বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনকারীদের উপর হামলা ও হত্যার দায়ে গ্রেপ্তার হওয়া যুবলীগ ক্যাডার ফারুক হোসেন রিপন ওরফে সেমাই রিপন এখনো থেমে নেই। জেলে বন্দি থেকেও তার সহযোগিদের দ্বারা প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার মিশনে নেমেছে সে। 

অভিযোগ রয়েছে, রিপনের ঘনিষ্ঠ লোকেরা জেলখানা থেকে তার বার্তা নিয়ে অর্থের বিনিময়ে প্রতিপক্ষের লোকদের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার ও সংবাদ প্রকাশ করিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় বিভিন্ন গনমাধ্যমে।

একই সাথে জামিনে মুক্তির জন্য বিএনপিপন্থি আইনজীবীকে ম্যানেজ করে তার পক্ষে ওকালতির জন্য নিয়োজিত করেছেন। এতে বারের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ও মহানগর বিএনপি নেতা আনোয়ার সমালোচনায় বিদ্ধ হয়েছেন।   

এদিকে, চিহ্নিত যুবলীগ ক্যাডার ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র—জনতার আন্দোলনে একাধিক হত্যা, চাঁদাবাজী, ভূমিদস্যুতা ও প্রতারণা সহ মামুনুল হক কাণ্ডের এজাহারভুক্ত দুর্র্ধষ এই আসামীর পক্ষে বিএনপিপন্থী আইনজীবী ওকালতিতে নামায় এ নিয়ে সমালোচনা করে নিজের ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করেছেন নারায়ণগঞ্জ—৫ আসনের সাবেক এমপি আবুল কালামের পুত্র মহানগর বিএনপি নেতা ও কাউন্সিলর আবুল কাউসার আশা। 

তথ্য বলছে, শহিদনগর এলাকার ত্রাস সেমাই রিপন চিহ্নিত যুবলীগ ক্যাডার হলেও তাকে এখন যুবদল তথা বিএনপি নেতা হিসেবে প্রমানের ব্যর্থ চেষ্টা চালাচ্ছে একটি মহল। অথচ, রিপন বিগত ১৬ বছর কখনো শামীম ওসমান, কখনো মেয়র আইভী বলয়ের সক্রিয় লোক হিসেবে শহীদনগর ও সৈয়দপুর এলাকায় দাপিয়ে বেড়িয়েছেন।

আওয়ামী লীগের স্থানীয় এবং কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে সখ্যতা গড়ে চালিয়ে গেছেন ব্যবসা বাণিজ্য। ওই সময় থেকেই প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে নিজ অর্থ ব্যয় করে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে ভুল তথ্য দিয়ে সংবাদ প্রচার করিয়ে হেনস্থা করতেন বলেও ভুক্তভোগীদের।

এলাকায় মামলাবাজ হিসেবেও পরিচিতি ছিলো তার। প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানী করে বেড়ানো তার নেশায় পরিণত হয়েছিল। এমনকি নিজ শ^শুরের জমি দখলকে কেন্দ্র করে শ^শুরের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজীর মামলাও দিয়েছিলেন তিনি। 

অথচ, রিপন নিজেই একাধিক হত্যা, চাঁদাবাজী, প্রতারণা এবং ভূমিদস্যুতাসহ অভিযোগে বহু মামলার আসামী। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময়ে আন্দোলনকারীদের উপর গুলি চালিয়ে হত্যার ঘটনায় তার বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ সদর থানা, ফতুল্লা, সিদ্ধিরগঞ্জ ও সোনারগাঁয়ে একাধিক মামলা রয়েছে।

এসব মামলায় সেমাই রিপনকে গ্রেপ্তার করার পর তাকে পূর্ববর্তী মামলাগুলোতে গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে। নেয়া হচ্ছে রিমান্ডেও। ইতিমধ্যেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মামলাসহ সোনারগাঁয়ের রয়েল রিসোর্টে হেফাজত ইসলামের নেতা মাওলানা মামুনুল হকের উপর হামলা ও তান্ডব চালানোর ঘটনায় এই যুবলীগ ক্যাডার ফারুক হোসেন রিপন ওরফে সেমাই রিপনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ওই মামলার এজাহারনামীয় ১৮নং আসামী যুবলীগ ক্যাডার রিপন। 

