‘মোস্তাফিজ আছেন তো…’—বাংলাদেশ দলের জন্য এটাই যেন সবচেয়ে বড় ভরসা। প্রতিপক্ষ ঝোড়ো গতিতে রান তুলছে। মনে হচ্ছে, রানটা চলে যাবে নাগালের বাইরে। শেষ দিকে রান আটকে দেওয়ার মতো কাউকে দরকার। প্রায় সব বোলারই তখন খেই হারিয়ে ফেলেন। দলের ভরসা হয়ে আসেন মোস্তাফিজুর রহমান। বারবারই তিনি এমন পরিস্থিতির ত্রাতা হয়েছেন।

তিনি আসেন, কাজটা করে আবার নিভৃতেই চলে যান। উইকেট সব সময় হয়তো পান না। কিন্তু তাঁর কাটার আর স্লোয়ার থামিয়ে দেয় প্রতিপক্ষের রানের গতি। কাল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দ্বিতীয় টি–টোয়েন্টিতে কাজটা তাঁর জন্য আরও সহজ হয়ে গিয়েছিল।

১৮তম ওভারে নিজের তৃতীয় ওভার করতে আসেন মোস্তাফিজ। তার আগেই রিশাদ হোসেন আর নাসুম আহমেদ দুটি করে উইকেট নিয়ে ক্যারিবিয়ানদের প্রাথমিক ধাক্কা দিয়ে দিয়েছিলেন। শুরুতে উড়তে থাকা ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুই শর স্বপ্ন তখন অনেকটাই ক্ষীণ। তবু হাতে ছিল ৪ উইকেট।
এই ব্যাটসম্যানদের কেউ রানের গতি বাড়াবেন—এটাই ছিল তাঁদের ভরসা। কিন্তু মোস্তাফিজ একটিও বাউন্ডারি না দিয়ে দেন মাত্র ৬ রান। পরের ওভারে তাসকিন দেন ১৪ রান। ইনিংসের শেষ ওভারে আবারও বল হাতে নেন মোস্তাফিজ। তখনো ওয়েস্ট ইন্ডিজের হাতে ৪ উইকেট, রান ১৪৪।

সেখান থেকে রানটা যদি ১৬০–এ নিয়ে যাওয়া যেত, লড়াইটা হতো আরও সহজ। কিন্তু মোস্তাফিজ আবার বাধা হয়ে দাঁড়ালেন। তাঁর প্রথম বলেই রোমারিও শেফার্ড ক্যাচ তুলে দিলেন জাকের আলীর হাতে। পরের বলেই বোল্ড হয়ে গেলেন খারি পিয়েরে। হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগলেও আকিল হোসেন তা ঠেকিয়ে দেন। তবু কাজটা মোস্তাফিজ সেরে ফেলেছেন। শেষ ওভারে দিয়েছেন মাত্র ৫ রান। পুরো স্পেলে ৪ ওভারে ২১ রান দিয়ে নিয়েছেন ৩ উইকেট। সংখ্যার বিচারে দলের সেরা বোলার তিনিই।

সব সময় হয়তো এমনটা হয় না। কিন্তু মোস্তাফিজ নিজের কাজটা করে দেন নিয়মিতই। কৃপণ বোলিংয়ে তাঁর চেয়ে ভালো বোলার এখন দুনিয়ায় হাতে গোনা। এ বছর টি–টোয়েন্টিতে অন্তত ১০ ওভার বল করেছেন, এমন বোলারদের মধ্যে টেস্ট খেলুড়ে দেশের কারোই ইকোনমি রেট মোস্তাফিজের চেয়ে ভালো নয়।

২০২৫ সালে ১৭ ম্যাচ খেলে ৬৪.

