সংঘাত বন্ধ না করলে ভারত ও পাকিস্তানের ওপর ২৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আজ বুধবার দক্ষিণ কোরিয়ায় এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অর্থনৈতিক সহযোগিতা সংস্থার (এপেক) শীর্ষ সম্মেলনে তিনি এই দাবি করেন।

গত মে মাসের সংঘাতের প্রসঙ্গ টেনে ট্রাম্প বলেন, ‘আপনারা যদি ভারত ও পাকিস্তানের (ওই পাল্টাপাল্টি হামলার) দিকে তাকান…দেখবেন, তখন তারা (বড়) সংঘাতের দিকে এগোচ্ছিল।’ দুই প্রতিবেশীর ওই সংঘাতে ‘সাতটি বিমান বিধ্বস্ত হয়েছিল’ বলেও মন্তব্য করেন ট্রাম্প।

ট্রাম্প দাবি করেন, সংঘাত বন্ধ করতে তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং পাকিস্তানের নেতাদের ফোন করেছিলেন। বলেছিলেন, সংঘাত বন্ধ করতে সম্মত না হলে তিনি তাঁদের সঙ্গে ব্যবসা বন্ধ করে দেবেন এবং বড় ধরনের শুল্ক আরোপ করবেন।

ট্রাম্প বলেন, ‘আমি বলেছিলাম, আমি উভয় দেশের ওপর ২৫০ শতাংশ করে শুল্ক আরোপ করব। এর মানে হলো, আপনি কখনো ব্যবসা করতে পারবেন না…এর মধ্য দিয়ে আমি এই কথাটা সুন্দর করে বলেছিলাম, আমরা আপনাদের সঙ্গে ব্যবসা করতে চাই না।’

ট্রাম্পের কথা শোনে অনুষ্ঠানের শ্রোতারা হাততালি দেন।

ট্রাম্প আগেও একই ধরনের দাবি করেছিলেন। কিন্তু ভারত তা খারিজ দিয়েছে।

ট্রাম্পের আজকের মন্তব্যের বিষয়ে জানতে ভারত ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের তরফে যোগাযোগ করা হয়েছিল। কিন্তু তাৎক্ষণিকভাবে তারা মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

এর আগে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, গত জুনে ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনালাপে মোদি বলেছিলেন, চার দিনের সংঘাতের সময় যুক্তরাষ্ট্র-ভারতের মধ্যে বাণিজ্য বা মার্কিন মধ্যস্থতা নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।

দিল্লি বারবার বলে আসছে, পাকিস্তানের অনুরোধে মে মাসের সংঘাত বন্ধ হয়েছিল। অর্থাৎ এতে যুক্তরাষ্ট্র বা তৃতীয় কোনো পক্ষের ভূমিকা ছিল না। কিন্তু সংঘাত বন্ধে মধ্যস্থতা করায় ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়েছে ইসলামাবাদ। শুধু তা–ই নয়, সংঘাত বন্ধ করায় ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্যও মনোনয়নয় দিয়েছে পাকিস্তান।

কিন্তু এপেক শীর্ষ সম্মেলনে ট্রাম্প জানান, প্রথম উভয় পক্ষই প্রথমে তাঁর অস্ত্রবিরতির আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছিল। তবে পরে তারা রাজি হয়।

ট্রাম্প বলেন, ‘তারা উভয়ে বলেছিল, না, না, না। আমাদের লড়াই চালিয়ে যেতে দিন। কিন্তু দুই দিন পর, তারা ফোন করে বলল, আমরা বুঝতে পেরেছি। এরপর তারা সংঘাত বন্ধ করল।’

আরও পড়ুনআবারও ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতির কৃতিত্ব দাবি করলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প৪ ঘণ্টা আগে

পরবর্তী সময়ে ট্রাম্প প্রশাসন ভারতের কিছু পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করে। পাশাপাশি রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল কেনার অভিযোগে দিল্লির ওপর আরও ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে ওয়াশিংটন। তবে শুল্ক কমিয়ে বাণিজ্য চুক্তি করার বিষয়ে ওয়াশিংটন ও নয়াদিল্লির মধ্যে আলোচনা চলছে।

অন্যদিকে প্রাথমিকভাবে পাকিস্তানের ওপর ২৯ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হলেও পরে তা ১৯ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়।