এর আগে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার উপর সন্ত্রাসী হামলা ও গুলিবর্ষনের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় গত ১২ নভেম্বর যুবলীগ ক্যাডার সেমাই রিপনকে শহরের মন্ডলপাড়া এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছিল সদর থানা পুলিশ।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ফারুক হোসেন রিপন সৈয়দপুর এলাকার চোরাকারবারি ও মাদক ব্যবসায়ী আব্দুর রহমানের পুত্র। তিনি নিজেকে কখনো সাংবাদিক, কখনো মেয়র আইভীর লোক আবার কখনো অয়ন ওসমানের অস্ত্রধারী ক্যাডার কাউসারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচয় দিয়ে শহীদনগর, সুকুমপট্টি ও সৈয়দপুর এলাকায় প্রভাব খাটিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়ে আসছিল। এছাড়াও সৈয়দপুরে গড়ে তুলেছে অবৈধ সেমাই কারখানা। সেখানে অভিযান চালাতে গিয়ে পুলিশ ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের টিম এই যুবলীগ ক্যাডারের দ্বারা হামলার শিকারও হয়েছিল বিগত সময়ে। 

এদিকে, নারী কেলেংকারীতে রিপনের বাবা স্থানীয়দের তোপের মুখে পড়েছিলেন। এমন অভিযোগ রয়েছে রিপনের বিরুদ্ধেও। সম্প্রতি তিনি নিতাইগঞ্জ এলাকার এক ব্যবসায়ীর মেয়ের সাথে পরকিয়ায় জড়িয়ে বিয়ে করলেও পরবর্তীতে তাদের ডিভোর্সও হয়। 

অভিযোগ উঠেছে, বিভিন্ন বিরোধপূর্ন জায়গা—জমি কব্জা করাসহ সৈয়দপুর, শহীদনগর ও সুকুমপট্টি এলাকার নিয়ন্ত্রন নিতে উশৃঙ্খল কিছু কিশোর ও যুবকদের নিয়ে ইতিমধ্যেই রিপনের ছত্রচ্ছায়ায় গড়ে উঠেছে অস্ত্রধারী ও লাঠিয়াল বাহিনী।

রিপন বর্তমানে জেল হাজতে থাকলেও তার লোকদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে তার। মানুষের জমি—জমায় নিজের নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠায় রিপনের ওই বাহিনী এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।

.

উৎস: Narayanganj Times

এছাড়াও পড়ুন:

উপদেষ্টা আসিফের সমর্থকদের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া

কুমিল্লার মুরাদনগর স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সমর্থকদের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এসময় আসিফ মাহমুদের পক্ষের ১০ থেকে ১৫ জন সমর্থক আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন ইউপি সদস্য রয়েছেন। 

বুধবার (৩০ জুলাই) বিকেলে উপজেলা সদরের আল্লাহ চত্বরে ঘটনাটি ঘটে। 

এলাকাবাসী জানান, বুধবার বিকেলে পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী সদরের আল্লাহ চত্বরে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের সমর্থকরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে জড়ো হন।  সমাবেশ লক্ষ্য করে পার্শ্ববর্তী জেলা পরিষদের মার্কেট থেকে কয়েকটি ইট, পাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। এরপর দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া ও পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এসময় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের ১০ থেকে ১৫ জন সমর্থক আহত হন, তাদের মধ্যে একজন ইউপি সদস্যও রয়েছেন।

আরো পড়ুন:

কুষ্টিয়া প্রেস ক্লাবে বিএনপির অভিযোগ বক্স, যা পাওয়া গেল

সরকারের একটি অংশ অপকৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে: তারেক রহমান

মিছিল নিয়ে আসা নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক মিনাজুল হক বলেন, “উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিএনপির লোকজন আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। মিছিল নিয়ে আসার পর শত শত ইটপাটকেল ছুড়ে আমাদের ধাওয়া দিতে থাকে। আমাদের অনেক সমর্থক আহত হন।”

হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। বিএনপির মুরাদনগর উপজেলার আহ্বায়ক মহিউদ্দিন অঞ্জন বলেন, “তারা হামলা করার পর আমাদের ছেলেরা প্রতিরোধ করেছে।”

কুমিল্লার মুরাদনগর থানার তদন্ত কর্মকর্তা আমিন কাদের খান জানান, আজ মুরাদনগর সদরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ চলছিল। এ সময় পাশে অবস্থান করা কিছু লোক বিনা উসকানিতে তাদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এরপরে দুইপক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কাজ করে। 

ঢাকা/রুবেল/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • উপদেষ্টা আসিফের অনুসারীদের সঙ্গে বিএনপির কর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা হয়নি
  • উপদেষ্টা আসিফের সমর্থকদের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া
  • মুরাদনগরে উপদেষ্টা আসিফের অনুসারীদের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, আহত ৩৫
  • বন্দরে ডেভিল হান্ট অভিযানে ছাত্রলীগ নেতা আয়াত গ্রেপ্তার  
  • মুরাদনগরে দুই সন্তানসহ নারীকে হত্যায় বিএনপি নেতা গ্রেপ্তার, পরিবার বলছে ষড়যন্ত্র
  • কুমিল্লায় ট্রিপল মার্ডার মামলায় বিএনপি নেতা গ্রেপ্তার