আর্থিক পরিকল্পনা যতই সুচারুভাবে তৈরি করা হোক না কেন, সব সময় তা মসৃণ না–ও হতে পারে। নানা কারণে টাকার প্রয়োজন হতে পারে। প্রয়োজন মেটাতে অনেকেই একাধিক ব্যক্তিগত ঋণ বা পারসোনাল ঋণ নেন। পারিবারিক চিকিৎসার খরচ, জরুরি গৃহ মেরামত ইত্যাদি কারণে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান কিংবা মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) থেকে ঋণ নিতে হতে পারে। ফলে একই সঙ্গে চলে এসব ঋণের কিস্তি বা ইএমআই পরিশোধ।

এসব ঋণের কিস্তি পরিশোধে দরকার ব্যক্তিগত ঋণ ব্যবস্থাপনা। সময়মতো ঋণ পরিশোধ না করলে আর্থিক বিপর্যয় ঘটতে পারে। একাধিক ব্যক্তিগত ঋণ পরিশোধের কিছু কৌশল আছে। সেগুলো এখানে আলোচনা করা হলো—

১.

স্বয়ংক্রিয়ভাবে কিস্তি পরিশোধের ব্যবস্থা

একাধিক ঋণের কিস্তি আলাদা আলাদা তারিখে পরিশোধ করা ঝামেলাপূর্ণ হতে পারে। তাই কিস্তি স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিশোধের সুবিধা চালু করতে পারেন। এতে আপনাকে প্রতি মাসে আলাদা করে কিস্তি পরিশোধের চিন্তা করতে হবে না। বেতন পাওয়ার দুই-তিন দিনের মধ্যে যাতে কিস্তির টাকা কেটে রাখা হয়, সেই ব্যবস্থা করতে পারেন ব্যাংকের সঙ্গে কথা বলে। কারণ, খরচ শুরুর আগেই ঋণ শোধ করা ভালো।

২. মোট ঋণের হিসাব তৈরি করুন

আপনার সামগ্রিক ঋণ অবস্থার একটি পরিষ্কার ধারণা নিতে হবে। একটি এক্সেল শিটে প্রতিটি ঋণের বিস্তারিত লিখে রাখুন। যেমন ব্যাংকের নাম, ঋণ নম্বর, পরিমাণ, সুদের হার, মেয়াদ, বাকি কিস্তির সংখ্যা, মোট বকেয়া ইত্যাদি।

এই তালিকা আপনাকে মোট বকেয়া এবং প্রতিটি ঋণের আলাদা অবস্থা বুঝতে সাহায্য করবে, যা পরবর্তী পরিশোধ পরিকল্পনায় সহায়ক হবে।

৩. মাসের খরচ ঋণের কিস্তি যুক্ত করুন

ঋণের হিসাব তৈরি করার পর তা মাসের খরচের সঙ্গে যুক্ত করতে পারেন। এতে সুবিধা হলো মাসের খরচের পাশাপাশি ঋণ পরিশোধেও দায়বদ্ধতা থাকে। অপ্রয়োজনীয় খরচ বাদ দিতে পারবেন।

৪. আগে ছোট ঋণ, পরে বড় ঋণ শোধ

ঋণ পরিশোধের দুটি জনপ্রিয় কৌশল রয়েছে। এক. ছোট ঋণ আগে পরিশোধ করুন। একে একে ছোট ঋণ শেষ হলে মানসিক চাপ কমবে। দুই. সর্বোচ্চ সুদের হার, এমন ঋণ আগে শোধ করুন। এতে সুদের খরচ কমে।

যে কৌশলটি আপনার জন্য উপযুক্ত, সেটি বেছে নিন

৫. ঋণ পুনর্গঠন

প্রয়োজনে ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করে ঋণ পুনর্গঠনের সুযোগ জানতে পারেন। মেয়াদ বাড়ানো, সুদের হার কমানো বা একাধিক ঋণ একত্র করার সুযোগ পেতে পারেন।

