জুনিয়র অ্যাম্পিউটি ফুটবল লঞ্চিং প্রোগ্রাম ও ফাইনাল এক্সিবিশন ম্যাচে অংশ নিতে মায়ের সঙ্গে বগুড়ার শেরপুর থেকে এসেছে ১৩ বছর বয়সী লামিয়া জাহান। সে ষষ্ঠ শ্রেণির একজন শিক্ষার্থী। মা ফারজানা বেগম বলেন, লামিয়ার বয়স যখন সাত বছর, তখন বেড়াতে গিয়ে এক দুর্ঘটনায় পা হারায় লামিয়া। একই দুর্ঘটনায় তাঁর বাবা লিটন মণ্ডলও এক পা হারান। গ্রামে লিটন মণ্ডলের একটি চায়ের দোকান আছে, সেখান থেকে যা রোজগার হয়, তা দিয়েই চলে সংসার।

ফারজানা বলেন, ‘আমরা চাই না আমাদের মেয়ে কারও বোঝা হয়ে থাকুক। তাই ওকে ভালো স্কুলে পড়াচ্ছি।’ লামিয়া জানায়, পড়ালেখা করতে তার যেমন ভালো লাগে, খেলাধুলা করতেও তেমনই ভালো লাগে। বাড়িতে সে এমন খেলাধুলা করার সুযোগ পায় না। প্রশিক্ষণ ক্যাম্পের এই কয়েক দিন খুব ভালো কেটেছে তার।

বুধবার রাজধানীর শহীদ ফারহান ফাইয়াজ খেলার মাঠে জুনিয়র অ্যাম্পিউটি ফুটবল প্রোগ্রামের সমাপনী আয়োজন অনুষ্ঠিত হয়। আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটির (আইসিআরসি) সহযোগিতায় স্পোর্টস ফর হোপ অ্যান্ড ইনডিপেনডেন্স (শি) বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো এ আয়োজন করে। এর আগে ২৫ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া পাঁচ দিনের প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে অংশ নেয় ২৮ জন প্রতিবন্ধী কিশোর ও তরুণ।

‘স্পোর্টস ফর হোপ অ্যান্ড ইনডিপেনডেন্সের (শি) প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী শারমিন ফারহানা প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা অ্যাম্পিউটি ফুটবলের ষষ্ঠ আয়োজন। ফুটবলকে আমরা ওদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চাই। আমাদের অ্যাম্পিউটি (অঙ্গহানি হওয়া) ছেলে ও মেয়েদের দল আছে, আজ জুনিয়র স্তর চালু হলো। আমাদের এখানে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে বাচ্চারা এসেছে। আমরা বিভিন্ন চিকিৎসাকেন্দ্র থেকে বাচ্চাগুলোর তালিকা জোগাড় করি। এরপর তাদের অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলি। এভাবেই ওদের নির্বাচন করেছি।’

সিফাত এসেছে টেকনাফ থেকে। একটি পা নেই তাঁর। খেলায় তাঁর দল বিজয়ী হয়েছে। নিজেও গোল করেছে একটি। উৎফুল্ল সিফাত বলে, ‘মানুষ আমাদের নানা রকম কথা বলত। বলত, এক পা দিয়ে কী করবি? আমাদের খেলাতেও নিত না। কিন্তু আজ সেই এক পা দিয়ে খেলেই চ্যাম্পিয়ন (বিজয়ী) হইছি। আমি আজ অনেক খুশি।’ ভবিষ্যতে বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের পতাকা তুলে ধরতে চায় সতেরো বছরের সিফাত। ভবিষ্যতে বৈশ্বিক আসরে খেলতে চায় সে।

আইসিআরসির ঢাকা ডেলিগেশনের ফিজিক্যাল রিহ্যাবিলিটেশন প্রজেক্ট ম্যানেজার সুভাষ সিনহা বলেন, জুনিয়র অ্যাম্পিউটি ফুটবলের এ উদ্যোগ বাংলাদেশে এবারই প্রথম। আসলে এটি কেবল বাংলাদেশ নয়, পুরো এশিয়াতেই প্রথম। অবশ্য বড়দের (ছেলে) দল দীর্ঘদিন ধরে খেলছে। তাঁরা আগামী সপ্তাহে খেলতে জাকার্তা যাচ্ছে। এটি কোয়ালিফায়ার রাউন্ডের খেলা। এখানে যদি তাঁরা জিততে পারে, তাহলে ২০২৬ সালে কোস্টারিকায় বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পাবে।

