পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে জাবিতে আমরণ অনশন
Published: 2nd, February 2025 GMT
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ভর্তি পরীক্ষা থেকে পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে আমরণ গণঅনশন শুরু করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাবি শাখার নেতাকর্মীরা।
রোববার বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে এ কর্মসূচি শুরু করেন তারা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন অনশনকারীরা।
অনশনকারীরা বলছেন, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে লড়াইয়ের মূলমন্ত্র ছিল বৈষম্যমূলক কোটা পদ্ধতি বাতিল ও যৌক্তিক সংস্কার করা। সেজন্য অনেককে রক্ত দিতে হয়েছে। কিন্তু গণঅভ্যুত্থানের পর সেই কোটা নিয়ে আবারও অনশনে বসতে হচ্ছে, যা হতাশা ও লজ্জার বিষয়। ভর্তি পরীক্ষায় অযৌক্তিক পোষ্য কোটার জন্য বঞ্চিত হচ্ছে গরীব কৃষক ও শ্রমিকের সন্তান। তাই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে চিরতরে অযৌক্তিক পোষ্য কোটার কলঙ্ক থেকে মুক্ত করার জন্য আমাদের আমৃত্যু অনশনে বসা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাবি শাখার যুগ্ম সদস্য সচিব নাহিদ হাসান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে যে অযৌক্তিক কোটা পদ্ধতি রয়েছে, তা গোড়া থেকে উপড়ে দিতে আমরা অনশনে বসেছি। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে আমাদের প্রাণের দাবি ছিল- মেধা দিয়েই আমাদের মূল্য যাচাই হবে, কোনো কোটা দিয়ে নয়। কিন্তু অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে এমন অযৌক্তিক কোটা পদ্ধতি জাবিতে বিদ্যমান থাকা আমাদের জন্য লজ্জার। এমনকি আমাদের ভাইবোনদের রক্তের উপর দাঁড়িয়ে থাকা প্রশাসনের জন্যও লজ্জার। অযৌক্তিক পোষ্য কোটা বাতিল না হলে আমাদের কর্মসূচি চলবে।
সংগঠক মোহাম্মদ রায়হান বলেন, জুলাইয়ে কোটা পদ্ধতি বাতিলের জন্য আবু সাইদ, মুগ্ধসহ অসংখ্য ভাইবোন শহীদ হয়েছেন। এতো রক্ত কোটা পদ্ধতি বাতিলের জন্য দেওয়া হলো এরপরও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অযৌক্তিক পোষ্য কোটা রয়ে গেছে। যা আমাদের জন্য অত্যন্ত লজ্জার ও হতাশার বিষয়। অযৌক্তিক এ কোটার জন্য বঞ্চিত হচ্ছে গরীব কৃষক, শ্রমিকের সন্তান। তাই বিশ্ববিদ্যালয়কে অযৌক্তিক পোষ্য কোটার কলঙ্ক থেকে মুক্ত করার জন্য আমরা আমৃত্যু গণঅনশনে বসেছি।
অনশনে বসা শিক্ষার্থী নাজমুল হাসান বলেন, পৌষ্য কোটার মত বৈষম্য আর নেই। আমরা বৈষম্যহীন এক নতুন বাংলাদেশের জন্য জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ করেছি। অথচ মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য গলার কাঁটা নামক পোষ্য কোটা চালু রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে। যা গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্যত্যয় ঘটায়।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আমরণ অনশন গণঅভ য ত থ ন র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারীদের সংবর্ধনা দিল জাবি
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শহীদ পরিবারদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। এ সময় জুলাই হত্যার বিচার ও শহীদ পরিবারের পুনর্বাসনের আকুতি জানানো হয়।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টায় জহির রায়হান মিলনায়তনে এ সংবর্ধনার আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) ও ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহফুজুর রহমান।
আরো পড়ুন:
জুলাই শহীদদের স্মরণে জাবি ছাত্রদলের বৃক্ষরোপণ
জাবি ছাত্রদলের ১৫ নেতাকে অব্যাহতি
এতে আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি ও ১০ শহীদ পরিবারের সদস্যরা।
এসব শহীদরা হলেন, আলিফ আহম্মদ সিয়াম, শ্রাবণ গাজী, শাইখ আস-হা-বুল ইয়ামিন, নাফিসা হোসেন মারওয়া, সাফওয়ান আখতার সদ্য, মো. কুরমান শেখ, ছায়াদ মাহমুদ খান, নিশান খান, আস-সাবুর ও সুজন মিয়া।
অনুষ্ঠানের শুরুতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এরপর শহীদদের স্বরণে একটি ডকুমেন্টারি ভিডিও দেখানো হয়। পরে শহীদদের স্বীকৃতি স্বরূপ সংবর্ধনা, সনদ ও স্মারক প্রদান করা হয়।
শহীদ আলিফ আহমেদ সিয়ামের বাবা মো. বুলবুল কবির বলেন, “আমরা আমাদের সন্তানদের হারিয়েছি ১ বছর হতে চললো। কিন্তু হত্যাকারীদের বিচার এখনো নিশ্চিত হয়নি। আপনারা শহীদদের রক্তের উপর দাঁড়িয়ে এ চেয়ারে বসেছেন। ফ্যাসিস্টদের বিচার নিশ্চিত করুন।”
শহীদ শ্রাবণ গাজীর পিতা মো. মান্নান গাজী বলেন, “আমাদের সন্তানরা তো আর ফিরে আসবে না। কিন্তু হাসাপাতালে যারা আহত আছেন, পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন, তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করুন। তাদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করুন।”
শহীদ নাফিসা হোসেনের মামা মো. হজরত আলী নাফিসার শহীদ হওয়ার বর্ণনা করতে গিয়ে অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন। এ সময় তিনি জুলাই শহীদদের পরিবারের পুর্নগঠন এবং শহীদদের নামে হল, সড়ক বিভিন্ন স্থাপনার নামকরণের প্রস্তাব করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহফুজুর রহমান বলেন, “জুলাই আন্দোলনের স্বরণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদ্যোগে মাসব্যাপী আয়োজনের অংশ হিসেবে এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। শহীদ পরিবারগুলোর পক্ষ থেকে যেসব দাবি করা হয়েছে, আমি প্রশাসনের একজন হয়ে তা আগামী সিন্ডিকেট সভায় তুলব।”
তিনি বলেন, “আমি চাই আমাদের এখানে যেহেতু কিন্ডারগার্টেন, স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এখানে শহীদদের পরিবারের সদস্যদের পড়াশোনার সুযোগ প্রদান করা হোক। এ বিষয়ে আমরা সিন্ডিকেটে আলোচনা করব। একইসঙ্গে জুলাই শহীদদের পরিবারের সদস্যদের বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নেওয়া হবে।”
এর আগে, সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার থেকে অদম্য-২৪ স্মৃতিস্তম্ভ পর্যন্ত মুখে লাল কাপড় বেঁধে মৌন মিছিল করেন শিক্ষকরা।
গত ১৪ জুলাই থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে স্বরণ ও ধারণ করতে মাসব্যাপী নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।
ঢাকা/আহসান/মেহেদী