নীতি সুদহার কমাল ফেডারেল রিজার্ভ, এ বছর আর না কমানোর সম্ভাবনা
Published: 30th, October 2025 GMT
বছরের শেষ প্রান্তে আবার নীতি সুদহার কমাল যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ। এবার দশমিক ২৫ শতাংশ হারে নীতি সুদ কমানো হয়েছে এবার। সেই সঙ্গে ফেডের চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, চলতি বছর এটাই সম্ভবত শেষবারের মতো নীতি সুদহার কমানো।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বেকারত্বের হার বাড়তি। এ ঝুঁকির কথা বিবেচনায় রেখে পাওয়েল বলেছেন, অর্থনীতির পূর্ণাঙ্গ চিত্র পাওয়া না গেলে নীতি সুদহার কমানো ঝুঁকিপূর্ণ হবে। সে কারণেই তিনি বলেছেন, এটাই সম্ভবত বছরের শেষবারের মতো নীতি সুদহার হ্রাসের ঘটনা। খবর রয়টার্স
মূলত বাজারে আরও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে দশমিক ২৫ শতাংশ হারে নীতি সুদ কমিয়েছে ফেডারেল রিজার্ভ। বেকারত্বের হার বাড়তি থাকায় নীতি সুদহার আরও কমিয়ে বাজারে কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রয়োজনীয়তা ছিল। সেই বাস্তবতা বোঝেন ফেড চেয়ারম্যান। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যয় নিয়ে অচলাবস্থার জেরে যুক্তরাষ্ট্রে শাটডাউন চলেছে কিছুদিন। সে কারণে ফেডারেল রিজার্ভের হাতে পর্যাপ্ত তথ্য নেই।
জেরোম পাওয়েল সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা যতটা সম্ভব তথ্য সংগ্রহ করব, সেগুলো ভালোভাবে পর্যালোচনা করব ও খতিয়ে দেখব—এটাই আমাদের কাজ। দুই দিনের নীতিনির্ধারণী বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে এ কথাগুলো বলেন পাওয়েল। তিনি বলেন, ফেড নিজস্ব জরিপ, বেসরকারি তথ্যসূত্র ও দেশজুড়ে বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যমে অনানুষ্ঠানিক সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করবে।
পাওয়েল আরও বলেন, ‘এ তথ্য সংগ্রহের প্রভাব যে ডিসেম্বরের মুদ্রানীতির বৈঠকে অনুভূত হবে, তা হয়তো নয়। যদিও এমনটা কল্পনা করা যায়। কুয়াশায় গাড়ি চালাতে হলে যেমন গতি কমাতে হয়, এখন আমাদের তেমনই সতর্ক থাকতে হবে।’
পাওয়েলের এসব মন্তব্যে যে বিষয় স্পষ্ট তা হলো বাজেট নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন ও কংগ্রেসের ডেমোক্র্যাটদের দ্বন্দ্ব দীর্ঘায়িত হওয়ায় ফেড জটিলতার মুখে পড়েছে। সরকারের জরিপ ও তথ্য সংগ্রহ বন্ধ থাকায় নীতিনির্ধারণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সুদের হার আরও কমানোর যেসব পদক্ষেপ নিতে চান, সেগুলো নিতে হয়তো বিলম্ব হবে।
তথ্য–উপাত্ত ছাড়া আরও কিছু বিষয় ফেডের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলেছে। মুদ্রানীতি ভবিষ্যতে কোন পথে এগোবে, তা নিয়ে ফেডের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে ‘তীব্র মতভেদ’ তৈরি হয়েছে। পাওয়েলের ভাষায়, ‘একটি মত এখন ক্রমেই জোরালো হচ্ছে। মুদ্রানীতি কমিটির বেশির ভাগ সদস্য মনে করছেন, আমাদের অন্তত একটি ত্রৈমাসিক পর্যন্ত অপেক্ষা করা উচিত, অর্থাৎ শিগগিরই আবার সুদের হার কমানোর প্রয়োজনীয়তা না–ও থাকতে পারে।’
