মুগ্ধ করল নবান্ন উৎসবে ধান কাটার প্রতিযোগিতা
Published: 16th, November 2025 GMT
জাতীয় সংগীত শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হলো ধান কাটার প্রতিযোগিতা। ফর্সাপাড়া গ্রামের দল, কান্তপাশা গ্রামের দল ও উজ্জ চৈতন্যপুর গ্রামের দল কে কাকে পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যায়, তা দেখতে ধানখেতের পাশে ভিড় ছিল শত শত মানুষের। পছন্দের দলকে উৎসাহ দিতে দিচ্ছল করতালি। এভাবেই রোববার বিকেলে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার চৈতন্যপুর গ্রামে অনুষ্ঠিত হয় সপ্তম নবান্ন উৎসবের।
উৎসবের আয়োজক মনিরুজ্জামান গোদাগাড়ী উপজেলায় নতুন নতুন ফসলের প্রবর্তন করে যাচ্ছেন। তিনি কৃষকদের বিনোদনের জন্য সাত বছর ধরে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে যাচ্ছেন। প্রতিবছর এই অনুষ্ঠান থেকে দুজন কৃষককে কৃষিতে বিশেষ অবদানের জন্য সম্মাননা প্রদান করা হয়। এবারের অনুষ্ঠানে সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে বগুড়ার কিষানি সুরাইয়া ফারহানা ও রাজশাহীর পবা উপজেলার কিষানি বিলকিস বেগমকে।
নবান্ন উৎসবের আয়োজন নিয়ে মনিরুজ্জামানের ভাষ্য, কৃষকদের জীবন মানে প্রতিদিনের লড়াই। আজ খরা তো কাল বর্ষা। একবার ফসল খরায় পুড়ে যায়, একবার অতি বৃষ্টিতে ভেসে যায়। আবার ঘরে তুলতে পারলেও কোনোবার দাম পড়ে যায়। কৃষকের মনে কখনোই স্থায়ী শান্তি বা সুখ আসে না। তাই তিনি এক দিনের জন্য হলেও কৃষকদের আনন্দ দেওয়ার জন্য এই বিনোদনের আয়োজন করে থাকেন। তিনি চান পরিকল্পিত কৃষিব্যবস্থা গড়ে উঠুক, তাহলে কৃষকদের এই দুঃখ দূর হবে, অনিশ্চয়তা দূর হবে। তাহলে কৃষকদের মনে প্রতিদিনই আনন্দ থাকবে।
অনুষ্ঠানে ধান কাটা প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান। অতিথি ছিলেন রাজশাহী নিউ গভর্নমেন্ট ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক মেহেরুন্নেসা, রাজশাহী গোদাগাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মমিনুল ইসলাম, আঞ্চলিক কৃষি তথ্য অফিসার ফরিদা ইয়াসমিন ও গোদাগাড়ী ঈশ্বরীপুর ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা অতনু সরকার।
বাঙালির ঐতিহ্য নবান্ন অনুষ্ঠান কৃষকদের থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে উল্লেখ করে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত অভিভূত হয়েছি চৈতন্যপুরীর মতো এমন একটি নিভৃত গ্রামে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। কৃষকদের এক দিনের জন্য হলেও এমন একটি বিনোদনের আয়োজন তিনি (মনিরুজ্জামান) যাতে প্রতিবছর করতে পারেন, তাঁর পাশে আমরা রয়েছি।’
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার চৈতন্যপুর গ্রামে নবান্ন উৎসবে কৃষাণিদের ধান কাটার প্রতিযোগিতা দেখতে মানুষ ভিড় জমায়.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন র জন য অন ষ ঠ ন ক ষকদ র উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
