কক্সবাজার সৈকতের লাবণী পয়েন্টে ঝুড়িভর্তি গোলাকার ফল নিয়ে বসেছেন এক বিক্রেতা। তাকে ঘিরে অনেক পর্যটকের ভিড়। ফলটি দেখতে হলদে সবুজ। আকৃতিতে টেনিস বলের চেয়ে ছোট। ফলের আকার অনুযায়ী প্রতিটি ২০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি করছেন বিক্রেতা। ক্রেতার হাতে দেওয়ার আগে ফলের মাথা কেটে ভেতরে হালকা বিটলবণ ও মরিচের গুঁড়া ছিটিয়ে পরিবেশন করছেন। মুখে দিলেই টক, ঝাল, মিষ্টির একটা অপূর্ব অনুভূতি। বিচিত্র স্বাদের এই ফলের স্থানীয় নাম আনারকলি।

কৃষি বিভাগের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, আনারকলি সুদূর দক্ষিণ আমেরিকার ব্রাজিল ও প্যারাগুয়ের প্রকৃতিতে জন্মায়। ইংরেজি নাম প্যাশন ফল। বৈজ্ঞানিক নাম প্যাসিফ্লোরা এডুলিস। ইদানীং বাংলাদেশেও এর চাষ হচ্ছে। বিদেশি হলেও কক্সবাজার সৈকতে দেশি ফলের মতোই বিক্রি হয়। টক–মিষ্টি স্বাদের এই ফল পর্যটকদের ভীষণ পছন্দের।

প্যাশন বা আনারকলি জনপ্রিয় হওয়ার পেছনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেরও অবদান রয়েছে। পর্যটকেরা ফল খেয়ে ছবি পোস্ট করায় এটি এখন সৈকতের অন্যতম আকর্ষণ। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, পর্যটন মৌসুমে সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে দৈনিক অন্তত ৭ থেকে ১০ হাজার আনারকলি বিক্রি হয়।

গতকাল বুধবার সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে গিয়ে দেখা গেল, দেশি আমড়া কিংবা ক্ষীরার পাশাপাশি বিক্রেতারা আনারকলি নিয়েও বসেছেন। এখানকার এক বিক্রেতা জানান, পাঁচ থেকে সাত বছর আগে মাত্র কয়েকজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সৈকতে আনারকলি বিক্রি করতেন। পর্যটকদের কাছে ফলটির চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এখন অনেকেই এই ফল নিয়ে বসেন। বিক্রিও বেশ ভালো হচ্ছে। বর্তমানে কক্সবাজার পৌর এলাকার সৈকতে অন্তত ৩০ জন বিক্রেতা আনারকলি বিক্রি করে সংসার চালান বলে জানা গেল।

প্যাশন বা আনারকলি জনপ্রিয় হওয়ার পেছনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেরও অবদান রয়েছে। পর্যটকেরা ফল খেয়ে ছবি পোস্ট করায় এটি এখন সৈকতের অন্যতম আকর্ষণ। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, পর্যটন মৌসুমে সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে দৈনিক অন্তত ৭ থেকে ১০ হাজার আনারকলি বিক্রি হয়।

পুষ্টিগুণে ভরা

রাজধানী ঢাকার গভর্নমেন্ট কলেজ অব অ্যাপ্লাইড হিউম্যান সাইন্সের খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক ফাতেমা আকতার জানান, আনারকলি বা প্যাশন ফলে আছে ভিটামিন সি, ভিটামিন এ আর ভিটামিন বি কমপ্লেক্স। ভিটামিন বি কমপ্লেক্সের ভেতর আলাদাভাবে বলতে হয় নায়াসিন, রিবোফ্লাভিন ও ফোলেটের কথা। এতে আরও আছে পটাশিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেশিয়াম এবং খানিকটা আয়রন। আনারকলি ফলে অনেকটা আঁশ থাকায় ওজন কমাতে সহায়ক।

আনারকলি ফলে থাকা প্রতিটি উপাদানই সুস্থতার জন্য অপরিহার্য। এতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদানগুলো দেহের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে, প্রদাহ কমাতে, দেহকে ভেতর থেকে সতেজ রাখতে এবং রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে উপকারী এই ফল।

লতাজাতীয় গাছে ১০০ থেকে ২০০টি পর্যন্ত ফল ধরে। টানা চার পাঁচ বছর গাছটি ফল দেয়। সেপ্টেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত এ ফল বেশি ফলে। তবে চাহিদা বাড়ায় এ ফল রামুর ঈদগড় ও বান্দরবানের কয়েকটি উপজেলায় এখন বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে।আশীষ কুমার, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, কক্সবাজার কার্যালয়।কোথায় চাষ হচ্ছে

