স্ট্রোকের কিছু কম পরিচিত লক্ষণ
Published: 29th, October 2025 GMT
স্ট্রোক মস্তিষ্কের একটি রোগ। সাধারণত স্ট্রোক হলে মুখ বেঁকে যায়। দুর্বল বা অসাড় হয়ে যায় হাত বা পা। কথা জড়িয়ে যায়। এই তিনটিই স্ট্রোকের প্রধান লক্ষণ। তবে মস্তিষ্কের যে অংশে রক্ত চলাচল ব্যাহত হচ্ছে, তার ওপর নির্ভর করে স্ট্রোকের আরও অনেক বিচিত্র ও অপ্রত্যাশিত উপসর্গ দেখা দিতে পারে, যা জেনে রাখা জরুরি।
স্ট্রোকের জরুরি অবস্থা বোঝার জন্য বিশ্বব্যাপী ‘BE FAST’ নামের সংক্ষিপ্ত রূপটি ব্যবহার করা হয়। এখানে B হলো ব্যালান্স বা ভারসাম্য। হঠাৎ ভারসাম্য হারানো, মাথা ঘোরা বা টালমাটাল বোধ হতে পারে। E হলো আইজ বা দৃষ্টিশক্তি)। হঠাৎ দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া, এক বা দুই চোখে ঝাপসা বা ডাবল ভিশন (দুটো দেখা) হতে পারে।
F মানে হলে ফেস বা মুখ। এ ক্ষেত্রে মুখের এক পাশ ঝুলে যায়। A অর্থাৎ আর্মস বা হাত। শরীরের এক পাশের হাত বা পা হঠাৎ দুর্বল হয়ে যাওয়া। S হলো স্পিচ বা কথা বলা। কথা বলতে বা বুঝতে অসুবিধা হওয়া। সবশেষে T হলো টাইম বা সময়। সময় নষ্ট না করে জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে যাওয়া।
হঠাৎ কোনো কারণ ছাড়াই তীব্র বা বিদ্যুতের ঝলকানির মতো মাথাব্যথা শুরু হওয়া। বিশেষ করে যদি এটি মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ বা হেমোরেজিক স্ট্রোক হয়। এটি কোনো সাধারণ মাথাব্যথা নয়।আরও যেসব উপসর্গউল্লিখিত এসব লক্ষণ ছাড়া আরও কিছু উপসর্গ দেখা দিতে পারে, যা স্ট্রোকের ইঙ্গিত বহন করে।
তীব্র মাথাব্যথা: হঠাৎ কোনো কারণ ছাড়াই তীব্র বা বিদ্যুতের ঝলকানির মতো মাথাব্যথা শুরু হওয়া। বিশেষ করে যদি এটি মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ বা হেমোরেজিক স্ট্রোক হয়। এটি কোনো সাধারণ মাথাব্যথা নয়।
হঠাৎ বিভ্রান্তি বা স্মৃতিভ্রংশ: আক্রান্ত ব্যক্তি হঠাৎ স্থান-কাল ভুলে যেতে পারেন। তিনি বুঝতে পারেন না তিনি কোথায় আছেন বা সাধারণ নির্দেশনা বুঝতে বা অনুসরণ করতে অসুবিধা হয়। এটি মস্তিষ্কের পেছনের অংশে স্ট্রোকের লক্ষণ হতে পারে।
বমি বমি ভাব ও বমি: যদি কোনো সংক্রমণ ছাড়াই হঠাৎ প্রচণ্ড বমি বমি ভাব ও বমি শুরু হয়, তবে তা স্ট্রোকের বিশেষ করে মস্তিষ্কের পেছনের দিকের সেরিবেলাম অংশে স্ট্রোকের একটি বিরল লক্ষণ হতে পারে।
আরও পড়ুননারীদের স্ট্রোক কেন বেশি হয়২৪ জুন ২০২৫সংবেদনশীলতার পরিবর্তন: প্যারালাইসিস না হলেও শরীরের এক পাশে ঝিনঝিন করা বা তীব্র জ্বালা অনুভব করা।
আচরণের পরিবর্তন: কিছু ক্ষেত্রে স্ট্রোকের কারণে হঠাৎ অকারণ বিষণ্নতা, রাগ বা ব্যক্তিত্বের অস্বাভাবিক পরিবর্তন দেখা যেতে পারে।
মনে রাখা জরুরি, স্ট্রোকের চিকিৎসা ‘সময়নির্ভর’। যত দ্রুত এসব লক্ষণ চিহ্নিত করা যাবে এবং রোগীকে হাসপাতালে নেওয়া হবে, মস্তিষ্কের স্থায়ী ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি তত কমবে। তাই যেকোনো অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া আবশ্যক।
