নানা আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘আদি নববর্ষ’ উদ্যাপন
Published: 16th, November 2025 GMT
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও ‘বিপ্লবী সাংস্কৃতিক ঐক্য’–এর যৌথ আয়োজনে পয়লা অগ্রহায়ণ ‘আদি নববর্ষ’ উদ্যাপিত হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। আজ রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ প্রাঙ্গণে দিনব্যাপী নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে চলে এই উৎসব। সকাল ১০টায় শুরু হয়ে অনুষ্ঠান চলে রাত ১০টা পর্যন্ত।
আয়োজকদের দাবি, দেশজ সংস্কৃতিচর্চার অন্যতম অনুষঙ্গ হলো নববর্ষ উদ্যাপন, যা বর্তমানে পয়লা বৈশাখ হলেও এককালে ছিল পয়লা অগ্রহায়ণ। সম্রাট আকবরের সময় থেকে খাজনা আদায়ের সুবিধার্থে ‘বৈশাখ’ মাসকে বাংলা বছরের প্রথম মাস হিসেবে প্রচলন করা হয়।
চার পর্বে আয়োজিত হয় এই ‘আদি নববর্ষ’ উৎসব। প্রথম পর্ব শুরু হয় সকাল ১০টায় ‘রংতুলিতে নবান্ন’ দিয়ে। এই আয়োজনে দেশের বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী এবং চারুকলার সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে জুলাই ও নবান্ন থিমে ছবি আঁকা হয়। ১৫ জন শিল্পী এই ছবি আঁকেন।
অনুষ্ঠানের সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশ ‘আদি নববর্ষ আনন্দযাত্রা’ দিয়ে শুরু হয় দ্বিতীয় পর্ব। এই আনন্দযাত্রার জন্য চারুকলার সহযোগিতায় তিনটি মোটিফ তৈরি করা হয়। একটি মোটিফ জুলাই নিয়ে, একটি জেলেজীবন নিয়ে এবং অন্যটি কৃষিজীবন নিয়ে।
তৃতীয় ও চতুর্থ পর্বে ছিল গ্রামীণ মেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। গ্রামীণ মেলায় গ্রামবাংলার নানা ঐতিহ্যকে ফুটিয়ে তুলতে দিনব্যাপী নানা আয়োজন ছিল। ‘বিপ্লবী সাংস্কৃতিক ঐক্য’–এর সদস্য ও বিভিন্ন সংগঠনের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আবৃত্তি, নাচ, গান ও জাদু পরিবেশিত হয়।
আদি নববর্ষ উদ্যাপন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে ডাকসুর ভিপি আবু সাদিক কায়েম বলেন, ‘আজকের দিনটি বেশি স্পেশাল। কারণ, আগামীকাল (সোমবার) খুনি হাসিনার রায় হবে। সেই রায়ের আগে আজকে আমরা চারুকলায় আদি নববর্ষ পালন করছি।’
সাদিক কায়েম আরও বলেন, ‘খুনি হাসিনা ও তাঁর সব দোসরদের বিরুদ্ধে সাংস্কৃতিক বিপ্লব করতে হবে। এই ফ্যাসিস্টরাই বাংলাদেশের মতো সম্ভাবনাময় রাষ্ট্রকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। গত ১৬ বছরে খুনি হাসিনার অবৈধ শাসনকে বৈধতা দিয়েছিল কিছু কালচারাল ফ্যাসিস্ট।’
আরও পড়ুনপয়লা অগ্রহায়ণে ‘আদি নববর্ষ’ উদ্যাপন করবে ডাকসু১৪ নভেম্বর ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব শ বব দ য অন ষ ঠ ন নববর ষ চ র কল
