জেলে থেকেও কলকাঠি নাড়ছে যুবলীগ ক্যাডার রিপন
Published: 12th, January 2025 GMT
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনকারীদের উপর হামলা ও হত্যার দায়ে গ্রেপ্তার হওয়া যুবলীগ ক্যাডার ফারুক হোসেন রিপন ওরফে সেমাই রিপন এখনো থেমে নেই। জেলে বন্দি থেকেও তার সহযোগিদের দ্বারা প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার মিশনে নেমেছে সে।
অভিযোগ রয়েছে, রিপনের ঘনিষ্ঠ লোকেরা জেলখানা থেকে তার বার্তা নিয়ে অর্থের বিনিময়ে প্রতিপক্ষের লোকদের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার ও সংবাদ প্রকাশ করিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় বিভিন্ন গনমাধ্যমে।
একই সাথে জামিনে মুক্তির জন্য বিএনপিপন্থি আইনজীবীকে ম্যানেজ করে তার পক্ষে ওকালতির জন্য নিয়োজিত করেছেন। এতে বারের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ও মহানগর বিএনপি নেতা আনোয়ার সমালোচনায় বিদ্ধ হয়েছেন।
এদিকে, চিহ্নিত যুবলীগ ক্যাডার ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র—জনতার আন্দোলনে একাধিক হত্যা, চাঁদাবাজী, ভূমিদস্যুতা ও প্রতারণা সহ মামুনুল হক কাণ্ডের এজাহারভুক্ত দুর্র্ধষ এই আসামীর পক্ষে বিএনপিপন্থী আইনজীবী ওকালতিতে নামায় এ নিয়ে সমালোচনা করে নিজের ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করেছেন নারায়ণগঞ্জ—৫ আসনের সাবেক এমপি আবুল কালামের পুত্র মহানগর বিএনপি নেতা ও কাউন্সিলর আবুল কাউসার আশা।
তথ্য বলছে, শহিদনগর এলাকার ত্রাস সেমাই রিপন চিহ্নিত যুবলীগ ক্যাডার হলেও তাকে এখন যুবদল তথা বিএনপি নেতা হিসেবে প্রমানের ব্যর্থ চেষ্টা চালাচ্ছে একটি মহল। অথচ, রিপন বিগত ১৬ বছর কখনো শামীম ওসমান, কখনো মেয়র আইভী বলয়ের সক্রিয় লোক হিসেবে শহীদনগর ও সৈয়দপুর এলাকায় দাপিয়ে বেড়িয়েছেন।
আওয়ামী লীগের স্থানীয় এবং কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে সখ্যতা গড়ে চালিয়ে গেছেন ব্যবসা বাণিজ্য। ওই সময় থেকেই প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে নিজ অর্থ ব্যয় করে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে ভুল তথ্য দিয়ে সংবাদ প্রচার করিয়ে হেনস্থা করতেন বলেও ভুক্তভোগীদের।
এলাকায় মামলাবাজ হিসেবেও পরিচিতি ছিলো তার। প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানী করে বেড়ানো তার নেশায় পরিণত হয়েছিল। এমনকি নিজ শ^শুরের জমি দখলকে কেন্দ্র করে শ^শুরের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজীর মামলাও দিয়েছিলেন তিনি।
অথচ, রিপন নিজেই একাধিক হত্যা, চাঁদাবাজী, প্রতারণা এবং ভূমিদস্যুতাসহ অভিযোগে বহু মামলার আসামী। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময়ে আন্দোলনকারীদের উপর গুলি চালিয়ে হত্যার ঘটনায় তার বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ সদর থানা, ফতুল্লা, সিদ্ধিরগঞ্জ ও সোনারগাঁয়ে একাধিক মামলা রয়েছে।
এসব মামলায় সেমাই রিপনকে গ্রেপ্তার করার পর তাকে পূর্ববর্তী মামলাগুলোতে গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে। নেয়া হচ্ছে রিমান্ডেও। ইতিমধ্যেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মামলাসহ সোনারগাঁয়ের রয়েল রিসোর্টে হেফাজত ইসলামের নেতা মাওলানা মামুনুল হকের উপর হামলা ও তান্ডব চালানোর ঘটনায় এই যুবলীগ ক্যাডার ফারুক হোসেন রিপন ওরফে সেমাই রিপনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ওই মামলার এজাহারনামীয় ১৮নং আসামী যুবলীগ ক্যাডার রিপন।
এর আগে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার উপর সন্ত্রাসী হামলা ও গুলিবর্ষনের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় গত ১২ নভেম্বর যুবলীগ ক্যাডার সেমাই রিপনকে শহরের মন্ডলপাড়া এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছিল সদর থানা পুলিশ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ফারুক হোসেন রিপন সৈয়দপুর এলাকার চোরাকারবারি ও মাদক ব্যবসায়ী আব্দুর রহমানের পুত্র। তিনি নিজেকে কখনো সাংবাদিক, কখনো মেয়র আইভীর লোক আবার কখনো অয়ন ওসমানের অস্ত্রধারী ক্যাডার কাউসারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচয় দিয়ে শহীদনগর, সুকুমপট্টি ও সৈয়দপুর এলাকায় প্রভাব খাটিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়ে আসছিল। এছাড়াও সৈয়দপুরে গড়ে তুলেছে অবৈধ সেমাই কারখানা। সেখানে অভিযান চালাতে গিয়ে পুলিশ ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের টিম এই যুবলীগ ক্যাডারের দ্বারা হামলার শিকারও হয়েছিল বিগত সময়ে।
এদিকে, নারী কেলেংকারীতে রিপনের বাবা স্থানীয়দের তোপের মুখে পড়েছিলেন। এমন অভিযোগ রয়েছে রিপনের বিরুদ্ধেও। সম্প্রতি তিনি নিতাইগঞ্জ এলাকার এক ব্যবসায়ীর মেয়ের সাথে পরকিয়ায় জড়িয়ে বিয়ে করলেও পরবর্তীতে তাদের ডিভোর্সও হয়।