৬. এককালীন টাকা পেলে ঋণ শোধ আগে

যখনই বোনাস, প্রণোদনা, উৎসবভাতা বা যেকোনো ভাতা ও প্রণোদনা পাবেন, তা দিয়ে ঋণ পরিশোধকে অগ্রাধিকারে দেবেন। মনে রাখবেন, বড় ঋণের চেয়ে ছোট ঋণ কিংবা সবচেয়ে বেশি সুদের ঋণ আগে শোধ করলে আর্থিক চাপ দ্রুত কমবে।

৭. ক্রেডিট কার্ডের বকেয়া কিস্তিতে শোধ

ক্রেডিট কার্ডের বকেয়া থাকলে প্রতি মাসেই সুদ দিতে হয়। পুরো টাকা একসঙ্গে পরিশোধ করা না গেলে ব্যাংকের সঙ্গে কথা বলে তা কিস্তিতে পরিশোধের ব্যবস্থা করতে পারে।

৮. পরামর্শকের সাহায্য নিন

যদি একাধিক ঋণ সামলাতে সমস্যা হয়, পেশাদার ঋণ পরামর্শকের সাহায্য নিন। তিনি আপনার জন্য একটি বাস্তবসম্মত পরিশোধ পরিকল্পনা তৈরি ও বাস্তবায়নে সহায়তা করবেন।

অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতিতে একাধিক ব্যক্তিগত ঋণ নিতে হতে পারে। কিন্তু সঠিক পরিকল্পনা ও নিয়মানুবর্তিতায় এগুলো পরিশোধও সম্ভব। বুদ্ধিদীপ্ত কৌশল অবলম্বন করে এবং নিয়মিত পরিশোধ বজায় রেখে আপনি ধীরে ধীরে ঋণমুক্ত জীবনের পথে এগিয়ে যেতে পারেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ঋণ র ক স ত পর শ ধ র স র খরচ ব যবস থ আর থ ক শ ধ কর ছ ট ঋণ

এছাড়াও পড়ুন:

অস্ত্র কিংবা ছুরি নয়, ‘অভিনব’ কায়দায় ১০ লাখ টাকা ছিনতাই

চট্টগ্রামে ‘অভিনব’ কায়দায় এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। অস্ত্র কিংবা ছুরি নয়, যাত্রীবেশে থাকা ছিনতাইকারীরা বমির কথা বলে নির্জন জায়গায় গাড়ি থামিয়ে টাকা ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়।

গতকাল শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে নগরের চান্দগাঁও থানার বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী আনিছুল ইসলাম আজ রোববার দুপুরে চান্দগাঁও থানায় মামলা করার পর বিষয়টি জানাজানি হয়। আনিছুল ইসলাম নগরের বহদ্দারহাট এলাকায় মুঠোফোনে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের এজেন্ট।

আনিছুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল রাত সাড়ে ১০টার দিকে দোকান বন্ধ করে প্রতিদিনের মতো নগরের চান্দগাঁও এলাকায় বাসায় যাওয়ার জন্য বহদ্দারহাট মোড়ে দাঁড়ান। ওই সময় গাড়িতে ওঠার জন্য লোকজনের ভিড় ছিল। ফলে বাসে উঠতে পারেননি। তখন একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা চান্দগাঁও সিঅ্যান্ডবি মোড় যাবে বলে যাত্রী ডাকতে থাকে। অটোরিকশার পেছনে দুজন এবং চালকও তাঁর পাশে এক যাত্রী ছিলেন। পেছনের আসনে ওঠেন আনিছুল ইসলাম।

অটোরিকশাটি বহদ্দারহাট মোড় থেকে বাস টার্মিনালের সামনে জিয়া কমপ্লেক্সের সামনে পৌঁছালে যাত্রীবেশে থাকা ছিনতাইকারীদের একজন বমি করবেন বলে জানান। ওই সময় চালক গাড়ি থামিয়ে ফেলেন কিছুটা নির্জন এলাকায়। বমির কথা বলা যাত্রী নামার জন্য আনিছুলসহ আরেক যাত্রী অটোরিকশা থেকে নামেন। তখনই আনিছুলের হাতে থাকা ব্যাগটি ছিনিয়ে নিয়ে দ্রুত অটোরিকশা করে চলে যান তাঁরা।

চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহেদুল কবির প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি আমরা যাচাই-বাছাই করছি। জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