গত ২২ এপ্রিলে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলায় ২৬ জন নিহত হন। ভারত দাবি করেছিল, এই হামলার সঙ্গে পাকিস্তানের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। কিন্তু পাকিস্তান তা জোর দিয়ে প্রত্যাখ্যান করে।

ওই হামলার জেরে উভয় দেশের মধ্যে উত্তেজনা নতুন করে বৃদ্ধি পেতে থাকে। একপর্যায়ে ৭ মে পাকিস্তানের বিভিন্ন নিশানায় বিমান হামলা চালায় ভারত। পাকিস্তানও জবাব দেয়। চার দিনের পাল্টাপাল্টি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার পর ১০ মে উভয় দেশ অস্ত্রবিরতিতে সম্মত হয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ ল ক আর প কর কর ছ ল বল ছ ল র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

বাবার কবরে শায়িত বিজ্ঞানী ও লেখক রেজাউর রহমান

বাবার কবরে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ও বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক ড. রেজাউর রহমান। গতকাল বুধবার তাঁকে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে সলিমুল্লাহ রোড জামে মসজিদ কমপ্লেক্স কবরস্থানে বাবা ফজলুর রহমানের কবরে দাফন করা হয়। এর আগে বাদ আসর এই মসজিদে মরহুমের তৃতীয় জানাজা হয়।

ধানমন্ডির ১২/এ সড়কের তাকওয়া মসজিদে বাদ জোহর রেজাউর রহমানের প্রথম জানাজা সম্পন্ন হয়। এখানে মসজিদের মুসল্লিরা ছাড়াও মরহুমের আত্মীয়, সুহৃদ, অনুরাগী ও শুভানুধ্যায়ী, স্কুল–কলেজের সতীর্থদের অনেকে অংশ নেন। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ পরে দাফনেও অংশ নিয়েছেন। জানাজা ও দাফনে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, শিল্পী রফিকুন নবী, প্রাবন্ধিক মফিদুল হক, শিল্পী আবুল বার্‌ক্‌ আলভী, মনিরুল ইসলাম, অধ্যাপক সৈয়দ আজিজুল হক, প্রাণিবিজ্ঞানী অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম, এথিকস অ্যাডভান্স টেকনোলজি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ মুবিন খান, লেখক আনিসুল হকসহ কবি, শিল্পী, চিকিৎসকদের অনেকে।

প্রথম জানাজার পরে শেষবারের মতো রেজাউর রহমানের মরদেহ তাঁর ধানমন্ডির বাসভবনে আনা হয়। এখানে পরিবারের সদস্য, বিশেষত নারী আত্মীয়স্বজনসহ অনেকে শেষবারের মতো তাঁকে দেখতে আসেন। বাসভবন ছেড়ে যাওয়ার আগে এখানে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিবেশী ও স্বজনেরা জানাজায় অংশ নেন। এরপর দাফনের জন্য মোহাম্মদপুর সলিমুল্লাহ রোড জামে মসজিদে আনা হয়।

রেজাউর রহমান ৮১ বছর বয়সে ২৬ অক্টোবর রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় ল্যাবএইড হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন।

আরও পড়ুনরেজাউর রহমানের চলে যাওয়া শুধু ব্যক্তিগত ক্ষতি নয়…২৭ অক্টোবর ২০২৫

ব্যক্তিগত জীবনে বিনয়ী ও সদাচারী ছিলেন রেজাউর রহমান। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান বিভাগ থেকে ১৯৬৫ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন। পরে ১৯৭৯ সালে চেক একাডেমি অব সায়েন্সেস-প্রাগ থেকে কীটতত্ত্বে পিএইচডি সম্পন্ন করেন। দীর্ঘ ৩৫ বছর কাজ করেছেন বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনে। পেশাগত জীবনে কীটপতঙ্গ নিয়ে দেশ-বিদেশে গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা করেছেন তিনি।

পেশাগতভাবে বিজ্ঞানী হলেও লেখক

হিসেবে রেজাউর রহমান বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। দেশের বিজ্ঞানবিষয়ক লেখক হিসেবে তিনি ছিলেন বিশিষ্ট স্থানে। বিজ্ঞানে সামগ্রিক অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৪ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। সাহিত্যচর্চা ও বিজ্ঞান গবেষণার পাশাপাশি দেশের বিজ্ঞানচর্চার বিভিন্ন আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন রেজাউর রহমান।

আরও পড়ুনগ্রহান্তরে ভালো থাকবেন ড. রেজাউর রহমান২৮ অক্টোবর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