এছাড়াও পড়ুন:
রবীন্দ্রসরোবরে সুরে–ছন্দে জমজমাট নবান্ন উৎসব
অগ্রহায়ণের প্রথম দিনে নবান্ন উৎসব হলো রাজধানীতে। নাচ, গান, আবৃত্তি, আলোচনায় রোববার ধানমন্ডির রবীন্দ্রসরোবর উন্মুক্ত মঞ্চে উদ্যাপন করা হলো ঋতুভিত্তিক এই ঐতিহ্যবাহী উৎসব।
হেমন্তের বেলা শেষে ষড়ঋতু উদ্যাপন জাতীয় পর্ষদ আয়োজিত নবান্ন উৎসবের কার্যক্রম শুরু হয়েছিল সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে। এরপর ছিল ফারহানা করিমের নেতৃত্বে সমবেত নৃত্য।
নবান্নকথনে অংশ নেন আয়োজক সংগঠনের সভাপতি এহসান মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘আবহমানকাল থেকে আমাদের কৃষিপ্রধান দেশে অগ্রহায়ণে কৃষকের ঘরে নতুন ফসল ওঠে। নতুন ধান তাঁদের জীবনে নিয়ে আসে সচ্ছলতা। নিয়ে আসে আনন্দ। তবে নবান্ন কেবল ফসলের আনন্দই নয়, আমাদের লোকসংস্কৃতির একটি শক্তিশালী উপাদান। নাগরিক পরিবেশে ঋতুভিত্তিক এই উৎসবকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে নবান্ন উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় বসন্ত, বর্ষা, শরৎসহ ঋতুভিত্তিক উৎসবগুলো আয়োজন করা হবে।’
নবান্ন উৎসব উপলক্ষে রবীন্দ্রসরোবর মঞ্চ ও মঞ্চের চারপাশের স্থান বর্ণাঢ্যভাবে সাজিয়ে তোলা হয়। এর সঙ্গে ছিল ঐতিহ্যবাহী পিঠাপুলির স্টল।
আলোচনার পরে শুরু হয় গানের পালা। সাগর বাউল শুরু করেছিলেন ভবা পাগলার গান ‘বারে বারে আসা হবে না’ গেয়ে। এরপর তিনি পরিবেশন করেন লালন সাঁইয়ের গান ‘লোকে বলে লালন ফকির কোন জাতের ছেলে’ এবং রাধারমণ দত্তের গান ‘অবলারে কান্দাইয়া’। ঢোল, একতারার বাজনা, বাঁশির সুর আর লোকসাধকদের এসব মরমি গানে গানে সাগর বাউল শ্রোতাদের মাতিয়ে তোলেন।
অনুষ্ঠানে নজরুলসংগীত পরিবেশনের কথা ছিল শিল্পী ফেরদৌস আরার। তবে তিনি অসুস্থতার জন্য সংগীত পরিবেশন করতে পারেননি। এই চমৎকার অনুষ্ঠানের জন্য আয়োজকদের ধন্যবাদ ও শ্রোতাদের শুভেচ্ছা জানান।
লোকশিল্পী আলেয়া বেগম পরিবেশন করেন ‘মালা কার লাগিয়া গাঁথি’সহ বেশ কয়েকটি গান। গানের ফাঁকে ফাঁকে ছিল আবৃত্তি ও কবিদের কবিতা পাঠ। এই পর্বে অংশ নেন কবি রাসেল রায়হান, রিক্তা রিনি, সানাউল্লাহ সাগর, জব্বার আল নাইম, ইসমত শিল্পীসহ অনেকে।
সংগীতশিল্পীদের মধ্যে কোহিনূর আক্তার পরিবেশন করেন লালন সাঁইয়ের গান ‘তিন পাগলের হইল মেলা’। ডলি মণ্ডল পরিবেশন করেন ‘সব লোক কয় লালন কী জাত সংসারে’। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ষড়ঋতু উদ্যাপন জাতীয় পর্ষদের সদস্যসচিব দীপান্ত রায়হান।
শীতের মৃদু পরশ লেগেছে রাজধানীর হাওয়ায়। হালকা কুয়াশাও জমছে আকাশে। নাতিশীতোষ্ণ পরিবেশে সুরে-ছন্দে বেশ খানিকটা রাত অবধি জমজমাট হয়ে উঠেছিল এই নাগরিক নবান্ন উৎসব।