আইফোনে ব্যক্তিগত তথ্য নিরাপদ রাখতে যে তিনটি সেটিংস বন্ধ রাখতে হবে
Published: 11th, January 2025 GMT
আইফোনে থাকা একাধিক প্রযুক্তিসুবিধার সেটিংস অপশনের মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের তথ্য ব্যবহারের অনুমতি নিয়ে থাকে অ্যাপল। এরপর ব্যবহারকারীদের ইন্টারনেট ব্যবহারের ইতিহাসসহ বিভিন্ন তথ্য তৃতীয় পক্ষের একাধিক অ্যাপ বা ওয়েবসাইটের কাছে পাঠাতে থাকে প্রতিষ্ঠানটি। এসব তথ্য কাজে লাগিয়ে বিজ্ঞাপনের দর্শক এবং বিজ্ঞাপনের কার্যকারিতা পর্যালোচনা করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। আর তাই আইফোন ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য নিরাপদ রাখতে তিনটি অপশন ব্যবহারে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন ‘দ্য আলটিমেট প্রাইভেসি প্লেবুক’–এর লেখক ও নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ চিপ হ্যালেট।
চিপ হ্যালেট জানিয়েছেন, আইফোনে থাকা সাফারি ব্রাউজারের ‘প্রাইভেসি প্রিজার্ভিং অ্যাড মেজারমেন্ট’ অপশনটি বন্ধ রাখতে হবে। এটি চালু থাকলে ব্যবহারকারীরা কোন ধরনের বিজ্ঞাপন দেখছেন বা ক্লিক করছেন—তা তৃতীয় পক্ষের ওয়েবসাইটের কাছে পাঠানো হয়। যদিও অ্যাপল জানিয়েছে, এতে ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য সরাসরি পাঠানো হয় না এবং গোপনীয়তা সুরক্ষিত থাকে। তবু যাঁরা নিজেদের অনলাইন ইতিহাসের তথ্য গোপন রাখতে চান, তাঁদের এই সেটিংস বন্ধ রাখা উচিত। সেটিংসটি বন্ধ করতে প্রথমে আইফোনের সেটিংস অ্যাপ খুলে সাফারি অপশনে যেতে হবে। এরপর একেবারে নিচে থাকা ‘অ্যাডভান্সড’ অপশনে প্রবেশ করে ‘প্রাইভেসি প্রিজার্ভিং অ্যাড মেজারমেন্ট’ টগলটিটি বন্ধ করে দিতে হবে।
দ্বিতীয় অপশনটি হলো ট্র্যাকিং। ট্র্যাকিং অপশন চালু থাকলে, বিভিন্ন অ্যাপ ও ওয়েবসাইট ব্যবহারকারীদের তথ্য পর্যালোচনা করে বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করে। ‘সেটিংস থেকে প্রাইভেসি অ্যান্ড সিকিউরিটি’ মেনু থেকে ট্র্যাকিং অপশন নির্বাচন করে ‘অ্যালাউ অ্যাপস টু ট্র্যাক’ নির্বাচন করলেই অপশনটি বন্ধ হয়ে যাবে।
সম্প্রতি উন্মুক্ত হওয়া অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স সুবিধা নিয়েও ব্যবহারকারীদের সতর্ক করেছেন হ্যালেট। তিনি জানান, অ্যাপলের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি বিভিন্ন অ্যাপ থেকে তথ্য নিয়ে কাজ করে। এই সুবিধাটি যাতে ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করতে না পারে, সে জন্য সেটিংস থেকে অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড সিরি মেনুতে যেতে হবে। সেখানে লার্ন ফ্রম দিস অ্যাপ, সাজেস্ট অ্যাপ এবং সাজেস্ট নোটিফিকেশন—এই অপশন তিনটি বন্ধ করতে হবে।
সূত্র: ডেইলি মেইল
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
লালদিয়া টার্মিনালের নির্মাণকাজ শুরু আগামী বছর, চালু ২০৩০ সালে
চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে মূল সড়ক ধরে এগোতেই হাতের ডানে দেয়ালঘেরা একটি বিশাল এলাকা। লোহার ফটক পেরিয়ে সেখানে ঢুকতেই দেখা গেল, পুরো জায়গাটি খালি। নদীতীরের এই এলাকা ঘাসে পরিপূর্ণ। নিরাপত্তাকর্মীদের জন্য ছোট্ট একটি ঘর রয়েছে সেখানে। সরেজমিনে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে সেখানে গিয়ে এমন চিত্রই দেখা গেছে। কর্ণফুলী নদীর তীরে এই খালি জায়গাতেই নির্মাণ করা হবে লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল।
লালদিয়ার চরে টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনার জন্য গত সোমবার ঢাকার একটি হোটেলে ডেনমার্কের মায়ের্সক গ্রুপের প্রতিষ্ঠান এপিএম টার্মিনালসের সঙ্গে চুক্তি করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনার জন্য ডেনমার্কের কোম্পানিটির সঙ্গে ৩৩ বছরের জন্য কনসেশন চুক্তি হয়েছে। শর্ত পূরণ করা হলে আরও ১৫ বছর পরিচালনার সুযোগ পাবে প্রতিষ্ঠানটি। প্রকল্পটিতে স্থানীয় অংশীদার হিসেবে রয়েছে কিউএনএস কনটেইনার সার্ভিসেস।
চুক্তির পর কখন এপিএম টার্মিনালসকে জমি বুঝিয়ে দেওয়া হবে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, মাত্রই চুক্তি হলো। এখন চুক্তি অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
চুক্তির সঙ্গে যুক্ত সূত্রগুলো বলছে, জমি বুঝিয়ে দেওয়ার পর মূল নির্মাণকাজ শুরু হতে পারে আগামী বছরের দ্বিতীয়ার্ধে। এর আগে প্রকল্পের বিস্তারিত নকশা প্রণয়ন, অনুমোদনসহ বেশ কিছু প্রক্রিয়াগত কাজ রয়েছে। টার্মিনাল নির্মাণ করে পুরোদমে চালু করতে সাধারণত তিন থেকে চার বছর সময় লাগে।
বাংলাদেশে বন্দর পরিচালনায় যুক্ত হতে যাওয়া দ্বিতীয় বিদেশি প্রতিষ্ঠান হলো এপিএম টার্মিনালস। এর আগে গত বছরের জুনে সৌদি আরবভিত্তিক বন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল ইন্টারন্যাশনালের (আরএসজিটিআই) চট্টগ্রামের পতেঙ্গা টার্মিনাল পরিচালনায় যুক্ত হয়। এদিকে নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালে অপারেটর নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। এটি সরকারি–বেসরকারি অংশীদারত্বে (পিপিপি) সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) ডিপি ওয়ার্ল্ডের হাতে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এই প্রকল্পের দরপত্র মূল্যায়নের জন্য সাত সদস্যের কমিটি গঠন করে তা অনুমোদনের জন্য ১৬ নভেম্বর নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
সী কম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আমিরুল হক প্রথম আলোকে বলেন, দুই আন্তর্জাতিক অপারেটর নিয়োগের ফলে চট্টগ্রাম বন্দর আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত হবে। বন্দরের সক্ষমতা বাড়লে বৈদেশিক বাণিজ্য গতিশীল হবে। তবে মাশুল একসঙ্গে না বাড়িয়ে ধাপে ধাপে যৌক্তিকভাবে বাড়ানো হলে ব্যবসার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না।