ওরা আমার কাছে বাচ্চার মতো। অনেক সময় খেলার পর ওরা ক্লান্ত হয়ে যায়। আমি ঘাড়ে করেও ওদের গাড়ি পর্যন্ত নিয়ে গেছি। আমাদের মতো সুস্থ কাউকে যদি ফুটবল খেলতে বলা হয়, অনেকে হয়তো খেলতে চাইবে না। কিন্তু ওদের একটা করে পা না থাকলেও খেলার আগ্রহের কোনো কমতি নেইকাজলী আক্তার স্বর্ণা, কোচ

মেয়েদের দলের কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন কাজলী আক্তার স্বর্ণা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওরা আমার কাছে বাচ্চার মতো। অনেক সময় খেলার পর ওরা ক্লান্ত হয়ে যায়। আমি ঘাড়ে করেও ওদের গাড়ি পর্যন্ত নিয়ে গেছি। আমাদের মতো সুস্থ কাউকে যদি ফুটবল খেলতে বলা হয়, অনেকে হয়তো খেলতে চাইবে না। কিন্তু ওদের একটা করে পা না থাকলেও খেলার আগ্রহের কোনো কমতি নেই।’

আয়োজনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সেন্টার ফর দ্য রিহ্যাবিলিটেশন অব দ্য প্যারালাইজডের (সিআরপি) প্রতিষ্ঠাতা ভ্যালেরি অ্যান টেইলর, আইসিআরসির অপারেশন বিভাগের প্রধান অ্যাঞ্জেলিকা শপ, স্পোর্টস ফর হোপ অ্যান্ড ইনডিপেনডেন্সের (শি) সহসভাপতি মাহবুবা পান্না।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র অ য ম প উট আম দ র ফ টবল প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

অস্ত্র কিংবা ছুরি নয়, ‘অভিনব’ কায়দায় ১০ লাখ টাকা ছিনতাই

চট্টগ্রামে ‘অভিনব’ কায়দায় এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। অস্ত্র কিংবা ছুরি নয়, যাত্রীবেশে থাকা ছিনতাইকারীরা বমির কথা বলে নির্জন জায়গায় গাড়ি থামিয়ে টাকা ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়।

গতকাল শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে নগরের চান্দগাঁও থানার বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী আনিছুল ইসলাম আজ রোববার দুপুরে চান্দগাঁও থানায় মামলা করার পর বিষয়টি জানাজানি হয়। আনিছুল ইসলাম নগরের বহদ্দারহাট এলাকায় মুঠোফোনে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের এজেন্ট।

আনিছুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল রাত সাড়ে ১০টার দিকে দোকান বন্ধ করে প্রতিদিনের মতো নগরের চান্দগাঁও এলাকায় বাসায় যাওয়ার জন্য বহদ্দারহাট মোড়ে দাঁড়ান। ওই সময় গাড়িতে ওঠার জন্য লোকজনের ভিড় ছিল। ফলে বাসে উঠতে পারেননি। তখন একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা চান্দগাঁও সিঅ্যান্ডবি মোড় যাবে বলে যাত্রী ডাকতে থাকে। অটোরিকশার পেছনে দুজন এবং চালকও তাঁর পাশে এক যাত্রী ছিলেন। পেছনের আসনে ওঠেন আনিছুল ইসলাম।

অটোরিকশাটি বহদ্দারহাট মোড় থেকে বাস টার্মিনালের সামনে জিয়া কমপ্লেক্সের সামনে পৌঁছালে যাত্রীবেশে থাকা ছিনতাইকারীদের একজন বমি করবেন বলে জানান। ওই সময় চালক গাড়ি থামিয়ে ফেলেন কিছুটা নির্জন এলাকায়। বমির কথা বলা যাত্রী নামার জন্য আনিছুলসহ আরেক যাত্রী অটোরিকশা থেকে নামেন। তখনই আনিছুলের হাতে থাকা ব্যাগটি ছিনিয়ে নিয়ে দ্রুত অটোরিকশা করে চলে যান তাঁরা।

চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহেদুল কবির প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি আমরা যাচাই-বাছাই করছি। জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