আরও পড়ুনস্ট্রোকের ঝুঁকি ১৭ শতাংশ কমাতে পারে এই ভিটামিন০২ জুলাই ২০২৫.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
অ্যানথ্রাক্স সংক্রমণে গরুশূন্য গোয়াল, ছোট খামারিদের বড় ক্ষতি
রংপুরের পীরগাছা উপজেলার আনন্দী ধনীরাম গ্রামের দিনমজুর সিরাজুল ইসলাম (৬৫)। বাড়িতে দুটি গরু ছিল। গত সেপ্টেম্বরে অ্যানথ্রাক্সের সংক্রমণে চার মাসের গাভিন শাহিওয়াল জাতের গরুটি মারা যায়। অন্য গরুটি অসুস্থ হয়ে পড়লে সেটি জবাই করতে হয়। এর পর থেকে তাঁর গোয়ালঘর গরুশূন্য। সম্প্রতি ভেঙে ফেলেছেন জরাজীর্ণ সেই গোয়ালও।
২৫ অক্টোবর তাঁর বাড়িতে গেলে সিরাজুল বলেন, শূন্য গোয়াল রেখে কী করবেন? তাঁর কিছুই নেই করে খাওয়ার মতন। যদি বাঁশ-টিন-কাঠ বিক্রি করে ৫ কেজি চাল আনতে পারেন, তাহলে পাঁচ দিন যাবে। এর পরের খোরাকি তিনি কোথায় পাবেন?
অ্যানথ্রাক্সের সংক্রমণে শুধু সিরাজুলের গরু মারা যায়নি, তাঁদের পরিবারেও অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। সংক্রমিত গরু জবাই করে মাংস কাটাকাটি ও খাওয়ার পর পরিবারের ৪–৫ জনসহ ওই এলাকার ২০–২৫ জন অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হন। সিরাজুলের ভাবি কমেলা বেগম (৭০) মাংস কাটার পর অসুস্থ হয়ে মারা যান। সিরাজুলও অসুস্থ ছিলেন। তাঁর চিকিৎসায় অন্তত ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে বলে তিনি জানান। এখন তিনি কিছুটা সুস্থ।
স্থানীয় সূত্র জানায়, গত সপ্তাহে পীরগঞ্জ উপজেলায় অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত গরু জবাইয়ের পর মাংস কাটার সঙ্গে যুক্ত নয়জন আক্রান্ত হন। রংপুর জেলায় এখন পর্যন্ত শতাধিক মানুষ অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গে আক্রান্ত হয়েছেন। গত জুলাই ও সেপ্টেম্বরে এই রোগে কমেলা বেগম ছাড়াও আবদুর রাজ্জাক নামের এক ভ্যানচালক মারা যান। গত জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে পীরগাছার কয়েকটি ইউনিয়নে অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ দেখা যায়। পীরগাছা ছাড়াও কাউনিয়া, মিঠাপুকুর, গঙ্গাচড়া, তারাগঞ্জে অ্যানথ্রাক্সের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। এসব এলাকায় শতাধিক গরু–ছাগল মারা গেছে।
আনন্দী ধনীরাম গ্রামের বাসিন্দারা জানান, অ্যানথ্রাক্সের সংক্রমণে এই গ্রামের রইস উদ্দিন, রমজান আলী, রফিকুল ইসলামসহ ছয়জনের সাতটি গরু এবং আরও তিনজনের আটটি ছাগল মারা গেছে। এই ব্যক্তিরা কেউ দুধ বিক্রি করে সংসার চালাতেন, কেউ বছর শেষে গরু বিক্রি করে সংসারের চাহিদা মেটাতেন।
আবু তাহেরের খামারটিও এখন গরুশূন্য। ২৫ অক্টোবর রংপুরের পীরগাছার কুটিপাড়া গ্রামে