বড় জাহাজ ভেড়ানো গেলে ইউরোপ-আমেরিকায় সরাসরি জাহাজ চলাচল সেবা চালু করতে পারবে মায়ের্সক লাইন। বৈশ্বিক পোশাক ক্রেতাদের সিংহভাগ মায়ের্সক লাইনের গ্রাহক। তাতে বাংলাদেশের রপ্তানি খাত বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। মো. জাফর আলম, সাবেক সদস্য, চট্টগ্রাম বন্দর পর্ষদ।লালদিয়া চালু হবে ২০৩০ সালে
চট্টগ্রাম বন্দরে এখন চারটি টার্মিনাল চালু আছে। এই চার টার্মিনালের তিনটি চালু হয় বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর। একটি পাকিস্তান আমলে চালু হয়েছিল। লালদিয়া চালু হলে তা হবে চট্টগ্রাম বন্দরের পঞ্চম কনটেইনার টার্মিনাল।
সোমবার চুক্তি সই হওয়ার পর এপিএম টার্মিনালস তাদের ওয়েবসাইটে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, ২০৩০ সালে এই টার্মিনাল চালু হবে। তখন বছরে বছরে কনটেইনার ওঠানো–নামানোর সংখ্যা বাড়বে আট লাখ একক। সরকারি ভাষ্যে বলা হয়েছে, টার্মিনালটি ২০২৯ সালে চালু হবে।
জার্মানভিত্তিক পরামর্শক সংস্থা হামবুর্গ পোর্ট কনসাল্টিংয়ের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরের চারটি কনটেইনার টার্মিনালের বছরে ৩৫ লাখ একক কনটেইনার ওঠানো–নামানোর সক্ষমতা রয়েছে। ২০৩০ সালে লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল চালু হলে এই সক্ষমতা ৮ লাখ বেড়ে দাঁড়াবে ৪৩ লাখ একক কনটেইনার।
এপিএম টার্মিনালসের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, লালদিয়া টার্মিনাল নির্মাণে ৫৫ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি বিনিয়োগ হবে। টার্মিনাল নির্মাণের সময় এক হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে। চালু হলে ৫০০ লোকের কর্মসংস্থান হবে।
কনটেইনার টার্মিনালে জাহাজ থেকে কনটেইনার ওঠানো–নামানো হয়। এরপর খোলা চত্বরে রাখা হয়। এসব কাজে দরকার হয় ভারী ও বিশেষায়িত যন্ত্রপাতি। জেটি নির্মাণ থেকে শুরু করে যন্ত্রপাতিতে বিপুল বিনিয়োগের দরকার হয়।
বড় জাহাজ ভেড়ানোর সুবিধা লালদিয়ায়
কর্ণফুলীর মোহনার অদূরে গুপ্তবাঁকের আগেই নদীর ডান তীরে লালদিয়ার চর। লালদিয়ার চরের পর উজানে নদীতে একটি বাঁক আছে। এটি গুপ্তবাঁক নামে পরিচিত। গুপ্তবাঁকের পর আরএসজিটিআই চিটাগং টার্মিনাল এবং এরপর একেবারে উজানে বন্দরের মূল তিনটি টার্মিনালের অবস্থান। নদীর বাঁক পেরিয়ে এসব টার্মিনালে জাহাজ ভেড়াতে হয়। যে কারণে রাতের বেলায় যেমন জাহাজ ভেড়ানো ঝুঁকিপূর্ণ তেমনি বড় আকারের জাহাজ ভেড়ানো যায় না। লালদিয়ার চরে টার্মিনাল নির্মাণ করা হলে এসব বাধার মুখে পড়তে হবে না।
সরেজমিন দেখা যায়, লালদিয়ার চর থেকে নদীর মোহনা পর্যন্ত, অর্থাৎ কোনো বাঁক ছাড়া সাগর থেকে সরাসরি জাহাজ লালদিয়ার চরে নির্মিতব্য জেটিতে ভিড়তে পারবে। ফলে রাতের বেলায়ও জাহাজ ভেড়াতে কোনো ঝুঁকির মুখে পড়তে হবে না। আবার অন্য টার্মিনালের চেয়ে বড় জাহাজ ভেড়ানোর সুবিধাও থাকবে এখানে।
এপিএম টার্মিনালস জানিয়েছে, বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরের মূল টার্মিনালগুলোতে ২ হাজার ৮০০ একক কনটেইনার পরিবহন ক্ষমতার জাহাজ ভেড়ানো যায়। লালদিয়া টার্মিনাল চালু হলে ছয় হাজার একক কনটেইনার পরিবহন ক্ষমতার জাহাজ ভেড়ানো যাবে।