পাওয়েলের মন্তব্যের পর আর্থিক বাজারে স্বাভাবিকভাবেই প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। আগামী ডিসেম্বরের ৯-১০ তারিখের বৈঠকে আবার সুদের হার কমবে—এমন সম্ভাবনায় বিনিয়োগকারীদের আস্থা কিছুটা কমে যায়। এখন ধরা হচ্ছে, সেই সম্ভাবনার অনুপাত ২:১। অন্যদিকে এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক দিনের শেষ ভাগে গতি হারায়। যত পয়েন্ট উঠেছিল, ঠিক ততটাই হারিয়ে ফেলে প্রায় অপরিবর্তিত অবস্থায় দিন শেষ করে এই সূচক।
অক্সফোর্ড ইকোনমিকসের যুক্তরাষ্ট্রবিষয়ক উপপ্রধান অর্থনীতিবিদ মাইকেল পিয়ার্স বলেন, ‘পাওয়েলের ইঙ্গিত স্পষ্ট, এবারকার বৈঠক ও পরবর্তী বৈঠকগুলোর মধ্যে বিরতি আসছে, অর্থাৎ পরের বৈঠকে সুদহার কমছে না।
পিয়ার্স আরও বলেন, ফেডের নীতিনির্ধারণী কমিটি সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে ধারাবাহিকভাবে সুদহার কমানোর সিদ্ধান্ত নিলেও সদস্যদের অনেকেই এখনো উদ্বিগ্ন। ২০২৫ সালের বাকি দুই মাসে মূল্যস্ফীতির হার আরও বাড়তে পারে বলেই আশঙ্কা।
নীতি সুদহারের প্রভাববাজারে মুদ্রার প্রবাহ কতটা থাকবে, অর্থাৎ মানুষের হাতে কী পরিমাণ অর্থের জোগান থাকবে, মুদ্রানীতির মাধ্যমে তা নির্ধারিত হয়। ফেডারেল রিজার্ভ ঠিক তা–ই করে থাকে। নীতি সুদহার কমলে সমাজে অর্থের প্রবাহ বৃদ্ধি পায়। বাড়লে ঠিক তা উল্টোটা হয়। সে জন্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নীতি সুদহার বাড়ানো হয়।
এদিকে ফেডারেল রিজার্ভের (ফেড) নীতি সুদহার শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়; বরং গোটা বৈশ্বিক অর্থনীতির দিকনির্দেশক। ফেড সুদহার বাড়ালে ডলারের মান শক্তিশালী হয়। ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে মূলধন সরে যায়, তাদের মুদ্রা দুর্বল হয়, আমদানি ব্যয় ও ঋণের চাপ বাড়ে। বিপরীতে সুদহার কমলে বৈশ্বিক বিনিয়োগ বেড়ে যায়। কেননা তখন বন্ডে বিনিয়োগ করার চেয়ে প্রত্যক্ষ বিনিয়োগে যাওয়া লাভজনক বলে মনে করেন বিনিয়োগকারীরা।
এ পরিস্থিতিতে পণ্যের দাম বাড়ে, অর্থনীতিতে বাড়ে তারল্য। এভাবে ফেডের সিদ্ধান্তই কার্যত বিশ্ববাজারে পুঁজির প্রবাহ, মুদ্রার বিনিময়হার ও মূল্যস্ফীতির গতি নির্ধারণ করে। সে কারণে ফেডের সুদহার পরিবর্তন বৈশ্বিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও নীতিনির্ধারণের অন্যতম প্রধান নিয়ামক।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র হ র কম ন কম ন র আরও ক
এছাড়াও পড়ুন:
নাঈমকে টপকে বছরে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড তানজিদের
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে গতকাল দ্বিতীয় টি–টোয়েন্টিতে ৪৮ বলে ৬১ রান করেন বাংলাদেশ ওপেনার তানজিদ হাসান। ১৫০ রানের লক্ষ্যে এমন একটি ইনিংস কেউ খেললে সেই দলের জয়ের সুযোগ থাকে অনেক বেশি।
কিন্তু চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচে সুযোগটা কাজে লাগাতে পারেননি বাংলাদেশের অন্য ব্যাটসম্যানরা। জাকের আলী, শামীম হোসেনদের ব্যর্থতায় দল হেরেছে ১৪ রানে। এমন হারে আক্ষেপ থাকারই কথা তানজিদের।
তবে তানজিদ এমন ম্যাচেই গড়েছেন রেকর্ড। গতকাল বাংলাদেশের হয়ে এক বছরে সবচেয়ে বেশি টি–টোয়েন্টি রান করার রেকর্ড গড়েন তানজিদ। বাঁহাতি এই ওপেনার চলতি বছর ২৩ ইনিংসে রান করেছেন ৬২২। চলতি বছরে ১৩৫.২১ স্ট্রাইকরেটে ব্যাটিং করা তানজিদের ফিফটি ৬টি। গড় ২৯.৬১। চলতি বছরে তানজিদ ছক্কা মেরেছেন ৩৪টি, এটি এক বছরে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ।
প্রথম আলো