চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) প্লট বরাদ্দ দেওয়ার সময় শর্ত দিয়েছিল, দুই বছরের মধ্যে বহুতল ভবনের নির্মাণকাজ শুরু করতে হবে। কিন্তু ২০ থেকে ২৫ বছর পার হলেও তা করেনি বিতর্কিত ব্যবসায়ী গ্রুপের এস আলম গ্রুপের প্রতিষ্ঠান। উল্টো জমি বন্ধক দিয়ে ঋণ নিয়ে নেয়। আর জায়গা ভাড়া দেওয়া হয় দুটি প্রতিষ্ঠানকে।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অভিযানে প্লট বরাদ্দে শর্ত ভঙ্গের এ চিত্র ধরা পড়ে। এস আলম গ্রুপের প্রতিষ্ঠানকে প্লট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগে আজ বুধবার এ অভিযান পরিচালনা করা হয়।

দুদকের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকায় বালুর মাঠ নামে পরিচিত জায়গা বেআইনিভাবে বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়। এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুদক সিডিএতে অভিযান পরিচালনা করে। সিডিএর চেয়ারম্যানের দপ্তরে হাজির হয়ে রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করে।

রেকর্ডপত্রের তথ্য অনুযায়ী, ২০০১ ও ২০০৫ সালে যথাক্রমে মেসার্স মডার্ন প্রপার্টিজ লিমিটেড ও মেসার্স হাসান আবাসন প্রাইভেট লিমিটেডকে মোট ১০১ কাঠা জমি ইজারা দেওয়া হয়। দুদকের দল পরিদর্শন করে দেখেছে, জমিতে চৌধুরী সুপার শপ ও রয়েল অটো কার নামের দুটি প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া দেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ইজারা চুক্তির শর্তে দখল বরাদ্দ প্রদানের পরবর্তী দুই বছরের মধ্যে বহুতল ভবন নির্মাণের কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু এখনো তা করা হয়নি। উল্টো ২০২০ সালে এই জমি বন্ধক দিয়ে জনতা ব্যাংকের চট্টগ্রামের চৌমুহনী শাখা থেকে ঋণ নিয়েছে এস আলম ট্রেডিং। এই ঋণের জন্য সিডিএ অনাপত্তি দিয়েছে। তবে কত টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে, তা বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়নি।

সিডিএ সূত্র জানায়, এস আলম গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হাসান আবাসন প্রাইভেট লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল্লাহ হাসান এস আলম গ্রুপের কর্ণধার বিতর্কিত ব্যবসায়ী সাইফুল আলম মাসুদের ভাই ও গ্রুপটির পরিচালক। সিডিএতে জমা দেওয়া একটি কাগজে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে সাইফুল আলম মাসুদের ছেলে আহসানুল আলমকে।

আরও পড়ুন৭৫ কোটি টাকা কর ফাঁকি: এস আলমের দুই ছেলেসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

দুদকের চট্টগ্রামের উপপরিচালক সুবেল আহমেদ বলেন, বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য জমি বরাদ্দ নিয়ে অন্য দুটি প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া দিয়েছে মেসার্স মডার্ন প্রপার্টিজ লিমিটেড ও মেসার্স হাসান আবাসন লিমিটেড। আর কী কী শর্ত ভঙ্গ করা হয়েছে, তা খতিয়ে দেখতে আরও রেকর্ডপত্র চাওয়া হয়েছে। রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করে কমিশনে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।

জানতে চাইলে সিডিএর চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো.

নুরুল করিম বলেন, আগ্রাবাদ আবাসিক এলাকায় সিডিএ এস আলম গ্রুপের দুটি প্রতিষ্ঠানকে ২০-২৫ বছর আগে বৈধভাবে জায়গা বরাদ্দ দিয়েছিল। এই ব্যাপারে দুদক তথ্য চেয়েছে, তা দেওয়া হয়েছে।

