অবমুক্তির পরও ফিরে এল হেমায়েতের বকটি
Published: 29th, October 2025 GMT
বনবিভাগের অবমুক্তির পর পটুয়াখালীর বাউফলের সেই বকটি আবারো ফিরে এসেছে তার প্রিয় সঙ্গী হেমায়েতের কাছে। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
বুধবার (২৯ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৬টার দিকে বকটি বাউফল উপজেলার সূর্যমনি ইউনিয়নের নুরাইনপুর বাজারের হেমায়েতের স্টেশনারির দোকানে ফিরে আসে।
এর আগে, গত ২৭ অক্টোবর বন বিভাগের কর্মকর্তারা নুরাইনপুর বাজার এলাকার হেমায়েতের কাছ থেকে নিয়ে বকটি ওই এলাকার ‘বগের বাড়ি’ নামে পরিচিত গাছে অবমুক্ত করেছিলেন। কিন্তু অবমুক্তির পর থেকেই বকটি কিছু না খেয়ে নিরব ছিল।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় ৪ মাস আগে ঝড়ের সময় স্থানীয়ভাবে ‘বকের বাড়ি’ নামে পরিচিত নুরাইনপুর বাজার সংলগ্ন খানবাড়ির একটি গাছ থেকে বকের ছানাটি পড়ে যায়। তখন একটি গুইসাপ ছানাটিকে আক্রমণ করলে স্থানীয় ব্যবসায়ী হেমায়েত উদ্দিন এগিয়ে এসে উদ্ধার করেন।
এরপর তিনি নিজের সন্তানের মতো পরিচর্যা করে বকের ছানাটিকে সুস্থ করে তোলেন। সেই থেকেই বকটি হেমায়েত উদ্দিনের সঙ্গে দোকানে বসবাস করছিল। দোকানদারের সঙ্গে বকের এমন বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে বিষয়টি দেশজুড়ে আলোচনার জন্ম দেয়। পরে বকটি অবমুক্ত করার পর আবার ফিরে আসে।
স্থানীয়রা বকটি ফের হেমায়েতের দোকানে দেখে বিষ্মিত হন। এ ঘনায় মানুষের প্রতি প্রাণীদের ভালোবাসার এক বিরর দৃষ্টান্ত ফুটে উঠেছে বলে মনে করছেন তারা।
হেমায়েত উদ্দিন বলেন, “আমি মনে করেছিলাম বকটি আর ফিরবে না। কিন্তু আল্লাহর রহমতে আমার সঙ্গীটা আবার ফিরে এসেছে। আমি খুব চিন্তায় ছিলাম, ভেবেছিলাম না খেতে পেরে হয়ত মরেই যাবে। আমি সন্তানের মতো বকটিকে লালন-পালন করেছি। বকটি আমার যত্ন এবং ভালোবাসা ভুলে যায়নি।”
বাউফল উপজেলা বন বিভাগের রেঞ্চ কর্মকর্তা বদিউজ্জামান খান সাংবাদিকদের বলেন, “আপনারা দয়া করে আর নিউজ করবেন না। নিউজ করলে বকটির ক্ষতি হতে পারে। আপনারা জানেন, আমরাও জানি এতটুকুই থাক। যত বেশি নিউজ হবে, তত বেশি চাপ আসবে বকটিকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য। আর এতে শেষ পর্যন্ত বকটিই মারা যেতে পারে। ওর মতো করে ওকে থাকতে দিন, আমরা ওদিকে আর নজর দেব না।”
তিনি আরো বলেন, “গতকাল (মঙ্গলবার) সরাসরি উপদেষ্টার সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হয়েছে। আপাতত যেহেতু বকটি কোথাও যাচ্ছে না, বাইরে থেকে খাবারও খাচ্ছে না, তাই ওকে হেমায়েতের কাছেই থাকতে দিন। ওর কাছে লালিত-পালিত হোক। ভবিষ্যতে বড় হলে এমনিতেই উড়ে চলে যাবে।”
ঢাকা/ইমরান/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
বাবার কবরে শায়িত বিজ্ঞানী ও লেখক রেজাউর রহমান
বাবার কবরে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ও বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক ড. রেজাউর রহমান। গতকাল বুধবার তাঁকে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে সলিমুল্লাহ রোড জামে মসজিদ কমপ্লেক্স কবরস্থানে বাবা ফজলুর রহমানের কবরে দাফন করা হয়। এর আগে বাদ আসর এই মসজিদে মরহুমের তৃতীয় জানাজা হয়।
ধানমন্ডির ১২/এ সড়কের তাকওয়া মসজিদে বাদ জোহর রেজাউর রহমানের প্রথম জানাজা সম্পন্ন হয়। এখানে মসজিদের মুসল্লিরা ছাড়াও মরহুমের আত্মীয়, সুহৃদ, অনুরাগী ও শুভানুধ্যায়ী, স্কুল–কলেজের সতীর্থদের অনেকে অংশ নেন। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ পরে দাফনেও অংশ নিয়েছেন। জানাজা ও দাফনে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, শিল্পী রফিকুন নবী, প্রাবন্ধিক মফিদুল হক, শিল্পী আবুল বার্ক্ আলভী, মনিরুল ইসলাম, অধ্যাপক সৈয়দ আজিজুল হক, প্রাণিবিজ্ঞানী অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম, এথিকস অ্যাডভান্স টেকনোলজি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ মুবিন খান, লেখক আনিসুল হকসহ কবি, শিল্পী, চিকিৎসকদের অনেকে।
প্রথম জানাজার পরে শেষবারের মতো রেজাউর রহমানের মরদেহ তাঁর ধানমন্ডির বাসভবনে আনা হয়। এখানে পরিবারের সদস্য, বিশেষত নারী আত্মীয়স্বজনসহ অনেকে শেষবারের মতো তাঁকে দেখতে আসেন। বাসভবন ছেড়ে যাওয়ার আগে এখানে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিবেশী ও স্বজনেরা জানাজায় অংশ নেন। এরপর দাফনের জন্য মোহাম্মদপুর সলিমুল্লাহ রোড জামে মসজিদে আনা হয়।
রেজাউর রহমান ৮১ বছর বয়সে ২৬ অক্টোবর রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় ল্যাবএইড হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন।
আরও পড়ুনরেজাউর রহমানের চলে যাওয়া শুধু ব্যক্তিগত ক্ষতি নয়…২৭ অক্টোবর ২০২৫ব্যক্তিগত জীবনে বিনয়ী ও সদাচারী ছিলেন রেজাউর রহমান। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান বিভাগ থেকে ১৯৬৫ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন। পরে ১৯৭৯ সালে চেক একাডেমি অব সায়েন্সেস-প্রাগ থেকে কীটতত্ত্বে পিএইচডি সম্পন্ন করেন। দীর্ঘ ৩৫ বছর কাজ করেছেন বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনে। পেশাগত জীবনে কীটপতঙ্গ নিয়ে দেশ-বিদেশে গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা করেছেন তিনি।
পেশাগতভাবে বিজ্ঞানী হলেও লেখক
হিসেবে রেজাউর রহমান বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। দেশের বিজ্ঞানবিষয়ক লেখক হিসেবে তিনি ছিলেন বিশিষ্ট স্থানে। বিজ্ঞানে সামগ্রিক অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৪ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। সাহিত্যচর্চা ও বিজ্ঞান গবেষণার পাশাপাশি দেশের বিজ্ঞানচর্চার বিভিন্ন আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন রেজাউর রহমান।
আরও পড়ুনগ্রহান্তরে ভালো থাকবেন ড. রেজাউর রহমান২৮ অক্টোবর ২০২৫