হাটের ব্যস্ততা কমে এসেছে। বেলা বাড়ায় বিকিকিনির কোলাহল যখন প্রায় শেষের পথে, ঠিক তখনই চোখে পড়ে এক দৃশ্য। হালকা আকাশি রঙের পোশাকে এক বয়োবৃদ্ধ মানুষ কালো ব্যাগ থেকে আতরের শিশি বের করে পরম মমতায় কারও না কারও কবজিতে লাগিয়ে দিচ্ছেন। তিনি ৭৫ বছর বয়সী মো. খোরশেদ আলম।

রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর কলাহাটে প্রতি হাটবারে দেখা মেলে খোরশেদের। ফজরের পর হাট জেগে উঠলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্রেতা-বিক্রেতার ভিড় কমে আসে। ঠিক তখনই খোরশেদ আলমকে দেখা গেল। হাটে আসা প্রবীণ থেকে শুরু করে দূরপাল্লার ট্রাকচালক—সবাই তাঁর পরিচিত। কেউ হাতে আতর মেখে নেন, কেউ চোখে সুরমার শীতল পরশ বুলিয়ে নেন। বিনিময়ে ভালোবেসে হাতে গুঁজে দেন ৫ বা ১০ টাকার নোট। এই সামান্য আয়েই চলে তাঁর জীবন। তিনি টানা ২৫ বছর ধরে এভাবেই জীবন চালাচ্ছেন।

কারও ওপর নির্ভরশীল নন বানেশ্বরের বাসিন্দা খোরশেদ আলম। আয়রোজগার নিয়ে জানতে চাইলে মুখে নির্মল হাসি ফুটিয়ে বলেন, ‘প্রতিদিন সুরমা আর আতর বেচে খরচ বাদে ২৫০ টাকার মতো থাকে। মানুষ ভালোবেসে ১০ টাকা, ২০ টাকা দেন।’

খোরশেদ আলমের সংসারে এখন আছেন কেবল স্ত্রী। তিন ছেলে ও দুই মেয়ের সবাইকে বিয়ে দিয়েছেন। তাঁরা নিজেদের সংসার নিয়ে ব্যস্ত।

কীভাবে এই সুগন্ধির ব্যবসায় এলেন—জানতে চাইলে খোরশেদ আলম বলেন, ‘একটা বয়স পর্যন্ত গায়ে-গতরে খাটতে পারতাম। যখন দেখলাম শরীরে আর শক্তি নেই, হাতেও কোনো টাকাপয়সা নেই, তখন এই ব্যবসার কথা মাথায় এল। আমি সেই একাত্তর সাল থেকে আতর ব্যবহার করি। অভ্যাসটা ছাড়তে পারিনি। ভাবলাম, এটাকেই জীবিকা করি। সেই থেকে এই ব্যাগ হাতে নিয়েছি।’

খোরশেদ আলমের ব্যবসার মূল পণ্য আতর আর সুরমা। শুধু লাগিয়েই দেন না, কেউ চাইলে বিক্রিও করেন। তাঁর ভাষায়, আতর দিলে একটা সুগন্ধি আসে, মনে শান্তি লাগে। তখন নিজেকে পবিত্র মনে হয়। আর সুরমার মাহাত্ম্য বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, হাদিসেও সুরমা ব্যবহারের কথা বলা আছে।

চোখে সুরমা লাগিয়ে নিচ্ছিলেন ট্রাকচালক মো.

মহাসিন। কলার ট্রাক নিয়ে তিনি কুমিল্লায় যাবেন। মহাসিন বলেন, ‘আমি প্রায়ই চাচার কাছ থেকে চোখে সুরমা দিই। এতে চোখ ঠান্ডা থাকে, দেখতেও ভালো লাগে। এটা তো নবীর সুন্নত। মাঝেমধ্যে আতরও কিনি।’

খোরশেদ আলম বললেন, শুধু বানেশ্বর হাটেই নয়, বিভিন্ন হাটবাজার, গ্রামগঞ্জ, এমনকি রাজশাহী ও নাটোর কোর্ট চত্বরেও তিনি এই আতর-সুরমা ফেরি করেন। তিনি বলেন, ‘এই বয়সে যদি এটা না করতাম, তাহলে কে মুখে ভাত তুলে দিত? এই যে ঘুরিফিরি, এতে শরীরটাও এখনো ঠিক আছে।’

