২৬ উইকেট নিয়ে যৌথভাবে শীর্ষে রিশাদ, সুযোগ আছে তাসকিন-মোস্তাফিজেরও
Published: 30th, October 2025 GMT
বছর শেষ হয়ে আসছে। আর বছরের এই শেষভাগে এসে কে কেমন করলেন, সেই পরিসংখ্যানে চোখ রাখেন অনেকেই। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এ বছর সর্বোচ্চ উইকেটশিকারির তালিকাটা দেখলে খুশি হতে পারেন অনেকে বাংলাদেশি সমর্থক। টেস্ট খেলুড়ে দলগুলোর মধ্যে এই সংস্করণে এ বছর এখন পর্যন্ত যৌথভাবে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি বাংলাদেশের লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন।
যেহেতু শুধু টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোর কথা নির্দিষ্ট করে বলা হলো, তার মানে একটা ‘কিন্তু’ আছে। সেটা হলো, আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সব দল মিলিয়ে এ বছর রিশাদ সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি নন।
এই জায়গাটি আপাতত বাহরাইনের পেসার রিজওয়ান বাটের দখলে। ২৯ ম্যাচে ৫০ উইকেট নেওয়া রিজওয়ানকে এ বছর এই সংস্করণে উইকেট নেওয়ায় কেউ এখনো পেছনে ফেলতে পারেননি। তবে তাঁর কাঁধে নিশ্বাস ফেলছেন অস্ট্রিয়ার পেসার উমাইর তারিক। ৩০ ম্যাচে তাঁর শিকার ৪৮ উইকেট। অস্ট্রিয়ার আরেক পেসার আকিব ইকবাল ৩৬ ম্যাচে ৪৩ উইকেট নিয়ে তৃতীয়।
টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোর সঙ্গে আইসিসির সহযোগী দেশগুলোও হিসাবে নিলে এ বছর আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ উইকেট নেওয়ার তালিকায় রিশাদ দশম। অর্থাৎ প্রথম নয়জনই সহযোগী দেশের খেলোয়াড়। আর দশম স্থানে থেকে টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারির তালিকায় যৌথভাবে নেতৃত্ব দিচ্ছেন রিশাদ।
প্রথম আলো গ্রাফিকস.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
যেভাবে বাঁচবে মেছো বিড়াল
তিন মোটরসাইকেলের ছোট কাফেলা থামল মেহেরপুরের এক নাম না-জানা বিলে। দিনের শেষ গন্তব্যে বিকেলের আলো তখনো তেজীয়ান। মনে হচ্ছিল গল্পের তেপান্তরের মাঠে এসে পড়েছি। সারা দিনে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার পেরিয়ে আমরা ছুটেছি এই রকম এক বিল থেকে আরেক বিলে—হারিয়ে যেতে বসা এক ছোট বুনো বিড়ালকে বোঝার ও বাঁচানোর অভিযানে। সে আমাদের জলাভূমির মেছো বিড়াল।
পানকৌড়ি সংরক্ষণ ক্লাবের ১০ বছর ধরে চালানো নিরলস-নীরব প্রচেষ্টায় চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর এখন ‘মেছো বিড়ালের স্বর্গভূমি’ নামে সারা দেশে পরিচিত। তাদের সহায়তা করছে আরণ্যক ফাউন্ডেশন। বিল-খামারের মাঝে এই বিড়াল কীভাবে টিকে আছে আর মানুষই–বা কী ভাবছে, তাই নিয়ে কাজ করছি।
বিলের মাঝখানে ছোট খামার। চারপাশে ধানি জমি। চারপাশের শুকনো জমিজুড়ে মেছো বিড়াল-বনবিড়ালের পায়ের ছাপ। খামারের দেখভালের দায়িত্বে থাকা মানুষটি একসময় মেছো বিড়াল মারতেন। পানকৌড়ি সংরক্ষণ ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা বখতিয়ার হামিদসহ অন্যদের চেষ্টায় তিনি এখন মেছো বিড়াল রক্ষায় নিয়োজিত। বুনো প্রাণীদের কিছু হলেই পানকৌড়িকে জানান। এখানে আমরা একটি ক্যামেরা ট্র্যাপ বসালাম।
মেছো বিড়াল দক্ষিণ এশিয়ার জলাভূমির এক অনন্য বাসিন্দা। গড় ওজন ৫ থেকে ১৬ কেজি—না অনেক বড়, না একেবারে ছোট। বাসার বিড়ালের মতো নয়, এরা জলপ্রেমী প্রাণী। পানিতে সাঁতার কাটা, মাছ ধরা, জলচর পাখি শিকার—সবই এদের দৈনন্দিন আচরণ। ব্যাঙের মতো জালযুক্ত পা, ছোট লেজ আর খয়েরি-হলুদ শরীরে ছোট কালো ছোপ—এই চেহারাই এদের আলাদা করে। কিন্তু এই ছোপই যেন কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে তাদের জন্য। গ্রামীণ জনপদে এদের দেখা গেলেই মানুষ ভাবে, ‘বাঘ বেরিয়েছে’। ভয় বা ভুল ধারণা থেকে অনেক সময় প্রাণ হারায় এই নিরীহ প্রাণী। ফেসবুকে প্রায়ই দেখা যায়, ‘মেছো বাঘ’ ধরার বা মারার পোস্ট। অথচ তারা বাঘ নয়, আমাদের জলাভূমির ভারসাম্য রক্ষাকারী এক গুরুত্বপূর্ণ প্রজাতি। বন বিভাগের এক পোস্টারে দেখলাম, প্রতিটি মেছো বিড়াল জীবদ্দশায় ইঁদুর খেয়ে ৫০ লাখ টাকার ফসল রক্ষা করে। মেছো বিড়ালদের খাদ্যাভ্যাস নিয়ে প্রয়োজন গবেষণা, যাতে উঠে আসবে আরও চমকপ্রদ তথ্য।
ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে পেরোলেই নব্বইয়ের দশকের জলাভূমিবিধৌত বাংলাদেশ কেমন ছিল, তার আঁচ পাওয়া যায়। বিস্তীর্ণ বিল-বাঁওড় আর পাড়ের নলবনগুলোতে আমাদের ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণী আর পাখি এখনো বেশ আছে। তবে বছর দুই আগেও পদ্মার দক্ষিণের জেলাগুলোয় মেছো বিড়ালেরা শুধু বেঘোরে মারা পড়ত। নতুন হওয়া মাওয়া হাইওয়েতে পড়ে থাকা মৃত মেছো বিড়াল ছিল নিত্যসংবাদ। তখন কিন্তু দেখার মতো কেউ ছিল না। ২০০৫ থেকে ২০২১ সালে শুধু চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরেই ৫০টির বেশি মেছো বিড়ালের মৃত্যুর খবর সংবাদপত্রে এসেছে। ২০২১ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত তিন বছরে প্রায় সমানসংখ্যক মেছো বিড়ালের মৃত্যুসংবাদ এসেছে। কোথাও তাকে পিটিয়ে মারা হয়েছে, কোথাও পড়েছে গাড়ির নিচে। কিছু বাচ্চাকে মায়ের কাছ থেকে আলাদা করে খাঁচায় পোরা হয়েছিল চিত্তবিনোদনের নামে।
চুয়াডাঙ্গার বিরান বিলে ক্যামেরা ট্র্যাপে ধরা পড়া মেছো বিড়াল