খুলনার দাকোপ উপজেলার রামনগর গ্রাম থেকে সচিন মণ্ডল ও তার স্ত্রী মলিনা মণ্ডলের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

মঙ্গলবার সকালে তাদের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

স্থানীয়দের ধারণা, পারিবারিক কলহের জের ধরে স্ত্রীকে পিটিয়ে হত্যার পর স্বামী বিষ পান ও গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।

দাকোপ উপজেলার কৈলাশগঞ্জ ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো.

ফয়সাল আলম গাজী জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে পারিবারিক কলহের জের ধরে এ ঘটনা ঘটেছে। সচিন মণ্ডল প্রথমে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে তার স্ত্রীকে হত্যা করেছেন। এরপর নিজে বিষপান ও গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। সকালে গ্রামবাসী নিহতের ছেলের কাছ থেকে খবর পায়। পরে বিষয়টি থানায় জানানো হয়। 

দাকোপ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলাম বলেন, মরদেহ দুটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হচ্ছে। কীভাবে তাদের মৃত্যু হয়েছে তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: মরদ হ

এছাড়াও পড়ুন:

বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভারতের অবস্থান কী

ভারতের কাছে বাংলাদেশ হলো একধরনের ‘ব্যতিক্রমী মর্যাদাসম্পন্ন’ প্রতিবেশী রাষ্ট্র—যার তুলনা করা চলে কেবল নেপালের সঙ্গে। কারণ, এই দুটি দেশের ক্ষেত্রে ভারতীয় নীতি দক্ষিণ এশিয়ার অন্য যেকোনো রাষ্ট্রের থেকে আলাদা।

আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক গবেষক অবিনাশ পালিওয়াল তাঁর ২০২৪ সালে প্রকাশিত ইন্ডিয়া’স নেয়ার ইস্ট: অ্যা নিউ হিস্ট্রি বইয়ে দেখিয়েছেন, দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের সরকারের প্রতি ভারতের পছন্দ-অপছন্দের বিষয়টি এতটা জোরালো নয়, যতটা বাংলাদেশের ক্ষেত্রে।

অন্য দেশগুলোর ক্ষেত্রে—সরকার স্বৈরাচারী হোক বা সামরিক জান্তা যে-ই ক্ষমতায় থাকুক, ভারত তার সঙ্গেই কাজ করে যেমন মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা বা মালদ্বীপ। এই দেশগুলোর সরকার সম্পর্কে ভারতের নিজস্ব পছন্দ-অপছন্দ খুব একটা বিবেচ্য নয়। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই নীতি প্রযোজ্য নয়।

বাংলাদেশকে ঘিরে ভারতের নীতি হলো, ‘পছন্দসই তথাকথিত গণতান্ত্রিক’ সরকারকে সমর্থন করা। আর সেই ‘পছন্দসই তথাকথিত গণতান্ত্রিক’ সরকারের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগই ভারতের প্রথম পছন্দ। তবে এখানে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ রক্ষা করা বাধ্যতামূলক নয়।

আরও পড়ুনবাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের গতিপথ কী হবে০৬ জানুয়ারি ২০২৫

উদাহরণস্বরূপ, ভারতের সরাসরি ও প্রভাবশালী সমর্থনের বলেই বাংলাদেশের রাজনীতিতে শেখ হাসিনা ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের তিনটি একতরফা ও বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে ক্রমে ফ্যাসিবাদী শাসন প্রতিষ্ঠা করেন।

এই নির্বাচনগুলো ছিল আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের ‘লাইসেন্স’, যা আদায়ে ভারত প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করে। ফলে বাংলাদেশের জনগণের কাছে এসব নির্বাচনে ভারতের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত বিতর্কিত।

বর্তমানে অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় বাংলাদেশে নির্বাচন ও রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্রে ভারত অনেকটাই দুর্বল অবস্থানে রয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে ২০২৫ সালের ১০ সেপ্টেম্বর দিল্লির থিঙ্কট্যাংক ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারের (আইআইসি) আয়োজনে বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারের মূল শিরোনাম ছিল, ‘আমরা কি বাংলাদেশের নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত?’

