সিলেটের প্রথম জয় ১০০তম ম্যাচে কেড়ে নিল লিটনের হাসি
Published: 10th, January 2025 GMT
বিপিএলে এটি ছিল লিটন দাসের ১০০তম ম্যাচ। মাইলফলক ছোঁয়া ম্যাচটা তাঁর হতে পারত। কারণ লিটনের হয়ে বোর্ড সভাপতি, নির্বাচক, সতীর্থেরা সবাই কথা বললেও কথা বলছিল না তাঁর গোমড়া ব্যাট।
অবশেষে সেই ব্যাট আজ কথা বলল, হাসি ফোটাল লিটনের মুখে। কিন্তু দিন শেষে তাঁর সেই হাসি কেড়ে নিল ঘরের মাঠে পাওয়া সিলেট স্ট্রাইকার্সের প্রথম জয়।
সিলেটের মাঠে সিলেট স্ট্রাইকার্স এর আগেও খেলেছে দুটি ম্যাচ। হেরেছে দুটিতেই। সিলেটের প্রতি ম্যাচেই গ্যালারি ভরিয়ে তোলা স্থানীয় দর্শকেরা দুই ম্যাচেই ঘরে ফিরেছেন হতাশা নিয়ে। তবে আজ রাতটা এলো ব্যতিক্রম হয়ে।
এবারের বিপিএলে সিলেট স্ট্রাইকার্সের প্রথম জয়োৎসব হলো সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামেই। ৩ উইকেটে জিতে এখনো জয়ের মুখ না দেখা ঢাকা ক্যাপিটালসকে তারা ‘উপহার’ দিল টানা ষষ্ঠ হার।
ম্যাচের শুরুটা ছিল লিটনের ফিরে আসার বার্তা দিয়ে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের হাহাকারে ভরা তাঁর সাম্প্রতিক ফর্মটা না হয় একটু ভুলেই থাকুন। শুধু এই বিপিএলের খাতাটা নাড়চাড়া করলেই দেখবেন কী প্রবল রান খরা ছিল সেখানে! আজকের আগে চার ম্যাচে করেছেন ৩১, ০, ২ আর ৯।
লিটনের মতো ব্যাটসম্যানের রান এরকম হলে চলে! লিটনের চাই বড় শট, বড় ইনিংস। তাহলেই না ব্যাটিংটা শিল্প হয়ে ফোটে তাঁর ব্যাটে। যে শিল্পী তুলি হাতে নিয়েও ছবি আঁকেন না, তিনি আবার শিল্পী কীসের!
যাই হোক, লিটন অবশেষে ছবি আঁকলেন। তবে ২৯ বলে ফিফটি পূর্ণ করা ৪৩ বলে ৭৩ রানের ইনিংসটাকে ছবি বলবেন নাকি বলবেন উপভোগ্য এক শর্ট ফিল্ম, সেটি আপনার সিদ্ধান্ত। লিটনের কাজ ছিল ভালো একটা ইনিংস খেলে রানে ফেরা। লিটন তা করেছেন। যাঁকে বাংলাদেশের টি–টোয়েন্টি দলের সম্ভাব্য অধিনায়ক ভাবা হচ্ছে, ম্যাচের পর ম্যাচ দু–চার বল খেলেই মাথা নত করে তাঁর ড্রেসিংরুমে ফেরার দৃশ্য আর নেওয়া যাচ্ছিল না।
সঙ্গী ওপেনার তানজিদ হাসানকে প্রথম ওভারেই হারিয়েছিলেন লিটন। ঢাকাকে এরপর আর খুব বেশি পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাদের ইনিংসে। দ্বিতীয় উইকেটে তিনে নামা মুনিম শাহরিয়ারের সঙ্গে দাঁড়িয়ে যায় লিটনের ১২৯ রানের জুটি, এর আগে পাওয়ার প্লেতেই আসে ৫৬।
রাকিম কর্নওয়ালের করা ইনিংসের ১৬তম ওভারের তৃতীয় বলে লিটন এলবিডব্লু হলে সেটি। এক ছক্কা আর ১০ বাউন্ডারি ছিল লিটনের ইনিংসে। ৪৭ বলে ৫২ রান করা মুনিমকেও ওই ওভারেরই পঞ্চম বলে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলে বিদায় করেন কর্নওয়াল।
ঢাকার রান দ্রুত বাড়িয়ে নেওয়ার দায়িত্ব এরপর নেন পরশু চিটাগং কিংসের বিপক্ষে ৩৩ বলে অপরাজিত ৮২ রানের ঝড় তোলা সাব্বির রহমান। আজও সাব্বির ছিলেন ধুন্ধুমার ব্যাটিংয়ের মানসিকতায়। ১০ বলে ২৩ রান করতে মেরেছেন তিন ছক্কা। আউট হওয়ার আগে অধিনায়ক থিসারা পেরেরার সঙ্গে ১৭ বলেই গড়ে ফেলেন ৪১ রানের জুটি। ওই ধাক্কায় শেষ ৫ ওভারে ঢাকার রান ৬১, এর মধ্যে আল–আমিনের করা ১৮তম ওভারেই এসেছে ২২।
ঢাকার ৬ উইকেটে করা ১৯৩ রান সিলেট টপকাতে পারবে বলে মনে হচ্ছিল না ইনিংসের শুরুর দিকে। ওপরের দিকের পাঁচ ব্যাটসম্যানের মধ্যে তিনে নামা জাকির হাসান (২৭ বলে ৫৮ রান) ছাড়া সবাই ব্যর্থ।
কিন্তু রনি তালুকদার, জাকের আলী আর অধিনায়ক আরিফুল হকের লড়াই শেষ পর্যন্ত বৃথা যায়নি। বিশেষ করে আরিফুলের ১৫ বলে অপরাজিত ২৮–ই শেষ দিকে আসল কাজটা করে দিয়েছে। বিপিএলে লিটনের ১০০তম ম্যাচে তাঁর ব্যাটের হাসি কেড়ে নিয়ে ৮ বল বাকি থাকতেই প্রথম জয়ের দেখা পেয়ে যায় সিলেট স্ট্রাইকার্স।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