অভিযোগ উঠেছে, বিভিন্ন বিরোধপূর্ন জায়গা—জমি কব্জা করাসহ সৈয়দপুর, শহীদনগর ও সুকুমপট্টি এলাকার নিয়ন্ত্রন নিতে উশৃঙ্খল কিছু কিশোর ও যুবকদের নিয়ে ইতিমধ্যেই রিপনের ছত্রচ্ছায়ায় গড়ে উঠেছে অস্ত্রধারী ও লাঠিয়াল বাহিনী।
রিপন বর্তমানে জেল হাজতে থাকলেও তার লোকদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে তার। মানুষের জমি—জমায় নিজের নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠায় রিপনের ওই বাহিনী এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
.উৎস: Narayanganj Times
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইসরায়েলের হামলা
রবিবার বিকেল থেকে ইরানজুড়ে নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। সামরিক স্থাপনার পাশাপাশি ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
রবিবার রাতে ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইদ খাতিবজাদেহ ইসরায়েলি হামলার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে তিনি জানান, রবিবার রাজধানী তেহরানে ইসরায়েলি হামলায় ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খবর তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলুর।
এক্স-পোস্টে সাইদ বলেছেন, “ইসরায়েলের অপরাধী শাসকগোষ্ঠী রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঠিক বিপরীতে অবস্থিত ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবনে ইচ্ছাকৃত এবং নির্মম হামলা চালিয়েছে।”
আরো পড়ুন:
ইসরায়েলের নতুন হামলায় ইরানের আইআরজিসির গোয়েন্দা প্রধান নিহত
ইসরায়েলে ৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল ইরান, তেল আবিব ও হাইফাতে সরাসরি আঘাত
উপ-মন্ত্রী আরো বলেন, “এই হামলায় বেশ কয়েকজন বেসামরিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন, আমার বেশ কয়েকজন সহকর্মীও আহত হয়েছেন, যাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।”
সাইদ বলেন, “এটি আরো একটি স্পষ্ট যুদ্ধাপরাধ, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি শাসকগোষ্ঠীর চলমান ও নিয়মতান্ত্রিক আগ্রাসন অভিযানের অংশ।”
এর আগে শনিবার ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তরে হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা তেহরানের অস্ত্র উৎপাদন ক্ষমতা ধ্বংস করার লক্ষ্যে ইরানের আইআরজিসি ও সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে রবিবার নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, এই হামলায় ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি), গার্ডস কুদস ফোর্স এবং ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর অবকাঠামো লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী আরো জানিয়েছে, ইরানজুড়ে অসংখ্য অস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্রে হামলা চালানো হয়েছে।
ইরানি বার্তাসংস্থা তাসনিম নিউজ জানিয়েছে, ইসরায়েলের এই হামলায় আইআরজিসিরি গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ কাজেমি এবং তার সহকারী হাসান মোহাকিক নিহত হয়েছেন। এছাড়া মোহসেন বাঘারি নামে আইআরজিসির আরো একজন জেনারেল নিহত হয়েছেন। এর প্রতিশোধ নিতে রবিবার রাতে ইসরায়েলে ৫০টি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও শতাধিক ড্রোন ছুড়েছে ইরান।
ইসরায়েলের ফায়ার ও রেসকিউ সার্ভিসের বরাত দিয়ে টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, উত্তর ইসরায়েলে দুটি এবং হাইফায় একটি আবাসিক ভবনে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হানার খবর পেয়েছে তারা।
ইসরায়েলি জাতীয় জরুরি সেবা সংস্থা জানিয়েছে, হাইফায় ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে সাতজন আহত হয়েছেন। এছাড়া কিরিয়াত গাটের কাছে দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি শহরে একজন আহত হয়েছেন।
এ ঘটনায় ইসরায়েলি সেনাপ্রধান ইয়াল জামির ইরানের ওপর আক্রমণ আরো তীব্র করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। একটি বিবৃতি জারি করে ইসরায়েরি সেনাপ্রধান বলেছেন, “আমরা আমাদের অভিযান তীব্রতর করে যাব এবং এটি করে, আগামী বছরগুলোতে আমাদের নিরাপত্তা জোরদার করব। আমরা জানতাম এর একটি মূল্য দিতে হবে এবং এটিই বোঝায় যে, আমরা কেন এখনই পদক্ষেপ নিয়েছি, তা অনেক দেরি হওয়ার আগেই।”
ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুক্রবার থেকে ইসরায়েলি হামলায় ২২৪ জন নিহত এবং ৯০০ জন আহত হয়েছেন।
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কমপক্ষে ১৩ জন নিহত এবং ৩৭০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।
ঢাকা/ফিরোজ