এ বছরের মার্চ মাসে ভারতের লোকসভাতেও বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে একটি বিশেষজ্ঞ প্যানেলের আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় বিবেকানন্দ ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন (ভিআইএফ) বাংলাদেশের উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে একটি বিশেষ সংখ্যাও প্রকাশ করে।

মোট কথা, ভারতে বাংলাদেশ নীতি নিয়ে আলোচনা বা চর্চা গুরুত্বপূর্ণভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। লক্ষ্য করার মতো বিষয়, দিল্লির সিভিল সোসাইটি বা একাডেমির বাংলাদেশ প্রশ্নে ভাষ্য ও সাউথ ব্লকের বয়ান একে অন্যের পরিপূরক।

আরও পড়ুনভারত ‘তুমি রিয়েলিটি মাইন্যে ন্যাও’০৪ ডিসেম্বর ২০২৪ভারতে প্রথম হাতিয়ার ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন’

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট এক রক্তাক্ত গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ থেকে শেখ হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা ভারতের নীতিনির্ধারক, মিডিয়া, থিঙ্কট্যাংক বা সিভিল সমাজ প্রত্যেকের জন্যই ছিল বড় ধাক্কা। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় নেই—এটা যেন ছিল দিল্লির জন্য তীব্র ঝাঁকুনি। তবে শঙ্কিত ভারত বাংলাদেশ নিয়ে হাল ছাড়েনি। ভারত এখনো বাংলাদেশে এমন সরকার চায়, যা তাদের বৃহত্তর স্বার্থকে বজায় রাখতে সক্ষম।

বাংলাদেশে পছন্দসই সরকারকে ক্ষমতায় আসীন করতে ‘নির্বাচন’ হলো ভারতের একটি অন্যতম উপায়। নির্বাচনমুখী রাজনীতির মাধ্যমে ভারত অতীতে আওয়ামী লীগকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে পঁচাত্তর–পরবর্তী সময়কালে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেছে। এ পদ্ধতিতে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতীয় এজেন্ডা প্রতিষ্ঠার পথও সহজ হয়ে ওঠে। যেমন ২০২৪ সালের জানুয়ারির নির্বাচনে আমরা কোনো কোনো প্রার্থীকে বলতে শুনেছি তিনি ‘ভারতের প্রার্থী’। শুধু তা–ই নয়, ক্যাবিনেটে নাকি বরাদ্দ থাকত ‘দিল্লি-কোটা’।

আওয়ামী লীগকে রাজনীতিতে প্রবেশ করানোর ক্ষেত্রে ভারতের প্রথম হাতিয়ার হতে পারে অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন চাওয়া। ‘বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন অন্তর্ভুক্তিমূলক হওয়া উচিত’—ভারতের এই বক্তব্যের আড়ালে মূলত রয়েছে তাদের রাজনৈতিক কামনা ও স্বার্থরক্ষা। অর্থাৎ যদি ভারত বলে বাংলাদেশে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন হওয়া প্রয়োজন, তাহলে তাদের প্রথম পছন্দই হবে আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া বা আবার ক্ষমতার প্রতিযোগিতায় ফিরিয়ে আনা।

অতীতে বাংলাদেশের নির্বাচনী রাজনীতিতে ভারতের প্রভাব বহুবার প্রমাণিত হয়েছে। এর দুটি স্পষ্ট উদাহরণ নিকট ইতিহাসে পাওয়া যায়। প্রথমটি ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির আত্মজীবনী দ্য কোয়ালিশন ইয়ারস এবং দ্বিতীয়টি ভারতের সাবেক হাইকমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তীর ২০২৪ সালে প্রকাশিত বই ট্রান্সফরমেশন: ইমারজেন্স অব ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ টাইস।

অতীতে বাংলাদেশের নির্বাচনী রাজনীতিতে ভারতের প্রভাব বহুবার প্রমাণিত হয়েছে। এর দুটি স্পষ্ট উদাহরণ নিকট ইতিহাসে পাওয়া যায়। প্রথমটি ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির আত্মজীবনী দ্য কোয়ালিশন ইয়ারস এবং দ্বিতীয়টি ভারতের সাবেক হাইকমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তীর ২০২৪ সালে প্রকাশিত বই ট্রান্সফরমেশন: ইমারজেন্স অব ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ টাইস।

পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী তাঁর বইয়ে লিখেছেন, ২০০৭ সালে সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসার পর দুই দলের বহু নেতাকে দুর্নীতি ও ঘুষের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়। শেখ হাসিনাকেও আটক করে বিচার শুরু করা হয়। এই পরিস্থিতিতে ভারত কার্যকরভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সঙ্গে যুক্ত হয় এবং একটি বিশ্বাসযোগ্য, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কাজ করে।

পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী আরও উল্লেখ করেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তিনি প্রায় নিয়মিতভাবেই বাংলাদেশের ডিজিএফআইয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। তাঁরা ভারতের সঙ্গে পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতেন।

অর্থাৎ ২০০৭-০৮ সালের সেই সময়ে ভারত সক্রিয়ভাবে চেষ্টা করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে দ্রুত নির্বাচনের পথে নিয়ে যেতে এবং সেই নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনতে। অতএব ভারতীয় কূটনীতিবিদের লেখাতেই প্রমাণ রয়েছে বাংলাদেশের প্রশাসন ও নিরাপত্তা বাহিনীতে ভারতের উপস্থিতি ছিল উদ্দেশ্যমূলকভাবে নিবিড়।