দুই আন্তর্জাতিক অপারেটর নিয়োগের ফলে চট্টগ্রাম বন্দর আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত হবে। বন্দরের সক্ষমতা বাড়লে বৈদেশিক বাণিজ্য গতিশীল হবে। তবে মাশুল একসঙ্গে না বাড়িয়ে ধাপে ধাপে যৌক্তিকভাবে বাড়ানো হলে ব্যবসার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না।আমিরুল হক, ব্যবস্থাপনা, সী কম গ্রুপ।১১ বছর পর আলোর মুখ দেখল
লালদিয়া টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প শুরু হয়েছিল ২০১৩ সালে। এই প্রকল্পে প্রতিযোগিতামূলকভাবে অপারেটর নিয়োগের জন্য ২০১৩ সালে অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপর সব প্রক্রিয়া শেষে ২০১৭ সালে ছয়টি প্রতিষ্ঠান থেকে বাছাই করে পাঁচ বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে মূল দরপত্রে অংশগ্রহণের জন্য প্রাক্-যোগ্য হিসেবে সংক্ষিপ্ত তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মাঝপথে তা বাতিল করে দেওয়া হয়।
প্রতিযোগিতামূলকভাবে অপারেটর নিয়োগের প্রক্রিয়া বাতিল হওয়ার পর সরকার জিটুজি ভিত্তিতে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয়। ২০২১ সালের জুনে ডেনমার্ক সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশের জিটুজি সমঝোতা হয়। ২০২৩ সালের ১৬ মে লালদিয়া টার্মিনাল নির্মাণে আগ্রহ প্রকাশ করে প্রস্তাব দেয় ডেনমার্কের এপিএম টার্মিনালস। এরপর ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে দুই দেশের যৌথ সভায় লালদিয়া প্রকল্প বাছাই করা হয়। অন্তর্বর্তী সরকার আসার পর প্রকল্পটি গতি পায়, যা সোমবার চুক্তির মাধ্যমে আলোর মুখে দেখল।
সুবিধা বেশি লালদিয়া চরে
বাংলাদেশে কনটেইনার পরিবহনের ৯৯ শতাংশ হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। বন্দরের চারটি টার্মিনাল ব্যবহার করে কনটেইনার আনা–নেওয়া করা হয়। রপ্তানির পুরোটাই পরিবহন হয় কনটেইনারে। শিল্পকারখানার কাঁচামাল থেকে শুরু করে বাণিজ্যিক পণ্যের বড় অংশ কনটেইনারে আনা হয়। কনটেইনার টার্মিনালের ঘাটতির কারণে চট্টগ্রাম বন্দরে বছরের বেশির ভাগ সময় জট থাকে। নতুন টার্মিনাল নির্মাণের মাধ্যমে এই ঘাটতি পূরণ হবে বলে মনে করছেন বন্দরের কর্মকর্তারা।
জানতে চাইলে বন্দর পর্ষদের সাবেক সদস্য মো. জাফর আলম প্রথম আলোকে বলেন, বন্দরের অন্য সব টার্মিনালের চেয়ে লালদিয়াতে সুবিধা বেশি পাওয়া যাবে। কর্ণফুলী নদীর মুখে গভীরতা বাড়ানো গেলে জোয়ারের সুবিধা নিয়ে মায়ের্সক লাইনের প্রতিষ্ঠান এপিএম টার্মিনালে অপেক্ষাকৃত বড় জাহাজ ভেড়ানো সম্ভব হবে। বড় জাহাজ ভেড়ানো গেলে ইউরোপ–আমেরিকায় সরাসরি জাহাজ চলাচল সেবা চালু করতে পারবে মায়ের্সক লাইন। বৈশ্বিক পোশাক ক্রেতাদের সিংহভাগ মায়ের্সক লাইনের গ্রাহক। তাতে বাংলাদেশের রপ্তানি খাত বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হবে।