২ ওভার করেছেন মোস্তাফিজ। ওভারপ্রতি গড়ে দিয়েছেন মাত্র ৬ রান, নিয়েছেন ২৩ উইকেট। তাঁর বোলিং গড় ১৬.৭৮। টেস্ট খেলুড়ে দেশের পেসারদের মধ্যে তাঁর চেয়ে ভালো গড় আছে কেবল জিম্বাবুয়ের ব্রেড ইভান্স আর বাংলাদেশের তাসকিন আহমেদের।
পরিসংখ্যানের বাইরেও মোস্তাফিজ বাংলাদেশের জন্য বড় প্রভাবক। বাংলাদেশের টি–টোয়েন্টি সাফল্যে তিনি ছিলেন অন্যতম নায়ক। পুরো বোলিং বিভাগকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি। অন্তত রান আটকে দেওয়ার কৃপণতায় তাঁকে ছাড়িয়ে যেতে পারেননি কেউই।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উইক ট

এছাড়াও পড়ুন:

বাবার কবরে শায়িত বিজ্ঞানী ও লেখক রেজাউর রহমান

বাবার কবরে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ও বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক ড. রেজাউর রহমান। গতকাল বুধবার তাঁকে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে সলিমুল্লাহ রোড জামে মসজিদ কমপ্লেক্স কবরস্থানে বাবা ফজলুর রহমানের কবরে দাফন করা হয়। এর আগে বাদ আসর এই মসজিদে মরহুমের তৃতীয় জানাজা হয়।

ধানমন্ডির ১২/এ সড়কের তাকওয়া মসজিদে বাদ জোহর রেজাউর রহমানের প্রথম জানাজা সম্পন্ন হয়। এখানে মসজিদের মুসল্লিরা ছাড়াও মরহুমের আত্মীয়, সুহৃদ, অনুরাগী ও শুভানুধ্যায়ী, স্কুল–কলেজের সতীর্থদের অনেকে অংশ নেন। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ পরে দাফনেও অংশ নিয়েছেন। জানাজা ও দাফনে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, শিল্পী রফিকুন নবী, প্রাবন্ধিক মফিদুল হক, শিল্পী আবুল বার্‌ক্‌ আলভী, মনিরুল ইসলাম, অধ্যাপক সৈয়দ আজিজুল হক, প্রাণিবিজ্ঞানী অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম, এথিকস অ্যাডভান্স টেকনোলজি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ মুবিন খান, লেখক আনিসুল হকসহ কবি, শিল্পী, চিকিৎসকদের অনেকে।

প্রথম জানাজার পরে শেষবারের মতো রেজাউর রহমানের মরদেহ তাঁর ধানমন্ডির বাসভবনে আনা হয়। এখানে পরিবারের সদস্য, বিশেষত নারী আত্মীয়স্বজনসহ অনেকে শেষবারের মতো তাঁকে দেখতে আসেন। বাসভবন ছেড়ে যাওয়ার আগে এখানে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিবেশী ও স্বজনেরা জানাজায় অংশ নেন। এরপর দাফনের জন্য মোহাম্মদপুর সলিমুল্লাহ রোড জামে মসজিদে আনা হয়।

রেজাউর রহমান ৮১ বছর বয়সে ২৬ অক্টোবর রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় ল্যাবএইড হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন।

আরও পড়ুনরেজাউর রহমানের চলে যাওয়া শুধু ব্যক্তিগত ক্ষতি নয়…২৭ অক্টোবর ২০২৫

ব্যক্তিগত জীবনে বিনয়ী ও সদাচারী ছিলেন রেজাউর রহমান। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান বিভাগ থেকে ১৯৬৫ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন। পরে ১৯৭৯ সালে চেক একাডেমি অব সায়েন্সেস-প্রাগ থেকে কীটতত্ত্বে পিএইচডি সম্পন্ন করেন। দীর্ঘ ৩৫ বছর কাজ করেছেন বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনে। পেশাগত জীবনে কীটপতঙ্গ নিয়ে দেশ-বিদেশে গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা করেছেন তিনি।

পেশাগতভাবে বিজ্ঞানী হলেও লেখক

হিসেবে রেজাউর রহমান বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। দেশের বিজ্ঞানবিষয়ক লেখক হিসেবে তিনি ছিলেন বিশিষ্ট স্থানে। বিজ্ঞানে সামগ্রিক অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৪ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। সাহিত্যচর্চা ও বিজ্ঞান গবেষণার পাশাপাশি দেশের বিজ্ঞানচর্চার বিভিন্ন আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন রেজাউর রহমান।

আরও পড়ুনগ্রহান্তরে ভালো থাকবেন ড. রেজাউর রহমান২৮ অক্টোবর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