আরও পড়ুনহাসিনার পতনে ‘বিদেশি হাত’ তত্ত্ব ও দিল্লির ভূমিকা১৫ আগস্ট ২০২৪আগামী সরকারগুলোকে ভারত কীভাবে দেখবে

ভারতের নীতিনির্ধারকদের মতে, অতীতে আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য দলগুলো যখন বাংলাদেশের ক্ষমতায় ছিল, তখন দেশটিতে ‘ইসলামি মৌলবাদ’–এর বিস্তার ঘটেছিল। তাদের দৃষ্টিতে, আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় থাকা মানেই ‘মৌলবাদ’–এর উত্থানকে নিয়ন্ত্রণে রাখা।

ভারতের কূটনৈতিক ও কৌশলগত মূল্যায়নে, ‘মৌলবাদ’ বলতে মূলত সেই রাজনৈতিক শক্তিগুলোকে বোঝানো হয়, যারা ভারতবিরোধী অবস্থান নেয়। তাই ভারত মনে করে, আওয়ামী লীগ সরকার থাকলে বাংলাদেশ ভারতের জন্য তুলনামূলক নিরাপদ। কেননা ভারত এখনো বিশ্বাস করে যে গত ১৫ বছরে ইসলামি রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাব নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ যে সফলতা দেখিয়েছে, তা অন্য কারও পক্ষে দেখানো সম্ভব নয়।

বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের বাইরে ভারত বিএনপি ও অন‍্য ইসলামি দলসমূহের অবস্থানকে কীভাবে দেখে? ২০০৮–এর নির্বাচনের সময় সরকারি ভাষ্য বিশ্লেষণ করলে আগামী দিনের সম্ভাব্য বিএনপি গঠিত সরকারের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের একটা খসড়া পাওয়া যায়। আবারও ভারতীয় সাবেক কূটনীতিক পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তীর মূল্যায়নকে প্রমাণক হিসেবে গ্রহণ করা যেতে পারে।

পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী ২০২৪ সালেও মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘২০০১-০৬, এই সময়ে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার আমলে ভারতবিরোধী সন্ত্রাসবাদী তৎপরতা তুঙ্গে উঠেছিল। সেই দিনগুলোই যেন আবার ফিরে আসতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।’ (দেশ, ১৭ আগস্ট ২০২৪)

আরও পড়ুনভারতের নীতিতে আওয়ামী লীগ–নির্ভরতা ও অপতথ্যের রাজনীতি০৫ ডিসেম্বর ২০২৪

পিনাক রঞ্জন ২০০৭-০৮ সালে বিএনপির বর্তমান নেতৃত্ব সম্পর্কে লেখেন, ‘তারিক (পিনাক রঞ্জনের বানানে) কেবল দুর্নীতি এবং চাঁদাবাজির জন্যই কুখ্যাত হয়ে উঠেছিল এমন নয়। তার বিরুদ্ধে শেখ হাসিনা ও অন্যান্য বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের হত্যা পরিকল্পনার অভিযোগও আছে। এ কাজে সে ইসলামি জঙ্গি ও আফগানিস্তান ফেরত জিহাদিদের কাজে লাগিয়েছিল।’ (চক্রবর্তী ২০২৪)।

যদি আমরা অনুমান করি, বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে ২০২৬ সালে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন করে; তাহলে তখন ভারত কি নতুন সরকারের সঙ্গে মর্যাদার ভিত্তিতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বজায় রাখতে পারবে?

একই সঙ্গে আগামী নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সংসদ বা শাসনক্ষমতায় যদি ইসলামি দলগুলোর অংশগ্রহণ আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বৃদ্ধি পায়, তাহলে ভারতের প্রতিক্রিয়া কেমন হবে? ইসলামি দলগুলো বলতে আমরা তাদের বুঝিয়েছি, যারা বিশ্বাস করে যে ইসলাম বাংলাদেশের সমাজ ও সংস্কৃতির অনন্য উপাদান। তাদের নিয়ে দিল্লির বিভিন্ন নীতিনির্ধারকের বক্তব্যে চিন্তার রেখাপাত আছে। বারবার তারা ২০০১-০৬ সালে বিএনপির আমলে ইসলামি দলগুলোর ‘ভারতবিরোধী কার্যক্রমের’ কথা উল্লেখ করেন।

