চলতি অক্টোবর মাসের সাত দিন বাকি থাকতেই ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ সংক্রমণের রেকর্ড হয়েছিল। আর আজ বুধবার এ মাসের দুই দিন বাকি থাকতে ডেঙ্গুতে এক মাসে বছরের সর্বোচ্চ মৃত্যু হলো।

সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় (গতকাল মঙ্গলবার সকাল আটটা থেকে আজ সকাল আটটা পর্যন্ত) দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আরও দুজনের মৃত্যু হয়েছে। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁদের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি মাসে এডিস মশাবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ৭৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। আজ বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গুবিষয়ক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এ পর্যন্ত ৯৬৪ জন রোগী দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু নিয়ে ভর্তি হয়েছেন। এ সময় ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু নিয়ে ভর্তি হয়েছেন ৩৮৪ জন। এ সময় দুই সিটির বাইরে ঢাকা বিভাগে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা ১৯০। ঢাকার বাইরে বরিশাল বিভাগে সবচেয়ে বেশি ১১৪ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। সব মিলিয়ে এ বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু নিয়ে ৬৮ হাজার ৪২৮ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আর হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন ৬৫ হাজার ৩১২ জন।

চলতি বছর ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ সংক্রমণ ও মৃত্যু হয়েছে গত সেপ্টেম্বরে। গত মাসে ডেঙ্গুতে ৭৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল। আর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ১৫ হাজার ৮৬৬ জন। অক্টোবরে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু নিয়ে ২১ হাজার ৮৬ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

ডেঙ্গুতে এ মৃত্যু রোধ করতে সরকারি স্তরে যথেষ্ট ঘাটতি আছে বলে মনে করেন জনস্বাস্থ্যবিদ মুশতাক হোসেন। তিনি আজ প্রথম আলোকে বলেন, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বিকেন্দ্রীকরণ হলো না। সরকারের পক্ষ থেকে ডেঙ্গু হলে পরীক্ষা করার পরামর্শ দিয়েই দায় সারা হলো। কিন্তু এ পরীক্ষা মানুষ কোথায় করবে, কোথায় গিয়ে স্বল্প খরচে করতে পারবে, তার বন্দোবস্তও হলো না। এটা নিঃসন্দেহে একটা ব্যর্থতা।

২০০০ সালে ঢাকায় বড় আকারে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেয়। ওই বছর ৫ হাজার ৫৫১ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। এর মধ্যে মারা যান ৯৩ জন। ঘটনাটি সাধারণ মানুষের কাছে নতুন ছিল। ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত ও মারা যান ২০২৩ সালে। ওই বছর আক্রান্ত হয়েছিলেন ৩ লাখের বেশি মানুষ। মারা যান ১ হাজার ৭০৫ জন।

ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার বিস্তারে ঘন ঘন বৃষ্টির ভূমিকা আছে। এ মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে বৃষ্টি কমলেও ভারতে আছড়ে পরা ঘূর্ণিঝড় ‘মান্থা’র কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি হচ্ছে। আরও দুয়েক দিন দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি হতে পারে বিচ্ছিন্নভাবে। আবার নভেম্বরের ৬ তারিখের দিকে আবারও বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। সবকিছু মিলিয়ে নভেম্বর এডিসের বংশবৃদ্ধির প্রক্রিয়া বন্ধ হবে না বলেই মনে করেন জনস্বাস্থ্যবিদ বে–নজীর আহমদ। তিনি বলেন, বৃষ্টির পর অন্তত এক মাস এডিসের প্রকোপ বাড়তে পারে। আগামী নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসেও প্রকোপ রয়ে যেতে পারে। আসলে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমাতে সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ ও স্থানীয় সরকার বিভাগের কোনো দৃশ্যমান তৎপরতাই দেখলাম না। বিদ্যমান যে ব্যবস্থা ছিল, তা–ও নষ্ট হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: হয় ছ ন র প রক হয় ছ ল প রক প সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

বাবার কবরে শায়িত বিজ্ঞানী ও লেখক রেজাউর রহমান

বাবার কবরে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ও বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক ড. রেজাউর রহমান। গতকাল বুধবার তাঁকে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে সলিমুল্লাহ রোড জামে মসজিদ কমপ্লেক্স কবরস্থানে বাবা ফজলুর রহমানের কবরে দাফন করা হয়। এর আগে বাদ আসর এই মসজিদে মরহুমের তৃতীয় জানাজা হয়।

ধানমন্ডির ১২/এ সড়কের তাকওয়া মসজিদে বাদ জোহর রেজাউর রহমানের প্রথম জানাজা সম্পন্ন হয়। এখানে মসজিদের মুসল্লিরা ছাড়াও মরহুমের আত্মীয়, সুহৃদ, অনুরাগী ও শুভানুধ্যায়ী, স্কুল–কলেজের সতীর্থদের অনেকে অংশ নেন। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ পরে দাফনেও অংশ নিয়েছেন। জানাজা ও দাফনে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, শিল্পী রফিকুন নবী, প্রাবন্ধিক মফিদুল হক, শিল্পী আবুল বার্‌ক্‌ আলভী, মনিরুল ইসলাম, অধ্যাপক সৈয়দ আজিজুল হক, প্রাণিবিজ্ঞানী অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম, এথিকস অ্যাডভান্স টেকনোলজি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ মুবিন খান, লেখক আনিসুল হকসহ কবি, শিল্পী, চিকিৎসকদের অনেকে।

প্রথম জানাজার পরে শেষবারের মতো রেজাউর রহমানের মরদেহ তাঁর ধানমন্ডির বাসভবনে আনা হয়। এখানে পরিবারের সদস্য, বিশেষত নারী আত্মীয়স্বজনসহ অনেকে শেষবারের মতো তাঁকে দেখতে আসেন। বাসভবন ছেড়ে যাওয়ার আগে এখানে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিবেশী ও স্বজনেরা জানাজায় অংশ নেন। এরপর দাফনের জন্য মোহাম্মদপুর সলিমুল্লাহ রোড জামে মসজিদে আনা হয়।

রেজাউর রহমান ৮১ বছর বয়সে ২৬ অক্টোবর রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় ল্যাবএইড হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন।

আরও পড়ুনরেজাউর রহমানের চলে যাওয়া শুধু ব্যক্তিগত ক্ষতি নয়…২৭ অক্টোবর ২০২৫

ব্যক্তিগত জীবনে বিনয়ী ও সদাচারী ছিলেন রেজাউর রহমান। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান বিভাগ থেকে ১৯৬৫ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন। পরে ১৯৭৯ সালে চেক একাডেমি অব সায়েন্সেস-প্রাগ থেকে কীটতত্ত্বে পিএইচডি সম্পন্ন করেন। দীর্ঘ ৩৫ বছর কাজ করেছেন বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনে। পেশাগত জীবনে কীটপতঙ্গ নিয়ে দেশ-বিদেশে গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা করেছেন তিনি।

পেশাগতভাবে বিজ্ঞানী হলেও লেখক

হিসেবে রেজাউর রহমান বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। দেশের বিজ্ঞানবিষয়ক লেখক হিসেবে তিনি ছিলেন বিশিষ্ট স্থানে। বিজ্ঞানে সামগ্রিক অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৪ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। সাহিত্যচর্চা ও বিজ্ঞান গবেষণার পাশাপাশি দেশের বিজ্ঞানচর্চার বিভিন্ন আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন রেজাউর রহমান।

আরও পড়ুনগ্রহান্তরে ভালো থাকবেন ড. রেজাউর রহমান২৮ অক্টোবর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