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয় সূত্র জানায়, কক্সবাজারের টেকনাফ, উখিয়া ও রামু উপজেলার পাহাড়ি অঞ্চলে এ ফলের চাষ হচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আশীষ কুমার প্রথম আলোকে বলেন, লতাজাতীয় গাছে ১০০ থেকে ২০০টি পর্যন্ত ফল ধরে। টানা চার থেকে পাঁচ বছর গাছটি ফল দেয়। সেপ্টেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত এ ফল বেশি ফলে। তবে চাহিদা বাড়ায় এ ফল রামুর ঈদগড় ও বান্দরবানের কয়েকটি উপজেলায় এখন বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে।

বিক্রেতারা জানান, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি, লামা ও আলীকদমের পাহাড়ি এলাকার বাগানগুলো থেকে আনারকলি আসছে কক্সবাজারে।

আনারকলির পাইকারি বিক্রেতা আজমল হুদা প্রথম আলোকে বলেন, রামুর ঈদগড়ে আনারকলির ভালো উৎপাদন হচ্ছে। সেখানে স্থানীয় চাকমা ও মুসলিম পরিবারগুলো বাণিজ্যিকভাবে চাষ করছেন। চাহিদা ও দাম বাড়ায় এখন অনেকেই এই ফলের চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।

ব্যবসায়ী আজমল হুদা বলেন, ছোট আকারের আনারকলি ১০ টাকা, মাঝারি ১৫ ও বড় ২০ টাকা দরে তিনি সরবরাহ করেন। গড় হিসাবে তিনি এ ফল ১৫ টাকায় খুচরা ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করেন। ফলটি সাত থেকে আট দিন পর্যন্ত খোলা জায়গায় সংরক্ষণ করা যায়।

কক্সবাজারের টেকনাফের জহুরা বেগম আনারকলি বিক্রি করে সংসার চালান। সৈকতের লবণী পয়েন্টে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, সাত বছর আগে স্বামী-সন্তান নিয়ে কক্সবাজারে এসে থাকছেন। জীবিকার কোনো উপায় না পেয়ে আনারকলি বিক্রি শুরু করেন। এখন এই ফলই তাঁর সংসারের ভরসা। প্রতিদিন ৯০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা আয় হয় তাঁর। মোটামুটি খেয়েপরে বাঁচতে পারছেন এই ফলের জন্য।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ফল র ম স কত র র স কত য় এখন এই ফল

এছাড়াও পড়ুন:

দক্ষিণ আমেরিকার প্যাশন কক্সবাজারে এসে হলো আনারকলি, কেন বাড়ছে এর জনপ্রিয়তা

কক্সবাজার সৈকতের লাবণী পয়েন্টে ঝুড়িভর্তি গোলাকার ফল নিয়ে বসেছেন এক বিক্রেতা। তাকে ঘিরে অনেক পর্যটকের ভিড়। ফলটি দেখতে হলদে সবুজ। আকৃতিতে টেনিস বলের চেয়ে ছোট। ফলের আকার অনুযায়ী প্রতিটি ২০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি করছেন বিক্রেতা। ক্রেতার হাতে দেওয়ার আগে ফলের মাথা কেটে ভেতরে হালকা বিটলবণ ও মরিচের গুঁড়া ছিটিয়ে পরিবেশন করছেন। মুখে দিলেই টক, ঝাল, মিষ্টির একটা অপূর্ব অনুভূতি। বিচিত্র স্বাদের এই ফলের স্থানীয় নাম আনারকলি।

কৃষি বিভাগের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, আনারকলি সুদূর দক্ষিণ আমেরিকার ব্রাজিল ও প্যারাগুয়ের প্রকৃতিতে জন্মায়। ইংরেজি নাম প্যাশন ফল। বৈজ্ঞানিক নাম প্যাসিফ্লোরা এডুলিস। ইদানীং বাংলাদেশেও এর চাষ হচ্ছে। বিদেশি হলেও কক্সবাজার সৈকতে দেশি ফলের মতোই বিক্রি হয়। টক–মিষ্টি স্বাদের এই ফল পর্যটকদের ভীষণ পছন্দের।

প্যাশন বা আনারকলি জনপ্রিয় হওয়ার পেছনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেরও অবদান রয়েছে। পর্যটকেরা ফল খেয়ে ছবি পোস্ট করায় এটি এখন সৈকতের অন্যতম আকর্ষণ। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, পর্যটন মৌসুমে সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে দৈনিক অন্তত ৭ থেকে ১০ হাজার আনারকলি বিক্রি হয়।