ভারতের দুটি বড় স্বার্থ

ভারতের দৃষ্টিতে বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের স্বার্থ মূলত দুটি ক্ষেত্রকে ঘিরে—নিরাপত্তা ও অর্থনীতি। নিরাপত্তার ক্ষেত্রে, বিগত সময়ে আওয়ামী লীগ সরকার ভারতের প্রতিটি নিরাপত্তা-সংক্রান্ত পরামর্শকে গুরুত্ব দিয়েছে। সীমান্ত হত্যাকাণ্ডকে নীরবে সমর্থন, সন্ত্রাসের নামে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর দমন কিংবা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নিয়ে ভারতের উদ্বেগে ঢাকা সব সময় দিল্লির প্রেসক্রিপশন অনুসরণ করেছে। বিষয়টি আওয়ামী লীগের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে মন্ত্রিসভার সদস্যরাও প্রকাশ্যে স্বীকার করেছেন।

পিনাক রঞ্জন বলছেন, দুই দেশের সম্পর্কের ভিত্তির মূলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন। এর বড় মাপকাঠি হিসেবে তিনি দেখছেন, ভারতে যত বিদেশি ভ্রমণ করেন, তার মধ্যে বেশির ভাগ বাংলাদেশি। তাঁর হিসাবে প্রায় ১৬ লাখ বাংলাদেশি বছরে আসতেন। (দেশ, ১৭ আগস্ট ২০২৪)। অর্থাৎ বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের শাসনের অবসানের অর্থ হলো ভারতের অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা স্বার্থ বিঘ্নিত হওয়া।

৫ আগস্টের পরপর দিল্লির সিভিল সোসাইটি বা ব্যবসায়ী মহলে নতুন সরকার আসায় ভারতের অর্থনৈতিক স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হবে—এমন আশঙ্কার কথা বারবার প্রচার করা হয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে একজন ভারতীয় পুঁজিপতি তাঁর বিনিয়োগ অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছেন—এমন নজির নেই; বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে।

আমরা দুটি খাতের উল্লেখ করব, চাল আমদানি ও রেলের মূলধনি যন্ত্রাংশ আমদানি। বাংলাদেশ এখনো সম্পাদনকৃত প্রধান কোনো চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বা আংশিক কোনো পরিবর্তন করেনি। ভারতের সেনাপ্রধান সামরিক সভায় বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের বিষয়ে নিজ দেশবাসীকে আশ্বস্ত করেন যে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষের সঙ্গে তাঁরা নিবিড় যোগাযোগ বজায় রেখেছেন। বেসামরিক প্রশাসনের সব প্রশিক্ষণ সহযোগিতা বন্ধ হলেও বাংলাদেশ সামরিক বাহিনী অদ্যাবধি তাদের প্রশিক্ষণসমূহ চালু রেখেছে।

শেষ কথা

বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের বাস্তবতা নিয়ে ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগকেন্দ্রিক। এর মাধ্যমেই ভারত নিজের স্বার্থের পূরণ হবে বলে মনে করে। প্রশ্ন হলো, এতে কি ভারতের অর্থনৈতিক স্বার্থ বা নিরাপত্তা স্বার্থ পূরণ হবে?

এমন অবস্থায় বাংলাদেশে আসন্ন নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকার চাইলেই কতটুকু দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটাতে সক্ষম হবে, তা–ও বিবেচ্য। ২০০১-০৫ বিএনপি আমলে ভারতের টাটার কাছে গ্যাস বিক্রির পক্ষে বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা যেভাবে ওকালতি করেছিলেন, এমন অবস্থান থেকে বিএনপি সরে আসবে বলে তারেক রহমান সম্প্রতি বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন। এ ছাড়া আরও যোগ হয়েছে, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বিবিধ সমীকরণ, যেখানে ভারতের সম্পর্কের ব্যাকরণের পরিমার্জন আবশ্যিক শর্ত হিসেবেই থাকবে।

পরিশেষে আগামী নির্বাচন কেবল রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ক্ষমতার প্রতিদ্বন্দ্বিতা নয়; বরং এর চেয়ে অনেক গভীর এবং গুরুত্বপূর্ণ। এটি একদিকে যেমন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ গণতান্ত্রিক পুনর্জাগরণের পরীক্ষা, তেমনি অন্যদিকে ভারতের ঐতিহাসিক প্রভাব বিস্তারের ধারার বিরুদ্ধেও একধরনের নীরব প্রতিরোধ।

বিগত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগের ধারাবাহিক শাসনে যে ‘নির্বাচনবিহীন সংস্কৃতি’ দেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, এই নির্বাচন তার বিরুদ্ধেও একধরনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা বহন করছে। এর মূল লক্ষ্য হলো, ভবিষ্যতে যেন আর কোনো ধরনের বিদেশি প্রভাবযুক্ত ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থা দেশে প্রতিষ্ঠা না পায়।

এস কে তৌফিক হক অধ্যাপক ও ডিরেক্টর, সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্ন্যান্স (এসআইপিজি), নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়।

আহমদ ইফতেখার লেখক ও গবেষক।

*মতামত লেখকদের নিজস্ব

সম্পর্কিত নিবন্ধ