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

২৫ বছর ধরে আতর–সুরমা বিক্রি করেন ৭৫ বছরের খোরশেদ

হাটের ব্যস্ততা কমে এসেছে। বেলা বাড়ায় বিকিকিনির কোলাহল যখন প্রায় শেষের পথে, ঠিক তখনই চোখে পড়ে এক দৃশ্য। হালকা আকাশি রঙের পোশাকে এক বয়োবৃদ্ধ মানুষ কালো ব্যাগ থেকে আতরের শিশি বের করে পরম মমতায় কারও না কারও কবজিতে লাগিয়ে দিচ্ছেন। তিনি ৭৫ বছর বয়সী মো. খোরশেদ আলম।

রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর কলাহাটে প্রতি হাটবারে দেখা মেলে খোরশেদের। ফজরের পর হাট জেগে উঠলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্রেতা-বিক্রেতার ভিড় কমে আসে। ঠিক তখনই খোরশেদ আলমকে দেখা গেল। হাটে আসা প্রবীণ থেকে শুরু করে দূরপাল্লার ট্রাকচালক—সবাই তাঁর পরিচিত। কেউ হাতে আতর মেখে নেন, কেউ চোখে সুরমার শীতল পরশ বুলিয়ে নেন। বিনিময়ে ভালোবেসে হাতে গুঁজে দেন ৫ বা ১০ টাকার নোট। এই সামান্য আয়েই চলে তাঁর জীবন। তিনি টানা ২৫ বছর ধরে এভাবেই জীবন চালাচ্ছেন।

কারও ওপর নির্ভরশীল নন বানেশ্বরের বাসিন্দা খোরশেদ আলম। আয়রোজগার নিয়ে জানতে চাইলে মুখে নির্মল হাসি ফুটিয়ে বলেন, ‘প্রতিদিন সুরমা আর আতর বেচে খরচ বাদে ২৫০ টাকার মতো থাকে। মানুষ ভালোবেসে ১০ টাকা, ২০ টাকা দেন।’

খোরশেদ আলমের সংসারে এখন আছেন কেবল স্ত্রী। তিন ছেলে ও দুই মেয়ের সবাইকে বিয়ে দিয়েছেন। তাঁরা নিজেদের সংসার নিয়ে ব্যস্ত।

কীভাবে এই সুগন্ধির ব্যবসায় এলেন—জানতে চাইলে খোরশেদ আলম বলেন, ‘একটা বয়স পর্যন্ত গায়ে-গতরে খাটতে পারতাম। যখন দেখলাম শরীরে আর শক্তি নেই, হাতেও কোনো টাকাপয়সা নেই, তখন এই ব্যবসার কথা মাথায় এল। আমি সেই একাত্তর সাল থেকে আতর ব্যবহার করি। অভ্যাসটা ছাড়তে পারিনি। ভাবলাম, এটাকেই জীবিকা করি। সেই থেকে এই ব্যাগ হাতে নিয়েছি।’

খোরশেদ আলমের ব্যবসার মূল পণ্য আতর আর সুরমা। শুধু লাগিয়েই দেন না, কেউ চাইলে বিক্রিও করেন। তাঁর ভাষায়, আতর দিলে একটা সুগন্ধি আসে, মনে শান্তি লাগে। তখন নিজেকে পবিত্র মনে হয়। আর সুরমার মাহাত্ম্য বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, হাদিসেও সুরমা ব্যবহারের কথা বলা আছে।

চোখে সুরমা লাগিয়ে নিচ্ছিলেন ট্রাকচালক মো. মহাসিন। কলার ট্রাক নিয়ে তিনি কুমিল্লায় যাবেন। মহাসিন বলেন, ‘আমি প্রায়ই চাচার কাছ থেকে চোখে সুরমা দিই। এতে চোখ ঠান্ডা থাকে, দেখতেও ভালো লাগে। এটা তো নবীর সুন্নত। মাঝেমধ্যে আতরও কিনি।’

খোরশেদ আলম বললেন, শুধু বানেশ্বর হাটেই নয়, বিভিন্ন হাটবাজার, গ্রামগঞ্জ, এমনকি রাজশাহী ও নাটোর কোর্ট চত্বরেও তিনি এই আতর-সুরমা ফেরি করেন। তিনি বলেন, ‘এই বয়সে যদি এটা না করতাম, তাহলে কে মুখে ভাত তুলে দিত? এই যে ঘুরিফিরি, এতে শরীরটাও এখনো ঠিক আছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