেদ আলম, আল আমিন, বিল্লাল হোসেন।

এর আগে ফতুল্লা মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দিলেও বিএনপি নেতা সাখাওয়াত হোসেনের নাম থাকায় মামলা নিতে পুলিশ গড়িমসি করে বলে অভিযোগ করেছিলেন রাজিয়া সুলতানা ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা। এ ঘটনায় রাজিয়া সুলতানা তাঁর পরিবার নিয়ে থানার সামনে অবস্থান নেন। সাখাওয়াত হোসেন নারায়ণগঞ্জ-৫ (শহর-বন্দর) আসনের বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী। তিনি নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি।

আরও পড়ুনআদালত প্রাঙ্গণে সন্তানের সামনে বাবা-মাকে মারধর, মামলা না নেওয়ায় থানায় অবস্থান২৮ অক্টোবর ২০২৫

মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ফতুল্লা মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আনোয়ার হোসেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা, মারধর, চুরি ও শ্লীলতাহানির অভিযোগে মামলা করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় রাত পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।

মামলার এজাহারে বাদী রাজিয়া সুলতানা উল্লেখ করেন, তাঁর স্বামী ইরফান ভুঁইয়া দীর্ঘদিন ধরে ইসদাইর এলাকার ইসমাইলের কাছে ২৫ লাখ টাকা পাওনা ছিলেন। এক বছর ধরে টাকা ফেরত না পেয়ে টালবাহানা করতে থাকেন। এর জের ধরে সাখাওয়াত হোসেনের হুকুমে আসামিরা তাঁদের হুমকি দিয়ে আসছিলেন। পাওনা টাকার জন্য তাঁরা আদালতে মামলা করেন। ওই মামলার জেরে ২৬ অক্টোবর দুপুর ১২টার দিকে তিনি (বাদী) ও তাঁর স্বামী ইরফান মিয়া আদালতপাড়া এলাকায় উপস্থিত হলে প্রধান অভিযুক্ত সাখাওয়াত হোসেন খানের নির্দেশে ইসমাইলসহ আরও কয়েকজন তাঁদের ওপর হামলা চালান। হামলাকারীরা তাঁকে ও তাঁর স্বামীকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন, পরে এলোপাতাড়ি কিলঘুষি ও লাথি মেরে রক্তাক্ত জখম করেন।

রাজিয়া সুলতানার অভিযোগ, হামলার সময় তাঁর জামাকাপড় ছিঁড়ে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করা হয়। হামলাকারীরা তাঁর স্বামীর কাছ থেকে নগদ ৬৫ হাজার ৫২৭ টাকা, ২টি মুঠোফোন এবং তাঁর গলা থেকে সোনার চেইন ছিনিয়ে নেন। এ সময় তাঁদের চিৎকার শুনে ছেলে জিদান (১৭) ও আবদুল্লাহ (৫) এগিয়ে এলে তাঁদেরও পিটিয়ে আহত করা হয়।

এর আগে সোমবার দুপুরে বাদী, তাঁর সন্তানসহ পরিবারের চার সদস্যকে সাখাওয়াত হোসেনের অনুসারী আইনজীবী ও সহকারীর মাররের ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

অভিযোগ অস্বীকার করে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘ঘটনার সময় আমি সেখানে ছিলাম না। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে আমি কোথাও নেই। আমি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী। একটি পক্ষ ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে।’

এ বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, মামলা হয়েছে। মামলা করার পর যা যা প্রক্রিয়া অনুসরণ করা দরকার, তার সবই করা হবে।

আরও পড়ুননারায়ণগঞ্জে আদালত প্রাঙ্গণে বাদীর ওপর হামলা, অভিযোগ বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে২৬ অক্টোবর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নারায়ণগঞ্জ আদালত প্রাঙ্গণে বাদীর ওপর হামলার ঘটনায় বিএনপি নেতা সাখাওয়াতের বিরুদ্ধে মামলা
  • নেতাকর্মীদের প্রতি তারেক রহমানের বার্তা আমরা যেন ঐক্যবদ্ধ থাকি : সাখাওয়াত
  • সিলেট চেম্বার অব কমার্সের নির্বাচন স্থগিত