গতকাল বুধবার সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে গিয়ে দেখা গেল, দেশি আমড়া কিংবা ক্ষীরার পাশাপাশি বিক্রেতারা আনারকলি নিয়েও বসেছেন। এখানকার এক বিক্রেতা জানান, পাঁচ থেকে সাত বছর আগে মাত্র কয়েকজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সৈকতে আনারকলি বিক্রি করতেন। পর্যটকদের কাছে ফলটির চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এখন অনেকেই এই ফল নিয়ে বসেন। বিক্রিও বেশ ভালো হচ্ছে। বর্তমানে কক্সবাজার পৌর এলাকার সৈকতে অন্তত ৩০ জন বিক্রেতা আনারকলি বিক্রি করে সংসার চালান বলে জানা গেল।

প্যাশন বা আনারকলি জনপ্রিয় হওয়ার পেছনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেরও অবদান রয়েছে। পর্যটকেরা ফল খেয়ে ছবি পোস্ট করায় এটি এখন সৈকতের অন্যতম আকর্ষণ। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, পর্যটন মৌসুমে সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে দৈনিক অন্তত ৭ থেকে ১০ হাজার আনারকলি বিক্রি হয়।

পুষ্টিগুণে ভরা

রাজধানী ঢাকার গভর্নমেন্ট কলেজ অব অ্যাপ্লাইড হিউম্যান সাইন্সের খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক ফাতেমা আকতার জানান, আনারকলি বা প্যাশন ফলে আছে ভিটামিন সি, ভিটামিন এ আর ভিটামিন বি কমপ্লেক্স। ভিটামিন বি কমপ্লেক্সের ভেতর আলাদাভাবে বলতে হয় নায়াসিন, রিবোফ্লাভিন ও ফোলেটের কথা। এতে আরও আছে পটাশিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেশিয়াম এবং খানিকটা আয়রন। আনারকলি ফলে অনেকটা আঁশ থাকায় ওজন কমাতে সহায়ক।

আনারকলি ফলে থাকা প্রতিটি উপাদানই সুস্থতার জন্য অপরিহার্য। এতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদানগুলো দেহের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে, প্রদাহ কমাতে, দেহকে ভেতর থেকে সতেজ রাখতে এবং রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে উপকারী এই ফল।

লতাজাতীয় গাছে ১০০ থেকে ২০০টি পর্যন্ত ফল ধরে। টানা চার পাঁচ বছর গাছটি ফল দেয়। সেপ্টেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত এ ফল বেশি ফলে। তবে চাহিদা বাড়ায় এ ফল রামুর ঈদগড় ও বান্দরবানের কয়েকটি উপজেলায় এখন বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে।আশীষ কুমার, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, কক্সবাজার কার্যালয়।কোথায় চাষ হচ্ছে

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয় সূত্র জানায়, কক্সবাজারের টেকনাফ, উখিয়া ও রামু উপজেলার পাহাড়ি অঞ্চলে এ ফলের চাষ হচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আশীষ কুমার প্রথম আলোকে বলেন, লতাজাতীয় গাছে ১০০ থেকে ২০০টি পর্যন্ত ফল ধরে। টানা চার থেকে পাঁচ বছর গাছটি ফল দেয়। সেপ্টেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত এ ফল বেশি ফলে। তবে চাহিদা বাড়ায় এ ফল রামুর ঈদগড় ও বান্দরবানের কয়েকটি উপজেলায় এখন বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে।

বিক্রেতারা জানান, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি, লামা ও আলীকদমের পাহাড়ি এলাকার বাগানগুলো থেকে আনারকলি আসছে কক্সবাজারে।

আনারকলির পাইকারি বিক্রেতা আজমল হুদা প্রথম আলোকে বলেন, রামুর ঈদগড়ে আনারকলির ভালো উৎপাদন হচ্ছে। সেখানে স্থানীয় চাকমা ও মুসলিম পরিবারগুলো বাণিজ্যিকভাবে চাষ করছেন। চাহিদা ও দাম বাড়ায় এখন অনেকেই এই ফলের চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।

ব্যবসায়ী আজমল হুদা বলেন, ছোট আকারের আনারকলি ১০ টাকা, মাঝারি ১৫ ও বড় ২০ টাকা দরে তিনি সরবরাহ করেন। গড় হিসাবে তিনি এ ফল ১৫ টাকায় খুচরা ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করেন। ফলটি সাত থেকে আট দিন পর্যন্ত খোলা জায়গায় সংরক্ষণ করা যায়।

কক্সবাজারের টেকনাফের জহুরা বেগম আনারকলি বিক্রি করে সংসার চালান। সৈকতের লবণী পয়েন্টে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, সাত বছর আগে স্বামী-সন্তান নিয়ে কক্সবাজারে এসে থাকছেন। জীবিকার কোনো উপায় না পেয়ে আনারকলি বিক্রি শুরু করেন। এখন এই ফলই তাঁর সংসারের ভরসা। প্রতিদিন ৯০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা আয় হয় তাঁর। মোটামুটি খেয়েপরে বাঁচতে পারছেন এই ফলের জন্য।

সম্পর্কিত নিবন্ধ