স্ট্রোক মস্তিষ্কের একটি রোগ। সাধারণত স্ট্রোক হলে মুখ বেঁকে যায়। দুর্বল বা অসাড় হয়ে যায় হাত বা পা। কথা জড়িয়ে যায়। এই তিনটিই স্ট্রোকের প্রধান লক্ষণ। তবে মস্তিষ্কের যে অংশে রক্ত চলাচল ব্যাহত হচ্ছে, তার ওপর নির্ভর করে স্ট্রোকের আরও অনেক বিচিত্র ও অপ্রত্যাশিত উপসর্গ দেখা দিতে পারে, যা জেনে রাখা জরুরি।

স্ট্রোকের জরুরি অবস্থা বোঝার জন্য বিশ্বব্যাপী ‘BE FAST’ নামের সংক্ষিপ্ত রূপটি ব্যবহার করা হয়। এখানে B হলো ব্যালান্স বা ভারসাম্য। হঠাৎ ভারসাম্য হারানো, মাথা ঘোরা বা টালমাটাল বোধ হতে পারে। E হলো আইজ বা দৃষ্টিশক্তি)। হঠাৎ দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া, এক বা দুই চোখে ঝাপসা বা ডাবল ভিশন (দুটো দেখা) হতে পারে।

F মানে হলে ফেস বা মুখ। এ ক্ষেত্রে মুখের এক পাশ ঝুলে যায়। A অর্থাৎ আর্মস বা হাত। শরীরের এক পাশের হাত বা পা হঠাৎ দুর্বল হয়ে যাওয়া। S হলো স্পিচ বা কথা বলা। কথা বলতে বা বুঝতে অসুবিধা হওয়া। সবশেষে T হলো টাইম বা সময়। সময় নষ্ট না করে জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে যাওয়া।

হঠাৎ কোনো কারণ ছাড়াই তীব্র বা বিদ্যুতের ঝলকানির মতো মাথাব্যথা শুরু হওয়া। বিশেষ করে যদি এটি মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ বা হেমোরেজিক স্ট্রোক হয়। এটি কোনো সাধারণ মাথাব্যথা নয়।আরও যেসব উপসর্গ

উল্লিখিত এসব লক্ষণ ছাড়া আরও কিছু উপসর্গ দেখা দিতে পারে, যা স্ট্রোকের ইঙ্গিত বহন করে।

তীব্র মাথাব্যথা: হঠাৎ কোনো কারণ ছাড়াই তীব্র বা বিদ্যুতের ঝলকানির মতো মাথাব্যথা শুরু হওয়া। বিশেষ করে যদি এটি মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ বা হেমোরেজিক স্ট্রোক হয়। এটি কোনো সাধারণ মাথাব্যথা নয়।

হঠাৎ বিভ্রান্তি বা স্মৃতিভ্রংশ: আক্রান্ত ব্যক্তি হঠাৎ স্থান-কাল ভুলে যেতে পারেন। তিনি বুঝতে পারেন না তিনি কোথায় আছেন বা সাধারণ নির্দেশনা বুঝতে বা অনুসরণ করতে অসুবিধা হয়। এটি মস্তিষ্কের পেছনের অংশে স্ট্রোকের লক্ষণ হতে পারে।

বমি বমি ভাব ও বমি: যদি কোনো সংক্রমণ ছাড়াই হঠাৎ প্রচণ্ড বমি বমি ভাব ও বমি শুরু হয়, তবে তা স্ট্রোকের বিশেষ করে মস্তিষ্কের পেছনের দিকের সেরিবেলাম অংশে স্ট্রোকের একটি বিরল লক্ষণ হতে পারে।

আরও পড়ুননারীদের স্ট্রোক কেন বেশি হয়২৪ জুন ২০২৫

সংবেদনশীলতার পরিবর্তন: প্যারালাইসিস না হলেও শরীরের এক পাশে ঝিনঝিন করা বা তীব্র জ্বালা অনুভব করা।

আচরণের পরিবর্তন: কিছু ক্ষেত্রে স্ট্রোকের কারণে হঠাৎ অকারণ বিষণ্নতা, রাগ বা ব্যক্তিত্বের অস্বাভাবিক পরিবর্তন দেখা যেতে পারে।

মনে রাখা জরুরি, স্ট্রোকের চিকিৎসা ‘সময়নির্ভর’। যত দ্রুত এসব লক্ষণ চিহ্নিত করা যাবে এবং রোগীকে হাসপাতালে নেওয়া হবে, মস্তিষ্কের স্থায়ী ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি তত কমবে। তাই যেকোনো অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া আবশ্যক।

আরও পড়ুনস্ট্রোকের ঝুঁকি ১৭ শতাংশ কমাতে পারে এই ভিটামিন০২ জুলাই ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

প্রায়ই গলা ব্যথায় ভুগছেন? কারণ ও প্রতিরোধের উপায় জেনে নিন

শীতের শুরুতে তাপমাত্রা কমে যাওয়া এবং বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ কমে যায়। কেউ কেউতো এই ঋতুতে প্রায়ই গলা ব্যথায় ভুগতে থাকেন। কারণ এই সময় ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ সহজে ছড়িয়ে পড়ে। গলার স্নায়ু ও টিস্যুতে জ্বালা, খসখসে ভাব এবং ব্যথার মতো উপসর্গ দেখা দেয়। গলা ব্যথা ছোট একটি সমস্যা মনে হলেও, এটি কথা বলা, খাওয়া-দাওয়া, এমনকি ঘুমের ওপরও বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। তাই শীতকালে এই ধরনের অস্বস্তি সম্পর্কে সচেতন হওয়া জরুরি। বিভিন্ন কারণে গলা ব্যথা হয়। 