ইজারার শর্ত ভঙ্গের বিষয়ে সিডিএর চেয়ারম্যান বলেন, দুই বছরের মধ্যে ভবন করার কথা ছিল, কিন্তু করেনি। এখন সেখানে কিছু দোকানপাট হয়েছে। আবার জায়গা বন্ধক দিয়ে ঋণ নেওয়া হয়েছে। এগুলো অনেক আগের ঘটনা। যখন তাঁদের নজরে এসেছে, তখন পদক্ষেপ নিয়েছেন। শর্ত ভঙ্গ করায় একাধিকবার নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। এখন অবৈধ দোকানগুলো উচ্ছেদ করা হবে।

আরও পড়ুনএস আলম গ্রুপের মালিকসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র১৫ অক্টোবর ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এস আলম গ র প র

এছাড়াও পড়ুন:

বাবার কবরে শায়িত বিজ্ঞানী ও লেখক রেজাউর রহমান

বাবার কবরে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ও বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক ড. রেজাউর রহমান। গতকাল বুধবার তাঁকে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে সলিমুল্লাহ রোড জামে মসজিদ কমপ্লেক্স কবরস্থানে বাবা ফজলুর রহমানের কবরে দাফন করা হয়। এর আগে বাদ আসর এই মসজিদে মরহুমের তৃতীয় জানাজা হয়।

ধানমন্ডির ১২/এ সড়কের তাকওয়া মসজিদে বাদ জোহর রেজাউর রহমানের প্রথম জানাজা সম্পন্ন হয়। এখানে মসজিদের মুসল্লিরা ছাড়াও মরহুমের আত্মীয়, সুহৃদ, অনুরাগী ও শুভানুধ্যায়ী, স্কুল–কলেজের সতীর্থদের অনেকে অংশ নেন। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ পরে দাফনেও অংশ নিয়েছেন। জানাজা ও দাফনে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, শিল্পী রফিকুন নবী, প্রাবন্ধিক মফিদুল হক, শিল্পী আবুল বার্‌ক্‌ আলভী, মনিরুল ইসলাম, অধ্যাপক সৈয়দ আজিজুল হক, প্রাণিবিজ্ঞানী অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম, এথিকস অ্যাডভান্স টেকনোলজি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ মুবিন খান, লেখক আনিসুল হকসহ কবি, শিল্পী, চিকিৎসকদের অনেকে।

প্রথম জানাজার পরে শেষবারের মতো রেজাউর রহমানের মরদেহ তাঁর ধানমন্ডির বাসভবনে আনা হয়। এখানে পরিবারের সদস্য, বিশেষত নারী আত্মীয়স্বজনসহ অনেকে শেষবারের মতো তাঁকে দেখতে আসেন। বাসভবন ছেড়ে যাওয়ার আগে এখানে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিবেশী ও স্বজনেরা জানাজায় অংশ নেন। এরপর দাফনের জন্য মোহাম্মদপুর সলিমুল্লাহ রোড জামে মসজিদে আনা হয়।

রেজাউর রহমান ৮১ বছর বয়সে ২৬ অক্টোবর রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় ল্যাবএইড হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন।

আরও পড়ুনরেজাউর রহমানের চলে যাওয়া শুধু ব্যক্তিগত ক্ষতি নয়…২৭ অক্টোবর ২০২৫

ব্যক্তিগত জীবনে বিনয়ী ও সদাচারী ছিলেন রেজাউর রহমান। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান বিভাগ থেকে ১৯৬৫ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন। পরে ১৯৭৯ সালে চেক একাডেমি অব সায়েন্সেস-প্রাগ থেকে কীটতত্ত্বে পিএইচডি সম্পন্ন করেন। দীর্ঘ ৩৫ বছর কাজ করেছেন বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনে। পেশাগত জীবনে কীটপতঙ্গ নিয়ে দেশ-বিদেশে গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা করেছেন তিনি।

পেশাগতভাবে বিজ্ঞানী হলেও লেখক

হিসেবে রেজাউর রহমান বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। দেশের বিজ্ঞানবিষয়ক লেখক হিসেবে তিনি ছিলেন বিশিষ্ট স্থানে। বিজ্ঞানে সামগ্রিক অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৪ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। সাহিত্যচর্চা ও বিজ্ঞান গবেষণার পাশাপাশি দেশের বিজ্ঞানচর্চার বিভিন্ন আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন রেজাউর রহমান।

আরও পড়ুনগ্রহান্তরে ভালো থাকবেন ড. রেজাউর রহমান২৮ অক্টোবর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