রবীন্দ্রসরোবরে সুরে–ছন্দে জমজমাট নবান্ন উৎসব
অগ্রহায়ণের প্রথম দিনে নবান্ন উৎসব হলো রাজধানীতে। নাচ, গান, আবৃত্তি, আলোচনায় রোববার ধানমন্ডির রবীন্দ্রসরোবর উন্মুক্ত মঞ্চে উদ্যাপন করা হলো ঋতুভিত্তিক এই ঐতিহ্যবাহী উৎসব।
হেমন্তের বেলা শেষে ষড়ঋতু উদ্যাপন জাতীয় পর্ষদ আয়োজিত নবান্ন উৎসবের কার্যক্রম শুরু হয়েছিল সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে। এরপর ছিল ফারহানা করিমের নেতৃত্বে সমবেত নৃত্য।
নবান্নকথনে অংশ নেন আয়োজক সংগঠনের সভাপতি এহসান মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘আবহমানকাল থেকে আমাদের কৃষিপ্রধান দেশে অগ্রহায়ণে কৃষকের ঘরে নতুন ফসল ওঠে। নতুন ধান তাঁদের জীবনে নিয়ে আসে সচ্ছলতা। নিয়ে আসে আনন্দ। তবে নবান্ন কেবল ফসলের আনন্দই নয়, আমাদের লোকসংস্কৃতির একটি শক্তিশালী উপাদান। নাগরিক পরিবেশে ঋতুভিত্তিক এই উৎসবকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে নবান্ন উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় বসন্ত, বর্ষা, শরৎসহ ঋতুভিত্তিক উৎসবগুলো আয়োজন করা হবে।’
নবান্ন উৎসব উপলক্ষে রবীন্দ্রসরোবর মঞ্চ ও মঞ্চের চারপাশের স্থান বর্ণাঢ্যভাবে সাজিয়ে তোলা হয়। এর সঙ্গে ছিল ঐতিহ্যবাহী পিঠাপুলির স্টল।
আলোচনার পরে শুরু হয় গানের পালা। সাগর বাউল শুরু করেছিলেন ভবা পাগলার গান ‘বারে বারে আসা হবে না’ গেয়ে। এরপর তিনি পরিবেশন করেন লালন সাঁইয়ের গান ‘লোকে বলে লালন ফকির কোন জাতের ছেলে’ এবং রাধারমণ দত্তের গান ‘অবলারে কান্দাইয়া’। ঢোল, একতারার বাজনা, বাঁশির সুর আর লোকসাধকদের এসব মরমি গানে গানে সাগর বাউল শ্রোতাদের মাতিয়ে তোলেন।
অনুষ্ঠানে নজরুলসংগীত পরিবেশনের কথা ছিল শিল্পী ফেরদৌস আরার। তবে তিনি অসুস্থতার জন্য সংগীত পরিবেশন করতে পারেননি। এই চমৎকার অনুষ্ঠানের জন্য আয়োজকদের ধন্যবাদ ও শ্রোতাদের শুভেচ্ছা জানান।
লোকশিল্পী আলেয়া বেগম পরিবেশন করেন ‘মালা কার লাগিয়া গাঁথি’সহ বেশ কয়েকটি গান। গানের ফাঁকে ফাঁকে ছিল আবৃত্তি ও কবিদের কবিতা পাঠ। এই পর্বে অংশ নেন কবি রাসেল রায়হান, রিক্তা রিনি, সানাউল্লাহ সাগর, জব্বার আল নাইম, ইসমত শিল্পীসহ অনেকে।
সংগীতশিল্পীদের মধ্যে কোহিনূর আক্তার পরিবেশন করেন লালন সাঁইয়ের গান ‘তিন পাগলের হইল মেলা’। ডলি মণ্ডল পরিবেশন করেন ‘সব লোক কয় লালন কী জাত সংসারে’। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ষড়ঋতু উদ্যাপন জাতীয় পর্ষদের সদস্যসচিব দীপান্ত রায়হান।
শীতের মৃদু পরশ লেগেছে রাজধানীর হাওয়ায়। হালকা কুয়াশাও জমছে আকাশে। নাতিশীতোষ্ণ পরিবেশে সুরে-ছন্দে বেশ খানিকটা রাত অবধি জমজমাট হয়ে উঠেছিল এই নাগরিক নবান্ন উৎসব।