রোজার আগেই নির্বাচন, এরপর আগের কাজে ফিরে যাবেন
অন্তর্বর্তী সরকার সময়মতো ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে পবিত্র রমজানের আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের পর তিনি তাঁর আগের কাজে ফিরে যাবেন।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভাকে এসব কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওয়াশিংটন থেকে ভিডিও ফোনকলে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে কথা বলেন জর্জিয়েভা।
এ সময় তাঁরা বাংলাদেশের চলমান অর্থনৈতিক সংস্কার, আঞ্চলিক পরিস্থিতি এবং আগামী ফেব্রুয়ারিতে সাধারণ নির্বাচনের পূর্ববর্তী চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করেন।
আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা। তিনি বলেন, অধ্যাপক ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণের পর বাংলাদেশের অর্থনীতি উল্লেখযোগ্যভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং এই কৃতিত্ব তাঁর নিজের।
অর্থনীতির সংকটকালীন পরিস্থিতি স্মরণ করে আইএমএফ প্রধান বলেন, ‘আপনার অর্জন আমাকে মুগ্ধ করেছে। অল্প সময়ে আপনি অনেক কিছু করেছেন। যখন অবনতির ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি ছিল, তখন আপনি দেশের দায়িত্ব নিয়েছেন। আপনি সঠিক সময়ে সঠিক ব্যক্তি।’
ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বিশেষভাবে বৈদেশিক মুদ্রা বাজারের স্থিতিশীলতা এবং রিজার্ভ পুনরুদ্ধারের জন্য সরকারের সাহসী পদক্ষেপ, বাজারভিত্তিক বিনিময় হার প্রবর্তনের প্রশংসা করেন।
অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের এক সংকটময় সময়ে আইএমএফ প্রধানের অবিচল সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘চমৎকার সহায়তার জন্য ধন্যবাদ।’ তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, গত বছর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে তাঁদের প্রথম সাক্ষাৎ বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথ সুগম করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।
কথোপকথনে আইএমএফ প্রধান অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এবং ব্যাংকিং খাতে গভীর সংস্কার বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘শক্ত অবস্থানে থাকতে হলে সংস্কার অনিবার্য। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অমূল্য মুহূর্ত।’
অধ্যাপক ইউনূস জানান, তাঁর সরকার ইতিমধ্যে ব্যাংকিং খাত পুনর্গঠন এবং রাজস্ব সংগ্রহ জোরদারের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এক বিধ্বস্ত ও সম্পূর্ণ ভেঙে পড়া অর্থনীতি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি। কিছু ব্যক্তি আক্ষরিক অর্থে ব্যাগভর্তি টাকা ব্যাংক থেকে নিয়ে পালিয়ে গেছে।’
এ ছাড়া আঞ্চলিক পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়। এর মধ্যে ছিল নেপালে চলমান যুব আন্দোলন এবং আসিয়ানভুক্তির জন্য বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষা। অধ্যাপক ইউনূস আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি জোরদারের লক্ষ্যে ঢাকার বৃহৎ অবকাঠামো উদ্যোগ—যেমন নতুন বন্দর ও টার্মিনাল প্রকল্প—সম্পর্কেও অবহিত করেন।
আলোচনাকালে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং অর্থসচিব খায়রুজ্জামান মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।