ভাইরাসজনিত সংক্রমণ
সাধারণ সর্দি, ইনফ্লুয়েঞ্জা (ফ্লু) এবং কোভিড-১৯ সবচেয়ে বেশি গলা ব্যথার কারণ হয়ে থাকে। এসব ভাইরাস গলার ভেতরের টিস্যুকে আক্রান্ত করে ব্যথা, জ্বালাপোড়া বা খসখসে ভাব তৈরি করে।

আরো পড়ুন:

পেটে ভর দিয়ে ঘুমানোর প্রভাব 

শীতকালে কত সময় ধরে গোসল করা ভালো

ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ
স্ট্রেপ থ্রোট নামের এক ধরনের ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ তীব্র গলা ব্যথার জন্য দায়ী। এতে গলায় প্রচণ্ড ব্যথা, জ্বর এবং লালচে ভাব দেখা যায়।

অ্যালার্জি
ধুলোবালি, পোলেন, পশুর লোম ইত্যাদির প্রতি অ্যালার্জি থাকলে নাক ও গলা দিয়ে শ্লেষ্মা ঝরা বাড়ে, যা গলা ব্যথার কারণ হতে পারে।

শুষ্ক বাতাস
শীতকালে বাতাসে আর্দ্রতা কমে যায় এবং ঘরের ভেতরে হিটার ব্যবহারের কারণে পরিবেশ আরও শুষ্ক হয়। এতে গলার টিস্যু শুকিয়ে গিয়ে জ্বালা ও অস্বস্তি সৃষ্টি হয়।

ধূমপান
ধোঁয়ার রাসায়নিক উপাদান গলার ভেতরের অংশকে উত্তেজিত করে। এতে গলা শুকিয়ে যায় এবং ব্যথা বাড়ে।

অ্যাসিড রিফ্লাক্স
পেটের এসিড গলার দিকে উঠে আসলে সেখানকার টিস্যুতে জ্বালা ধরায় এবং ব্যথা হয়।

গলা ব্যথার সাধারণ উপসর্গ

গলায় ব্যথা বা খসখসে অনুভূতি গিলতে সমস্যা বা গলায় চাপ অনুভব গলা বা চোয়ালের গ্রন্থি ফুলে যাওয়া মুখের ভেতর লালভাব বা প্রদাহ স্বর ভাঙ্গা, কর্কশ বা দুর্বল হয়ে যাওয়া কখনো কখনো হালকা জ্বর, কাশি বা নাক বন্ধ হওয়া

গলা ব্যথা প্রতিরোধে কার্যকর উপায়

নিয়মিত হাত ধোওয়া
২০ সেকেন্ড ধরে সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধুলে সংক্রমণের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে। বাইরে থেকে এসে, খাওয়ার আগে, টয়লেট ব্যবহারের পরে হাত ধোওয়া অত্যন্ত জরুরি।

প্রচুর পানি ও গরম পানীয় পান
শীতকালে শরীর সহজে পানিশূন্য হয়ে যায়। পর্যাপ্ত পানি, স্যুপ বা গরম পানীয় পান করলে গলা আর্দ্র থাকে এবং ব্যথা কম হয়।

হিউমিডিফায়ার ব্যবহার
ঘরের বাতাসে আর্দ্রতা বাড়ালে গলার শুষ্কতা কমে যায়। বিশেষ করে ঘুমের সময় হিউমিডিফায়ার ব্যবহার খুব উপকারী।

জ্বালামূলক উপাদান থেকে দূরে থাকা
ধোঁয়া, কড়া গন্ধের ক্লিনার, স্প্রে, ধুলোবালি এগুলো গলা উত্তেজিত করে। এগুলো যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলা উচিত।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো
ভিটামিন সি ও ডি সমৃদ্ধ খাবার, নিয়মিত ব্যায়াম ও পর্যাপ্ত ঘুম শরীরকে সংক্রমণ থেকে বাঁচাতে সাহায্য করে।

গলা ব্যথা উপশমে ঘরোয়া কার্যকর উপায়

লবণ-পানির গার্গল: গরম পানিতে অল্প লবণ মিশিয়ে দিনে কয়েকবার গার্গল করলে গলার ফোলা কমে এবং ব্যথা হ্রাস পায়।

মধু: এক চামচ মধু গলার ভেতরকে নরম করে এবং আরাম দেয়। তবে এক বছরের নিচের শিশুদের কখনো মধু দেওয়া যাবে না।

হার্বাল চা: ক্যামোমাইল, আদা বা লাইকোরিস রুট চা গলার প্রদাহ কমায় এবং শরীরকে আর্দ্র রাখে।

লজেন্স বা হার্ড ক্যান্ডি: এগুলো লালা নিঃসরণ বাড়ায়, যা গলা আর্দ্র রাখতে সাহায্য করে।

সাধারণত গলা ব্যথা কয়েক দিনের মধ্যে সেরে যায়। তবে নিচের অবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শ জরুরি—

•  গলা ব্যথা ৭ দিনের বেশি স্থায়ী হলে
•  উচ্চতাপমাত্রার জ্বর, শ্বাস নিতে সমস্যা বা তীব্র ব্যথা থাকলে
•  গিলতে খুব বেশি কষ্ট হলে
•  গলায় সাদা দাগ বা পুঁজ দেখা দিলে

সূত্র: ফ্যামিলি কেয়ার সেন্টার

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রায়ই গলা ব্যথায় ভুগছেন? কারণ ও প্রতিরোধের উপায় জেনে নিন